২০০ বছরের প্রেসিডেন্সি কলেজ
১৬ জানুয়ারি ২০১৭![Indien Presidency College - Heritage Walk Jahrestag 200 Jahre](https://static.dw.com/image/37143880_800.webp)
প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পদযাত্রা: তাতে যোগ দেওয়ার জন্য বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা, যাঁদের অনেকেই এখন দেশে এবং বিদেশে বিশিষ্ট নাম: পদযাত্রার একেবারে সামনের সারিতে কারা ছিলেন? কবি শঙ্খ ঘোষ – ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ‘জ্ঞানপীঠ'-এ সদ্য সম্মানিত যিনি, জহর সরকার – ভারতের বেতার সংস্থা ‘আকাশবাণী' এবং টিভি সংস্থা ‘দূরদর্শন'-এর নিয়ামক সংস্থা প্রসারভারতীর প্রাক্তন প্রধান, সুগত বসু – নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পৌত্র, বিশ্বখ্যাত ইতিহাসবিদ, হার্ভার্ডের অধ্যাপক৷ উল্লেখ্য সুভাষচন্দ্র বসুও এই প্রেসিডেন্সিরই ছাত্র ছিলেন৷ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে এই কলেজের ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সুভাষ বোসের বিরোধের সেই ঐতিহাসিক ঘটনা৷ রবিবারের পদযাত্রায় আরো ছিলেন ভারতী রায় – বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এবং রাজ্যসভার প্রাক্তন সদস্য৷ অনিন্দ্য মিত্র – বিশিষ্ট আইনজীবী এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল৷ আসতে পারেননি একমাত্র নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন৷ এছাড়া লক্ষ্যণীয় অনুপস্থিতি ছিল প্রেসিডেন্সি-প্রাক্তনী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের৷ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, যাঁর উদ্যোগে ২০১০ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে উন্নীত হয়েছিল৷তবে ছিলেন আরও অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী, যাঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের ক্ষেত্রে কৃতি, প্রতিষ্ঠিত এবং বিখ্যাত৷
অবশ্য প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী মানেই একেবারে চাঁদের হাট৷ গত ২০০ বছরে বাংলায় যাঁরা স্বনামধন্য, তাঁরা অধিকাংশই এই কলেজের ছাত্র-ছাত্রী৷ ব্রিটিশ আমলে বাঙালিদের উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৮১৭ সালে রাজা রামমোহন রায়, রাজা রাধাকান্ত দেব, শিক্ষাবিদ ডেভিড হেয়ার, প্রমুখদের প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার প্রথম নাম ছিল ‘হিন্দু কলেজ'৷ পরে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মুখ্য কলেজ হিসেবে যে নাম পরিবর্তিত হয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজ হয়েছিল৷ ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে কলকাতা শহরজুড়ে অসাধারণ এক প্রচার চলছিল গত একমাস ধরে, যা মনে করিয়ে দিচ্ছিল প্রেসিডেন্সি কলেজের ঐতিহ্য এবং উৎকর্ষের গর্বিত উত্তরাধিকার৷ এই প্রচারের মূল সুর ছিল – এমন এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যা প্রশ্ন করতে শেখায়৷ এমন প্রশ্ন, যা ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়৷ প্রাণীবিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বোস৷ প্রেসিডেন্সির ১৮৭৫ ব্যাচের ছাত্র৷ প্রশ্ন করেছিলেন, উদ্ভিদও কি কষ্টে, বা ভালোবাসায় সাড়া দেয়? ১৯১৩ সালের ছাত্র পদার্থবিদ মেঘনাদ সাহা৷ সূর্যরশ্মির ভর কত? প্রশ্ন তুলেছিলেন৷ একই বছরের ছাত্র সত্যেন বোস৷ ফোটন কণার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন৷ আইনস্টাইন তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন৷ অথবা শিক্ষাবিদ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়৷ প্রশ্ন তুলেছিলেন, বাঙালিরা কেন মাতৃভাষায় বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে পারবে না? রসানবিদ প্রফুল্লচন্দ্র রায়৷ বলেছিলেন, কেন ‘স্বদেশী' রসায়নচর্চা হবে না? এঁরা শুধু প্রশ্নই তোলেননি, তার উত্তরও সন্ধান করে এনেছেন৷ পরিণতিতে বদলে গেছে বাঙালির ইতিহাস৷ সেই প্রশ্ন করার সাহসেরই উত্তরাধিকার বহন করেছেন আজকের অর্থনীতিক অমর্ত্য সেন, পরিচালক সত্যজিৎ রায়, বা লেখিকা নবনীতা দেব সেনেরা৷
রবিবার কলেজের আর এক বিখ্যাত প্রাক্তনী নরেন্দ্রনাথ দত্ত ওরফে স্বামী বিবেকানন্দের পৈর্তৃক ভিটে থেকে কলেজ পর্যন্ত অনতিদীর্ঘ পদযাত্রায় বিখ্যাতরা যখন পা মেলালেন, ঘোড়ায় টানা অলংকৃত জুড়িগাড়িতে চড়ে সেই পথটুকু পার হলেন কলেজের সবার প্রিয় প্রমোদদা৷ যিনি বহু বছর ধরে কলেজের ক্যান্টিনটি চালিয়ে আসছেন৷ প্রাক্তনীদের অনেকের কাছেই প্রেসিডেন্সি আর প্রমোদদার ক্যান্টিন সমার্থক৷ সেই মানুষটিকে এমন সম্মান দিয়ে প্রেসিডেন্সি বুঝিয়ে দিল, কোথায় তারা বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের থেকে আলাদা৷ কোন সহমর্মিতা আর মানবিকতার বশে চল্লিশের দশকের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন থেকে সত্তরের দশকের নকশাল আন্দোলনের ধাত্রীভূমি ছিল এই কলেজ৷ যদিও কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের রাজনীতি করা নিয়ে ইদানীং অনেক আপত্তি, বিধি-নিষেধ৷ সেই নিয়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভও হচ্ছে৷ তবে উৎসবের মুহূর্তে সেই অপ্রিয় প্রশ্ন কেউ তোলেনি৷ সে সব অন্য প্রসঙ্গ৷
আপনার চেনাশোনা কি কেউ প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েছেন? জানান তাঁর কথা...লিখুন নীচের ঘরে৷