1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

১৫ বছর পর মামলার মুখে ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ জানুয়ারি ২০১৭

১৫ বছর আগে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট'এর সময়  সারাদেশে মোট ৫৭ জন নিহত হন৷ আহত হন কয়েক হাজার মানুষ৷ এক রায়ে হাইকোর্ট জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তরা চাইলে এখন মামলা করতে পারবেন৷

Rapid Action Battalion (RAB) in Bangladesh
ছবি: DW

বরুন ভৌমিক নয়ন (৫৮)৷ ২০০২ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সময় শুর হওয়া ‘অপারেশন ক্লিনহার্টের' সময় দৈনিক আল আমীনের সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে সংসদ বিট কাভার করতেন৷ বাড়ি ঢাকার অদূরে সাভার বাজারে৷  তাঁকে সেনাসদস্যরা প্রথমে ‘ভালো মানুষ' হিসেবে অপারেশন ক্লিনহার্টের পক্ষে জনমত গঠনে কাজে লাগাতেন৷ বিভিন্ন জনসভায় তাকে দিয়ে বক্তৃতা দেয়ানো হতো৷ এক জনসভায় বরুণ ভৌমিক নয়ন বলে ফেলেন, ‘‘আপনারা হার্টঅ্যাটাক বলে মানুষ মেরে ফেলছেন৷ এটা বন্ধ করেন৷ তারপই এই সাংবাদিকের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়৷''

নয়ন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাকে ১৪ ডিসেম্বর রাতে আটক করা হয়৷ এরপর চোখ বেঁধে নিয়মিতভাবে নির্যাতন করা হয়৷ হাতে অস্ত্র ধরিয়ে ছবি তুলে মামলা দেয়া হয়৷ ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে নিয়মিতভাবে তিন বেলা পিটানো হয়৷ ছয় মাস পর আমি জামিনে মুক্তি পাই৷ আমার পা কেটে ফেলার উপক্রম হয়েছিল৷ ভাগ্যক্রমে তা করতে হয়নি৷ তবে এখনো আমি সেই নির্যাতনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছি৷''

ড. শাহদীন মালিক

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘ক্লিনহার্টের সময় আমার বিরুদ্ধে দেয়া অস্ত্র মামলা আদালতে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে৷ এখন আমি নির্যাতনের বিচার চাই৷ চাই ক্ষতিপূরণ৷''

একইভাবে সাভারের আরেক সাংবাদিক কামরুজ্জামান খানকেও অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় নির্যাতন করা হয়৷ ২০০২ সালের ১৬ই অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের ৯ই জানুয়ারি পর্যন্ত অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে যৌথবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সারাদেরশে মোট ৫৭ জন নিহত হন৷ নির্যাতনের শিকার হন কয়েক হাজার মানুষ৷

অথচ  ২০০৩ সালে যৌথ অভিযান দায়মুক্তি আইন ২০০৩ পাস করিয়ে যে ন্যয়বিচার চাওয়ার পথও বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার৷ পরে দায়মুক্তির এই আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালের ১৪ জুন হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না৷ ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট যৌথ অভিযানের দায়মুক্তি অবৈধধ ঘোষণা করেন৷ সোমবার পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হলো৷

এই পুর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ ভুক্তভোগীদের প্রতিকার পাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে৷ হাইকোর্টে এই মামলার আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁরা চাইলে সিভিল আইনে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারবেন৷ আবার ক্ষতিপূরণের জন্য প্রত্যেকে আলাদাভাবে হাইকোর্টে রিটও করতে পারবেন৷ ফৌজদারি আইনেও মামলার সুযোগ আছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘রুলে হাইকোর্ট ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপুরণের কথা বলেছিলেন৷ তবে আদালত পরে রায়ে সিভিল মামলার বাইরে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যেককে আলাদাভাবে হাইকোর্টে ক্ষতিপুরণের রিট দায়েরের সুযোগ করে দিয়েছে৷ এটা বড় একটি ঘটনা৷ প্রতিকার পাওয়ার বড় একটি রাস্তা৷''

তবে তিনি বলেন, ‘‘ফৌজদারি মামলার সুযোগ থাকলেও ১৫ বছর আগের এই ঘটনা প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য হতে পারে৷ কারণ ফৌজদারি আইনে মামলা শতভাগ প্রমাণ করতে হয়৷ কিন্তু ক্ষতিপূরণের মামলায় ঘটনা প্রমাণ করতে পারলেই হলো৷''

বরুন ভৌমিক নয়ন

This browser does not support the audio element.

ড. শাহদীন মালিক আরো বলেন, ‘‘মার্কিন সেনাদের ইরাক অভিযানের সময় সেখানকার সাধারণ মানুষকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আইন করা হয়৷ শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের সময় এক লাখ নাগরিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন৷ আমাদের দেশে ভবিষ্যতে এ ধরণের অভিযানে ক্ষতিপুরণের জন্য আলাদা আইন করা প্রয়োজন৷''

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ‘‘জাতীয় সংসদকে সতর্ক থাকতে হবে যেন এ ধরনের সংবিধানের চেতনা-পরিপন্থী আইন আর প্রণীত না হয়৷ ইচ্ছাধীন হত্যাকে দায়মুক্তি দিতে সংসদ কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারে না৷''

রায়ে আরো বলা হয়, ‘‘মামলার নথিপত্র ও পেপার ক্লিপিং থেকে এটা স্পষ্ট যে, যৌথবাহিনীর দায়মুক্তি আইন যে সময়ের জন্য করা হয়েছে, ওই সময় দেশে এমন কোনো ভয়াবহ আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়নি বা দেশে ব্যাপক কোনো নৈরাজ্যও সৃষ্টি হয়নি৷ কিংবা ওই সময় দেশ গৃহযুদ্ধে বা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি৷ তাই যৌথবাহিনীর দায়মুক্তি আইন ২০০৩-এর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রাণহানির কার্যকে যে দায়মুক্তি প্রদান করা হয়েছে, সেই দায়মুক্তি সংবিধানের ৩১, ৩২, ৪৬, ৪৭(৩) এবং ৪৭(ক)-এর বিধান মোতাবেক অসামঞ্জস্যপূর্ণ৷ দায়মুক্তি আইনটি সংবিধানের বিধানা সাপেক্ষে প্রণয়ন হয়নি৷ সুতরাং আইনটি বাতিল ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলো৷''

সাংবাদিক বরুন ভৌমিক নয়ন জানান, ‘‘আমি এরইমধ্যে মামলার  প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ আমি ক্ষতিপূরণ এবং ফৌজদারি দু'দিকেই মামলা করবো৷'' সরকারের একটি সূত্র জানায়, ‘‘সরকার অপারেশন ক্লিন হার্ট নিয়ে মামলাকে নিরুৎসাহিত করবে না৷ কারণ এর ভিকটিমদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী৷'' তখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে ছিল৷ এবং বিএনপি-জামায়াত জোট ছিল ক্ষমতায়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ