২০১৫ সাল ভারতের ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে অসহিষ্ণুতার বছর হিসেবে৷ ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা, আর তার থেকেও বিপজ্জনক এক রাষ্ট্রীয়, প্রশাসনিক অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটেছে বছর জুড়ে৷
বিজ্ঞাপন
শেষ থেকে শুরু করা যাক৷ ভারতে ধর্মগুরু এবং ক্রিকেটাররা ছাড়া আর যদি কেউ প্রশ্নাতীত সমীহ আদায় করতে পারেন, তাঁরা ভারতের চিত্রতারকারা৷ এই মুহূর্তে বিগ বি অমিতাভ বচ্চনকে বাদ দিলে তিন খান রাজত্ব করছেন ভারতীয় মূল ধারার ছবিতে৷ আমির, শাহরুখ এবং সলমন খান৷ সারা দেশে অসম্ভব তাঁদের জনপ্রিয়তা৷ কিন্তু যেই তাঁরা দেশের চলতি অসহিষ্ণুতার পরিবেশ নিয়ে মুখ খুললেন, সঙ্গে সঙ্গে আসমুদ্র হিমাচল তাঁদের শত্রু হয়ে গেল৷ তাঁদের মুসলিম পরিচয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কটাক্ষ শুরু হয়ে গেল, ভারত যখন এতই খারাপ দেশ বলে মনে হচ্ছে, তাঁরা যেন এদেশ ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তানে গিয়ে থাকেন৷ ফেসবুক-টুইটারে, হোয়াটসঅ্যাপে ফরোয়ার্ড করা রসিকতায় ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ থেকে শুরু করে অশালীন আক্রমণ শুরু হয়ে গেল তাঁদের বিরুদ্ধে৷ এতটাই, যে শাহরুখ খান তাঁর সর্বশেষ সিনেমার প্রচারে বেরিয়ে নিজের মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বলতে বাধ্য হলেন যে, না, সবকিছু ঠিক চলছে ভারতে!
শাহরুখকে ‘পাকিস্তানের দালাল’ বলল হিন্দু মৌলবাদীরা
হিন্দু মৌলবাদীরা ভারতে যে অসহিষ্ণুতা ছড়াচ্ছে – এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন হিন্দি ছবির সুপারস্টার শাহরুখ খান৷ তাতেই খেপে গেছেন বিজেপিসহ হিন্দু মৌলবাদী অন্যান্য দলের কতিপয় নেতা৷ শাহরুখকে বলছেন ‘পাকিস্তানের দালাল’!
ছবি: Johannes Eisele/AFP/Getty Images
কিং খানের ‘হাফ সেঞ্চুরি’
গত ২ নভেম্বর ছিল ‘বলিউড কিং’ শাহরুখ খানের ৫০তম জন্মদিন৷ জীবনের অর্ধ শতাব্দী পূরণ বলে কথা! বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত এ উপলক্ষ্যে অভিনন্দন এবং শুভকামনায় সিক্ত করেন শাহরুখকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Stringer
শাহরুখের সত্যি বয়ান
জন্মদিনে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন শাহরুখ৷ সাম্প্রতিক সময়ে গরুর মাংস নিয়ে হিন্দু মৌলবাদীরা যে দেশব্যাপী অসহিষ্ণুতা ছড়িয়েছে সেই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে শাহরুখ বলেছিলেন, ‘‘ধর্মীয় সহিষ্ণুতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু আর হয়না৷ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি দেশকে অন্ধকার যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷’’
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/F. Shamim
বিজেপিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া
সাক্ষাৎকারটি প্রচারের পরই বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়ভার্গব টুইটারে লিখে দেন,‘শাহরুখের হৃদয় পড়ে আছে পাকিস্তানে’৷ সেই টুইট পরে প্রত্যাহার করে নিলেও বুধবার তিনি বলেছেন, ভারত অসহিষ্ণু হলে শাহরুখের মতো এক মুসলমান অমিতাভ বচ্চনের পরই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা হতে পারতেন না৷’’ বিজেপির কয়েকজন নেতা শাহরুখকে ‘মুখ সামলে কথা বলা’র অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, মুখ না সামলালে শাহরুখের ছবি বয়কট করা হবে৷
ছবি: Johannes Eisele/AFP/Getty Images
জঙ্গি নেতার সঙ্গে তুলনা
শাহরুখের সমালোচনা করতে গিয়ে বিজেপির আরেক সাংসদ যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘‘শাহরুখ এখন হাফিজ সাঈদের ভাষায় কথা বলছেন৷’’ বলিউড ইতিহাসের অন্যতম সেরা সুপারস্টারের সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লশকর-ই তৈয়বার শীর্ষ নেতা হাফিজ সাঈদের তুলনা ভারতের সাধারণ মানুষ এবং শাহরুখ ভক্তদের আহত করেছে৷ সংবাদ এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের তেমন প্রতিক্রিয়াই জানাচ্ছেন সবাই৷
ছবি: AP
শাহরুখের ধর্মনিরপেক্ষতা
ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জীবনে শাহরুখ খুবই উদার৷ তাঁর স্ত্রী গৌরির জন্ম হিন্দু পরিবারে৷ প্রেম করে বিয়ে করার পরেও শাহরুখ কখনো গৌরির ধর্ম বিশ্বাস বা ধর্ম চর্চায় হস্তক্ষেপ করেননি৷ ভক্তদের কাছে ‘এসআরকে’ নামেও পরিচিত মুম্বই মহাতারকা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে নামাজ পড়া এবং পূজা করার ব্যবস্থা রয়েছে৷ ছবিতে স্ত্রী গৌরির সঙ্গে শাহরুখ৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
5 ছবি1 | 5
অথচ এমন কী বলেছিলেন তাঁরা? উত্তর প্রদেশের দাদরি নামের এক অখ্যাত গ্রামে একজন বর্ষীয়ান মানুষকে ক্ষিপ্ত জনতা পিটিয়ে মেরে দিয়েছিল স্রেফ এই সন্দেহে যে তিনি নিজের বাড়িতে গোমাংস খাচ্ছেন৷ এই যে সাম্প্রদায়িক জনরোষ, এর প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিল কিন্তু ভারতের মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং এমনকি জম্মু-কাশ্মীরের মতো মুসলিমপ্রধান রাজ্যে গোমাংসের ওপর জারি করা সরকারি নিষেধাজ্ঞা৷ তার পরেই কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থনে গোহত্যা বন্ধ করতে ত ৎপর হয়ে উঠেছিল হিন্দুত্ববাদীরা৷ ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শ, তার সংবিধানে স্বীকৃত ব্যক্তিমানুষের অধিকার, কোনো কিছুরই তারা তোয়াক্কা করেনি৷ সেই প্রেক্ষিতেই শাহরুখ খান বলেছিলেন, দেশ যেভাবে এক অন্ধকার সময়ের দিকে এগোচ্ছে, তা আরও পিছিয়ে দেবে ভারতকে৷ তার প্রতিক্রিয়ায় তাঁকে শুনতে হল, তিনি ভারতে থাকলেও তাঁর হৃদয় রয়েছে পাকিস্তানে!
অনেক হিন্দুও গরু বা মহিষের মাংস খান
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে থাকলেও ভারতে গরু বা মহিষের মাংস অনেকেই খেয়ে থাকেন৷ সে দেশে যত মানুষ গরু বা মহিষের মাংস খান তাদের মধ্যে সোয়া কোটিই হিন্দু৷
ছবি: AP
গরু কম, মহিষ বেশি
হিন্দু প্রধান দেশ ভারতে ধর্মীয় কারণেই গরুর মাংস কম খাওয়া হয়৷ তবে মহিষের মাংস খান অনেকেই৷ গরু এবং মহিষের মোট ভোক্তা প্রায় ৮ কোটি৷ ২০১১-১২-তে একটি জরিপ চালিয়েছিল ভারতের ‘দ্য ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস’ (এনএসএসও)৷ সেই জরিপ থেকে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
সাধারণ মানুষের মাঝে মাংস নিয়ে বিরোধ কোথায়?
জরিপ থেকে আরো জানা গেছে, যাঁরা গরু বা মহিষের মাংস খান তাঁদের বেশিরভাগই মুসলমান হলেও সেখানে সোয়া এক কোটি হিন্দুও এসব মাংস খান৷
ছবি: Getty Images/P. Guelland
সংখ্যাটা বাড়ছে
জরিপ থেকে আরো জানা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশে গরু বা মহিষের মাংস খাওয়া বাড়ছে৷ এক কোটি মানুষের মধ্যে জরিপটি চালিয়েছিল এনএসএসও৷
ছবি: DW/S.Waheed
মাংস খাওয়ায় ভারত সবার পেছনে
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) ১৭৭টি দেশে সব ধরণের মাংস খাওয়ার হার সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ তালিকায় সবার নীচে রয়েছে ভারত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
রপ্তানিতে সবার আগে
এফএও-র তথ্য অনুযায়ী, গবাদি পশুর, বিশেষ করে গরু এবং মহিষের মাংসের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ভারত৷ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং নগরায়ণের কারণে মানুষের মাংস খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ তারপরও অবশ্য অন্য সব দেশের তুলনায় ভারতের মানুষ এখনো অনেক কম মাংস খায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
হিন্দুরা দ্বিতীয়
ভারতের মোট মুসলমানের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি মুসলমান গরু বা মহিষের মাংস খান৷ সংখ্যার দিক থেকে তারপরেই রয়েছে হিন্দুরা৷ নিজেদের মোট সংখ্যার শতকরা হারের বিচারে মুসলমানদের পরেই রয়েছেন খ্রিষ্টানরা৷
ছবি: DW/S.Waheed
যাঁরা বেশি খান
মুসলিম জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি নিম্ন বর্ণের হিন্দু বা উপজাতিরাও যথেষ্ট গরু বা মহিষের মাংস খান৷ উচ্চ বর্ণের অনেক হিন্দুও গরু বা মহিষের মাংস পছন্দ করেন৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
7 ছবি1 | 7
আরেক তারকা আমির খান তাঁর স্ত্রী কিরণ রাওয়ের একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ক্রমশ এমন পরিস্থিতি হচ্ছে যে ভবিষ্যতে ভারতে থাকা যাবে কিনা, ওঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে, সে নিয়ে তাঁদের দুশ্চিন্তা হয়৷ সহজ সমাধান হিসেবে আমির খানকেও সারা দেশ পরামর্শ দিল, সপরিবার গিয়ে পাকিস্তানে থাকতে৷ এর বিপরীত অবস্থানে সুস্থ, যুক্তিবাদী, সহনশীল কণ্ঠ অবশ্যই ছিল, কিন্তু তা এতই ক্ষীণ যে তার কোনো প্রভাবই পড়ল না৷
অবশ্য অসহিষ্ণুতা সেই বিরুদ্ধবাদ নিয়েও৷ হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য কর্ণাটকে খুন হয়ে গেলেন যুক্তিবাদী লেখক – অধ্যাপক এম এম কালবুর্গি, মহারাষ্ট্রে খুন হলেন নরেন্দ্র দাভোলকার, সমাজকর্মী গোবিন্দ পানসারে৷ প্রতি ক্ষেত্রেই হিন্দুত্ববাদীরা মূল সন্দেহভাজনের তালিকায়, তবু তদন্তে চিরাচরিত দায়সারা গড়িমসির পরিচয় দিল প্রশাসন৷ প্রতিবাদে দেশের বিশিষ্ট, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী-সাহিত্যিক-চলচ্চিত্রকারেরা তাঁদের সরকারি খেতাব ফিরিয়ে দিতে শুরু করলেন৷ উলটে অভিযোগ উঠল, তাঁরা দেশে এবং বিদেশে সরকারকে হেয় করতে, রাজনৈতিক প্ররোচনায় পুরস্কার ফেরাচ্ছেন৷ পাল্টা শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের মিছিল করিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা হলো, এসবই আসলে দেশের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্র৷
ভারতে মৌলবাদীদের পাকিস্তান বিরোধীতা
ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের৷ চারটি যুদ্ধও হয়েছে দেশ দু’টির মধ্যে৷ তবে দু’দেশের দ্বন্দ্বকে রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ না রেখে তা সংস্কৃতি এবং খেলাধুলার অঙ্গনেও ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হিন্দু মৌলবাদীরা৷
ছবি: Getty Images/AFP
ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচে বাধা
১৯৯৯ সালে ভারত সফরে এসেছিল পাকিস্তান৷ সেবার দু’দেশের ক্রিকেট ম্যাচ বানচাল করতে ফিরোজ শাহ কোটলার পিচ খুঁড়ে রেখেছিল হিন্দু মৌলবাদী দল শিব সেনা৷ তারপরও অবশ্য ম্যাচ হয়েছে৷ ২০০৬ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের জয়পুর এবং মোহালির দু’টি ম্যাচেরও বিরোধীতা করেছিল শিব সেনা৷ সেবারও অবশ্য নির্বিঘ্নেই ম্যাচ হয়েছে৷
ছবি: Fotolia/S.White
বীনা মালিক আর আলী সেলিমের পারফর্ম্যান্সেও আপত্তি
রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস’-এর চতুর্থ আয়োজনে অংশ নিতে এসে পাকিস্তানের বীনা মালিক এবং আলী সেলিমও পড়েছিলেন শিব সেনার আপত্তির মুখে৷ অনুষ্ঠানের আয়োজকরা শুধু পাকিস্তানি হওয়াকে অপরাধ মেনে বীনা এবং সেলিমকে অবশ্য বাদ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Merey
কাবাডিতেও পাকিস্তানে আপত্তি
২০১৪ সালে পেশাদার কাবাডি লিগের কয়েকটি দল পাকিস্তানের খেলোয়াড় দলে রেখেছিল৷ টাকা খরচ করে তাদের খেলোয়াড় নিয়ে তাদের শেষ পর্যন্ত খেলানো যায়নি৷ সেবারও শিব সেনার আপত্তি এবং আপত্তির মুখে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয় দলগুলোকে৷
ছবি: imago/Xinhua
আতিফ আসলামের কনসার্ট হলো না
২০১৫ সালের ২৫শে এপ্রিল পুনেতে আতিফ আসলামের কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল৷ শিব সেনার আপত্তির মুখে সেই কনসার্ট আর হয়নি৷
ছবি: Coke Studio
বন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারলেন না গুলাম আলী
পাকিস্তানের গজল শিল্পী গুলাম আলী ভারতে তুমুল জনপ্রিয়৷ এ মাসেই প্রয়াত গজল শিল্পী জগজিৎ সিং-এর জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মু্ম্বইতে আসার কথা ছিল তাঁর৷ শুধু পাকিস্তানি হওয়ার কারণে তাঁর ভারত আগমন নিয়েও আপত্তি তোলে শিবসেনা৷ গুলাম আলী তাই এবার আর প্রয়াত বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও মুম্বই আসতে পারেননি৷
ছবি: Getty Images/AFP
পাকিস্তানির পাশে থাকায় ভারতীয়র মুখেই কালি
নিজের লেখা বইয়ের প্রকাশের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুম্বই এসেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ কসুরি৷ অনুষ্ঠান হয়েছে, পুস্তকও প্রকাশিত হয়েছে৷ কিন্তু তাদের দাবি অনুযায়ী অনুষ্ঠান বাতিল না হওয়ায় অনুষ্ঠানে এসে সুধেন্দ্র কুলকার্নির মুখে কালি ছিটিয়ে দিয়েছে শিবসেনা সমর্থকরা৷ ভারতের সাবেক কূটনীতিক সুধেন্দ্র কুলকার্নির একমাত্র অপরাধ তিনি এক পাকিস্তানির বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Pilick
6 ছবি1 | 6
যদিও কালি লাগালেন ওরাই৷ মুম্বইতে প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রী খুরশিদ মাহমুদ কসুরির বই প্রকাশের অনুষ্ঠান৷ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিল শিবসেনা৷ তাও বই প্রকাশ করা হল, সেই অপরাধে মুখে কালি লেপে দেওয়া হল লেখক-সমাজসেবী সুধীন্দ্র কুলকার্নির৷ সেই কালো মুখ নিয়েই সাংবাদিক সম্মেলন করলেন কুলকার্নি, প্রতিবাদ জানাতে৷ বলা হল, উনি নাকি রাজনীতি করছেন!
ভারতে এই অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটেছে বছরভর৷ তাও, যদি এই সবকটা ঘটনা বাদ দিতে হয়, তা হলেও ২০১৫ সাল কলঙ্কিত হয়ে থাকবে একটি অসভ্যতার জন্য৷ সারা দুনিয়া যাঁর গলার মাদকতায় আচ্ছন্ন, প্রবাদপ্রতিম সেই গুলাম আলিকে এবছরই মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে তিনি মুসলিম এবং শত্রু দেশ পাকিস্তানের লোক৷ তাই তিনি যতক্ষণ না পাকিস্তানের যাবতীয় কৃতকর্মের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইবেন, তাঁকে ভারতে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না! তার পর যদিও দিল্লি থেকে, কলকাতা থেকে সাদর আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাঁকে, কিন্তু অভিমানে মুখ ঘুরিয়েছেন তিনি৷ এ লজ্জা রাখার জায়গা নেই সহিষ্ণু ভারতের৷
ভারত কি সত্যিই দিন দিন আরো অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে? জানান আপনার মতামত৷
ইসলাম অবমাননার অভিযোগ, রহমানের জবাব
হিন্দু পরিবারে জন্ম হলেও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় তিনি এখন এ আর রহমান৷ ধর্মানুরাগের সুনাম আছে৷ কিন্ত মহানবিকে নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করায় তাঁর বিরুদ্ধেই উঠেছে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ৷ অভিযোগের জবাব দিলেন রহমান৷
ছবি: AP
অভিযোগের কারণ
ইরানের পরিচালক মাজিদ মাজিদির চলচ্চিত্র ‘মুহাম্মদ, দ্য মেসেঞ্জার অফ গড’ চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেছেন এ আর রহমান৷ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশ এবং ভারতের মুসলমানদের তোপের মুখে পড়েছেন অস্কার জয়ী ভারতীয় সংগীত পরিচালক৷ মাজিদ মাজিদি চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন মুসলমানদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-র জীবনী অবলম্বনে৷ সে কারণেই মুসলিম বিশ্বের একাংশে দেখা দেয় অসন্তোষ৷
ছবি: mohammadmovie.com
মূল অভিযোগ
এ আর রহমানের বিরুদ্ধে মুসলমানদের একাংশের অভিযোগ, ‘মুহাম্মদ, দ্য মেসেঞ্জার অফ গড’ ছবির সংগীত পরিচালনা করে তিনি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন৷ মুম্বইয়ের মুসলমানদের সংগঠন রেজা অ্যাকাডেমি এক বিবৃতিতে বলেছে, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনীর চলচ্চিত্রায়ন অনৈসলামিক, কেন না, বাস্তব জগতে নবিজির অনুরূপ ফুটিয়ে তোলাকে ইসলাম সমর্থন করে না৷
ছবি: mohammadmovie.com
ক্ষমা প্রার্থনা দাবি
বিবৃতিতে এ আর রহমান এবং ‘মুহাম্মদ, দ্য মেসেঞ্জার অফ গড’ ছবির ইরানি পরিচালক মাজিদ মাজিদিকে তওবা করে ক্ষমা চাইতে বলেছে রেজা অ্যাকাডেমি৷ ভারতের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে সুখ্যাতি থাকলেও ধর্মের প্রতি রহমানের অনুরাগ এবং বিশ্বাসকে তওবা করে পুনপ্রতিষ্ঠা করতে বলেছে রেজা অ্যাকাডেমি৷ছবিতে ইরানে নির্মিত চলচ্চিত্রটির পরিচালক মাজিদ মাজিদি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemi
ছবি বর্জনের আহ্বান
এছাড়া সকল মুসলমানের প্রতি ‘মুহাম্মদ, দ্য মেসেঞ্জার অফ গড’ চলচ্চিত্রটি না দেখার আহ্বানও জানিয়েছে রেজা অ্যাকাডেমি৷ অ্যাকাডেমির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদরা মনে করেন, ইসলামের সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী নিয়ে তৈরি করা চলচ্চিত্র দেখাও গুনাহর কাজ৷
ছবি: Fotolia/jacek_kadaj
রহমানের দুঃখ প্রকাশ
রেজা অ্যাকাডেমির আহ্বানে দ্রুতই সাড়া দিয়েছেন এ আর রহমান৷ নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন, ইরানে নির্মিত চলচ্চিত্রটিতে তিনি কারো মনে আঘাত দেয়ার জন্য সংগীত পরিচালনা করেননি৷ তাঁর মতে, ‘‘মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, ভুল বোঝাবুঝি দূর করা এবং ‘দয়াশীলতাই জীবনের মূল কথা’ এমন একটি বার্তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যই ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে৷’’