বরেণ্য আলোকচিত্রী শহীদুল আলম ১০৭ দিন পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন৷ মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার পর তিনি ঢাকার কেরাণীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান৷ মুক্তি পাওয়ার পর তিনি তাঁর ধানমন্ডির বাসায় গিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন চলাকালে ‘উসকানিমূলক মিথ্যা’ তথ্য দেয়ার অভিযোগে গত ৫ আগস্ট শহীদুল আলমকে তাঁর ধানমন্ডির বাসা থেকে আটক করা হয়৷ পরের দিন তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়৷ এরপর তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ৷ নিম্ন আদালত দুই দফা তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে৷ এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানান হয়৷ গত বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) শহীদুল আলমের জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়াল ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রর্বতী’র আদালত৷ সাধারণ বিবেচনায় ওইদিনই তাঁর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও মুক্তি পাননি৷ এরপর শুক্র-শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি৷ আশা করা হয়েছিল রবিবার তিনি মুক্তি পাবেন৷ কিন্তু ওইদিনই জামিন স্থগিতের আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ৷ তবে শেষ পর্যন্ত ওই আবেদনটি আদালতে ‘মুভ’ না করায় তিনি মুক্তি পেলেন৷
সারা হোসেন
মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা তাঁর জামিন স্থগিতের আবেদন করেছিলাম৷ কিন্তু সেটা শুনানির জন্য আদালতের তালিকায় আসেনি৷ তাই আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়ই তিনি মুক্তি পেয়েছেন৷ আদালত তো তাঁর জামিন স্থগিত করেননি৷ আর জামিন স্থগিত না করলে তো তাঁকে আটকে রাখা যায় না৷’’
মাহবুবে আলম
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম জানান, ‘‘মঙ্গলবার বিকেলে জামিনের যে কাগজ নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটাতে ঠিকানা ভুল ছিল৷পরে সেটা আদালতের মাধ্যমে সংশোধন করে আবার সন্ধ্যার মধ্যেই তাঁর স্বজনরা পৌঁছে দেন৷ এরপর যাচাই-বাছাই শেষে রাত সাড়ে ৮টায় তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে৷’’
শহীদুল আলমের মুক্তির সময় তাঁর আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন সঙ্গে ছিলেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাঁর মুক্তির মধ্য দিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে, এখনো দেশের বিচার ব্যবস্থা ভেঙে যায়নি৷ আমি অনেক খুশি৷ অনেক বেড়াজালের পরও তিনি মুক্তি পেয়েছেন এতে আমি আনন্দিত৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘শহীদুলকে আগের চেয়ে কিছুটা দুর্বল দেখাচ্ছে৷ তবে তিনি বলেছেন, ‘আমি ভালো আছি৷’ যাঁরা এখনো কারাগারে আছেন, তাঁরা ভালো নেই৷ তিনি সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন৷ যাঁরা দেশে-বিদেশে তাঁর মুক্তির জন্য কাজ করেছেন, সবার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন৷’’
শহীদুল আলমের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি জানান, ‘‘তিনি এখন কথা বলতে চাচ্ছেন না৷ সংবাদ মাধ্যমের প্রতিও তিনি কৃতজ্ঞতা জনিয়েছেন৷’’
স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের শাস্তি যখন কারাদণ্ড এবং নির্যাতন
মারধর, কারাদণ্ড, হত্যা: এই পাঁচ সাংবাদিক, শিল্পী, লেখক স্বাধীনভাবে তাঁদের মত প্রকাশের মূল্য দিচ্ছেন৷ ছবিঘরে জেনে নিই তাঁদের কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
অসম্পূর্ণ তালিকা
বিশ্বব্যাপী কতজন সাংবাদিক, কবি এবং লেখক কারাবন্দি বা নিখোঁজ তার সঠিক হিসাব কারো জানা নেই৷ এমনকি লেখকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘পেন’-এর কাছে মামলার যে তালিকা রয়েছে, সেটাও পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়৷
ছবি: picture alliance/dpa
ওয়াইল আব্বাস: কারাবন্দি
ওয়াইল আব্বাস একজন মিশরীয় ব্লগার৷ তাঁর ব্লগে নিজ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি, পুলিশের দ্বারা সহিংসতার কথা তুলে ধরতেন তিনি৷ এসব লেখার কারণে ২০১৭ সালের মে মাসে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এখনো তিনি কারাবন্দি৷ পুলিশ তাঁর লেখার সব সরঞ্জাম এবং ব্যক্তিগত অনেক জিনিস জব্দ করেছে৷
ছবি: Facebook
শহীদুল আলম: কারাবন্দি, পরে মুক্তি
বাংলাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলার সময় বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করে আল-জাজিরা টেলিভিশনে বক্তব্য দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী, লেখক ও অধিকার কর্মী শহীদুল আলম৷ আগস্টের ৫ তারিখে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের বিশেষ ধারায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এখনো তিনি কারাবন্দি৷ ২০১৮ সালে মানবিকতার আলোকচিত্রের জন্য তিনি লুসি পুরস্কার পান৷ ২০ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি৷
ছবি: Munir Uz Zaman
মিরোস্লাভা ব্রিচ ভেলদুসিয়া: হত্যা
২০১৭ সালের মার্চ মাসে নিজ অ্যাপার্টমেন্টে খুন হন মেক্সিকোর এই সাংবাদিক৷ তাঁকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়৷ তিনি দেশের রাজনীতিবিদ এবং মাদকপাচারকারীদের মধ্যে যোগসূত্র এবং দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন৷ ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে ৯৬ জন লেখক এবং সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে৷
ছবি: EPA
দাওইত ইসাক: নিখোঁজ
ইরিত্রিয়ান-সুইডিশ এই লেখকের ঘটনা খুবই হতাশাজনক৷ ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে ইরিত্রিয়া থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি এবং কারাবন্দি হওয়ার পর তাঁর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি৷ গত ১৭ বছর ধরে কেউ তাঁর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারেনি৷ তিনি জীবিত আছেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে৷
ছবি: Kalle Ahlsén
ওলেগ সেন্তসভ: আটক এবং পুরস্কার বিজয়ী!
২০১৪ সালে ক্রাইমিয়ায় বিক্ষোভ চলাকালে রাশিয়ার বিরোধিতা করলে ইউক্রেনের লেখক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ওলেগ সেন্তসভকে রুশ নিরাপত্তাকর্মীরা গ্রেপ্তার করে৷ রাশিয়ার সামরিক আদালত তাঁকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে৷ মুক্তচিন্তার বিকাশে ভূমিকা রাখায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ মানবাধিকার বিষয়ক পুরস্কার সাখারভ সম্মাননা পেয়েছেন তিনি৷