‘হ্যালোইন দুর্ঘটনা' তদন্তের মাঝপথে পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু
১২ নভেম্বর ২০২২
দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, হ্যালোউইন উৎসবের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল৷ শুক্রবার সৌলের বাড়ি থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
২৯ অক্টোবর সৌলের ওই দুর্ঘটনায় ১৫৬ জনের মৃত্যু হয়, ১৯৮ জন আহত হন৷ মৃতদের বেশিরভাগের বয়স কুড়ি থেকে তিরিশের কোঠায় বলে জানায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ৷ দক্ষিণ কোরিয়ার ইটায়েওন জেলায় সরু রাস্তায় হ্যালোউইন উৎসবের ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে ব্যাপক এই হতাহতের ঘটনা ঘটে৷
আধিকারিকরা শুধুমাত্র উপাধি জিয়ং দিয়েই ওই মৃত পুলিশ কর্তাকে শনাক্ত করেছেন৷ ইয়ংসান পুলিশ স্টেশনে গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন জিয়ং৷ ইটাওয়েন ইয়ংসানেরই অন্তর্ভুক্ত৷ সৌলের বাড়িতে শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ পরিবারের এক সদস্য তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান৷ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তার বিবৃতি উল্লেখ করে ইয়োনহাপ এ কথা জানিয়েছে৷
সংবাদসংস্থা রয়টার্স ওই পুলিশ স্টেশনে বারবার ফোন করলেও কেউ ফোন ধরেননি৷
৫৫ বছরের জিয়ংয়ের বিরুদ্ধে সম্প্রতি গুরুতর অভিযোগ ওঠে৷ হ্যালোউইনে পদপিষ্ট হয়ে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু হওয়ার পর চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে৷ জানা যায়, ওই দুর্ঘটনা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল আগেই৷ অভিযোগ ওঠে, সেই সংক্রান্ত তদন্তমূলক রিপোর্টগুলি সরিয়ে ফেলেছিলেন জিয়ং৷
হ্যালোউইন উৎসব যেভাবে পরিণত হয় মৃত্যুর মিছিলে
দক্ষিণ কোরিয়ায় হ্যালোউইন উৎসবে অংশ নিতে গিয়ে ঝড়ে গেছে ১৫৪টি তাজা প্রাণ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শনিবারের সেই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব ছিল৷
ছবি: KIM HONG-JI/REUTERS
হ্যালোউইন উৎসবে মৃত ১৫৪
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোলে শনিবার হ্যালোউইন উৎসবে অংশ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৫৪ ব্যক্তি৷ সরু স্থানে অনেক বেশি মানুষ জড়ো হওয়ায় পদদলিত হয়ে অনেকে মারা গেছেন৷ ছবিতে ঘটনাস্থলের কাছে শোকগ্রস্ত একদল মানুষকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: KIM HONG-JI/REUTERS
এত মৃত্যু কি ঠেকানো যেতো?
শনিবারের মর্মান্তিক এই ঘটনা গোটা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে৷ বিশেষজ্ঞরা বকলছেন, ভিড় এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে এই পরিস্থিতি ঠেকানো বা এর বিস্তৃতি কমানো যেতো৷ কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃপক্ষ তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ ছবিতে একদল মানুষকে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: HEO RAN/REUTERS
ছিল না কোনো কেন্দ্রীয় আয়োজক দল
সোলের ইটেওয়ান এলাকা নাইটলাইফের জন্য বিখ্যাত৷ সেখানে বাৎসরিক হ্যালোউইন উৎসবে স্থানীয় এবং পর্যটকদের ভিড় যে বাড়বে সেটা অনুমেয় ছিল৷ কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে এই উৎসব আয়োজন না করায় সরকারি কর্তৃপক্ষ সেটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে আলাদা করে কিছু করেনি বলে জানা গেছে৷ ছবিতে দুর্ঘটনার আগে ইটেওয়ান এলাকার একটি জনাকীর্ণ রাস্তা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: YONHAP/REUTERS
মাদক, করোনা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ ছিল, কিন্তু...
ইটেওয়ান এলাকায় হ্যালোউইন সপ্তাহান্তে যাতে মাদক বেচাবিক্রি না হয় এবং করোনা বিধিনিষেধ পালন করা হয় সেজন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছিল বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে৷ তবে, সেখানে ভিড় নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেয়ার কথা উল্লেখ নেই৷ এই ছবিটি দুর্ঘটনার পরে তোলা৷
ছবি: Ahn Young-joon/AP Photo/picture alliance
এক লাখ লোকের সমাগম
শনিবার পদদলিত হয়ে দেড়শোর বেশি মানুষের মৃত্যুর দিনে পাহাড়ি এবং সরু রাস্তাঘাটের এলাকা ইটেওয়ানে প্রায় এক লাখ মানুষের সমাগম হয়েছিল৷ সোল মেট্রোর হিসেবে ইটেওয়ান স্টেশনে সেদিন ৮১ হাজার ৫৭৩ জন মানুষ নেমেছিলেন৷ আগের সপ্তাহে সেখানে জমেছিলেন ২৩ হাজার ৮০০ মানুষ, আর শুক্রবার ছিলেন ৩৫ হাজার ৯৫০ জন৷
ছবি: KIM HONG-JI/REUTERS
নিরাপত্তায় ছিলেন ১৩৭ পুলিশ সদস্য
হ্যালোউইন পার্টিতে এক লাখ মানুষ জড়ো হলেও সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন মাত্র ১৩৭ জন পুলিশ সদস্য৷ অথচ সেদিন আরেক স্থানে শ্রমিক ইউনিয়ন এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন স্যুক-ইয়লের সমর্থকদের শোভাযাত্রায় চার হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল৷ তবে, পুলিশের ঘাটতির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা তা তদন্ত না করে স্বীকার করতে রাজি নয় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
ছবি: KIM HONG-JI/REUTERS
পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের নির্দেশ
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন স্যুক-ইয়ল শনিবারের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন৷ দক্ষিণ কোরিয়ায় সাধারণত কোনো উৎসবে এক হাজারের বেশি মানুষ অংশ নিলে সেটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী করতে হবে তার নির্দেশনা রয়েছে৷ সেই নির্দেশনায় উৎসবের একটি কেন্দ্রীয় আয়োজক দল থাকার কথা বলা হয়েছে যেটির দায়িত্ব সরকারের সহায়তায় উৎসব স্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা৷
ছবি: Chung Sung-Jun/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
সোমবার সংসদীয় অধিবেশনে আইনপ্রণেতারা এই নথি সরানো নিয়ে তীব্র নিন্দা করেন৷ দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি তোলেন৷
দেশটির পুলিশ প্রধান ইয়ুন-হে-কেওন আইনপ্রণেতাদের বলেন, ইয়ংসান স্টেশনের গোয়েন্দা প্রধান ওই রেকর্ডগুলি মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা নিয়ে তদন্ত করা হবে৷
ঘটনার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ বিভাগ৷ বিশেষ করে, আপৎকালীন কলগুলির ট্রান্সস্ক্রিপ্ট, অর্থাৎ প্রতিলিপি প্রকাশের পরে জানা যায়, বিপদের আশঙ্কা করে অনেক মানুষ পুলিশকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলেন৷ দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে এ বিষয়ে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷
তারপরই পুলিশকর্তার মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে রহস্য আরো বাড়ছে৷