ভাগনার গ্রুপের প্রধান জানিয়েছেন, ১ জুনের মধ্যে বাখমুত রাশিয়ার সেনার হাতে হস্তান্তর করে তারা ফিরে যাবেন।
বিজ্ঞাপন
সোমবার রাশিয়ার অসরকারি সেনাদল ভাগনারের প্রধান বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, আগামী মাসের গোড়ায় ইউক্রেনের বাখমুত থেকে ফিরে আসবে তার সেনা। ক্ষমতা রাশিয়ার সেনার হাতে হস্তান্তর করা হবে। ইউক্রেন অবশ্য দাবি করেছে, বাখমুত এখন তাদের দখলে। সেখানে রাশিয়ার সেনা নেই।
টেলিগ্রামে একটি অডিওবার্তা দিয়েছেন ভাগনারের প্রধান প্রিগোঝিন। সেখানে তিনি বলেছেন, ২৫ মে থেকে ১ জুনের মধ্যে বাখমুত রাশিয়ার সেনার হাতে হস্তান্তর করা হবে। উল্লেখ্য, গত শনিবারেই ভাগনার জানিয়েছিল, পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুত এখন তাদের দখলে। ইউক্রেন তখনই বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়ে দেয়, বাখমুত রাশিয়া কখনো দখল করতে পারেনি। রাশিয়ার সেনা সেখানে নেই।
বিধ্বস্ত ইউক্রেনে যেমন কাটছে জীবন
কবে, কিভাবে শেষ হবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জানা নেই কারো৷ অনেকেই আক্রান্ত এলাকা থেকে সরে গিয়েছেন৷ অনেকে ছেড়েছেন ইউক্রেন৷ কিন্তু অনেকেই বিধ্বস্ত ইউক্রেনেই মৃত্যুর আশঙ্কা মাথায় নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের কথা৷
ছবি: VIOLETA SANTOS MOURA/REUTERS
ধ্বংসপ্রাপ্ত দালান
গালিনা স্লেপকোর বয়স ৬৪ বছর৷ এই বয়সে ভিটেমাটি ছেড়ে কোথাও গিয়ে নতুন জীবন শুরু করাটাও তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব৷ রাশিয়ার দখল করে নেয়া দনেৎস্ক অঞ্চলে তার এই বাড়িটির এক পাশের দেয়াল রাশিয়ার মর্টার শেলের আঘাতে ধসে গেছে৷ এই অবস্থাতেই তাকে কাটাতে হয়েছে শীতকাল৷
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে
পুরো ইউক্রেন যুদ্ধটাই যেন থেমে আছে বাখমুতে৷ কৌশলগতভাবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও মর্যাদার লড়াইয়ের কারণে এই এলাকা দখলে নিতে চায় দুই পক্ষই৷ বাখমুতের চাসিভ ইয়ার গ্রামে এখনও হাতেগোণা কয়েকজন বাসিন্দা রয়ে গেছেন জীবনের ঝুঁকির তোয়াক্কা না করেই৷ তাদের একজনকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণ
যেকোনো সময় পালটে যেতে পারে পরিস্থিতি৷ দোনেৎস্ক অঞ্চলের বাখমুতে এখন চলছে চূড়ান্ত লড়াই৷ দুই পক্ষের সেনারাই দখল-পুনর্দখলের চেষ্টায় রত৷ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলের সুপারমার্কেটে এসে পড়েছে একটি মর্টার শেল৷ আগে এক হামলায় আহত এক নারীকে দেখা যাচ্ছে কান্না করতে৷ বাখমুতে এখন প্রতিটি মুহূর্তই জীবন-মরণের লড়াই৷
ছবি: ALEXANDER ERMOCHENKO/REUTERS
সরবরাহ সংকট
যুদ্ধের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকট দেখা দিয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ ও জলের মতো অতিপ্রয়োজনীয় সেবাও এখন বিলাসিতা৷ হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, তা দিয়েই প্রয়োজন মিটিয়ে কোনোরকমে টিকে থাকার লড়াই করছেন বাসিন্দারা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বিধ্বস্ত সামরিক বিমান থেকে ধাতব দ্রব্য নিয়ে যাচ্ছেন দুজন৷ সেটিকেই কোনো কাজে লাগানোর চিন্তা রয়েছে তাদের৷
ছবি: OLEKSANDR KLYMENKO/REUTERS
একটি রক্তাক্ত চশমা
এই ছবিটিই অনেক কথা বলে দেয়৷ কস্তিয়ানতিনিভকা নামের একটি আবাসিক এলাকায় ভয়াবহ বোমা হামলায় মারা যান অনেকেই৷ কেউ ছিলেন বাসায়, কেউ বাজারে, কেউ রাস্তায়৷ হয়তো একজন বাসিন্দার রক্তমাখা চশমা এখনও পড়ে রয়েছে মাঠের পাশে৷ পৃথিবীকে আর দেখা হবে না তার৷
ছবি: VIOLETA SANTOS MOURA/REUTERS
জ্বালানি সংকট
ঠিক পেছনেই একটি গাড়ি বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে৷ এখন বাখমুতের রাস্তায় গাড়ি চালানো অনেক কারণেই আঁতকে ওঠার কারণ৷ একে তো জ্বালানি জোগাড় করাই কষ্ট ও ব্যয়সাধ্য৷ অন্যদিকে, যেকোনো সময় হতে পারে মর্টার বা বিমান হামলা৷ ফলে রাস্তায় বের হয়ে কেউই নিশ্চিত টার্গেটে পরিণত হতে চান না৷ ফলে দোকানে যেতেও বেশিরভাগের ভরসাই নিজের পা, বড়জোর বাইসাইকেল৷
ছবি: KAI PFAFFENBACH/REUTERS
ত্রাণ সহায়তা
প্রায় পুরো অঞ্চলই ধ্বংসপ্রায়৷ ফলে বাখমুতের সকল অফিস-আদালত, দোকানপাট প্রায় বন্ধ৷ যেসব গুটিকয়েক দোকান খোলা রয়েছে, অনেকেই সেখান থেকে জিনিস কেনার সামর্থ্য নেই৷ ফলে যেসব বাসিন্দা এখনও বাখমুতে রয়ে গেছেন তাদের অনেকের নির্ভর করতে হচ্ছে ত্রাণের ওপর৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ঝুঁকি নিয়েই যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে ত্রাণ সরবরাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: KAI PFAFFENBACH/REUTERS
জীবন-মৃত্যুর দোলাচল
এই ছবিটি খারকিভের৷ রাশিয়া দখলে নেয়ার পর ইউক্রেনের সেনারা আবার এই এলাকা পুনর্দখলে নিয়েছে৷ কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলটি দখলে মরিয়া রুশবাহিনী৷ ফলে এখনও প্রায়ই বোমাবর্ষণ চলছে এখানে৷ রুশ মিসাইলে ধ্বংস হওয়া একটি বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক নারী৷ মনে ভয়, যেকোনো মুহূর্তে আবারও হতে পারে নির্বিচার হামলা৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
প্রিয়জন হারানোর বেদনা
একসঙ্গেই থাকা, একসঙ্গেই কাজ৷ কদিন আগেও বন্ধুর চেয়েও বেশি ছিলেন ইভান সোরোকিনের সহকর্মী৷ কর্মরত অবস্থাতেই বিমান হামলায় মারা যান এই গাড়ি মেরামতকর্মী৷ বন্ধুকে শেষ বিদায় জানানোর আগে তার মরদেহ আনা হয়েছে তার কাজের জায়গাতেই৷
ছবি: ALEXANDER ERMOCHENKO/REUTERS
9 ছবি1 | 9
বাখমুত নিয়ে ভাগনারের সঙ্গে ইউক্রেনের সেনার দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চলছে। মাঝে ভাগনারের প্রধান জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার প্রশাসন তাদের সঙ্গে সবরকম সহায়তা করছে না। তাদের অস্ত্র পাঠানো হচ্ছে না, রশদ দেওয়া হচ্ছে না। এবং এই কারণে বহু ভাগনার সেনা নিহত হচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। চলতি মাসের গোড়াতেই তিনি জানিয়েছিলেন, এভাবে চলতে থাকলে বাখমুত ছেড়ে তার সেনা ফিরে যেতে বাধ্য হবে।
বাখমুতের পশ্চিমে ভাগনার সেনা একটি ডিফেন্স লাইন তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন ভাগনার প্রধান।
গত আট মাস ধরে বাখমুতের দখল নিয়ে লড়াই চলছে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার। রাশিয়ার সেনার বিপুল ক্ষতি হয়েছে বাখমুতে। ইউক্রেন এই দাবি আগেই করেছিল। পরে ভাগনার প্রধান তা স্বীকার করেন। অন্যদিকে সম্প্রতি ওয়াশিংটন একটি সমীক্ষা করেছে। মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টের দাবি, প্রায় এক লাখ রাশিয়ার সেনা কম বেশি জখম হয়েছে বাখমুতের লড়াইয়ে। নিহত অন্তত ২০ হাজার। ইউক্রেনও কমবেশি ২০ হাজার সেনা হারিয়েছে বলে ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে।