ডাচ গবেষকরা আশা করেছিলেন যৌন উত্তেজক এই ওষুধ অপরিপক্ব ভ্রুণের পরিপক্ব হওয়ায় সহায়তা করবে৷ কিন্তু হলো ঠিক তার বিপরীত৷ পরীক্ষায় অংশ নেয়া নারীরা দেখলেন, তাঁদের সন্তানদের ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘদিন গবেষণার পর ২৩ জুলাই ডাচ গবেষকরা এই গবেষণা বন্ধের ঘোষণা দেন৷ গর্ভবতী নারীদের ওপর ভায়াগ্রা প্রয়োগের ফলে ১১ শিশু ফুসফুসের সমস্যায় মারা গেছে বলেও জানান তাঁরা৷
১১টি ডাচ হাসপাতালের সাথে মিলে আমস্টারডাম ইউনিভার্সিটির ‘অ্যাকাডেমিক মেডিকেল সেন্টার' (এএমসি) এই গবেষণা চালিয়েছে৷ গর্ভের ভ্রুণ বেশি অপরিপক্ব, এমন মায়েদের ওপর প্রয়োগ করা হয় সিলডেনাফিল, সাধারণভাবে যাভায়াগ্রা নামে পরিচিত৷
ভায়াগ্রা প্রয়োগে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়৷ এএমসি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আগের এক গবেষণায় দেখা গেছে এর ফলে ভ্রুণের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়৷
ফলে ডাক্তাররা দেখতে চেয়েছিলেন এই ড্রাগের প্রয়োগে ‘ভূমিষ্ঠ না হওয়া শিশুর বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় কিনা'৷ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘‘প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, শিশুর জন্মের পর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে৷'' এএমসি আরো জানিয়েছে, সাম্প্রতিক পরীক্ষায় যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা আগে কখনও দেখা যায়নি৷
ভায়াগ্রায় ভরসা
ভায়াগ্রা নিয়ে অনেকেরই অনেক ভুল ধারণা আছে৷ এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কী কী ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয় এই ওষুধটি৷ কারাই বা ব্যবহার করেন ভায়াগ্রা?
ছবি: Fotolia/jopix.de
প্রি ম্যাচিওর শিশুদের ওষুধ
একটি মেডিক্যাল জার্নাল জানাচ্ছে, প্রি ম্যাচিওর শিশুদের ক্ষেত্রে ভায়াগ্রা খুবই জরুরি ওষুধ৷ বিশেষত যেসব শিশুর জন্ম ৩৭ সপ্তাহের আগে হয়ে যায়, তাদের শরীরে নানারকম সমস্যা দেখা যায়৷ অধিকাংশেরই ফুসফুসে সমস্যা থাকে৷ সে সময় ইনকিউবিটরে রেখে শিশুদের চিকিৎসা হয়৷ ব্যবহার করা হয় ভায়াগ্রা৷ রক্তনালীতে অক্সিজেন সরবরাহে যা সাহায্য করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
ফুলের ভায়াগ্রা
ফুলের ব্যবসা সারা পৃথিবীতেই হচ্ছে৷ বহু মানুষ এ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত৷ কিন্তু এ ধরনের ব্যবসায় ঝুঁকিও বেশি, কারণ, ফুল খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যায়৷ শুকিয়ে যায়৷ ফুলকে সতেজ রাখার জন্য অনেকেই ব্যবহার করেন ভায়াগ্রা৷ ইসরায়েল এবং অস্ট্রেলিয়ার গবেষকেরা দেখেছেন, ১ মিলিগ্রাম ভায়াগ্রা ফুলদানির জলে মিশিয়ে দিলে ফুলের জীবনকাল দু’গুণ হয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Hirschberger
জেট ল্যাগে ভায়াগ্রা
২০০৭ সালে আর্জেন্টিনার গবেষকেরা আবিষ্কার করেন যে, জেট ল্যাগে ভায়াগ্রা একটি অব্যর্থ ওষুধ৷ তবে মানুষের ওপর তাঁদের পরীক্ষাটি করেননি ওই গবেষকেরা৷ ফলে জেট ল্যাগ হলে সত্যিই ভায়াগ্রা মানুষের উপকারে আসবে কিনা, সে বিষয়ে বহু সমালোচনাও আছে তাঁদের বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/beyond
সাইকেল চালালে ভায়াগ্রা
অতীতে অ্যাথলিটদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে ভায়াগ্রা তেমন সাহায্য করে না বলেই জানিয়েছিলেন গবেষকেরা৷ কিন্তু ২০০৬ সালের একটি গবেষণা বলছে, উঁচু পাহাড়ে সাইক্লিস্টদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, ভায়াগ্রা তাদের অতিরিক্ত কর্মক্ষম করে তুলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
বন্যজন্তুদের বাঁচান
একসময় মনে করা হতো গন্ডারের সিং, হরিণের কস্তুরী, শিল মাছের যৌনাঙ্গ দিয়ে তৈরি ওষুধ খেলে যৌনজীবন সুখের হয়৷ যৌনতা অক্ষম ব্যক্তিদেরও ওই সমস্ত জিনিস দিয়ে তৈরি ওষুধ খাওয়ানো হতো৷ কিন্তু ভায়াগ্রা আবিষ্কারের পর বাজারে ওই সমস্ত ওষুধের চাহিদা কমে৷ বন্যপ্রাণ হত্যার পরিমাণও চোখে পড়ার মতো কমে যায়৷
ছবি: Reuters/Baz Ratner
তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভায়াগ্রা
যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের গোপন তথ্য পাওয়া জন্য স্থানীয় মানুষকে উৎকোচ দেওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ কিন্তু জিনিস বা টাকা দেওয়া পুরনো হয়ে গিয়েছে৷ সব সময় তাতে কাজও হয় না৷ আফগানিস্তানে তালিবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় মার্কিন সেনারা অনেক সময়েই ভায়াগ্রা উপহার দিতেন৷ স্থানীয় আদিবাসীদের মধ্যে বহু বিবাহের চল আছে৷ বহু বিবাহ সেখানে স্বাভাবিক৷ বহু বয়স্ক মানুষেরই তরুণী বউ৷ ভায়াগ্রা তাদের খুবই উপকারে লাগতো৷
ছবি: F.Belaid/AFP/Getty Images
মেয়েদের ভায়াগ্রা
বহু অনলাইন দোকান মেয়েদের জন্যও ভায়াগ্রা বিক্রি করে৷ তাদের দাবি, মহিলাদেরও যৌন জীবনে ভায়াগ্রা উত্তেজিত করে৷ কিন্তু বাস্তবে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না৷ অনেকেই গবেষণা করে দেখেছেন যে, মহিলাদের জীবনে ভায়াগ্রার কোনো প্রভাব নেই৷ অনলাইন দোকানগুলির তথ্য সম্পূর্ণ ভুয়া৷
ছবি: Reuters/Sprout Pharmaceuticals
ভায়াগ্রা ফ্যান
অভিনেতা মাইকেল ডগলাস মনে করেন, ভায়াগ্রা একটি অসাধারণ ওষুধ৷ভায়াগ্রার বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছে বব ডোলের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের প্রার্থীকেও৷ ‘গডফাদার’ ছবির বিখ্যাত অভিনেতা জেমস কান একসময় বলেছিলেন যে, তিনি সামান্য ভায়াগ্রা নিয়ে থাকেন৷ ২০১০ সালে ‘প্লে বয়’ ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা হিউ হেফনার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, ঈশ্বরের সেরা সৃষ্টির অন্যতম ভায়াগ্রা৷
ছবি: picture-alliance/B. Purvis/AdMedia
8 ছবি1 | 8
২০১৫ সাল থেকে ১৮৩ জন গর্ভবতী মায়ের ওপর এ পরীক্ষা চালানো হয়৷ ৯৩ নারীকে দেয়া হয় ভায়াগ্রা, বাকিদের দেয়া হয় প্লাসিবো নামের অন্য এক ওষুধ৷
ভায়াগ্রা গ্রহণকারীদের মধ্যে ১৯ জনের সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরই মারা যায়৷ এর মধ্যে ১১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে ফুসফুসে অতিরিক্ত রক্তচাপে, যা ভায়াগ্রার কারণেই হয়েছে বলে ধারণা গবেষকদের৷ আরো ৬ শিশুর ফুসফুসে সমস্যা থাকলেও তাঁরা বেঁচে আছে৷
অন্যদিকে প্লাসিবো গ্রুপের ৯০ বাচ্চা মৃত্যুবরণ করলেও, তাঁদের কারোরই ফুসফুসে সমস্যা ছিল না৷ এই গ্রুপের বেঁচে থাকা বাচ্চাদের তিনজনের ফুসফুসে একই ধরনের সমস্যা থাকলেও, তাঁদের সবাই বেঁচে আছে৷
এরই মধ্যে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে তার ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন এএমসির গবেষকরা৷
ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফিজেল প্রথম ভায়াগ্রা নিয়ে আসে বাজারে৷ সাধারণত, পুরুষদের যৌন উত্তেজক হিসেবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে৷
‘শিশু কাঁদলে, তাকে কোলে তুলে নিন’
বাচ্চা কাঁদলে কোলে তুলে নেয়াটাই স্বাভাবিক, বিশেষ করে উপ-মহাদেশের বাবা-মা এবং পরিবারের মানুষদের কাছে৷ এ নিয়ে তাঁদের মনে কোনো প্রশ্ন নেই৷ কিন্তু জার্মানিতে? চলুন বিস্তারিত জানা যাক এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: Fotolia/st-fotograf
শিশুরা কাঁদে কেন?
যে কোনো শিশুই চিৎকার করে কেঁদে তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর জানিয়ে দেয়৷ তারপরও কারণে-অকারণেই ওরা কাঁদে৷ এই সুন্দর ভুবনের সাথে মানিয়ে নিতে ওদের যেমন কিছুটা সময় লাগে, তেমনই নতুন মা-বাবারও লাগে খানিকটা সময় সব কিছু গুছিয়ে নিতে৷ যা খুবই স্বাভাবিক৷
ছবি: Fotolia/S.Kobold
আমার কান্না কেউ কি শুনছে না?
মাঝে মাঝে শিশুরা চিৎকার করে ওঠে, বিশেষ করে কাছাকাছি অনেকক্ষণ কোনো শব্দ শুনতে না পেলে৷ অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই হয়ত তখন কাঁদে তারা৷ মজার ব্যাপার, ঐ মুহূর্তে কেউ কাছে গিয়ে কথা বললে বা কোলে তুলে নিলে সাথে সাথেই শিশুদের কান্না থেমে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাঙালি বাবা-মায়ের সন্তান
দেশে সন্তান জন্মের পর থেকেই সে বাচ্চা কোলে কোলে থাকে৷ বাচ্চা কাঁদুক আর না কাঁদুক৷ নতুন মা সারাক্ষণই তাঁর শিশুটিকে নিয়ে ব্যস্ত আর সেই শিশু সর্বক্ষণই পেয়ে থাকে মায়ের শরীরের উষ্ণতা৷ শিশুকে কোলে নেওয়ার জন্য বাবা-মা ছাড়াও আত্মীয়স্বজন থাকেন৷ এছাড়া, বাচ্চাকে শুধু দেখাশোনা করার জন্য আলাদা লোকও অনেক সময় রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/Joker
জার্মান শিশু
জার্মানিতে কোনো শিশু কাঁদলেই চট করে কোলো তুলে নেওয়া হতো না কয়েক বছর আগ পর্যন্তও৷ শিশু কাঁদলে ওকে শুইয়ে রাখা হতো৷ এক সময় সেই ছোট্ট শিশু কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পরতো৷ কারণ, মা সারাক্ষণ বাচ্চাকে কোলো নিলে বাড়ির অন্য কাজ কে করবে? রাতে প্রতিদিন ঘড়ি ধরে একই সময়ে বাচ্চাকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হতো ঘর অন্ধকার করে৷ বলা বাহুল্য জার্মানিতে গ্রীষ্মকালে প্রায় ১১টা পর্যন্ত বাইরে সূর্যের আলো থাকে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Timothy Clary
সময় পাল্টেছে, বদলেছে চিন্তাধারা
একদিকে যেমন জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলিতে প্রযুক্তি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশেরও কিছু বিষয় গ্রহণ করতে শুরু করেছে তারা৷ শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. গেন কামেদা বলেন, পশ্চিমের সংস্কৃতিটা এমন যে শিশুরা মায়ের শরীরের উষ্ণতা কম পায়, কারণ এ দেশে বাচ্চারা বিছানায় বেশি সময় থাকে আর এটাই হয়ত শিশুদের রাতে কান্নাকটি করার বড় কারণ৷
ছবি: Yuri Arcurs/Fotolia
নতুন বাবা-মা
নতুন মা-বাবার নানা প্রশ্ন, শিশুটির কান্নার কারণ তাঁরা বুঝতে পারেন না৷ ক্ষুধা, শরীর খারাপ, ক্লান্ত নাকি আদর, কি চায় বেবিটি? আসলে শরীরের উষ্ণতা পেলে শিশুরা সব কিছুই ভুলে যায়, যদি না বড় কোনো শারীরিক কষ্ট থেকে থাকে, বলেন ডা. কামেদা৷ তাঁর পরামর্শ, পিতা-মাতা হলে অনেককিছুই বাদ দিতে হয়, তাই বাইরে গেলে শিশুকে কোলে করে সঙ্গে নেবার চেষ্টা করবেন – যাতে শিশুটি শরীরের উষ্ণতা পায়৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ডাক্তারের পরামর্শ
নতুন বাবা-মায়ের জন্য ডাক্তার কামেদার আরো পরামর্শ, শিশুর কাছাকাছি থাকুন, শিশুকে সময় দিন, কোলে তুলে নিন৷ অল্প কিছুদিন পরেই দেখবেন, শিশু শুধু কাঁদেই না, বরং খুব শীঘ্রই তারা হাসতে শিখবে, হাসাবে মা-বাবাকেও৷