রেকর্ড করলেন ম্যাকার্থি। ১১ বার ভোট হলো। রিপাবলিকান নেতা জিততে পারলেন না। তার এখনো স্পিকার হওয়া হলো না।
বিজ্ঞাপন
১৮৬০-এর পর থেকে এমন ঘটনা আর ঘটেনি। ১১ বার ভোটাভুটি হলো, অথচ হাউসের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা স্পিকার হতে পারলেন না, এই নজির আর নেই। প্রতিটি ভোটেই রিপাবলিকান পার্টির ২০ জন সদস্য ম্যাকার্থির বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছেন। ফলে তিনি স্পিকার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গরিষ্ঠতা পাচ্ছেন না।
১৮৬০ সালে ৪৪ বার ভোটাভুটির পর স্পিকার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিল। তবে তখন দাস প্রথার বিষয়টি হাউসের সামনে ছিল। এখন তেমন গুরুতর কোনো বিষয় নেই। কিন্তু রিপাবলিকান দলে ম্যাকার্থির বিরোধীরা বলছেন, তারা ম্যাকার্থিকে বিশ্বাস করেন না।
বিক্ষুব্ধ সদস্য নর্মান বিবিসিকে বলেছেন, ম্যাকার্থির উপর তাদের আস্থা নেই। তিনি যা বলেন, তা করেন বলে তারা বিশ্বাস করেন না। তিনি জানিয়েছেন, ম্যাকার্থির টিম তাদের হুমকি দিচ্ছে। বিরূপ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার কথা বলছে। আর তারা বলছেন, ব্যবস্থা নিতে হলে ম্যাকার্থিকে আগে স্পিকার হতে হবে। তারা তাকে স্পিকার হতেই দেবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের যেসব দিকে নজর সবার
গত কয়েকমাসে প্রতিনিধি বাছাই, নির্বাচনি প্রচারণা এবং তহবিল সংগ্রহের নানা উদ্যোগ দেখা গেছে মার্কিন মুল্লুকে৷ এবার মধ্যবর্তী নির্বাচন ওয়াশিংটনে ক্ষমতার ভারসাম্য ঠিক করে দেবে৷ নির্বাচনে গুরুত্ব পাচ্ছে নানা কিছু৷ চলুন দেখি৷
ছবি: picture-alliance/J. Schwenkenbecher
মধ্যবর্তী নির্বাচন মঙ্গলবার
২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন মূলত অনুষ্ঠিত হচ্ছে মঙ্গলবার৷ এই নির্বাচনে রিপাবলিকানরা ব্যাপক সমর্থন পাওয়ার আশা করছেন৷ অন্যদিকে, কংগ্রেসে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ডেমোক্রেটরা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখা নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে৷ অর্থনীতির দুরবস্থা, অপরাধ, প্রেসিডেন্টের কারিশমা, গর্ভপাত আইনের মতো বিষয়াদি এই নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারে৷
ছবি: Brandon Bell/REUTERS
লালদের জনপ্রিয়তা কি বাড়ছে?
মঙ্গলবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের পক্ষে সমর্থন বাড়বে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ কিন্তু সেটার বিস্তৃতি কতটা হবে তা এক্ষুণি বলা মুশকিল৷ মুদ্রাস্ফীতি এবং রাজনৈতিক বিভাজন বাড়ায় ভোটারদের মধ্যে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে হতাশা কাজ করছে৷ আর ইতিহাস বলছে ভোটাররা সাধারণত ক্ষমতাসীনদের উপরেই তাদের হতাশার দায় চাপায়৷
ছবি: Eva Marie Uzcategui/AFP/Getty Images
ডেমোক্রেটদের আশা গর্ভপাত আইন
ডেমোক্রেটরা আশা করেছিলেন যে গর্ভপাতের অধিকার বাতিল সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তা হারানোর ঐতিহাসিক ধারায় বিঘ্ন ঘটাবে বা ক্ষতি কমাবে৷ কিন্তু নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়েছে দলটির নেতাদের মধ্যে এই আশা ততটাই কমেছে বলে মনে হয়েছে৷ রিপাবলিকান দলে গর্ভপাতবিরোধী যারা আছেন তাদের ভোট কমতে পারে৷
ছবি: Getty Images/E. Nouvelage
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে রিপাবলিকানরা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হতে পারে৷ এজন্য দলটির আরো পাঁচটি আসন প্রয়োজন৷ হয়ত এরচেয়ে বেশি আসনও পেয়ে যেতে পারে দলটি৷ আর এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে ডেমোক্রেটদের কিছু এলাকায় বেশ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন রিপাবলিকানরা৷
ছবি: Mandel Ngan/AFP
সিনেট জয় আরো সহজ
মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ডেমোক্রেটদের অবস্থা আরো নাজুক৷ রিপাবলিকানরা আরেকটি আসন পেলেই উচ্চকক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Schwenkenbecher
ল্যাটিনো ভোটাররা কি আরো ডানে সরবে?
২০২০ সালের নির্বাচনে ল্যাটিনোদের সমর্থন খুব একটা পায়নি ডেমোক্রেটরা৷ কিন্তু এবার সেই পরিস্থিতি বদলাবে এমন আশাও করা যাচ্ছে না৷ কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মেক্সিকো-মার্কিন সীমান্ত সমস্যার তেমন কোনো সমাধান দিতে পারেননি৷ অন্যদিকে, এই গোষ্ঠীর মধ্যে রিপাবলিকানদের প্রতি সমর্থন বেড়ে চলেছে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এখনো রিপাবলিকান পার্টিতে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন৷ যদিও তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যালটে নেই, তার সমর্থন পাওয়া বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন৷ এই প্রার্থীরা যদি ভালো না করেন তাহলে ২০২৪ সালে আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের লড়াই করার সম্ভাবনা প্রশ্নবিদ্ধ হবে৷
ছবি: Kyle Mazza/AA/picture alliance
২০২৪ এর নির্বাচনের রূপরেখা
মার্কিন এই মধ্যবর্তী নির্বাচন কার্যত ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলগুলোর অবস্থান কী হতে যাচ্ছে তা ঠিক করে দেবে৷ রিপাবলিকানরা বড় জয় পেলে ট্রাম্পের আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের পথ তৈরি হতে পারে, অন্যদিকে ডেমোক্রেটদের দুর্বল ফলাফল বাইডেনের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে টিকে থাকার লড়াই কঠিন করে দেবে৷
ছবি: Saul Loeb/AFP
8 ছবি1 | 8
ম্যাকার্থি অবশ্য বিক্ষুব্ধদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সদস্য করার কথা বলেছেন। আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা জানিয়েছেন।
কিন্তু বিক্ষুব্ধরা তাদের বক্তব্যে অনড়। তাদের দাবি, ম্যাকার্থিকে সরে দাঁড়াতে হবে। তাদের বিশ্বাসভাজন কোনো নেতাকে স্পিকার করতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে ম্যাকার্থি তাদের আরো গুরুত্বপূর্ণ পদ দিতে রাজি হবেন কিনা, সেই প্রস্তাব বিক্ষুব্ধরা মানবেন কিনা, তার উপর নির্ভর করছে, কে স্পিকার হবেন।
গত তিনদিন ধরে হাউসে শুধু ভোটাভুটি হচ্ছে। আর কোনো কাজ হচ্ছে না। তাতে উদ্বিগ্ন হয়ে কয়েকজন রিপাবলিকান সদস্য বলেছেন, ব্যক্তিগত রাজনীতির বাইরে গিয়ে দেশের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।