1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিশুমৃত্যু কার দোষে?

হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে, ঢাকা১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ ঘন্টায় ১০ শিশুর মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় চলছে৷ ওই হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় শিশুসহ মারা গেছেন ৩২ জন৷ মারা যাওয়া শিশুদের স্বজনরা মনে করেন, চিকিত্‍সায় অবহেলার কারণেই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে৷

Krankenhaus in Bangladesch
ছবি: picture-alliance/dpa

সোমবার রাত ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ১০ ঘণ্টায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডসহ তিন ওয়ার্ডে ১০ শিশু মারা যায়৷ তাদের মধ্যে পাঁচ নবজাতক ৷ সোমবার তাদের জন্ম হয়েছিল৷ বাকি পাঁচ শিশুর মধ্যে সর্বোচ্চ দেড় বছর বয়সি শিশু রয়েছে৷

মারা যাওয়া শিশুরা হলো: রাজশাহীর শেখঘাট এলাকার নিলুফার, শহরতলীর শাহ পরানের আসমা এবং একই এলাকার সন্ধ্যা রানীর নবজাতক; হবিগঞ্জের ইয়াসমিন (বয়স ৩ দিন) ; সিলেটের জকিগঞ্জের দশগ্রামের আকাশ (৭ দিন); সুনামগঞ্জ সদরের তাজরিয়া ও মেহেদি (আড়াই মাস), বিশ্বম্ভরপুরের নাদিয়া (৬ মাস), ছাতকের শাপরাজ (দেড় বছর) এবং সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সায়মা (দেড় বছর)৷

হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আবদুস সালামের তথ্যমতে, ২৪ ঘন্টায় শিশুসহ ৩২ জন মারা গেছে৷ তাঁর মতে, প্রতিদিন গড়ে এই হাসপাতালে ১৪ জন মারা যায়৷ তবে ১০ ঘন্টায় ১০ শিশুর মৃত্যু অস্বাভাবিক বলে জানান তিনি৷

শিশু চিকিৎসা জাতির দায়িত্বছবি: Getty Images

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৫৬টি শয্যা আছে, কিন্তু ভর্তি আছে ১৬২ শিশু৷ নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত সমস্যায় শিশুদের সেখানে ভর্তি করা হয়৷

অভিভাবকদের অভিযোগ, চিকিত্‍সকদের অবহেলার কারণেই এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে৷ সিলেট নগরের শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশাচালক আবুল কালাম ও নিলুফা আক্তার দম্পতির প্রথম সন্তান মারা গেছে৷ রবিবার নিলুফা এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাঁর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়৷ সোমবার শিশুটিকে শিশু ওয়ার্ডে নেয়া হয়৷ মঙ্গলবার সকালে শিশুটি মারা যায়৷ প্রথম সন্তানের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন নিলুফা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘কোনো রোগে না, অবহেলায় আমার বাচ্চা মারা গেছে৷''

তবে ডা. আব্দুস সালাম দাবি করেন, শিশুরা বিভিন্ন রোগে মারা গেছেন৷ তিনি আরো জানান, '‘চিকিত্‍সকদের অবহেলার বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখবে৷ শিশু মুত্যুর এ ঘটনায় হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. ইসমাইল পাটোয়ারীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে৷'’

এদিকে ঢাকায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, শিশু মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷ এ জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ একদিনে এতগুলো শিশুর মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হবে৷ চিকিত্‍সকদের কোনো অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দীন মোহাম্মদ নুরুল হক অবশ্য দাবি করেন, ‘‘পাঁচ নবজাতক মারা গেছে জন্মকালীন শ্বাসরোধে৷ বাকি পাঁচ শিশু ডায়েরিয়া, নিউমোনিয়াসহ অন্য সমস্যায় মারা গেছে৷ আর পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদের মৃত্যু সম্পর্কে মহাপরিচালক বলেন, চোখের সমস্যা, হার্ট অ্যাটাক ও মারামারির ঘটনায় আহত পাঁচজন মারা গেছেন৷'

বাংলাদেশের চিকিত্‍সা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে নানা অভিযোগ আছে৷ হাসপাতালে সুযোগ সুবিধা না থাকা ছাড়াও চিকিত্‍সকদের হাসপাতাল ফেলে প্রাইভেট প্রাকটিস করা এর মধ্যে অন্যতম৷

বাংলাদেশে প্রতি দুই হাজার ৬৫৯ জনের বিপরীতে ডাক্তার মাত্র একজন৷ আর পাঁচ হাজার ২৩৫ জনের জন্য নার্সও মাত্র একজন৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে দেশে মোট সরকারি হাসপাতাল আছে ৫৭০টি৷ এর মধ্যে উপজেলা ও তার নিচের পর্যায়ে রয়েছে ৪৫৯টি৷ জেলা ও বিভাগ এবং বিশেষায়িত হাসপাতাল মিলে রয়েছে ১১৯টি৷

প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে যথাক্রমে দুই হাজার ২৭১ ও চার হাজার ৭৩৫টি৷ সারা দেশে মোট প্রাইভেট চিকিত্‍সকের সংখ্যা সাড়ে চার লাখ৷ এর মধ্যে ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিত্‍সক ও ডিগ্রিবিহীন চিকিত্‍সকের অনুপাত ১: ১২৷

এর বাইরে সারা দেশে ১৭ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক আছে৷

বাংলাদেশের চিকিত্‍সকদের বিরুদ্ধে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের পাশাপাশি কর ফঁকিরও অভিযোগ আছে৷

জাতীয় রাজস্ববোর্ডের অভিযোগ চিকিত্‍সকরা প্রাইভেট প্রাকটিস করলেও ৯০ শতাংশ চিকিত্‍সক তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেন না ৷ তাই তাদের চিহ্নিত করে করের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর৷ এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নিয়মিত বেতন পাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসা ও প্রাইভেট প্রাকটিস থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন চিকিত্‍সকরা৷ কিন্তু বেশিরভাগ চিকিত্‍সক বেতনের বাইরে বাড়তি উপার্জনের ওপর কর দেন না৷ কর ফাঁকি দিতে তাঁরা আয়কর বিবরণীতে প্রকৃত উপার্জনের চেয়ে কম হিসাব দেখান৷ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে ৬০ হাজার রেজিস্টার্ড চিকিত্‍সক রয়েছে৷ তবে এদের মধ্যে আয়কর দেন মাত্র ১০ হাজারের মতো চিকিত্‍সক৷ এছাড়া সারাদেশে বিপুল সংখ্যক নিবন্ধনহীন চিকিত্‍সক রয়েছেন যারা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখে প্রচুর অর্থ আয় করেন৷

এনবিআর-এর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল এরই মধ্যে ৫৩৭ জন চিকিত্‍সকের তালিকা করে তাদের আয়কর সংক্রান্ত তথ্যাবলী সংগ্রহ ও প্রস্তুত করেছে৷ এদের কারও চার্জ বা ফি ৫০০ টাকার নীচে নয়৷ কারও কারও ফি হাজার টাকারও বেশি৷ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, নামি-দামি চিকিত্‍সকরা দৈনিক ৩০ থেকে ৮০ জন রোগী দেখেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ