পৃথিবী হয়ত সেই গ্যাস নির্গমন শুষে নেওয়ার শক্তি হারাচ্ছে – অবাক হচ্ছেন? কিন্তু এমনটাই বলছে ডাব্লিউএমও, অর্থাৎ বিশ্ব আবহাওয়া বিজ্ঞান সংগঠন৷ সাগরের জল অম্ল হচ্ছে বিগত ৩০ কোটি বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত হারে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৩ সালে যে গ্রিনহাউস গ্যাসটি সত্যিই বেড়েছে, সেটি হলো কার্বন ডাই অক্সাইড৷ অপরদিকে সিওটু-র মাত্রা যেভাবে বাড়ছে, তা কিন্তু কয়লা গোত্রীয় তথাকথিত অশ্মীভূত জ্বালানির ব্যবহারের চেয়েও বেশি – যার অর্থ, আমাদের পৃথিবীর সিওটু শুষে নেবার যে স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে, তা দৃশ্যত কমে যাচ্ছে৷
ডাব্লিউএমও-র মহাসচিব মিশেল জারো গত মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, বিশ্বের বায়োস্ফিয়ার, অর্থাৎ উদ্ভিদ ও মাটি, হয়ত আগের মতো সিওটু শুষে নিতে পারছে না৷ তা যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটা হবে একটা উদ্বেগের বিষয়৷
মানুষ ও তার গতিবিধি থেকে যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়, বায়োস্ফিয়ার ও সাগরের জল তার প্রায় ২৫ শতাংশ করে শুষে নেয়৷ গ্যাস শুষে নেওয়া কমে গেলে, বায়ুমণ্ডলে সিওটু-র পরিমাণ বাড়তে থাকবে – এবং বায়ুমণ্ডলে সেই কার্বন ডাই অক্সাইড শত শত বছর ধরে থাকতে পারে৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে দ্বীপগুলো
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই শতকেই বিশ্বের অনেক মানুষ খাদ্যাভাবে পড়বে, বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানুষে মানুষে হানাহানি৷ আইপিসিসি-র রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পৃথিবীর স্বর্গ হারানোর পথে
বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সাগরে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ মালদ্বীপ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত৷ ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে এটি পুরোপুরি তলিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের৷
ছবি: picture alliance/chromorange
বন্যার প্রকট আকার
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ৷ নিম্ন ভৌগলিক অবস্থান এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে নানা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে দেশটি৷ সাগরের পানির উচ্চতা মাত্র তিন ফুট বেড়ে গেলেই দেশের অর্ধেক পানির নীচে তলিয়ে যাবে৷
ছবি: Tareq Onu
পানিতে নিমজ্জিত সম্পদ
সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে এরই মধ্যে দ্বীপগুলোর নিম্নাঞ্চল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে শুরু করেছে অনেকেই৷ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিরিবাটি দ্বীপপুঞ্জের কিছু গ্রাম এরই মধ্যেপানিতে তলিয়ে গেছে৷ ফসলি জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় বেশ চিন্তিত সেখানকার চাষীরা৷
ছবি: AFP/Getty Images
তাপমাত্রা বৃদ্ধি
আইপিসিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই শতকে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ০.৩ থেকে ৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এমনকি শিল্পকারখানা যেখানে বেশি সেখানে গড়ে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে৷ ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রে পানির উচ্চতা বাড়বে ২৬ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার৷
ছবি: picture-alliance/AP
সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে বসবাস
সমুদ্রের পানি থেকে বাঁচার উত্তম পন্থা জানা আছে ডাচদের৷ প্রায় ১০০০ বছর আগে বন্যার হাত থেকে বাঁচতে তারা প্রথম পরিখা নির্মাণ করেছিল৷ এ কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ নির্বিঘ্নে দিন কাটাচ্ছে সেখানে৷ তবে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়েও ভাবছে ডাচরা৷
ছবি: picture-alliance/Ton Koene
ডুবছে বিশ্ব ঐতিহ্য
ইটালির ভেনিস পুরোটাই পানি বেষ্টিত৷ তাই সেখানে বন্যা কোনো আকস্মিত ঘটনা নয়৷ কিন্তু চিন্তা বিষয় হল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরটি ক্রমেই পানির তলায় তলিয়ে যাচ্ছে৷ ইটালির সরকার ভেনিস রক্ষায় ৯.৬ বিলিয়ন ইউরোর একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষার এই প্রকল্প ২০১৬ সাল নাগাদ শেষ হবে৷
ছবি: AP
প্রাকৃতিক বিপর্যয়
আইপিসিসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এশিয়া ও ইউরোপে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে পানি সংকট এবং খরা দেখা দেবে বলেও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ এর ফলে ফসল ভালোমত হবে না, দেখা দেবে খাদ্য ঘাটতি৷
ছবি: dapd
কোনো মানুষ রেহাই পাবে না
আইপিসিসি-র সভাপতি রাজেন্দ্র পাচৌরি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা যদি ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায় তবে ঝুঁকির পরিমাণও সেই অনুপাতে বাড়বে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব থেকে বিশ্বের কোনো মানুষই রেহাই পাবেন না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
সাগরের অম্লতাও দ্রুত বাড়ছে, যার ফলে সাগরের জলও সিওটু শুষে নেবার ক্ষমতা হারাচ্ছে৷ কী হারে বাড়ছে সাগরের অম্লতা? ডাব্লিউএমও বলছে, প্রাক-শিল্পায়ন যুগ থেকে সাগরের অম্লতা বেড়েছে ২৫ শতাংশ, তার মধ্যে ছয় শতাংশ শুধুমাত্র গত দশ বছরে৷
কার্বন নির্গমন যদি এভাবে বাড়তে থাকে...
২০৫০ সালের মধ্যে যদি মানুষের গতিবিধি থেকে সৃষ্ট কার্বন নির্গমন ৮০ শতাংশ কমেও যায়, তা-তেও শতাব্দীর শেষ অবধি বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিশেষ কোনো হেরফের হবে না৷ বলতে কি, অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সিওটু নির্গমন, এই তিন মিলিয়েই বিশ্বের উষ্ণায়ন ও সাগরের অম্লতা কতটা বাড়বে, তা নির্ধারিত হবে৷
২০১৩ সালে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ছিল প্রতি দশ লাখ ভাগে ৩৯৬ ভাগ, যা কিনা ২০১২ সালের তুলনায় দুই দশমিক নয় ভাগ বেশি৷ গ্রিনহাইস গ্যাসগুলির নির্গমন বাড়ছে মূলত চীন, ভারত ও অন্যান্য দ্রুত উন্নয়নশীল দেশে ব্যাপক শিল্পায়নের ফলে৷ তা সত্ত্বেও ডাব্লিউএমও-র ভবিষ্যদ্বাণী হলো: বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস-এর নীচে রাখার মতো জ্ঞান ও পন্থা, দুই-ই আমাদের হাতে আছে৷