শুভেচ্ছার ইঙ্গিত হিসাবে সোমবার ১০০ জন ভারতীয় বন্দিকে মুক্ত করলো পাকিস্তান৷ এপ্রিলেই আরো বেশ কয়েকজন ভারতীয় বন্দিকে ছাড়া হবে বলে জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
এবছরের শুরুতে কাশ্মীরকে ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল৷ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশ পারমাণবিক শক্তি হওয়ায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগও বাড়ছিল৷ তবে ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বার্তামানকে ফিরিয়ে দেয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে থাকে দুই দেশের সম্পর্ক৷
সোমবার পাকিস্তানের করাচি সেন্ট্রাল জেল থেকে ১০০ জন ভারতীয় বন্দিকে মুক্ত করার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলের মুখপাত্র মাশুক আলি৷ লাহোরের কাছে ভারতের ওয়াঘা সীমান্তের পাশেই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে এই বন্দিদের৷
‘শুভেচ্ছার ইঙ্গিত'
এপ্রিলের ১৫, ২২ ও ২৯ তারিখে আরো বেশ কয়েকজন ভারতীয় বন্দিদের ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ ফয়সাল গত সপ্তাহেই জানান, ‘‘মোট ৩৬০ জন ভারতীয় বন্দিকে মুক্ত করা হবে, যার মধ্যে রয়েছেন ৩৫৫ জন মৎস্যজীবী ও ৫ জন সিভিলিয়ান৷''
ভারত-পাকিস্তান বন্ধুত্বের নিদর্শন যে ট্রেন
ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের গল্প কে না জানে৷ কিন্তু যুদ্ধ ছাড়াও যে এই দুটি দেশের মধ্যে রয়েছে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা, সে সম্পর্কে জানুন এই ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
সমঝোতা না বন্ধুত্ব?
শিমলা চুক্তির পর ১৯৭৬ সালে শান্তি ও বন্ধুত্বের প্রতীক হিসাবে অমৃতসর ও লাহোরের মধ্যে চালু হয় এই ট্রেন৷ ‘সমঝোতা এক্সপ্রেস’ নামের এই ট্রেনটি ২০০৬ সালে ‘থর এক্সপ্রেস’ চালু হবার আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংযোগকারী একমাত্র ট্রেন ছিল৷ ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ও পাকিস্তান রেলওয়ের যৌথ প্রকল্পের ফল এই ট্রেনটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
দিল্লি দূরে নয়
দুই দেশের মধ্যে মাত্র ৫২ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দেয় এই ট্রেনটি৷ লাহোর থেকে দিল্লি ছাড়া এই ট্রেনটি থামে পাকিস্তানের মুঘলপুরা ও জাল্লো’তে৷ ওয়াগাহ-আটারি সীমান্তে সম্পন্ন হয় কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত কাজ৷ এরপর, ট্রেনটি ভারতে প্রবেশ করলে থামে খাসা, ছেহেরতা ও অমৃতসর স্টেশনে৷
ছবি: Imago/Xinhua
সময়সূচি
যখন প্রথম চালু হয় এই ট্রেন, তখন প্রতিদিন চলত এটি৷ কিন্তু বর্তমানে সপ্তাহে দুইবার, বুধবার ও রবিবারে দিল্লি ও লাহোর থেকে ছাড়ে এই ট্রেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
কত দীর্ঘ এই ‘সমঝোতা’?
সাধারণত, চার থেকে আট কামরার হয় গাঢ় সবুজ ও নীল রঙের এই ট্রেনটি৷ বিশেষ উৎসবের মরসুমের সময় কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেন, কত দীর্ঘ হবে ট্রেনটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
বন্ধুত্বে ব্যাঘাত
এখন পর্যন্ত, মোট তিনবার বন্ধ রাখা হয়েছে সমঝোতা এক্সপ্রেস৷ প্রথমবার ২০০১ সালে ভারতীয় সংসদভবনে হামলার পর বন্ধ করা হয় এই ট্রেন চলাচল৷ এরপর ২০০৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো নিহত হবার পর বন্ধ হয় সমঝোতা৷ এরপর ফেব্রুয়ারিতে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের ফলে বন্ধ করা হলেও এখন আবার চালু হয়েছে এই পরিষেবা৷
ছবি: Imago/ZUMA Press
সমঝোতায় সন্ত্রাসী হামলা
২০০৭ সালে পানিপতের কাছে এই ট্রেনে বোমা হামলার হয়৷ এতে ৭০ জন পাকিস্তানি নাগরিকসহ মারা যান কয়েকজন ভারতীয় সৈনিক৷ আহত হন শতাধিক মানুষ৷ ২০০৯ সালে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এই হামলার সাথে জড়িত বলে জানায় অ্যামেরিকা৷ কিন্তু ২০১০ সালের ভারতের জাতীয় সুরক্ষা এজেন্সির অনুসন্ধানকারী দল জানায় যে, এর মূল প্রণেতা হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য স্বামী অসীমানন্দ৷ এই দায় পরে স্বীকার করেন তিনি৷
ছবি: AP
বিপাকে সমঝোতা
২০১২ সালের ৮ অক্টোবর এই ট্রেন থেকে একশ কিলো হেরোইন ও পাঁচশ রাউন্ডেরও বেশি বুলেট উদ্ধার করে পাকিস্তানের পুলিশ৷ দিল্লিগামী এই ট্রেন থেকে পাওয়া হেরোইনের দাম ছিল প্রায় ৫০৫ কোটি ভারতীয় রুপি৷
ছবি: AP
টালবাহানার সমঝোতা
এখনও চলছে ২০০৭ সালে সমঝোতা এক্সপ্রেসে হামলার তদন্ত৷ আসলেই কে দোষী, তা স্পষ্ট নয়৷ অনেকেই ইঙ্গিত করেন, রাজনৈতিক সুবিধার জন্য বারবার ব্যবহার করা হয়েছে এই রেলসংযোগকে৷ তবুও, ভারত ও পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মধ্যে আসা-যাওয়া অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে এই বিশেষ ট্রেনটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Sharma
8 ছবি1 | 8
শুভেচ্ছার এই ইঙ্গিতের উত্তরে ভারতের কাছেও একই আচরণ আশা করছে পাকিস্তান৷
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় জেলে বর্তমানে ৩৪৭ জন পাকিস্তানি বন্দি রয়েছেন৷ আর পাকিস্তানের জেলে ভারতীয় বন্দির সংখ্যা ৫৩৭৷
ভারত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বন্দিদের মুক্ত করা বিষয়ে এখনও কোনো খবর পাওয়া যায়নি৷