ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও দ্বীপে পাম তেল চাষের জন্য অনেক বন জঙ্গল কেটে ফেলা হয়েছে৷ এতে পরিবেশের ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে৷ ১০ কোটি গাছের একটি প্রকল্প সেখানে স্বস্তির আভাস দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও দ্বীপের চাষী লিঙ্গা কাসান৷ গেল কয়েক বছরে তার সাত হেক্টর বিরান জমিতে প্রায় এক হাজার গাছ লাগিয়েছেন৷ তিনি একে ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ হিসেবে দেখেন৷
একটি গাছ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই গাছটি কেটে ফেলবো৷ তবে এর ব্যাসার্ধ ৩০ সেন্টিমিটার হওয়া পর্যন্ত হয়ত অপেক্ষা করব৷ তাহলে এটা বেচে সবচেয়ে বেশি টাকা পাবো৷''
লিঙ্গা কাসানের পাম ও রাবার গাছও আছে৷ কিন্তু সেগুলো থেকে তেমন লাভ হয় না৷ তাই ২০১৬ সালে যে ক'জন প্রথম নতুন বনায়নের উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন, তার একজন তিনি৷ এর লক্ষ্য টেকসই বনায়ন এবং স্থানীয়দের স্বাবলম্বী করা৷ এই উদ্যোগে রয়েছে একশস্যের বাইরে এসে ভিন্ন ভিন্ন শস্য ফলানো৷
চাষীরা চাইলে বড় গাছ কেটে বিক্রি করতে পারেন৷ এক হাজারেরও বেশি চাষীকে এই ১০ কোটি গাছ লাগানোর প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে৷ গত ২০ বছরেইন্দোনেশিয়া তাদের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ বন হারিয়েছে৷এমন সোনার খনির জন্য কেটে ফেলা হয়েছে অনেক গাছ৷ সোনার খনির কারণে পরিবেশের অপরিসীম ক্ষতি হয়৷
ডাবের পানির প্লাস্টিক
03:53
বনায়ন প্রকল্পের উদ্যোক্তা ফেয়ারভেঞ্চার্সের মোনালিসা পুত্রি কাহারাপ বলেন, ‘‘এখানে একটি বন ছিল৷ এক বছরের মাথায় এটির এ অবস্থা৷ তারা বালিকে ওপরে নিয়ে আসে এবং ওপরের মাটিকে নীচে নিয়ে যায়৷ তাই এসব জায়গায় পুনরায় বনায়ন অসম্ভব৷ আর এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ৷ কারণ তারা খনির কাজে পারদ ব্যবহার করে৷ এটা পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর৷ দুঃখজনক হলো, স্থানীয়দের আয়ের একটি অন্যতম উপায় এটি৷''
তাই আয়ের বিকল্প উপায় বের করা জরুরি৷ মোনালিসা খনি শ্রমিকদের কাছে গিয়ে তাদের বনায়ন প্রকল্পে যুক্ত করার চেষ্টা করছেন৷
মোনালিসা বলেন, ‘‘তারা আসলে নতুন কাজ করতে আগ্রহী, যদি না কাজটি অবৈধ হয় এবং তাদের জীবনের ঝুঁকি না থাকে৷ আমরা ফেয়ারভেঞ্চার্সের ১০ কোটি গাছ প্রকল্পে তাই করতে চাইছি৷''
পাম তেল চাষের জন্য এই বনকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ এখন নতুন বন তৈরির জন্য চেষ্টা চলছে৷ স্থানীয় গ্রামবাসীরা এগিয়ে আসছেন৷ এতে তারা কিছুটা আয়ও করতে পারছেন৷ ব্যক্তি পর্যায়ের এবং জার্মান সরকারের ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট ইনিশিয়েটিভের অর্থে এ উদ্যোগ চলছে৷
চাষীরা ফেয়ারভেঞ্চারের কাছ থেকে সরাসরি বীজ সংগ্রহ করেন৷ তার আগে তাদের কেমন করে ও কোথায় তা লাগাতে হবে সে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷
ইন্দোনেশিয়া থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি টিন রপ্তানি করা হয়। এই টিন না থাকলে অকেজো হয়ে পড়তে পারে বিশ্বের ইলেক্ট্রনিক্স, খাবারের প্যাকেজিংসহ আরো বহু শিল্পক্ষেত্র।
ছবি: WILLY KURNIAWAN/REUTERS
নৌকায় চেপে টিনের খোঁজে
ইন্দোনেশিয়ার বাংকা দ্বীপ থেকে ছোট ছোট কাঠের নৌকায় চেপে টিন খোঁজায় পটু শ্রমিকরা কাজে যান প্রতিদিন। এই বিশেষ নৌকা বা পন্টুনের সাথেই লাগানো থাকে নানা ধরনের যন্ত্র, যা সাগরের গর্ভ থেকে কাঁচা টিন তুলতে পারে।
ছবি: WILLY KURNIAWAN/REUTERS
টিন শিল্পের বাস্তবতা
বাংকা দ্বীপ সংলগ্ন অঞ্চলের মাটিও টিনে ভরা। কিন্তু সেই টিনের রসদ প্রায় তলানিতে গিয়ে পৌঁছানোয় এখন সাগরের নিচের টিনের দিকে এগোচ্ছেন শ্রমিকেরা। ৫১ বিছর বয়সি হেন্ড্রা বলেন, “আমাদের জমি থেকে আয় কমছে। সেখানের রসদ ফুরিয়ে এসেছে। সাগরের তলায় এখনো অনেক টিনের রসদ রয়েছে।”
ছবি: WILLY KURNIAWAN/REUTERS
বোবা হয়ে কাজ করতে হয়
একসাথে অনেকগুলি পন্টুন নৌকায় চেপে শ্রমিকরা পৌঁছান টিনের রসদের কাছে। নানা ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে টিন তোলার কাজে এত জোরে শব্দ হয় যে শ্রমিকেরা একে অন্যের কথা শুনতে পান না। কাজ চালাতে হয় নানা অঙ্গভঙ্গি করেই।
ছবি: WILLY KURNIAWAN/REUTERS
যেভাবে তোলা হয় টিন
হেন্ড্রার রয়েছে এমন ছয়টি পন্টুন নৌকা, নৌকাপিছু তিন থেকে চারজন সহকারি। প্রায় ৬৬ ফুট লম্বা মোটা পাইপের সাহায্যে সাগরপৃষ্ঠের বালু থেকে টেনে বের করা হয় কাঁচা টিন। এই কাঁচা মিশ্রণকে বহুবার চালানো হয় প্লাস্টিকের জালের মধ্য দিয়ে, যার শেষে হাতে আসে চকচকে টিন।
ছবি: WILLY KURNIAWAN/REUTERS
টিন থেকে আয়
টিনমিশ্রিত বালুর কেজিপ্রতি শ্রমিকেরা পায় সত্তর থেকে আশি হাজার ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়াহ (বাংলাদেশি টাকায় ৫০০ টাকার কাছাকাছি)। গড়ে একদিনে একটি পন্টুন নৌকায় মোট ৫০ কেজি টিন মেশানো বালু ওঠে। টিন খনন সংস্থা পি টি টিমাহ জানাচ্ছে যে গত বছর এই অঞ্চল থেকে মোট ১৬ হাজার ৩৯৯ টন টিন তোলা সম্ভব হয়। কিন্তু শ্রমিক পরিবারের অনেকের মতে, এর থেকে সংসার চালানো দুষ্কর।
ছবি: WILLY KURNIAWAN/REUTERS
টিন খননের যা বিপদ
টিনের নতুন রসদের খোঁজ মেলার পর থেকে এই অঞ্চলে বাড়ছে অবৈধ খননের চক্র। শুধু তাই নয়, খননের ভারি যন্ত্রপাতির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় মৎস্যজীবীদেরও। ইন্দোনেশিয়ার প্রকৃতিপ্রেমীদের সংগঠন ওয়ালহি বলছে যে, এই বাংকা অঞ্চলে টিন খননের ফলে বিপন্ন হচ্ছে স্থানীয় প্রবাল, মাছ ও ম্যানগ্রোভ প্রজাতি।