অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট এই বিল পাশ করেছে। বিলটি ঘিরে এখনো তীব্র বিতর্ক চলছে গোটা দেশে। অনেকেরই বক্তব্য, এর ফলে কিশোররা ডার্ক ওয়েবে ঢুকে পড়বে।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ায় এই আইন পাশ হয়েছে। অর্থাৎ, সমাজ মাধ্যম সংক্রান্ত বিলটি পার্লামেন্টে আইন হিসেবে পাশ হয়েছে। এর ফলে অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের নীচে কেউ সমাজ মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না। এর মধ্যে ফেসবুক, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট, রেডিট, এক্স এবং ইনস্টাগ্রাম আছে। আইন ভাঙলে ৪৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা করা হবে সমাজমাধ্যমগুলিকে। অর্থাৎ, সমাজ মাধ্যমগুলিকে খেয়াল রাখতে হবে ১৬ বছরের নীচে কেউ অ্যাকাউন্ট খুলছে কি না।
মেটা জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার সরকার তড়িঘড়ি এই আইন প্রণয়ন করেছে। আরেকটু সময় নিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনা করা দরকার ছিল। ফেসবুক এমনিতেই বয়সের দিকটি নজরে রাখে। কোন বয়সের মানুষ কী ধরনের ফিড দেখতে পাবেন, সেদিকে নজর রাখা হয়।
স্ন্যাপচ্যাটের তরফেও বলা হয়েছে, আইনটি যুক্তিসংগত নয়। আইনের মধ্যে বহু ফাঁক থেকে গেছে। এবং পুরো বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কীভাবে এই আইন কাজ করবে তা-ও স্পষ্ট নয়। স্ন্যাপচ্যাটের তরফে জানানো হয়েছে, সরকারের সঙ্গে তারা এবিষয়ে কথা বলবে এবং একটি ভারসাম্য তৈরি করার চেষ্টা করবে।
পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারনেট ‘মেটাভার্স’
ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ মেটাভার্সকে বলছেন, পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারনেট৷ মাইক্রোসফট টিমসের মতো প্ল্যাটফর্ম আর ফোর্টনাইট, মাইনক্রাফট, রোব্লকসের মতো ভিডিও গেমে এখনই সেই ইন্টারনেটে স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে৷
ছবি: Andre M. Chang/ZUMAPRESS/picture alliance
মেটাভার্স কী?
আপনার একটি সাধারণ দিনের কথা ভাবুন৷ সারাদিন অফিসে একের পর এক মিটিং করলেন৷ এক ফাঁকে এক সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলে তার সঙ্গে সন্ধ্যায় কনসার্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন৷ এরপর কনসার্ট শেষ করে বাসায় ফেরার পথে দোকান থেকে টি-শার্ট কিনলেন৷ কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে, এর সবকিছুই আপনি করলেন ঘরে বসে! হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন, ঘরে বসে৷ এটাই মেটাভার্স৷
ছবি: Andre M. Chang/ZUMAPRESS/picture alliance
কীভাবে কাজ করে?
ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ মেটাভার্সকে বলছেন, পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারনেট৷ গত আগস্ট মাসে ফেসবুক ‘হরাইজন ওয়ার্করুমস’ চালু করেছে৷ এর মাধ্যমে ‘ওকুলাস কোয়েস্ট টু’ হেডসেট ব্যবহার করে একটি অফিসের কর্মীরা ঘরে বসে ভার্চুয়ালি মিটিং করতে পারেন৷ উপরের ছবিটা দেখলে কিছুটা ধারনা পাওয়া যাবে৷ আপনি যদি এতে অংশ নিতে চান তাহলে আপনার ‘ভার্চুয়াল অবতার’ তৈরি করতে হবে৷ ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহার করে এটা সম্ভব হবে৷
ছবি: Facebook/dpa/picture alliance
এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে
মেটাভার্সের বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে৷ তবে ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্স গত জুলাই মাসে জানিয়েছে, ২০২৪ সাল নাগাদ মেটাভার্সের বাজারমূল্য ৮০০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে৷ মেটাভার্সের সম্ভাবনা অনুমান করে ফেসবুক, মাইক্রোসফট, এপিক গেমসের মতো কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে এই খাতে বিনিয়োগ শুরু করে দিয়েছে৷ তবে এটি পুরোপুরি সফল হতে বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে সমন্বয় হতে হবে, যা একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে৷
ছবি: imago/Westend61
গেমাররা এখনই মেটাভার্সের মধ্যে আছেন
সেকেন্ড লাইফ (ছবি), ফোর্টনাইট, মাইনক্রাফট ও রোব্লকস ভিডিও গেমগুলো বিশ্বব্যাপী অনেক জনপ্রিয়৷ সেখানে গেমাররা একসঙ্গে কাজ করেন, একজন আরেকজনকে সহায়তা করেন, বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেন এবং বাস্তব জগতের টাকা দিয়ে ভার্চুয়াল পণ্য ও সেবা কেনেন৷ এসবকিছুই মেটাভার্সের অংশ৷ এছাড়া মাইক্রোসফট টিমস ও স্লেকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোও মানুষকে মেটাভার্সের ধারনার সঙ্গে পরিচিত করে তুলছে৷
ছবি: imago/Friedrich Stark
এনএফটি প্রযুক্তি
মেটাভার্সের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে ‘নন-ফানজিবল টোকেন’ বা এনএফটি৷ এ বছরের শুরুত কয়েকটি ছবি দিয়ে তৈরি একটি কোলাজের জেপিজি ফাইল ৫৮৯ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে৷ ইতিমধ্যে ডিজিটাল রিয়েল এস্টেট ও প্রোপার্টির এনএফটির বেচাকেনা শুরু হয়েছে৷ আর্ট ডিলার ‘সদবিস’ সম্প্রতি একটি ডিজিটাল রিয়েল এস্টেট কিনে সেখানে ভার্চুয়াল আর্ট শো করেছে৷
ছবি: DW
ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার
এনএফটি কেনা ও এর মালিকানার হিসাব এথারিয়াম ব্লকচেইনে রাখা হচ্ছে৷ এটা বিটকয়েনের পর সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্স ইথারের নেটওয়ার্ক৷ ফলে ভবিষ্যতে মেটাভার্সের মূল অবকাঠামো হয়ে উঠতে পারে এনএফটি ও এথারিয়াম৷
ছবি: Colourbox
6 ছবি1 | 6
টিকটকের তরফে বলা হয়েছে, তারা এই আইনটি নিয়ে অত্যন্ত হতাশ। এর ফলে শিশু এবং কিশোররা ডার্ক ওয়েভের দিকে ঢুকে পড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ডার্ক ওয়েভে অপরাধমূলক কাজ হয়। সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলে শিশু-কিশোরদের অপরাধমূলক সাইটে ঢোকার প্রবণতা বাড়তে পারে।
কী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবেনিস বলেছেন, তিনি চান ফোন ছেড়ে শিশু-কিশোররা ক্রিকেট মাঠে, টেনিস কোর্টে, সুইমিং পুলে ফিরে যাক। খোলা আকাশের নীচে তারা খেলাধুলো করুক। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি জানেন, এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি পালন করা যাবে না। কিন্তু যেভাবে দেশে মদ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, সেভাবেই এই ব্যান লাগু থাকবে। এতে অন্তত একটি সামাজিক বাধা তৈরি করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী একথা বললেও বিরোধীদের বক্তব্য, আইনটি এখনো তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। এই আইন ভাঙলে ব্যক্তির উপর কী শাস্তি নেমে আসবে, তা স্পষ্ট করে বলা নেই আইনে। বহু তথ্যই স্পষ্ট করে বলা নেই। কোনো রাজনীতিবিদের মতে, এই আইন ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ।