বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, পুলিশের গাড়ি ও জলকামান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু অবরোধ যতদিন চলবে ততদিন খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়েই থাকবেন বলে জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোববার রাত আড়াইটার দিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশের দুটি ভ্যান ও জলকামান সরিয়ে নেওয়া হয়৷ সেই সঙ্গে কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদেরও প্রত্যাহার করা হয়৷ এখন সেখানে অল্প কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন৷
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের সামনে থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে৷ তবে অন্যান্য সময়ে তার কার্যালয়ে যে ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হয়, এখনও তেমন নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে৷
গত ৩রা জানুয়ারি রাতে গুলশানের কার্যালয় থেকে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে চাইলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন খালেদা জিয়া৷ এরপর থেকেই তিনি গুলশান কার্যালয়ে রয়েছেন৷ কার্যালয় ঘিরে ব়্যাব পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন সড়কের প্রবেশ পথে রাখা হয়েছিল ইট ও বালুর ট্রাক৷ আর গেটে ছিল তালা৷ বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছিলেন, খালেদা জিয়াকে তাঁর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে৷
গত ৫ই জানুয়ারি খালেদা জিয়া ‘অবরুদ্ধ' অবস্থায়ই গুলশান কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন৷ তিনি নয়াপল্টনে বিএনপির ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসের' একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে চাইছিলেন৷ কিন্তু তাঁকে বের হতে দেয়া হয়নি৷ এরপর সেদিন বিকেলে ৬ই জানুয়ারি থেকে সারাদেশে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া৷ এই অবরোধ কর্মসূচি এখনো চলছে৷ সোমবার অবরোধের ১৪তম দিন৷
এদিকে পুলিশ প্রত্যাহারের পর সোমবার দুপুরে খালেদা জিয়ার মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শাইরুল কবির খান জানান,' পরবর্তী কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয় থেকে বের হবেন না৷'
তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে দেশে অবরোধ চলছে৷ তাই নতুন করে দলের কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত গুলশানের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই খালেদা জিয়ার৷
আর খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সরিয়ে নেয়া সরকারের নতুন চাতুরী ছাড়া আর কিছুই নয়৷ সরকার বিএনপি নেতা-কর্মীদের নির্যাতন, নিপীড়ন ও গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ৮০ হাজার নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে৷ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট ৮৭ টি মামলা করা হয়েছে৷ বাংলাদেশে কেন বিশ্বের ইতিহাসে মিথ্যা মামলার এই নির্লজ্জ নজির আমার জানামতে আর নাই৷''''
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশানের বাসভবনে কার্যত ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷ রবিবার তিনি পুলিশের বাধার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ি থেকে বেরোনোর চেষ্টা
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় অংশ নিতে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর তিনটার দিকে গুলশানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ কিন্তু তাঁর পথরোধ করতে বাড়ির গেটে মানব দেয়াল তৈরি করে পুলিশ এবং ব়্যাবের সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
আটকে ছিলেন গেটে
পুলিশ এবং ব়্যাব সদস্যদের বাধার মুখে বেশ কিছুক্ষণ গাড়ির মধ্যে বসে ছিলেন খালেদা জিয়া৷ এরপর এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
গাড়ি থেকে বেরিয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী৷ এসময় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন৷ উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে খালেদা বলেন, ‘‘দেশ আজ কোথায় যাচ্ছে? এরা সবাই গোপালগঞ্জের৷ গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে৷’’ দৈনিক প্রথম আলো খালেদার এই বক্তব্য প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সোমবারও চলবে কর্মসূচি
নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি খালেদা জিয়া৷ তবে তিনি বাড়ির মধ্যে ফিরে যাবার আগে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘‘এই সরকার জালেম এবং অগণতান্ত্রিক৷ এই সরকারের পতন হবেই৷’’ এসময় তিনি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সোমবারও চলবে বলে ঘোষণা দেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
বালুভর্তি ট্রাকের ব্যারিকেড
খালেদা জিয়ার বাড়ির চারপাশে গত কয়েকদিন ধরেই পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল৷ শনিবার তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় সাধারণ ব্যারিকেডের পাশাপাশি বালুভর্তি ট্রাকও যোগ করা হয়৷ কয়েকটি ট্রাক এমনভাবে রাখা হয়, যাতে খালেদার গাড়ি বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে বের হতে না পারে৷ আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশিদ স্বপন জানান, খালেদা জিয়াকে কার্যত গুলশানের বাড়িতে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুলিশের বক্তব্য
খালেদা জিয়াকে বাড়ির বাইরে যেতে না দেয়া প্রসঙ্গে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নয়াপল্টনে কোনো জমায়েত বা সমাবেশের অনুমতি নেই৷ তাই বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সেখানে যেতে দেয়া হবে না৷ আর তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও পুলিশের দেখার আছে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
প্রাণহানি
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’কে ঘিরে সংঘর্ষ এবং বিস্ফোরণে ঢাকায় কমপক্ষে দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ রবিবার সকাল এগারোটার দিকে ঢাকার মালিবাগে পুলিশ আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান মনসুর আলী৷ অন্যদিকে, কমলাপুরে তল্লাশির সময় বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
সুপ্রিমকোর্টে তাণ্ডব
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় যোগ দিতে সুপ্রিমকোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা কোর্টের মূল গেট দিয়ে মিছিল করে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের জল কামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আটকে দেয়৷ এরপর তারা ভিতরে গিয়ে পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছোড়ে৷ এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের একদল সমর্থক সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে ঢুকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ সেখানে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
বিরল সংঘর্ষ
বলাবাহুল্য, সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বাইরে থেকে কোন দলের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়নি৷ সেক্ষেত্রে রবিবার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আদালত চত্বরে প্রবেশ করে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াটা বিরল ঘটনা বলে অবিহিত করেন আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি৷
ছবি: Reuters
চুপচাপ নয়াপল্টন
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচির আওতায় গোটা দেশ থেকে সক্ষম নেতাকর্মীদের ২৯ ডিসেম্বর, রবিবার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে হাজির হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া৷ কিন্তু রবিবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে পারেনি৷ কিছু নেতাকর্মী কার্যালয়ের সামনে যেতে চাইলে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ফলে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দৃশ্যত পুলিশ এবং সাংবাদিক ছাড়া কেউ ছিল না৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচন
উল্লেখ্য, আগামী পাঁচ জানুয়ারি বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করায় এবার ১৫৪টি আসনে ভোটাভুটির দরকার হচ্ছে না৷ এসব আসনে একজন করে প্রার্থী রয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
11 ছবি1 | 11
খালেদা জিয়ার এই উপদেষ্টা বলেন, ‘‘একটি কার্যকর সংলাপ আয়োজন না করা পর্যন্ত বিএনপির লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি এবং আন্দোলন অব্যাহত থাকবে৷ খালেদা জিয়া এখনো গুলশান কার্যালয়ে আছেন এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর কার্যালয়েই অবস্থান করবেন৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘৫ই জানুয়ারির একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচন দেশের মানুষ গ্রহণ করেনি৷ গ্রহণ করেনি বিশ্ব সম্প্রদায়৷ তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আরেকটি নির্বাচন হতেই হবে৷''
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সোমবার বলেছেন, ‘‘সংলাপের দাবি করার আগে নাশকতা বন্ধ করতে হবে৷'' তিনি নাশকতা প্রতিরোধে সরকারকে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন ৷
সাবেক এই রেলমন্ত্রী বলেন, ‘‘কিছু বুদ্ধিজীবীসহ অনেকেই মনে করেন নাশকতা ও সন্ত্রাস করে সরকারকে সংলাপের জন্য বাধ্য করা যাবে৷ সংলাপ গণতন্ত্রের একটি অব্যাহত ধারা৷ কিন্তু কিছু পেট্রোলবোমা মেরে, সহিংসতা ও নাশকতা করে সংলাপের জন্য বাধ্য করা কোনো নৈতিকতাকেই বহন করে না৷ আমি ওই সব বুদ্ধিজীবীদের বলব, আগে এই নাশকতা বন্ধ করতে বলুন৷ যারা অবরোধ ঘোষণা করেছে অবশ্যই তাদের এই নাশকতার দায়িত্ব নিতে হবে৷''