২০২০ সালে রেকর্ড মাত্রায় অ্যামাজন ধ্বংস হয়েছে। পরিবেশবিদরা এর জন্য দায়ী করছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টকে।
বিজ্ঞাপন
দুশ্চিন্তায় পরিবেশবিদরা। গত ১২ বছরের নিরিখে ২০২০ সালে সব চেয়ে বেশি ধ্বংস হয়েছে অ্যামাজন জঙ্গল। মাত্র এক বছরে ১১ হাজার ৮৮ বর্গ কিলোমিটার জঙ্গল কেটে ফেলা হয়েছে বলে সম্প্রতি একটি রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে। পরিবেশবিদরা এই ঘটনার জন্য আঙুল তুলছেন ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারোর দিকে। তাঁদের দাবি, বলসোনারোই জঙ্গল কাটতে উৎসাহ দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্টের স্বপ্ন যাঁদের জন্য দুঃস্বপ্ন
ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারো সম্প্রতি তাঁর স্বপ্নের কথা শুনিয়েছেন৷ তবে সেই কথা শুনে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অ্যামাজনে বাস করা আদিবাসীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/Brazil's National Indian Foundation Photo
প্রেসিডেন্টের স্বপ্ন
ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারো গত বুধবার একটি নতুন বিল প্রস্তাব করেছেন৷ কংগ্রেসে এটি পাস হলে অ্যামাজনে খনি, কৃষিকাজ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন সহজ হবে৷ তিনি আশা করছেন, তাঁর এই ‘স্বপ্ন’ পূরণ হবে৷
ছবি: AFP/S. Lima
আদিবাসীদের দুঃস্বপ্ন
ব্রাজিলের আদিবাসী সংগঠনের কর্মকর্তা সোনিয়া গুয়াজাজারা বলছেন, ‘‘বলসোনারোর স্বপ্ন আমাদের জন্য দুঃস্বপ্ন৷ এটা আমাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে৷ খনি কোম্পানি মৃত্যু, রোগ আর কষ্ট নিয়ে আসে৷ এবং এটা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ শেষ করে দেবে৷’’ ব্রাজিলে কমপক্ষে একশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস, যাঁদের এখনও বাইরের বিশ্বের ছোঁয়া লাগেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/Brazil's National Indian Foundation Photo
‘ট্রপিক্যাল ট্রাম্প’
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ভাবনা যেমন, প্রায় তেমন ভাবনা ব্রাজিল প্রেসিডেন্টেরও৷ তাই অনেকে তাঁকে ‘ট্রপিক্যাল ট্রাম্প’ নামেও ডাকেন৷ গতবছর দায়িত্ব নেয়ার পর অ্যামাজন বিষয়ে বলসোনারোর নেয়া বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করেছেন পরিবেশকর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Walsh
প্রেসিডেন্টের হুমকি
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে অ্যামাজন রক্ষা করতে চান পরিবেশবাদীরা৷ তাই নতুন বিল উত্থাপন করতে গিয়ে তাঁদের একহাত নিয়েছেন বলসোনারো৷ তিনি বলেছেন, ‘‘আমি জানি পরিবেশকর্মীরা আমাদের উপর চাপ দেবে৷ পারলে আমি তাঁদের অ্যামাজনে বন্দি করে রাখতাম, কারণ তাঁরা পরিবেশ খুব পছন্দ করেন৷’’
ছবি: Reuters/U. Marcelino
আইন সহজ করেছেন
গবেষক ব্রেন্ডা ব্রিতো বলছেন, ব্রাজিলের আইন জমি দখল ও বন ধ্বংসকারীদের পক্ষে৷ ‘‘এটি (এই আইন) আপনাকে জমি দখলের অনুমতি দেয়, যদি আপনি একে কাজে (বৈধ কাজ) লাগানোর ভান করেন, এবং এরপর জমির মালিকানা দখল করে নেন৷’’ বলসোনারো এই আইন আরও সহজ করে জমি দখলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ এছাড়া আগে যেখানে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জমি নিয়ন্ত্রণে থাকলে মালিক হওয়া যেত সেখানে নতুন আইনে ঐ সময়সীমা বাড়িয়ে ২০১৪ সাল করা হয়েছে৷
ছবি: AFP/C. de Souza
এলাকা দ্বিগুন হয়েছে
বলসোনারো আসার পর গতবছর ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অ্যামাজন ধ্বংস হয়েছে৷ আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার হাজার ২১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা ধ্বংস হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশি৷
ছবি: AFP/R. Alves
প্রতিবাদ করলে হুমকি
স্থানীয়রা জমি দখল ও বন ধ্বংসের প্রতিবাদ করলে তাঁদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়৷ যেমন স্থানীয় নেতা দে মেলো থাকেন নভো প্রোগ্রেসো এলাকায়৷ গতবছর ঐ এলাকার অ্যামাজনে আগুন লাগার ঘটনা বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল৷ দে মেলো প্রতিবাদ করায় তাঁর ছেলেকে মারধর করা হয়েছে৷ এছাড়া ২০১৮ সালে তাঁর গ্রামের তিনজনকে হত্যা ও অন্তত ১৬ জনকে হুমকি দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/M. Carwardine
7 ছবি1 | 7
পৃথিবীর মোট কার্বন নিঃসরণের একটি বড় অংশ টেনে নেয় অ্যামাজনের জঙ্গল। যে কারণে এই জঙ্গলকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়। প্রায় ৩০ লাখ গাছের স্পিসিস এবং জন্তু ও কীট পতঙ্গ রয়েছে এই জঙ্গলে। রয়েছে প্রায় দশ লাখ জনজাতি। দীর্ঘদিন ধরে এই জনজাতিই জঙ্গলকে রক্ষা করে চলেছে। সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ক্রমান্বয়ে ধ্বংস করা হয়েছে জঙ্গলকেও। কিন্তু গত দুই দশকে জঙ্গল কাটার প্রবণতা খানিক কমেছে। তার সব চেয়ে বড় কারণ, বিশ্ব জুড়ে পরিবেশ সচেতনতা বেড়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। পরিবেশবিদদের বক্তব্য, অ্যামাজনের জন্য বিশ্ব উষ্ণায়নের মাত্রা প্রতিহত করা সম্ভব হচ্ছে।
ব্যাঙ হয়ে অ্যামাজনে ঘুরতে কেমন লাগে?
04:06
সমস্যা হলো, ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বলসোনারো পরিবেশ নিয়ে তত চিন্তিত নন। প্রকাশ্যেই তিনি অ্যামাজন ধ্বংসের সপক্ষে সওয়াল করেন। ২০১৯ সালে অ্যামাজন অঞ্চল থেকে খনিজ সম্পদ সংগ্রহের জন্য জঙ্গল কাটার ছাড়পত্র তিনি দিয়েছিলেন। অ্যামাজন অঞ্চলে চাষবাসের ছাড়পত্রও তিনি দিয়েছেন। যা নিয়ে বহু প্রতিবাদ হয়েছে।
পরিবেশবিদদের বক্তব্য, ২০০৮ সালে অ্যামাজনের সাত হাজার ৫৩৬ বর্গফুট ধ্বংস করা হয়েছিল তথাকথিত উন্নয়নের জন্য। তখনো বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক হয়েছিল। এর পর অ্যামাজন রক্ষার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছিল। ২০১৯ সালে বলসোনারো ক্ষমতায় এসে সেই সমস্ত সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নতুন করে জঙ্গল ধ্বংস করতে শুরু করেছেন। পরিবেশবিদরা বলছেন, যে ভাবে জঙ্গল নষ্ট হয়েছে গত এক বছরে, তা যদি চলতে থাকে, তা হলে অচিরেই এর প্রভাব আবহাওয়ায় পড়তে শুরু করবে।