বিগত বছরে আফগানিস্তানে বেসামরিক হতাহতদের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গেছে – এ যাবৎ বিশ্বে এটা নাকি সর্বোচ্চ৷ ইউএনএএমএ-র জর্জেট গানিয়ঁ ডয়চে ভেলেকে বলেন, দেশটিতে বেসামরিক ব্যক্তিরাই মূলত সহিংসতার শিকার হচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
২০১৪ সালের প্রথম ১১ মাসে আফগানিস্তানে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে ১৯ শতাংশ – ২০১৩ সালের তুলনায়৷ ইউনাইটেড নেশন্স অ্যাসিস্ট্যান্স মিশন ইন আফগানিস্তান বা ইউএনএএমএ বা উনামা-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত নভেম্বর অবধি আফগানিস্তানে প্রাণ হারিয়েছেন ৩,১৮০ জন বেসামরিক ব্যক্তি, আহত হয়েছেন আরো ৬,৪৩০৷ শিশুদের হতাহত হবার ঘটনা বেড়েছে ৩৩ শতাংশ৷ ২০১৪ সালে বেসামরিক হতাহতদের সামগ্রিক সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে যাবে, বলে মনে করা হচ্ছে – যা কিনা ২০০৯ সাল যাবৎ সর্বোচ্চ৷ ডয়চে ভেলের সাক্ষাৎকারে উনামা-র মানবাধিকার বিভাগের পরিচালক জর্জেট গানিয়ঁ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন৷
ডিডাব্লিউ: বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে আপনি ২০১৪ সালকে কিভাবে বর্ণনা করবেন?
জর্জেট গানিয়ঁ: ২০১৪ সালে ক্রমেই আরো বেশি সংখ্যক আফগান শিশু, মহিলা এবং পুরুষ আফগানিস্তান জুড়ে সংঘাতে নিহত কিংবা আহত হন৷ সরকার-বিরোধী গোষ্ঠীগুলির বর্ধিত আক্রমণ, আফগান জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর নতুন সামরিক অভিযান এবং এমন সব নতুন যুদ্ধের পদ্ধতি, যার ফলে আরো বেশি বেসামরিক ব্যক্তি তার শিকার হয়েছেন – বিশেষ করে জনবহুল এলাকায় আইইডি এবং মর্টারের ব্যবহার – এই সব মিলিয়ে ২০১৪ সালে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা চরমে পৌঁছায়
বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়ার মূল কারণ কী?
বিশেষ করে বেসামরিক এলাকায় সরকারি সৈন্য আর বিদ্রোহীদের মধ্যে যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি বেসামরিক ব্যক্তি হতাহত হয়েছেন: ৩২ শতাংশ৷ এটা ২০১৪ সালের একটা নতুন প্রবণতা৷ এর আগের বছরগুলোতে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা আইইডি, অর্থাৎ সরকার-বিরোধীদের হাতে-গড়া বোমাই ছিল হতাহতের মূল কারণ, কিন্তু এখন সেটা ২৯ শতাংশে, অর্থাৎ দ্বিতীয় স্থানে এসে দাঁড়িয়েছে৷
বেসামরিক ব্যক্তিদের হতাহত হবার অন্যান্য কারণ হলো: আত্মঘাতী বোমা আক্রমণ (১১ শতাংশ); নির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ড (১০ শতাংশ); বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির জটিল আক্রমণ (পাঁচ শতাংশ); পড়ে থাকা বোমা ও গোলাগুলি ফেটে হতাহত (চার শতাংশ); বিমান হানা (দুই শতাংশ) এবং সরকারি সেনাবাহিনীর তল্লাসি অভিযান (দুই শতাংশ)৷
এই সব হতাহতই কি বিদ্রোহীদের কারণে?
২০১৪ সালে নথিভুক্ত বেসামরিক হতাহতদের ৭৫ শতাংশ ঘটেছে বিদ্রোহীদের আক্রমণ ও অভিযানের কারণে৷ আফগান জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং আন্তর্জাতিক সৈন্যদের গতিবিধি বেসামরিক হতাহতদের ১১ শতাংশের জন্য দায়ী৷ বেসামরিক ব্যক্তিদের নয় শতাংশ হতাহত হয়েছেন উগ্রপন্থি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে স্থলযুদ্ধ চলাকালীন৷
দেশের কোন কোন এলাকা বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল?
আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলে বেসামরিক হতাহতদের পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি: ২১ এবং ২০ শতাংশ৷ এছাড়া পূর্বাঞ্চলে ১৭ শতাংশ এবং মধ্য আফগানিস্তানে ১৫ শতাংশ৷
আফগানিস্তানে জীবন ও যুদ্ধ
দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের ছবি তুলছেন ইরানের ফটোগ্রাফার মাজিদ সাঈদি৷ ছবিগুলো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এনে দিয়েছে তাঁকে৷ চলুন তাঁর ক্যামেরার চোখে দেখা যাক আফগানিস্তানকে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলনা!
কাবুলে যু্দ্ধাহতদের জন্য তৈরি একটা নকল হাত নিয়ে খেলছে দুই কিশোরী৷ এমন কিছু ছবিই তেহরানের মাজিদ সাঈদিকে এনে দিয়েছে বেশ কিছু পুরস্কার৷
ছবি: Majid Saeedi
ছবিই বলে হাজার কথা
১৬ বছর বয়স থেকে ছবি তুলছেন মাজিদ৷ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে মানবিক বিপর্যয়ের দিকেই তাঁর সমস্ত মনযোগ৷ জার্মানির ডেয়ার স্পিগেল, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের মতো ম্যাগাজিন এবং আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর তোলা ছবি৷
ছবি: Majid Saeedi
আফগানিস্তানের শিশুরা
ডিডাব্লিউকে সরবরাহ করা মাজিদের ছবির অনেকগুলোতেই ফুটে উঠেছে আফগান শিশুদের জীবনে যুদ্ধের প্রভাব৷ এ ছবিটি যুদ্ধের কারণে হাত হারানো এক আফগান শিশুর৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদকের অভিশাপ
আফগানিস্তানের খুব বড় এক সমস্যা মাদক৷ বলা হয়ে থাকে বিশ্বের শতকরা ৯০ ভাগ মাদকদ্রব্যই নাকি উৎপন্ন হয় আফগানিস্তানে৷ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম হয় দেশটিতে৷ দেশের অনেক নাগরিক আফিমসেবী৷ জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানের অন্তত তিন লক্ষ শিশু নিয়মিত আফিম সেবন করে৷
ছবি: Majid Saeedi
রোল কল
কাবুলের এক অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শুরুর আগে ক্যাডেটদের রোল কল চলছে৷ জার্মান সেনাবাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ আফগান নিরাপত্তাকর্মীদের অনেক আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল৷ প্রশিক্ষণের লক্ষ্য, আফগান সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় আত্মনির্ভরশীল করে তোলা৷ ২০১৪ সালের শেষেই অবশ্য আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Majid Saeedi
ভয়ংকর শৈশব
স্কুলে লেখাপড়া করতে যাওয়ার সুযোগ শিশুদের কমই মেলে৷ স্কুলে গেলে নগণ্য কারণেও হতে হয় শিক্ষকের কঠোর শাসনের শিকার৷ তা সহ্য করেও পুরো সময় থাকা হয়না, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করতে আগেভাগেই স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়তে হয় তাদের৷ আফগানিস্তানে শিক্ষার হার খুবই কম৷ ২০১১ সালে জার্মান সরকারের উদ্যোগে একটি তথ্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছিল৷ তখন আফগানিস্তানের শতকরা ৭২ ভাগ পুরুষ আর ৯৩ ভাগ নারীই ছিল নিরক্ষর৷
ছবি: Majid Saeedi
বোরখা এবং পুতুল
আফগান নারীরা পুতুল বানাতে শেখার ক্লাসে৷ মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার অর্থায়নে এখানে পুতুল বানাতে শেখানো হয় তাঁদের৷ আফগান নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্যই এ উদ্যোগ৷
ছবি: Majid Saeedi
তালেবানের প্রতিশোধ
২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার পরই আফগানিস্তানে হামলা চালায় তালেবান৷ প্রতিশোধমূলক সে হামলায় প্রাণ যায় চারজনের, আহত হয়েছিলেন ৩৬ জন৷ ছবিতে দু’জন আহতকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলাধুলা
হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে একটু বিশ্রাম৷ আফগানিস্তানে শরীর চর্চা খুব জনপ্রিয়৷
ছবি: Majid Saeedi
যুদ্ধের আবাদ
গত ৩০টি বছর ভীষণ প্রভাব ফেলেছে আফগানদের জীবনে৷ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যুদ্ধের প্রভাব৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদ্রাসা
কান্দাহারের মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশুরা৷
ছবি: Majid Saeedi
হত্যার প্রশিক্ষণ
কুকুরের লড়াইও আফগানিস্তানে খুব জনপ্রিয়৷ কুকুরদের এমনভাবে লড়াই করতে শেখানো হয় যাতে তারা প্রতিপক্ষকে একেবারে মেরে ফেলে৷ কুকুরের জীবনেও যুদ্ধের প্রভাব!