ডয়চে ভেলেকে পাঠানো এক লিখিত বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও জানিয়েছে, বিশ্বে এখন পর্যন্ত যত টিকা সরবরাহ করা হয়েছে তার ৭৫ শতাংশই পেয়েছে মাত্র ১০টি দেশ৷ কম জিডিপির দেশগুলো পেয়েছে এক শতাংশেরও কম টিকা৷
বিজ্ঞাপন
টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে এমন অসম অবস্থা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, মন্তব্য করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঐ বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এটা মহামারি থেকে মুক্তির দুটি ভিন্ন পথের কথাই সামনে নিয়ে আসে৷’’
সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্যদের উদ্যোগে কোভ্যাক্স কর্মসূচি চালু করা হয়৷ এর আওতায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের দেশগুলোতে টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে৷ তবে সংখ্যাটা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম৷ কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা পেয়েছে৷
জার্মানিতে প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ ইতিমধ্যে অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন৷ অথচ এমন অনেক দেশ আছে যেখানে টিকা কার্যক্রম কেবল শুরু হচ্ছে৷ তাঞ্জানিয়া, চাডের মতো দেশে এখনও টিকা দেয়া শুরু হয়নি৷
কোভ্যাক্সের জন্য টিকা কিনতে দাতা দেশগুলোর কাছ থেকে সহায়তা চাওয়া হচ্ছে৷ এ লক্ষ্যে গত সপ্তাহে অনলাইনে একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়৷ সম্মেলনে ১৯ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার অঙ্গীকার পাওয়া গেছে৷ ফলে কোভ্যাক্সের আওতায় এখন পর্যন্ত ৮১ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা পাওয়ার আশা করা হচ্ছে৷
ভ্যাকসিন নিলে ইউরোপের কোথায় বেড়াতে যেতে পারবেন
ভ্যাকসিনের দুই ডোজ নেয়া হয়ে গেলে ইউরোপের অনেক দেশেই এখন যাওয়া যাবে। ফ্রান্স, স্পেন, গ্রিস পর্যটকদের যেতে দিচ্ছে।
ছবি: Christian Hartmann/REUTERS
ফ্রান্সে যেতে গেলে
দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিতে হবে। দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার দুই সপ্তাহ পর ফ্রান্সে ঘুরতে যাওয়া যাবে। ৯ জুন থেকে পর্যটকদের ঢুকতে দিচ্ছে ফ্রান্স। ইইউ এবং ফ্রান্সের সবুজ তালিকায় থাকা দেশগুলির নাগরিকদের কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেটও নিতে হবে না। এই সব দেশের ভ্যাকসিন না নেয়া পর্যটকরা নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে ঢুকতে পারবেন ফ্রান্সে।
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gierth
অরেঞ্জ তালিকার দেশের ক্ষেত্রে
ফ্রান্সের অরেঞ্জ তালিকায় আছে অ্যামেরিকা, ব্রিটেন এবং এশিয়া ও আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ। এখান থেকে পর্যটক এলে তাদের আর ১৪ দিন কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে না। তবে ভ্যাকসিনের দুই ডোজের পাশাপাশি তাদের কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে।
ছবি: ROBIN UTRECHT/picture alliance
কোন ভ্যাকসিন নিলে যাওয়া যাবে
ইইউ স্বীকৃত ভ্যাকসিন নিলেই ফ্রান্সে যাওয়া যাবে। এর মধ্যে আছে, ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন অ্যান্ড জনসন।
ছবি: Lafargue Raphael/ABACA/picture alliance
স্পেনে যেতে হলে
গত ৭ জুন থেকে স্পেনের দরজা পর্যটকদের জন্য খুলে গেছে। এখানে ভ্যাকসিনের দুই ডোজ ছাড়াও করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট সঙ্গে থাকতে হবে। আর ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজের ১৪ দিন পরেই স্পেনে ঢোকা যাবে।
ছবি: AFP/D. Martin
গ্রিসের ক্ষেত্রে
বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশের পর্যটকদের ঢুকতে দিচ্ছে গ্রিস। তবে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট ছাড়াও করোনা নেগেটিভ রিপোর্টও সঙ্গে নিতে হবে। তারপরেও বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা করা হতে পারে।
ছবি: Nicolas Economou/NurPhoto/picture alliance
সাইপ্রাসে ভ্যাকসিন নিলেই হবে
দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিলেই সাইপ্রাসে যাওয়া যাবে। তবে গোটা বারো দেশের ক্ষেত্রে এই সার্টিফিকেট ছাড়াই সেখানে যাওয়া যাবে। দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিলে ১৪ দিন অপেক্ষা করারও দরকার নেই। তবে বিমানে ওঠার আগে সাইপ্রাস ফ্লাইট পাসের জন্য আবেদন করে তা নিতে হবে।
ছবি: Getty Images/AFP/F. Choblet
ক্রোয়েশিয়ার জন্য
ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট থাকলে ক্রোয়েশিয়া যাওয়া যাবে। তবে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল থেকে গেলে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে।
ছবি: Grgo Jelavic/PIXSELL/picture alliance
জার্মানিতে কড়াকড়ি
ইইউ-র বাইরের দেশের মানুষ জরুরি দরকার ছাড়া জার্মানিতে ঢুকতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট জরুরি। যে সব দেশকে করোনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে জার্মানি, সেখানকার মানুষদের এরপরেও কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে।
ছবি: Annette Riedl/dpa/picture alliance
8 ছবি1 | 8
তবে বিভিন্ন দেশ কোভ্যাক্সে টাকা না দিয়ে কৌশলগত স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সরাসরি বন্ধু দেশকে টিকা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষুধা নিবারণে কাজ করা সংস্থা ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ডের কর্মকর্তা মারাইকে হাসে৷ ‘‘আমরা মনে করি, টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমতা আনতে হলে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে টিকা বিতরণ করতে হবে,’’ ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি ল্যাটিন অ্যামেরিকা, ক্যারিবিয়ান, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আট কোটি ডোজ টিকা দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন৷ এর তিন-চতুর্থাংশ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে দেয়া হবে৷ বাকিটা সরাসরি বিভিন্ন দেশকে দেয়া হবে৷
মারাইকে হাসে বলছেন, কোভ্যাক্স কর্মসূচির একটি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে এটি ঐচ্ছিক ভিত্তিতে কাজ করে৷ এছাড়া পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় কোভ্যাক্স প্রয়োজনীয় টিকাও কিনতে পারছেনা৷ ‘‘টিকা কোম্পানিগুলো কোভ্যাক্সের সঙ্গে কাজ করার চেয়ে যারা বেশি দাম দিতে পারবে তাদের সঙ্গে কাজ করতে বেশি আগ্রহী,’’ বলে মনে করেন তিনি৷
কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত ১৫ কোটি ডো়জ টিকার অঙ্গীকার পাওয়া গেছে, যদিও সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২৫ কোটি ডো়জ টিকার প্রয়োজন৷ আর এ বছরের মধ্যে ১০০ কোটি টিকা পাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে৷