১০ ভারতীয় সেনাকে ফেরাল চীন
১৯ জুন ২০২০একজন লেফটন্যান্ট কর্নেল এবং তিনজন মেজর সহ দশজন ভারতীয় সেনাকে ফেরত দিলো চীন। দ্য হিন্দু সংবাদপত্রের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গালওয়ানে সংঘর্ষের সময় চীন তাঁদের আটকে রেখেছিল।
তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শুধু জানানো হয়েছে, কোনও ভারতীয় সেনা মিসিং নেই। ওই দিনের সংঘর্ষে ৭৬ জন সৈনিক আহত হয়েছিলেন। তাঁরা সকলেই চিকিৎসাধীন ও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। ১৬ জন লে-র হাসপাতালে আছেন। বাকিদের বিভিন্ন হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
সশস্ত্র না নিরস্ত্র
ভারতে এখন যে বিতর্কটা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে, সেটা হলো, ঘটনার দিন ভারতীয় জওয়ান এবং অফিসাররা কি খালি হাতে গিয়েছিলেন, না কি তাঁদের হাতে অস্ত্র ছিল? যদি অস্ত্র থাকে তো তাঁরা আক্রান্ত হয়েও তা ব্যবহার করলেন না কেন? আর যদি তাঁরা নিরস্ত্র অবস্থায় যান, তা হলে কে তাঁদের এই নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং কেন দিয়েছিলেন?
এই বিতর্ক উসকে দিয়েছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর দুইটি টুইট। তিনি বলেছেন, নিরস্ত্র ভারতীয় সেনাকে হত্যা করে চীন জঘন্য অপরাধ করেছে। কিন্তু আমি জানতে চাই, এই বীরদের বিনা হাতিয়ারে কারা পাঠিয়েছিলেন, কেন পাঠিয়েছিলেন, দায়ী কে? চীনের হাতে ২০ জন সেনার মৃত্যু ও করোনার জন্য রাহুল বৃহস্পতিবার তাঁর ৫০ তম জন্মদিনও পালন করছেন না।
এর জবাব দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। তিনিও টুইট করে বলেছেন, ''সীমান্তেসব সৈনিক সবসময় হাতে অস্ত্র রাখেন। বিশেষ করে তাঁরা যখন তাঁদের পোস্ট ছেড়ে যান। গালওয়ানেও ভারতীয় সেনাদের হাতে অস্ত্র ছিল। কিন্তু ১৯৬৬ ও ২০০৫ সালের চুক্তিতে বলা হয়েছে, বিরোধের সময় কোনও পক্ষই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে না।''
লেফটন্যান্ট জেনারেল এইচ এস পানাগ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ''অস্ত্র ব্যবহার না করার চুক্তি সীমান্ত ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে খাটে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে খাটে না। যখন সেনাদের জীবন বিপন্ন তখন কম্যান্ডিং অফিসার অবশ্যই গুলি চালাবার নির্দেশ দেবেন।''
জয়শঙ্করকে জবাব দিয়েছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং। প্রাক্তন সেনানী অমরিন্দর একটি টিভি বিতর্কে প্রবলভাবে আবেগতাড়িত ও ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন, ''জয়শঙ্করের দাবি ঠিক হলে বলতে হয়, জওয়ানরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গিয়েছিলেন এবং নিজেদের কম্যান্ড অফিসারকে চীনা সেনারা মারছে দেখেও গুলি চালাননি! এটা হতে পারে না। এমনটা হলে কর্নেলের মৃত্যুর পর যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তাঁর কোর্ট মার্শাল হওয়া উচিত।''
অমরিন্দর দশ বছর সেনায় ছিলেন। তিনি ভারত-চীন সীমান্তেও নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর সাফ কথা, ''জয়শঙ্কর যা বলছেন, আমি তা বিশ্বাস করি না। প্রথমত. তিনি ৪৮ ঘণ্টা পরে জানাচ্ছেন, সেনা সশস্ত্র ছিল। সেনাদের শেখানো হয়, আক্রান্ত হলে গুলি চালাতে হবে। ১৯৬৫-তে আমরা সেটাই করেছিলাম। চীন সীমান্তে আমরা যখন ডিউটি করেছি, তখন সবসময় বন্দুক নিয়ে করেছি। প্রাণঘাতী আক্রমণ হলে আমি সবসময় গুলি চালাবার নির্দেশ দেব।''
চীনা বুলডোজার
এনডিটিভির রিপোর্ট বলছে, তাঁদের কাছে উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি রয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে গালওয়ান নদীর পাশে চীনা বুলডোজার রয়েছে। এবং তারা সম্ভবত নদীর স্রোতকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। কারণ ভারতীয় এলাকায় গালওয়ান নদীর পাশে শুকনো এলাকায় সেনাবাহিনীর প্রচুর ট্রাক দাঁড় করানো ছিল। তবে ভারতীয় সেনা অফিসাররা জানিয়েছেন, গালওয়ান নদীর স্রোত আগের মতোই আছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুই পক্ষই সীমান্তে বিপুল সমাবেশ করেছে। চীনের দিকে দেখা যাচ্ছে, পাঁচ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে কেবল ট্রাক, বুলডোজার, সামরিক বাহন রয়েছে।
সর্বদলীয় বৈঠক
ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষ ও তারপরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই বৈঠকে সনিয়া গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদব সহ ২০টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা যোগ দেবেন।
জিএইচ/এসজি(দ্য হিন্দু, এনডিটিভি, পিটিআই)