‘‘১৬ কোটি মানুষ নিয়ে এই তামাশা বন্ধ করুন ম্যাডাম জিয়া''
১৩ মার্চ ২০১৫
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ‘যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছানো পর্যন্ত' আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন৷ চলমান সংকট সমাধানের চাবিকাঠি সরকারের হাতে উল্লেখ করে সংলাপের কথা বলেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘‘দেশ আজ গভীর সংকটে৷ এই সংকট রাজনৈতিক৷ এর স্রষ্টা আওয়ামী লীগ, নির্দিষ্ট করে বললে শেখ হাসিনা৷ জনগণের সম্মতি ছাড়া রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন তিনি৷ আওয়ামী লীগ একতরফা সিদ্ধান্তে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাদ করে দিয়েছে৷''
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা রাখা হয়নি৷ তাই তাঁরা আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন৷ তবে একে আন্দোলন বলে কিনা তা নিয়ে ফেসবুকে প্রশ্ন তুলেছেন ফাহিম হোসেন৷ খালেদা জিয়ার বক্তব্য ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় শেয়ার করা হলে সেখানে তিনি এই প্রশ্ন রাখেন৷
এদিকে, খালেদা জিয়ার বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন শরিফুল হাসান৷ ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘‘ম্যাডাম জিয়া পুরো জাতি আজ আপনার দিকে তাকিয়ে ছিল৷ কিন্তু আড়াই মাস ধরে আন্দোলন করে জাতিকে নিয়ে কী তামাশা আপনি করে গেলেন? ৪০ মিনিট ধরে কী বক্তব্যটা দিলেন আপনি?....আপনি সাংবাদিকদের ডেকে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এভাবে পালিয়ে যান কেন? আপনি কী তবে আসলেই বিএনপির কোনো অংশের হাতে বন্দি? একটা দেশ আর ১৬ কোটি মানুষ নিয়ে এই তামাশা বন্ধ করুন ম্যাডাম জিয়া৷''
অস্থির বাংলাদেশ
বাংলাদেশে দশম সংসদীয় নির্বাচনের বছরপূর্তিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷ এতে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে৷ ৫ই জানুয়ারি রাজনৈতিক অস্থিরতার কয়েকটি ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
অবরুদ্ধ খালেদা
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে আটকে রেখেছে পুলিশ৷ যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, তবে সোমবার তিনি বাইরে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁর গেটে তালা লাগিয়ে দেয়৷ ফলে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গেটের মধ্যেই৷
ছবি: AFP/Getty Images
অবরোধ ঘোষণা
অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন৷ গুলশানের কার্যালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আজ আমাদের কালো পতাকা কর্মসূচি ছিল৷ সমাবেশ করতে দেওয়া হয় নাই৷ পরবর্তী কর্মসূচি না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে৷’’
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
খালেদার কার্যালয় ঘিরে পুলিশ
প্রসঙ্গত, গত দু’দিন ধরে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ৷ ছবিতে পুলিশে একটি গাড়ি রাস্তায় আড়াআড়িভাবে রেখে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এভাবে আরো কয়েকটি বালু এবং ইটভর্তি ট্রাকও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/Landov
গাড়িতে আগুন
রবিবার থেকেই ঢাকায় সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছিল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে বিএনপিসহ বিশ দল৷ ঢাকায় একটি সিএনজি এবং মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ছবি এটি৷ বিএনপি সমর্থকরা এটা করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
পার্ক করা গাড়িতে আগুন
পার্ক করে রাখা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিচ্ছে বিএনপির সমর্থকরা৷ ছবিটি ঢাকা থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
রাজপথে সরব আওয়ামী লীগ
পুলিশ সভা, সমাবেশ নিষিদ্ধ করলেও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হন৷ বিষয়টি সমালোচনা করে ফেসবুকে সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন, ‘‘...নিষেধাজ্ঞা কি শুধু বিএনপির জন্য? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তো দেখি শহরজুড়ে মিছিল করছে, উল্লাস করছে, গান শুনছে, গান গাইছে৷’’ ছবিতে ঢাকায় বিএনপির এক সমর্থককে পেটাচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
‘শান্তির পথে আসুন’
এদিকে সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বিএনপি নেত্রীকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের যে দাবিতে বিএনপিসহ বিশদল আন্দোলন করেছে, সেই দাবির প্রতি কোন নমনীয়তা দেখাননি তিনি৷ হাসিনা মনে করেন, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়াটা বিএনপির রাজনৈতিক ভুল ছিল৷
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
‘একতরফা’ নির্বাচন
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি৷ সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে কোন ভোটাভুটি হয়নি৷ বাকি আসনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেটিকে ‘একতরফা’ নির্বাচন আখ্যা দিয়েছে৷
ছবি: DW
8 ছবি1 | 8
বিএনপি চেয়ারপার্সনের বক্তব্য শুনে মাহবুবুল হক শাকিলের মনে হয়েছে, তিনি (খালেদা) পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যার উৎসব চালিয়ে যাবেন এবং এভাবেই তিনি সফল হবেন বলে মনে করেন৷ শরিফুল হাসানের মতো তিনিও সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর না দেয়ার বিষয়টির সমালোচনা করেছেন৷ ফেসবুকে শাকিল লিখেছেন, ‘‘বিএনপি নেত্রীর সংবাদ সম্মেলন গণমাধ্যমের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে৷ কারণ, সারা বিশ্বে তিনিই একমাত্র একের পর এক প্রশ্নোত্তরবিহীন সঙ-বাদ সম্মেলন করার নজির স্থাপন করেছেন৷''
শাহ নেওয়াজ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী চলমান সংকটের জন্য প্রধানমন্ত্রী দায়ী বলে মনে করেন৷ ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় তিনি লিখেছেন, ‘‘দেশের বর্তমান সমস্যার জন্য প্রধানমন্ত্রী দায়ী৷ তিনি নিজের এবং তাঁর দলের জন্য সব কিছু করেছেন, সংবিধানকে যাচ্ছেতাইভাবে সাজিয়েছেন৷ শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশে সাধারণ মানুষ, নতুন ভোটার, পরীক্ষার্থী কারোর কথাই তিনি ভাবেন নাই৷ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ যত দ্রুত সম্ভব আমাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন৷ দেশের মানুষের মনে শান্তি ফিরিয়ে আনুন৷....আমরা বোকা মানুষ৷ তাই বলেই বা কী লাভ? তিনি তো কারো কথাই শোনেন না! কিন্তু এটা হলফ করে বলতে পারি ক্ষমতায় চিরদিন কোনো ব্যক্তি বা দল থাকতে পারে নাই, তিনিও পারবেন না৷''