১২ হাজার শিক্ষকের নিয়োগে স্থগিতাদেশ তুললো সুপ্রিম কোর্ট
২৯ জানুয়ারি ২০২৪
নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্দেশকে মান্যতা দিলো। স্থগিতাদেশ তুলে নিলো।
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গে ১২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকলো না। সুপ্রিম কোর্ট এর উপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছে। প্যানেলের নাম প্রকাশের ক্ষেত্রেও আর কোনো বাধা থাকছে না।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই রায় দিয়েছিলেন। তাকেই মান্য়তা দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
২০২২ সালে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। পর্যদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, যারা ডিএলএডের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, তারাও আবেদন জানাতে পারবে। তা নিয়ে মামলা হয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পর্ষদের বিজ্ঞপ্তির পক্ষে রায় দেন। তারপর বিষয়টি হাইকোর্টে ডিভিশন বেঞ্চে যায়। ডিভিশন বেঞ্চ বিজ্ঞপ্তি খারিজ করে দেয়।
তারপর সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টির উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। তারা জানিয়েছিল, তাদের অনুমতি ছাড়া মেধাতালিকা প্রকাশ করা যাবে না। সোমবার সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিলো, পর্ষদ নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারবে।
মেডিক্যালে ভর্তি মামলা নিয়ে
সোমবার ভারতের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেছেন, সিঙ্গল ও ডিভিশন বেঞ্চ নিয়ে যা হচ্ছে, তা ঠিক হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এনিয়ে আর কোনো মন্তব্য করব না। করলে তা হাইকোর্টের গরিমা ক্ষুণ্ণ করবে।
বিক্ষোভকারী কমেছে, তাও প্রতিবাদ চলছে
কলকাতায় শহিদ মিনারের কাছে একধিক প্রতিবাদ চলছে। একটি তো প্রায় নয়শ দিন ধরে। এখন কেমন সেই প্রতিবাদের চেহারা?
ছবি: Subrata Goswami/DW
সবচেয়ে বেশিদিনের প্রতিবাদ
২০১৬ সালে তারা শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন। তারপরেও চাকরি পাননি। কারণ, নিয়োগ-দুর্নীতি। অভিযোগ, পয়সা দিয়ে অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে গেছেন। প্রায় ৮৮০ দিন ধরে তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আগে এই বিক্ষোভে প্রচুর মানুষ আসতেন। এখন দেখা যাচ্ছে মাত্র একজনকে। কোনো দিন আরো কিছু বিক্ষোভকারী আসেন। কিন্তু আগের মতো প্রতিদিন এক-দেড়শ মানুষের বিক্ষোভ হয় না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ডিএ আদায়ের দাবিতে
একই হাল বকেয়া মহার্ঘভাতা বা ডিএ আদায়ের জন্য গঠিত সংগ্রামী যৌঘ মঞ্চের। সেখানে কয়েকজন বসে-শুয়ে আছেন। একটা সময় এই মঞ্চও গমগম করত। প্রচুর মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে আসতেন। উৎসাহ-উদ্দীপনা তুঙ্গে ছিল। এখন আর সেই ছবি নেই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিসিটিভি ক্যামেরা
যৌথ সংগ্রামী মঞ্চে সিসিটিভি ক্যামেরা বসেছে। কারা আসছেন, কী করছেন, তার উপর নজর রাখার জন্য। বিশেষ করে বহিরাগতরা যাতে ঢুকে কিছু করতে না পারে, তার জন্য বেশি করে এই সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অর্থ চাই
এই আন্দোলন টিকিয়ে রাখার জন্য অর্থের আবেদনও জানানো হয়েছে। রাখা হয়েছে ইউপিআইয়ের কিউআর কোড। যা স্ক্যান করে মানুষ পয়সা দিতে পারবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
টেট-বিক্ষোভের একই হাল
যারা টেট পরীক্ষায় পাস করেও চাকরি পাননি, তারা আলাদা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। টেট মানে টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট। যা পাস করলে প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য শিক্ষকের চাকরি পাওয়া যায়। এখানেও বিক্ষোভকারীর সংখ্যা কমেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেন এই অবস্থা?
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, শিক্ষকরাই তাদের মঞ্চে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আসতেন। এখন স্কুল খুলে গেছে। পরীক্ষা চলছে। প্রশ্নপত্র থেকে খাতা দেখার কাজ আছে। তাই শিক্ষকরা সেভাবে আসতে পারছেন না। অন্য অনেকে ব্যস্ততার জন্য আসতে পারছেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি
অনিরুদ্ধের দাবি, দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি তারা নিয়েছেন। অগাস্টে তারা দুইটি কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন। ১৪ অগাস্ট তাদের বিক্ষোভের দুইশ দিন পূর্ণ হবে। তখন একটা কর্মসূচি হবে। অগাস্টের প্রথম সপ্তাহেও একটা কর্মসূচি নেয়া হবে। তিনি স্বীকার করেছেন, সকলের একইরকমভাবে লেগে থাকার মানসিকতা থাকে না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসাহ কমছে
মধ্যমগ্রামের অভিষেক সেন স্বীকার করে নিয়েছেন, মানুষের উৎসাহ কমেছে। আগের মতো তাই বিক্ষোভকারী আসছেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এভাবে কতদিন?
কল্যানীর তনয়া বিশ্বাস বললেন, এভাবে আর কতদিন চলা যায়? পেট তো চালাতে হবে। কিছু না কিছু কাজ করতে হচ্ছে। তাই আন্দোলনে আর প্রতিদিন আসা যায় না। সবকিছু ছেড়ে যারা আন্দোলনে ঝাঁপিযে পড়েছিলেন, তারা এখন এই কঠোর বাস্তবের সামনে পড়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তবু প্রতিবাদ চলছে
মানুষ আগের মতো আসতে পারছেন না। তা সত্ত্বেও প্রতিবাদ থেমে যায়নি। চলছে। প্রতিটি প্রতিবাদমঞ্চে অল্প হলেও মানুষ আসছেন। আগের মতো রোজ প্রত্যেকে আসতে পারেন না। কিন্তু প্রতিবাদের আগুন নিভে যায়নি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশ, মেডিক্যালে ভর্তি সংক্রান্ত কোনো মামলার বিচার হাইকোর্টে হবে না। সব মামলা সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে আসা হবে। হাইকোর্টের সিঙ্গল বা ডিভিশন বেঞ্চ যা নির্দেশ দিয়েছে, সব স্থগিত থাকবে।
সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি শুরু হবে তিন সপ্তাহ পরে। তার মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ সুপ্রিম কোর্টের কাছে হলফনামা দেবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সলিসিটার জেনারেল কিছু বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতি বলেন, তিনি যেন লিখিতভাবে তাঁর বক্তব্য জমা দেন।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই মামলায় দাঁড়িয়েছেন কপিল সিবাল এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে অভিষেক মণু সিংভি। কপিল সিবাল আদালতে বলেন, এক বিচারপতির বেঞ্চে ওই মামলা আর যাওয়া উচিত নয়। তাহলে আবার একই ঘটনা ঘটতে পারে।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মেডিক্যালে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট ১৪টি ভুয়ো সার্টিফিকেট পাওয়া গেছে। পুলিশ চারটি এফআইআর করেছে।
‘সুপ্রিম কোর্ট ড্যামেজ কন্ট্রোল করেছে’
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অরিন্দম দাস ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘দুই বিচারপতির মধ্যে সংঘাত সামনে আসার পর ভারতে বিচারবিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছিল। এই অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট ব্যবস্থা নিয়েছে। আমার তো বিচারপতিদের মধ্যে এরকম সংঘাতের ঘটনা আর মনে পড়ছে না।’’
তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এই ঘটনার ফলে সাধারণ মানুষের কাছে খুব খারাপ ইঙ্গিত যাচ্ছিল। আমরা তো হামেশাই সিঙ্গল বা ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেছি। সেখানে তো বিচারপতিরা ব্যক্তিগত বিষয় টেনে আনেন না।। সাধারণ মানুষ অর্ডারের মধ্যে ঢুকবে না। টিভি বা কাগজের খবরে তারা প্রভাবিত হবে।’’
অরিন্দম দাস মনে করেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট যে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে তা স্বাগতযোগ্য। তারা দ্রুত ড্যামেজ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছে।’’