মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্ব বদলের ফলে নারী অধিকারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধাবিপত্তির আশঙ্কা করছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংস্থার প্রতিনিধিরা৷ ইউরোপে দক্ষিণপন্থি প্রবণতাও সে আশঙ্কা বাড়িয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নয়, পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এখন নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখার প্রবণতা স্পষ্ট চোখে পড়ছে৷ কোথাও জাতীয়তাবাদী রাজনীতি দক্ষিণপন্থি রাজনীতির রূপ ধারণ করছে; কোথাও রক্ষণশীল খ্রিষ্টীয় সম্প্রদায় ও তার সঙ্গে যুক্ত গির্জার মতামত রাজনৈতিক গুরুত্ব পাচ্ছে৷
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি দাঁড়াচ্ছে এই যে, ‘নারী অধিকারের সামনে বড় বড় চ্যালেঞ্জ' দেখছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ-র সত্তা ও বৈষম্য বিভাগের সিনিয়র ডাইরেক্টর টারা দেমঁ৷ তার মধ্যে একটি ফলশ্রুতি হবে এই যে, বিশ্বব্যাপী ‘মহিলাদের বস্তুত দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক', বলে ধরে নেওয়া হবে – বলেছেন দেমঁ৷
গর্ভপাত ও গর্ভনিরোধ
‘গ্লোবাল গ্যাগ রুল' বলে পরিচিত এই নির্দেশটি চালু হয়েছিল প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের আমলে৷ এর ফলে যেসব গোষ্ঠী বিদেশে মার্কিন আর্থিক সাহায্য পাচ্ছে, তারা গর্ভপাতের আয়োজন রাখতে পারবে না, এমনকি কাউকে গর্ভপাত সম্পর্কে পরামর্শও দিতে পারবে না – যদি এই সব কাজের অর্থ অপরাপর সূত্র থেকে আসে, সেক্ষেত্রেও নয়৷
অনার কিলিং: পরিবারের সম্মানের নামে হত্যা
পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে প্রতি বছর সারা বিশ্বে কত কিশোরী, তরুণী ও মহিলাকে অংশত শারীরিক নির্যাতনের পর নির্মম নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ সংখ্যাটা ৫,০০০ থেকে ২০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে৷
ছবি: DW
প্রতিবছর কতজন অনার কিলিংয়ের শিকার?
২০০০ সাল থেকে বিক্ষিপ্তভাবে সংগৃহীত ও প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ৫,০০০ অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে থাকে৷ এই সংখ্যা জাতিসংঘের বিবৃতির সঙ্গেও মেলে৷ যেহেতু বহু অনার কিলিংয়ের ঘটনাকে দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়, সেহেতু বাস্তব পরিসংখ্যান এর চারগুণ হলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যাদের হত্যা করা হয়
পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে যাদের হত্যা করা হয়, তাদের গড় বয়স ২৩ ও তাদের ৯৩ শতাংশই মেয়ে৷ দুই-তৃতীয়াংশ প্রাণ হারায় পরিবারের সদস্যদের হাতে৷ নিহতদের অর্ধেক হত্যাকারীর মেয়ে, নয়তো বোন; নিহতদের এক চতুর্থাংশ হত্যাকারীর স্ত্রী কিংবা বান্ধবী৷ হত্যার কারণ ষাট ভাগ ক্ষেত্রে ‘বড় বেশি পশ্চিমি’ হয়ে পড়া; বাকিদের ক্ষেত্রে পুরুষ বা পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Sarbakhshian
পাকিস্তান: ইজ্জতের নামে হত্যা
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ সালে পাকিস্তানে প্রায় ১,১০০ অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে৷ পাকিস্তানের গ্রামীণ সমাজে অনার কিলিংয়ের প্রতি জনসাধারণেরও সমর্থন থাকার ফলে, এই কুপ্রথা দূর করার যাবতীয় প্রচেষ্টা ব্যহত হয়েছে ও হচ্ছে৷ ইতিপূর্বে নিহতের পরিবার হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিলে সে ছাড় পেতো; এ’বছর আইনের সে ফাঁকটি বন্ধ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সোশ্যাল মিডিয়া স্টার কান্দিল বেলুচের হত্যা
২০১৩ সালে পাকিস্তানি আইডলের জন্য অডিশন করার পর থেকেই এই পাকিস্তানি তরুণী একজন ইন্টারনেট সেলিব্রিটি হয়ে পড়েছিলেন৷ ২০১৬ সালের ১৫ই জুলাই কান্দিলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তাঁর নিজের ভাই ওয়াসিম আজিম৷ আজিম বোনকে খুন করার কথা স্বীকার করে বলেছে, পরিবারের ‘ইজ্জতের’ উপর ‘দুর্নাম’ আনছিলেন কান্দিল, তাই...৷
ছবি: Facebook/Qandeel Baloch via Reuters
পাথর ছুঁড়ে হত্যা
২০১৪ সালের ২৭শে মে৷ পাকিস্তানের লাহোর শহরে পুলিশ মর্গের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে শোয়ানো ফারজানা ইকবালের মৃতদেহকে ঘিরে কাঁদছেন প্রবীণারা৷ প্রেমিককে বিয়ে করার দোষে লাহোর হাইকোর্টের সামনে পাথর ছুঁড়ে ফারজানাকে হত্যা করে তাঁর পরিবারের সদস্যরা৷
ছবি: Reuters
ভারতে অনার কিলিং
গোটা দেশে বছরে হাজার খানেক অনার কিলিং হয় বলে অনুমান করা হয়ে থাকে, যদিও বাস্তবিক সংখ্যা জানা সম্ভব নয়৷ উত্তর ভারতে, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ ও হরিয়ানাতেই অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে বেশি, দক্ষিণ ভারত বা মহারাষ্ট্র কিংবা গুজরাটে সে তুলনায় কম৷ অনার কিলিংয়ের খবর পাওয়া গেছে পাঞ্জাব ও বিহার থেকেও৷ পশ্চিমবঙ্গে অনার কিলিং গত একশ’ বছর ধরেই প্রায় নেই বললেই চলে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Saurabh Das
‘বাংলাদেশে অনার কিলিং মানসিকতায়’
বাংলাদেশে অনার কিলিংয়ের খবর এখনো পাওয়া যায়নি৷ তবে পরিবারের পছন্দে বিয়ে না করার কারণে হত্যার ঘটনা বেশ কিছু ঘটেছে৷ তাই জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেনন, ‘‘অনার কিলিংয়ের মানসিক অবস্থা এখানে (বাংলাদেশে) বিদ্যমান৷ পাকিস্তানের মতো এখানে এটা প্রকট নয়৷ তবে যা হচ্ছে তা ব্যক্তি ও পরিবারের অহংবোধ থেকে৷ এখানে সমস্যাটি হলো ধনী-গরীবের ব্যবধান নিয়ে৷''
ছবি: Meya online netwark
অন্য দেশে...
ব্রিটেনে অভিবাসীদের মধ্যে অনার কিলিং বিরল নয়৷ কুর্দি, পাকিস্তানি ও সিরীয় বাবারা নিজেদের মেয়েদের স্বহস্তে হত্যা করছেন, এমন ঘটনা বারংবার ঘটেছে৷ ২০১০ সালে এক শিখ পিতা তাঁর কন্যাকে হত্যা করেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষিপ্ত হলেও, অভিবাসী সম্প্রদায়গুলির মধ্যে একাধিক অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে৷ জার্মানি ও ইউরোপের অন্য কয়েকটি দেশেও অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. R. Caivano
ক্যানাডায় আফগান বাবার হাতে তিন মেয়ে খুন
ঘটনাটা আলোড়ন তুলেছিল ২০০৯ সালে৷ সে বছর ক্যানাডার অন্টারিও প্রদেশের কিংস্টন শহরের খালে একটি গাড়ি ডুবন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়৷ গাড়িতে ছিল ১৯, ১৭ ও ১৩ বছর বয়সের তিনটি মেয়ে ও তাদের মায়ের লাশ৷ ২০১২ সালের ছবিতে (ওপরে) মেয়ে তিনটির বাবা মোহম্মদ শাফিয়া, তাঁর স্ত্রী তুবা মোহম্মদ ইয়াহিয়া ও পুত্র হামেদকে কিংস্টন আদালতে পৌঁছতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters
বার্লিনে হাতুন সুরুচু হত্যাকাণ্ড
হাতুন সুরুচু ছিলেন তুরস্কের আনাতোলিয়া থেকে জার্মানিতে আসা এক কুর্দ দম্পতির সন্তান৷ বার্লিনের তুর্কি-অধ্যুষিত ক্রয়েৎসব্যার্গ অঞ্চলে মানুষ হয়েছেন৷ ১৬ বছর বয়সে তাঁকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয় তুরস্কে৷ জার্মানিতে ফিরে হাতুন পুত্রসন্তানের জন্ম দেন ও স্বাধীন জীবন যাপন শুরু করেন৷ একটি কলহের পর হাতুনকে বার্লিনের এক বাস স্টপে মাথায় তিনবার গুলি করে মারেন তাঁর ভাই আইহান সুরুচু৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেই বাস স্টপ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০০৯ সালে এই বিধি প্রত্যাহার করেন বটে, কিন্তু একটি কলমের খোঁচায় তা আবার পুনর্বহাল করা যেতে পারে৷ এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ডে অর্থপ্রদানও বন্ধ করে দিতে পারে, যদিও ইউএনপিএফ শুধুমাত্র সন্তানধারণ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা দেয়, গর্ভপাতে সাহায্য বা সমর্থন করে না৷
বিদেশ থেকে টাকা পেলেই বিদেশি (গুপ্ত)চর!
সারা বিশ্বে নানা নারী অধিকার সংগঠন বিবাহবিচ্ছেদ থেকে শুরু করে শিশু বিবাহ ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে, যদিও তাদের কাজের পরিবেশ যেমন বিরূপ, তেমনই তাদের অর্থবল সামান্য৷ এক্ষেত্রে একাধিক দেশ এই সব গোষ্ঠীকে ‘ফরেন এজেন্ট' হিসেবে নাম লেখাতে বাধ্য করেছে, কেননা তারা আন্তর্জাতিক দাতাবর্গের কাছ থেকে অর্থসাহায্য পেয়ে থাকে৷ যুগপৎ মার্কিন সরকারি উৎস থেকেও অর্থসাহায্য কমবে, বলে আশঙ্কা করছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নারী অধিকার বিভাগের অস্থায়ি পরিচালক জ্যানেট ওয়ালশ৷
নারী নির্যাতন
পরিসংখ্যান বলে, বিশ্বে প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন শারীরিক অথবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজের স্বামীর হাতে৷ প্রত্যেক পাঁচজন নারীর একজন ধর্ষণ অথবা ধর্ষণের প্রচেষ্টার শিকার হবেন, বলছে জাতিসংঘ৷ এছাড়া নারীরা ভ্রুণহত্যা থেকে শুরু করে স্বগৃহে নির্যাতনের শিকার৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের টারা দেমঁ-র মতে ‘‘মহিলাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা একটি মানবাধিকার সংকট, একটি স্বাস্থ্য সংকট ও একটি সাস্কৃতিক সংকট৷''
গর্ভপাত৷ অনাকাঙ্খিত সন্তান না নিতে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চলছে ভ্রুণ হত্যা৷ আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত নিষিদ্ধ৷ তারপরও গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন, অনেকে আর কোনোদিন মা হতে পারছেন না৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
স্বাধীনতা...
‘শরীরটা আমার নিজের’ – আর্জেন্টিনার মেয়েরা এখনো স্বাধীনভাবে এ কথা ভাবতে পারেন না৷ গর্ভপাত সেখানে নিষিদ্ধ৷ তা সত্ত্বেও গর্ভপাত চলছে৷ ২৭ বছর বয়সি ক্যামিলাও গর্ভপাত ঘটিয়েছেন, তারপর নিজের ঘাড়ে এঁকেছেন উল্কি, সেখানে লেখা, ‘স্বাধীনতা’৷ তাঁর এ ছবি ‘১১ সপ্তাহ, ২৩ ঘণ্টা, ৫৯ মিনিট – আর্জেন্টিনায় অবৈধ গর্ভপাত’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে৷
ছবি: Goméz Verdi, Franz, Meurice
নববর্ষের প্রাক্কালে...
এ ছবিতে মারা নামের একটি মেয়ের জীবনের গল্প বলার চেষ্টা করা হয়েছে৷ ২১ বছর বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে মারাকে তাঁর বয়ফ্রেন্ডের পরিবার, ‘গর্ভপাত ঘটালে আমরা অভিযোগ দায়ের করবো’ – বলে শাসিয়েছিল৷ হুমকি দিলেও ছেলেবন্ধুর সটকে পড়া কিন্তু তাঁরা ঠেকাননি৷ সঙ্গী চলে যাওয়ার ১২ সপ্তাহ পর বাধ্য হয়ে মারা ব্যাপারটি খুলে বলেন মাকে৷ তারপর ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটিয়ে আবার নতুন জীবন শুরু করেন মারা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
পুরুষেরও ভোগান্তি
গর্ভপাত অনেক সময় পুরুষদেরও বিপদে ফেলে৷ ফোটোগ্রাফার লিসা ফ্রানৎস, গুয়াদালুপে গোমেজ এবং লেয়া মরিসের কাজগুলো তেমন গল্পগুলোই তুলে ধরছে৷ পেদ্রো নামের এই তরুণ গর্ভপাতের ব্যাপারে তাঁর গার্লফ্রেন্ডকে শুধু সমর্থনই করেননি, তাঁকে ক্লিনিকেও নিয়ে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু গর্ভপাত ঘটানোর পর বিষয়টি নিয়ে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেননি৷ সবার আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল, পেদ্রো যেন খুব বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছেন!
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
বাড়িতেই গর্ভপাত
অন্তঃসত্ত্বার পেটে ঘুষি মেরে ভ্রুণ হত্যা, তারপর কাপড়ের হ্যাঙার আর কাপড় সেলাই করার সুঁচ ব্যবহার করে ‘জঞ্জাল’ সাফ করে দেওায়া – আর্জেন্টিনার অনেক অঞ্চলে এভাবেই ঘরে ঘরে হয় গর্ভপাত৷ কোনো ডাক্তার বা নার্স নয়, ঘরের মেয়েরাই এভাবে কাজ সারেন৷ ফলে অকালে ঝরে যায় অনেক নারীর প্রাণ৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
বছরে অন্তত একশ জন...
গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে আর্জেন্টিনায় প্রতিবছর ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজারের মতো নারী জটিল সমস্যায় পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হন৷ তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে একশ জন সন্তানের আগমন রুখতে গিয়ে নিজেদেরই মৃত্যু ডেকে আনেন৷ আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করে, বিশেষত দরিদ্র অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে নিজেদের জীবনও বিপন্ন করছেন মেয়েরা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
১৫০০ ইউরোয় মুশকিল আসান
গর্ভপাত আইনত দণ্ডনীয় হলেও আর্জেন্টিনায় টাকা দিলে এ কাজ সহজেই হয়৷ টাকাটা অবশ্য বেশিই লাগে, কোনো কোনো ডাক্তার এ জন্য ১০ হাজার পেসো বা ১৫০০ ইউরোও নিয়ে থাকেন গর্ভপাত ঘটাতে ইচ্ছুক নারীদের কাছ থেকে৷ জার্মান কারদোসো একজন সার্জন৷ তবে আর্জেন্টাইন ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হয়েও তিনি লড়ছেন গর্ভপাতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার দাবির পক্ষে৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
নারীর পাশে নারী
‘ডিম্বাশয় থেকে তোমার গোলাপরেণু সরিয়ে নাও’ – এভাবেই গর্ভপাতকে আইনসিদ্ধ করানোর আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার আর্জেন্টিনার নারী অধিকার সংগঠন ‘লা রেভুয়েলতা’৷ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান প্রধান দেশ আর্জেন্টিনায় বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠন এ দাবির পক্ষে৷ ‘লা রেভুয়েলতা’ শুধু দাবি আদায়ে সোচ্চার নয়, গর্ভপাতে ইচ্ছুক নারীদের উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে গর্ভপাতে সহায়তাও করে তারা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
দিকনির্দেশনার অভাব
এলুনের বয়স এখন ২১৷ ‘লা রেভুয়েলতা’-র সহায়তায় তিনি গর্ভপাত ঘটিয়েছেন৷ ‘কখন মা হবো, এ সিদ্ধান্ত আমিই নেবো’ – এলুনে এমন কথা বলেছেন ঠিকই, তবে এতদিনে তিনি জেনে গেছেন যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গর্ভপাত ঘটানোও তাঁর দেশে খুব একটা নিরাপদ নয়৷ ডাক্তাররা ওষুধ কখন, কিভাবে খেতে হবে তা না বলেই বিক্রি করে দেন৷ ফলে অজ্ঞতার ঝুঁকি থেকেই যায়, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সহায়তা নিতে চেয়েও মৃত্যু এড়াতে পারেন না অনেক নারী৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
জেলখানায় গর্ভপাত
সোনিয়া সানচেজ ছিলেন পতিতা৷ অবৈধভাবে পতিতাবৃত্তির অভিযোগে জেল খেটেছেন অনেকবার৷ কারাবন্দি অবস্থায় গর্ভপাতও ঘটিয়েছেন৷ এক খদ্দের তাঁর মা হতে চাওয়া, না চাওয়ার স্বাধীনতাকেও কিনে নিয়েছিলেন৷ পতিতালয়ের মালিককে বাড়তি টাকা দেয়ায় কনডম ছাড়াই তিনি মিলিত হতেন৷ ফলশ্রুতিতে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন সোনিয়া৷ এই তরুণী এখন নেমেছেন গর্ভপাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে৷ ইতিমধ্যে সাফল্যের দেখাও পেয়েছেন৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
আর নীরবতা নয়...
ছবিতে দেখা যাচ্ছে মনিকা নামের এক নারীর শরীরের অনাবৃত একটি অংশ৷ লিসা ফ্রানৎস, গুয়াদালুপে গোমেজ এবং লেয়া মরিসের তোলা ছবি নিয়ে ‘১১ সপ্তাহ, ২৩ ঘণ্টা, ৫৯ মিনিট – আর্জেন্টিনায় অবৈধ গর্ভপাত’ শীর্ষক যে প্রদর্শনী চলছে, সেখানে এ ছবিটিও দেখানো হচ্ছে৷ নিজের এমন একটা ছবি দেখানোর অনুমতি দেয়া মনিকা গর্ভপাতের পক্ষে নিজ বক্তব্য তুলতে গিয়ে শুধু বলেছেন, ‘এটা আমার দেহ’৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
10 ছবি1 | 10
যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত বিরোধীরা ১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্টের যে রায়টির ফলে গর্ভপাত বৈধ করা হয়, তা বাতিল করতে চান৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সুপ্রিম কোর্টের যেসব নতুন বিচারকের নাম ঘোষণা করবেন, তারা গর্ভপাত বিরোধী হবেন৷ টেক্সাসে ইতিমধ্যেই আইন করা হয়েছে যে, গর্ভপাতের ভ্রুণকে মানবিক মর্যাদায় সমাধিস্থ করতে হবে, যার খরচ শত শত ডলার৷ ওহাইও বিশ সপ্তাহের পর গর্ভপাত নিষিদ্ধ করেছে৷
মুশকিল এই যে, ‘‘আইন যা-ই হোক না কেন, গর্ভপাত কোনোদিনই কমে না'', বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ উওমেন'-এর সভাপতি টেরি ও'নিল৷ তিনি মনে করেন, ‘‘যা কমে, তা হলো গর্ভপাতের নিরাপত্তা ও গর্ভপাত কমানোর সামর্থ্য৷''
নিম্ন আয়ের মহিলাদের পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের গর্ভধারণ নিরোধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন কর্মসূচি আছে৷ মার্কিন কংগ্রেস সেগুলিতে অর্থদান বন্ধ করতে পারে, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়৷
নারী অধিকারের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে কে?
সাম্প্রতিক কয়েক বছরে মার্কিন সরকার নারী অধিকারের উন্নতি ও সমর্থনে, বিশেষ করে জাতিসংঘ অনুমোদিত ‘গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট গোল'-সমূহ নির্দিষ্ট করার ব্যাপারে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নিয়েছে ৷
যুক্তরাষ্ট্র উত্তরোত্তর সেই ভূমিকা পালন করতে অস্বীকার করলে, ‘‘নারী অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি ও নারী অধিকারের ক্ষেত্রে সরকারবর্গের প্রতিশ্রুতি'', উভয় ক্ষেত্রেই জোয়ারের বদলে ভাটার আশঙ্কা দেখছেন ইন্টারন্যাশনাল উওমেন'স হেল্থ কোয়ালিশন-এর সভাপতি ফ্রঁসোয়া জিরার৷
এসি/এসিবি (রয়টার্স)
ভাইয়ের হাতে খুন হওয়া পাকিস্তানের সেই বিতর্কিত মডেল
পাকিস্তানে নিজের ভাইয়ের হাতে খুন হয়েছেন বিতর্কিত মডেল কন্যা কান্দিল বেলুচ৷ ‘অনার কিলিং’ এর শিকার এই নারী সেদেশের ইন্টারনেট জগতে আলোড়ন তুলেছিলেন খোলামেলা ছবি প্রকাশ করে৷
ছবি: Instagram/quandeel_baloch
ফেসবুকে ‘লজ্জাজনক’ ছবি দেয়ায় খুন!
পাকিস্তানের মুলতানে নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় মডেল কান্দিল বেলুচকে৷ তাঁর ভাই ওয়াসিম আজিম দাবি করেছে, ফেসবুকে ‘লজ্জাজনক’ ছবি প্রকাশ করায় পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য বোনকে খুন করেছেন তিনি৷
ছবি: Facebook/Qandeel Baloch via Reuters
ইন্টারনেটে আলোচিত কান্দিল বেলুচ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত ছিলেন কান্দিল বেলুচ৷ রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা এই মডেলের টুইটার অনুসারীর সংখ্যা পয়তাল্লিশ হাজারের বেশি এবং ফেসবুকে তা প্রায় আট লাখ৷
ছবি: Instagram/quandeel_baloch
পাকিস্তানের ‘কিম কার্দাশিয়ান’
বেলুচকে অনেকে তুলনা করতেন মার্কিন টিভি অভিনেত্রী কিম কার্দাশিয়ানের সঙ্গে৷ ছবি শেয়ার করার ওয়েবসাইট ইন্সটাগ্রামে কার্দাশিয়ানের মতো করে তোলা বেশ কিছু ছবি, ভিডিও শেয়ার করেছিলেন তিনি৷ ছবিগুলো বেশ খোলামেলা৷ এর আগে পাকিস্তানের কোনো মডেলকে এভাবে ছবি পোস্ট করতে দেখা যায়নি৷
ছবি: Instagram/quandeel_baloch
‘নগ্ন’ হওয়ার ঘোষণা
চলতি বছর টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালে পাকিস্তান ভারতকে হারালে নগ্ন হয়ে নাচবেন বলে ঘোষণা দিয়ে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন বেলুচ৷ পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে হেরে যাওয়ায় নগ্ন না হতে পারার দুঃখে কাঁদার একটি ভিডিও প্রকাশ করেন ইউটিউবে৷ পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা এই মডেল৷
ছবি: Instagram/quandeel_baloch
ইসলামের ‘কলঙ্ক’
তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সকল পদ হারান পাকিস্তানের মুফতি আবদুল কাভি৷ পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা এবং ধর্মগুরু হিসেবে পরিচিত কাভি-কে ইসলামের ‘কলঙ্ক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন বেলুচ, কেননা, তাঁর দাবি ছিল, টিভিতে ধর্মের কথা বললেও আড়ালে তাঁর সঙ্গে অনৈতিক কিছু করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কাভি৷
ইন্টারনেটে সাহসিকতার নানা নমুনা রাখলেও ক্রমাগত বিতর্কের মাঝেই এক পর্যায়ে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় পড়ে যান কান্দিল বেলুচ৷ খুন হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে তাই পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজনের কাছেই নিজের নিরাপত্তা দাবি করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/R.S. Hussain
শাস্তি হবে কি?
উল্লেখ্য, পাকিস্তানে প্রতিবছর গড়ে এক হাজারের মতো ‘অনার কিলিং’ এর ঘটনা ঘটে৷ এগুলোকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই বিবেচনা করে বিচারের ব্যবস্থা থাকলেও পাকিস্তানের আইনে পরিবার চাইলে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেয়ার সুযোগ রয়েছে৷ আর এই সুযোগ নিয়ে অনেক সময় হত্যাকারী পার পেয়ে যায়৷