জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ১১টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে সীসা পাওয়ার কথা মঙ্গলবার হাইকোর্টকে জানিয়েছে৷ এই কোম্পানিগুলোর দুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ বলে জানিয়েছিল আরেক সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই৷
বিজ্ঞাপন
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিসিএসআইআর, প্লাজমা প্লাস, ওয়াফেন রিসার্চ, পারমাণু শক্তি কমিশন ও আইসিডিডিআরবির ল্যাবে দুধ পরীক্ষা করা হয়েছে৷
মোট ১৪টি কোম্পানির দুধ পরীক্ষা করা হয়৷ এর মধ্যে মিল্কভিটা, ডেইরি ফ্রেশ, ইগলু, ফার্ম ফ্রেশ, আফতাব মিল্ক, আল্ট্রা মিল্ক, আড়ং ডেইরি, প্রাণ মিল্ক, আইরান, পিউরা ও সেইফ মিল্কের দুধে সীসা পাওয়া যায়৷
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী ফরিদ বলছেন, ২০০২ সালে বিএসটিআই পাস্তুরিত দুধের যে মান নির্ধারণ করেছিল তার ভিত্তিতেই দুধের নমুনা পরীক্ষা করে এই প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে৷ তবে দুধে অ্যান্টিবায়োটিক বা ডিটারজেন্টের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়নি৷
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগার (এনএফএসএল) এর এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল৷ এতে দুধে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক, অ্যান্টিবায়োটিক ও সীসা পাওয়া যাওয়ার কথা জানানো হয়েছিল৷ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় ঐ গবেষণাটি করা হয়৷
বিভিন্ন দৈনিকে ঐ গবেষণার ফল প্রকাশিত হলে ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলেছিল৷
গত ২৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক এক সংবাদ সম্মেলনে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন৷ এরপর শুরু হয় আলোচনা৷
বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া যত খাবার-কেলেঙ্কারি
অস্ট্রেলিয়ায় স্ট্রবেরির মধ্যে সুই পাওয়ার খবরে বাজার থেকে এই ফল প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ তবে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়৷ বিশ্বে এ যাবৎ খাবারে ক্ষতিকর উপাদান মেশানোর যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/A. Laule
সেপ্টেম্বর ২০১৮: অস্ট্রেলিয়ার স্ট্রবেরিতে সুই
দেশজুড়ে স্ট্রবেরির মধ্যে কাপড় সেলাইয়ের সুই পাওয়া যাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এর তদন্ত শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার৷ দেশটির সাতটি প্রদেশের ছয়টিতেই স্ট্রবেরিতে এই সমস্যা ধরা পড়েছে৷ ভেতরে সুইওয়ালা স্ট্রবেরি খেয়ে অসুস্থ হওয়া অন্তত একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/A. Laule
জানুয়ারি ২০১৮: জার্মান পাউরুটিতে পিন
এ বছর শুধু অস্ট্রেলিয়ানদেরই খাবারে কামড় দেওয়ার আগে ভাবতে হয়নি৷ গত জানুয়ারিতে জার্মানির দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় ওফেনবুর্গ শহরের একটি গ্রোসারি স্টোরের খাবারের মধ্যে ধাতব পিন পাওয়া যায়৷ সে সময় টোস্ট ব্রেড ও সালামি স্ন্যাকসহ বেশ কয়েকটি বেকারি পণ্যে এই পিন ধরা পড়ে৷
ছবি: picture-alliance
২০১৭: জার্মানিতে বিষাক্ত শিশু খাদ্য ও হুমকি
গত সেপ্টেম্বরে জার্মানির ফ্রিডরিশহাফেনে শিশু খাদ্যের জারে ক্ষতিকর রাসায়নিক ইথিলিন গ্লাইকল ধরা পড়ার পর দেশজুড়ে অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ এই রাসায়নিক কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করে, এমনকি এতে মৃত্যুও হতে পারে৷ সে সময় ৫৫ বছর বয়সি এক ব্যক্তি এক কোটি ইউরো দাবি করে তা না দিলে সুপারমার্কেটের অনেক খাদ্যপণ্যে বিষ মেশানোর হুমকি দেন৷ পরে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তিনি দোষ স্বীকার করে নেন৷
ছবি: picture alliance/Keystone/J. Zick
২০১৬: পাকিস্তানে প্রাণঘাতী মিষ্টি
পাকিস্তানের পাঞ্জাবে বিষাক্ত লাড্ডু খেয়ে ৩০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ পরে মিষ্টির দোকানের মালিকের ভাই স্বীকার করেন, পরিবারে ঝগড়ার পর মিষ্টিতে কীটনাশক মিশিয়েছিলেন তিনি৷ বিষাক্ত ওই খাবারে ৭০ জনের বেশি মানুষ অসুস্থ হয়েছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
২০০৩: ইটালিতে ‘আকুয়াবোম্বারের’ ধাক্কা
ইটালিতে দূষিত পানির বোতলের বিষয়ে সুপারমার্কেটগুলোকে বেশ কয়েক মাস ধরে খুব সতর্ক থাকতে হয়৷ সিরিঞ্জের মাধ্যমে বোতলের উপরের দিকে ব্লিচ ও অ্যাসিটোন ঢুকিয়ে দেওয়ার ঘটনার পর এই সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন দেখা দেয়৷ কট্টর পুঁজিবাদবিরোধী বা পরিবেশবাদী গ্রুপের সদস্যরা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে সে সময় সন্দেহ করেছিল পুলিশ৷ দূষিত ওই পানি পান করে ডজনের বেশি মানুষ অসুস্থ হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Zennaro
১৯৮২: টাইলেনল হত্যাকাণ্ড
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে টাইলেনল ব্র্যান্ডের ব্যথানাশক পিল খেয়ে সাত জনের মৃত্যু হয়৷ ওই সব পিলে পটাশিয়াম সায়ানাইডের উপস্থিতি পাওয়া যায়৷ তবে এই মৃত্যুর জন্য এখনো কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি এবং মামলাটিও অমীমাংসিত রয়ে গেছে৷ ওই ঘটনার পর ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো ওষুধের মোড়ক টেম্পার-রেজিট্যান্ট করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. C. Bower
২০১০: চিংড়িতে ভেজাল
বাংলাদেশের চিংড়িতে রাসায়নিক পদার্থ নাইট্রোফুরানের ক্ষতিকর মাত্রায় উপস্থিতি পাওয়ার পর তা নিয়ে অসন্তোষ জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এক পর্যায়ে ২০১০ সালে ইইউতে তা পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়৷ ছয় মাস পর রপ্তানি ফের শুরু হলেও বিশেষ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তা করতে হতো, প্রতিটি চালানের জন্য আলাদা স্বাস্থ্য সনদ দিতে হতো৷ পরে মানোন্নয়নের কারণে পাঁচ বছর পর ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এই কড়াকড়ি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়৷