গত ১১ বছরে তৈরি পোশাক শিল্পে আগুন আর ভবন ধস সহ নানা অঘটনে সাড়ে ৭শ’ পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন৷ আর সাভারের ঘটনা হিসেবে ধরলে সংখ্যাটা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো গার্মেন্টস মালিক শাস্তি পাননি৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ ইন্সটিউট অব লেবার স্টাডিজ-এর হিসেব অনুযায়ী ২০০২ সাল থেকে ২০১৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পে অঘটনে যে সাড়ে ৭শ' শ্রমিক নিহত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আগুন এবং ভবন ধসের ঘটনায় নিহত হন৷ আর আহত হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক৷ এদের মধ্যে বড় একটি অংশ পঙ্গু হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন৷ কিন্তু নিহত এবং আহতদের পরিবার অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিপূরণ পাননি৷ আবার যারা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তা নামমাত্র৷ বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম রনি ডয়চে ভেলেক জানান, এপর্যন্ত এইসব ঘটনার জন্য দায়ী কোনো মালিক শাস্তি পাননি৷ তিনি বলেন রানা প্লাজার ঘটনার আগে তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুনে শ্রমিকদের প্রাণ গেলেও মালিককে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি৷ অথচ তাজরীন ফ্যাশানস-এর অগ্নি নিরাপত্তার কোনো লাইসেন্সই ছিলনা৷
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সভাপতি আতিকুল ইসলাম অবশ্য দাবি করেছেন প্রতিটি ঘটনায়ই বিজিএমইএ'র পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয়েছে৷ সরকারও তদন্ত করেছে৷ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে মামলাও হয়েছে৷ বাকিটা দেশের প্রচলিত আইন এবং বিচার ব্যবস্থার বিষয়৷ তিনি বলেন রানা প্লাজার ঘটনায় তারা কোনো ছাড় দেননি৷ দুজন মালিক আটক হয়েছেন৷ তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে৷ আর ওই ভবনের পোশাক কারখানার শ্রমিকদের চলতি মাসের বেতন বিজিএমইএ'র পক্ষ থেকে পরিশোধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷ তিনি জানান ত্রুটিপূর্ণ পোশাক কারখানার তালিকা তৈরির একটি উদ্যোগ নিয়েছেন তারা৷ এই তালিকা তৈরি করে তারা সেখানে কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেবেন৷
সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ধসে বহু হতাহত
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷
ছবি: Reuters
আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷ সাভার মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকালে ফাটল দেখা দেয়ার পরপরই ওই ভবনে থাকা চারটি গার্মেন্ট কারখানা ও ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ তবে ২৪ এপ্রিল সকালে কারখানায় আবার কাজ শুরু হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বহু হতাহত
১০ মে সকাল পর্যন্ত ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে ১০৩৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এসব লাশের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই’
ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বলছেন, ব্যাপক ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে৷ এমন ধ্বংসস্তূপ সরানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই৷ এ কারণে উদ্ধারকাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters
এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন
সাভারে ধসে পড়া বহুতল ভবনে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা৷ সকালে ভবন ধসের পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে আসেন৷ এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন৷
ছবি: Reuters
রক্ত চাই
ধ্বংসস্তুপ থেকে থেকে উদ্ধার করা শত শত আহতের জন্য প্রচুর রক্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷ এজন্য ব্লগ, ফেসবুকের মাধ্যমে সকলকে রক্ত দানে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ বিভিন্ন সংগঠনও রক্ত সংগ্রহে নেমেছে৷
ছবি: Reuters
জোর করে ঢোকানোর অভিযোগ
আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় ঐ ভবনে থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যেতে না চাইলেও মালিকরা তাদেরকে জোর করে ঢুকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷
ছবি: Reuters
ইমারত বিধিমালা মানা হয়নি
‘রানা প্লাজা’ ইমারত বিধিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করে নির্মিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর৷ বুধবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন৷ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷'' (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
হরতাল প্রত্যাহার
উদ্ধার তৎপরতা নির্বিঘ্ন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার পথে বাঁধা দূর করতে হরতাল প্রত্যাহার করেছে বিএনপি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: Harun Ur Rashid
সরকারের আশ্বাস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার৷
ছবি: dapd
খালেদার শোক প্রকাশ
ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ উদ্ধারকাজ যথাযথভাবে চালাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ খালেদা জিয়া শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
শ্রম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইস্রাফিল আলম এমপি স্বীকার করেন যে এখন পর্যন্ত কোনো গার্মেন্টস মালিক শাস্তি পাননি সত্য, কিন্তু সরকার এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে৷ তিনি বলেন সরকারের অবস্থানের কারণেই ২ জন গার্মেন্টস মালিক গ্রেফতার হয়েছেন৷ বাকি মালিকরাও গ্রেফতার হবেন৷ কাউকেই ছাড় দেয়া হবেনা৷ তিনি জানান সরকার তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ এজন্য পোশাক কারখানাগুলোতে সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷