২০১৭ সালের শেষ পাদে এসে বোঝা যাচ্ছে যে, জার্মান চ্যান্সেলরের প্রতাপ কমতে বসেছে৷ ইউরোপ প্রেমীদের নতুন হিরো হলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷
বিজ্ঞাপন
গত মে মাসে দক্ষিণপন্থি পপুলিস্ট প্রতিদ্বন্দ্বী মারিন ল্য পেনকে হারিয়ে এলিজে প্রাসাদে অধিষ্ঠিত হন মাক্রোঁ৷ সেপ্টেম্বর মাসে ‘ইকনমিস্ট' পত্রিকার প্রচ্ছদে তরুণ মাক্রোঁকে পাদপ্রদীপের আলোয় দেখানো হয় – প্রবীণা ম্যার্কেল মাক্রোঁর পিছনে আধা-অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷ কারণ? সেপ্টেম্বরের শেষে জার্মানিতে সংসদীয় নির্বাচনে ম্যার্কেলের দল বিপুল ভোট হারায়, অপরদিকে জার্মানির দক্ষিণপন্থি পপুলিস্ট দল এএফডি (‘জার্মানির জন্য বিকল্প') প্রথম আবির্ভাবেই ১২ শতাংশ ভোট দখল করে৷
ব্রাসেলেসে বছরের শেষ শীর্ষবৈঠকেও একই দৃশ্য৷ তাঁর ‘‘ভালো বন্ধু'' আঙ্গেলার সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মাক্রোঁ বলেন, ‘‘এই শীর্ষ বৈঠকের আন্তরিকতা থেকে বোঝা যায় যে, হতাশার মনোভাব দূর হয়েছে এবং বস্তুত একটা সামগ্রিক প্রস্তুতি দেখা দিয়েছে, আমরা যার আরো বিকাশ ঘটাতে চাই৷''
ব্রেক্সিটের পর ইউরোপ-প্রেম বাড়ছে
ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের এক বছর পর ইইউ সম্পর্কে ব্রিটেন তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির মানুষের মনোভাব অনেক ইতিবাচক হয়ে উঠেছে৷ ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না’ – এই প্রবাদ ফলে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
শীর্ষে জার্মানি ও ফ্রান্স
ইউরোপীয় ইউনিয়নের চালিকা শক্তি বলে পরিচিত দেশ জার্মানি (৬৮ শতাংশ) ও ফ্রান্সের মানুষ (৫৬ শতাংশ) কিছু সমালোচনা ও সংশয় সত্ত্বেও বরাবর ইইউ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন৷ ব্রেক্সিট গণভোটের পর সেই সমর্থন আরও ১৮ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: Reuters/H.Hanschke
ব্রিটেনের ভোলবদল
গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার রায় দেওয়ার পর ব্রিটেনের অনেক মানুষের টনক নড়েছে৷ এখন ৫৪ শতাংশ মানুষ ইইউ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন৷ অর্থাৎ এক ধাক্কায় সমর্থন ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ তবে তার ফলে ইইউ থেকে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়ায় নড়চড় হবার সম্ভাবনা কম৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Tallis
পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি
কট্টর জাতীয়তাবাদী ও ইইউ-বিরোধী সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও পোল্যান্ড (৭৪ শতাংশ) ও হাঙ্গেরির মানুষ (৬৭ শতাংশ) কিন্তু সমীক্ষায় ইইউ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন৷ বাকি অনেক দেশের তুলনায় তাঁরা বরং এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল
মন্দার ধাক্কা সামলে ইউরোপের অনেক দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে৷ যেমন নেদারল্যান্ডসের ৮৭ শতাংশ মানুষ এর ফলে সন্তুষ্ট৷ জর্জরিত অর্থনীতি আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠায় স্পেনের মানুষের মধ্যেও ইইউ সম্পর্কে উৎসাহ অনেক বেড়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
গ্রিস ও ইটালিতে হতাশা
অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত দেশ গ্রিসের মানুষ এখনো ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় ভুগছেন৷ তাই ইউরোপ সম্পর্কে মাত্র ৩৩ শতাংশ মানুষ তাঁদের উৎসাহ প্রকাশ করেছেন৷ ইটালির অর্থনীতির অবস্থাও ভালো নয়৷ তবে তা সত্ত্বেও সেখানে ৫৬ শতাংশ মানুষ ইইউ-বান্ধব বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Gouliamaki
শরণার্থী সংকট
তুরস্কের সঙ্গে ইইউ-র চুক্তির কারণে শরণার্থীর ঢল কমে যাওয়ায় ইউরোপের অনেক মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন৷ তাঁদের অনিশ্চয়তার সুযোগ নিয়ে বেশ কিছু ‘পপুলিস্ট’ দল ইউরোপবিরোধী আবেগ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে৷ পরিস্থিতির উন্নতির ফলে তাদের প্রতি সমর্থন অনেক কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
6 ছবি1 | 6
অপরদিকে ম্যার্কেলকে খুব সংযত দেখা যায়, বিশেষ করে যখন তিনি আপাতত জার্মানির তত্ত্বাবধায়ক চ্যান্সেলর ছাড়া আর কিছু নন – কাজেই তাঁর পক্ষে মাক্রোঁর উৎসাহের জোয়ারে ভেসে যাওয়া সম্ভব বা সমীচিন, দু'টোর কোনোটাই নয়৷ তবে মাক্রোঁ তথা ইউরোপীয় কমিশন ইইউ-এর সংস্কার সম্পর্কে যে সব সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কথা বলেছেন, ২০১৮ সালের মার্চ কিংবা বড়জোর জুনের মধ্যে তিনি সে বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাবেন, বলে ম্যার্কেল প্রতিশ্রতি দেন – এবং আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করে দেন: ‘‘ফ্রান্স এবং জার্মানির যদি একটি যৌথ অবস্থান না থাকে, তাহলে ইউরোপও এগিয়ে যেতে পারবে না৷''
‘ইউরোপীয় রেনেসাঁ'
নির্বাচনে জয়লাভের পর মাক্রোঁ স্বদেশে ও বিদেশে তাঁর সংস্কার সংক্রান্ত নতুন ধ্যনধারণা প্রচার করতে থাকেন৷ জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনের ঠিক দু'দিন পরে, ম্যার্কেল যখন তাঁর মহাজোটের ভাঙা টুকরো-টাকরা জোড়াতালি দিতে সচেষ্ট, ঠিক তখন মাক্রোঁ পুনরায় একটি ‘‘সার্বভৌম, ঐক্যবদ্ধ ও গণতান্ত্রিক ইউরোপ'' গঠনের ডাক দেন, যে ইউরোপের একটি যৌথ সামরিক বাহিনী, একটি যৌথ আর্থিক নীতি ও একটি ক্রমবর্ধমান ইউরো এলাকায় এক যৌথ অর্থমন্ত্রী থাকবে৷
সবাই যে মাক্রোঁর স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ, এমন নয়৷ পূর্ব ইউরোপের ভিসেগ্রাড দেশগুলি – অর্থাৎ পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি – বা অস্ট্রিয়ার নতুন চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুর্ৎস – যিনি বয়সে মাক্রোঁর চাইতেও বেশি তরুণ – আদৌ ইউরোপ নিয়ে বাড়াবাড়ি চান না৷ নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে খোলা বাজারের অর্থনীতিতে বিশ্বাসী; তিনিও যে মাক্রোঁর প্রস্তাবে প্রতীত, এমন মনে হয় না৷ ম্যার্কেলের মতো রুটেও মনে করেন যে, মাক্রোঁর পরিকল্পনায় উচ্চাশার বাড়াবাড়ি৷ এছাড়া রুটে একজন ইউরোপীয় অর্থমন্ত্রী নিয়োগের পক্ষপাতী নন৷
২০১৭ সালের মার্চ মাসে নেদারল্যান্ডসের সংসদীয় নির্বাচনে দক্ষিণপন্থি গ্যার্ট উইল্ডার্সকে পরাজিত করেন মার্ক রুটে৷ তখন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল রুটেকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন: ‘‘নেদারল্যান্ডস আমাদের বন্ধু, সহযোগী ও প্রতিবেশী৷ কাজেই আমি খুব খুশি যে, বিপুল সংখ্যায় ভোট পড়ার পর একটি অতীব ইউরোপপন্থি ফলাফল হয়েছে – যা একটি স্পষ্ট সংকেত৷''
ইউরোপের দক্ষিণপন্থিরা ঠিক কতটা উগ্র?
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্দা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন নীতি নিয়ে অসন্তোষ ও উদ্বাস্তু সংকটের ফলে ইউরোপ জুড়ে দক্ষিণপন্থি দলগুলির পালে হাওয়া লেগেছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/T. Frey
ফ্রাউকে পেট্রি, অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)
‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ দলের নেত্রী ফ্রাউকে পেট্রির মতে সীমান্তে বেআইনি অনুপ্রবেশ রোখার শেষ পন্থা হিসেবে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে পারে, কেননা ‘‘সেটাই আইন’’৷ ইউরোনিন্দুক এএফডি দল ধীরে ধীরে সরকার তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরোধী একটি শক্তিতে পরিণত হয়েছে৷ ২০১৬ সালের মার্চের রাজ্য নির্বাচনে এএফডি ২৫ শতাংশ অবধি ভোট পায় ও চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের নিজের প্রদেশের বিধানসভায় দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী হয়৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
মারিন ল্য পেন, ন্যাশনাল ফ্রন্ট (ফ্রান্স)
ব্রেক্সিট ও যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় ফ্রান্সের ‘ফ্রঁ নাসিনাল’ বা ‘ন্যাশানাল ফ্রন্ট’-কে নতুন বেগ এনে দিতে পারে, বলে অনেকের ধারণা৷ জঁ-মারি ল্য পেন ১৯৭২ সালে দলটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ মারিন তাঁর বাবার কাছ থেকে দলের ভার নেন ২০১১ সালে৷ ন্যাশানাল ফ্রন্ট বা জাতীয় ফ্রন্টকে একটি জাতীয়তাবাদী দল, যারা অভিবাসন ও ইইউ বিরোধী প্রচারণায় অনুরূপভাবে সোচ্চার৷
ছবি: Reuters
গের্ট উইল্ডার্স, পার্টি অফ ফ্রিডম (নেদারল্যান্ডস)
ওলন্দাজ স্বাধীনতা দলের নেতা গের্ট উইল্ডার্স ইউরোপের বিশিষ্টতম দক্ষিণপন্থি রাজনীতিকদের মধ্যে গণ্য৷ ২০১৪ সালে তিনি একটি প্রকাশ্য জনসভায় প্রশ্ন তোলেন, জনতা দেশে বেশি না কম মরক্কান চায়৷ এ জন্য তাঁকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও, কোনো দণ্ড দেওয়া হয়নি৷ তাঁর দল ইইউ ও ইসলাম বিরোধী বলে পরিচিত৷ আগামী বছর নেদারল্যান্ডসে সংসদীয় নির্বাচন৷ জরিপে আপাতত উইল্ডার্সের দল এগিয়ে৷ বর্তমানে তাদের সংসদে ১৫টি আসন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Koning
নিকোস মিচালোলিয়াকোস, গোল্ডেন ডন (গ্রিস)
নিকোস মিচালোলিয়াকোস গ্রিসের নিও-ফ্যাসিস্ট দল ‘সোনালি সকাল’-এর প্রধান৷ ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁকে ও তাঁর দলের অন্যান্য বহু সতীর্থকে একটি অপরাধমূলক সংগঠন গঠনের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে নিকোস মিচালোলিয়াকোস-কে মুক্তি দেওয়া হয়৷ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সংসদীয় নির্বাচনে ‘সোনালি সকাল’ ১৮টি আসন জয় করে৷ দলটি অভিবাসন বিরোধী ও রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির পক্ষপাতী৷
ছবি: Angelos Tzortzinis/AFP/Getty Images
গাবোর ভনা, জবিক (হাঙ্গেরি)
হাঙ্গেরির অভিবাসন বিরোধী ও অর্থনৈতিক সংরক্ষণবাদী দল জবিক ২০১৮ সালের মধ্যে সরকারগঠনে সংশ্লিষ্ট হওয়ার আশা রাখে৷ তারা ইতিমধ্যেই হাঙ্গেরির তৃতীয় বৃহত্তম দল, ২০১৪-র নির্বাচনে তারা ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল৷ জবিক দল ইইউ-এর সদস্যতা সম্পর্কে গণভোট চায়৷ ২০১২ সালে জবিক সমকামী বিরোধী একটি বিল উপস্থাপন করেছিল, কেননা জবিক ‘যৌন বিচ্যুতি’ বা ভিন্নতাকে অপরাধ বলে ঘোষণা করার পক্ষে৷
ছবি: picture alliance/dpa
জিমি অকেসন, সুইডেন ডেমোক্র্যাটস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর সুইডেন ডেমোক্র্যাটসদের নেতা জিমি অকেসন সুউডিশ টেলিভিশনের একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উভয় স্থানেই সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চ্যালেঞ্জ করে একটি আন্দোলন চলেছে৷’’ সুইডেন ডেমোক্র্যাটস-রা অভিবাসন সীমিত করতে চায়, তারা তুরস্কের ইইউ-তে যোগদানের বিরোধী ও সুইডেনের ইইউ সদস্যতা সম্পর্কে একটি গণভোট কামনা করে৷
ছবি: AP
নর্বার্ট হোফার, ফ্রিডম পার্টি (অস্ট্রিয়া)
অস্ট্রিয়ার জাতীয়তাবাদী ‘স্বাধীনতা দল’-এর নর্বার্ট হোফার সাম্প্রতিক রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ে মাত্র ৩০,০০০ ভোটে পরাজিত হয়েছেন সবুজ দলের প্রবীণ নেতা আলেক্সান্ডার ফান ডেয়ার বেলেন-এর কাছে৷ প্রথম পর্যায়ে হোফারই সর্বাধিক ভোট পেয়েছিলেন৷ ফ্রিডম পার্টির নেতা হোফার অস্ট্রিয়ার সীমান্ত আরো জোরদার করার জন্য আন্দোলন করছেন এবং অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা সীমিত করতে চান৷
ছবি: Reuters/L. Foeger
মারিয়ান কোৎলেবা, পিপলস পার্টি – আওয়ার স্লোভাকিয়া
কট্টর দক্ষিণপন্থি ‘গণদল – আমাদের স্লোভাকিয়া’-র নেতা মারিয়ান কোৎলেবাকে বলতে শোনা গেছে, ‘একটি অভিবাসীও বড় বেশি৷’ আরেকটি উপলক্ষ্যে তিনি ন্যাটো জোটকে একটি ‘অপরাধী সংগঠন’ বলে অভিহিত করেন৷ দলটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরো মুদ্রা এলাকা থেকে স্লোভাকিয়াকে বার করে আনতে চায়৷ ২০১৬ সালের মার্চ মাসের নির্বাচনে ‘আমাদের স্লোভাকিয়া’ দল আট শতাংশ ভোট পায় ও ১৫০ সদস্যের সংসদে ১৪টি আসন দখল করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
‘ইউরোপের জন্য একটা সুযোগ'
এমানুয়েল মাক্রোঁ তাঁর ‘অঁ মার্শ!' বা ‘ফরোয়ার্ড!' সংগঠনকে দল না বলে ‘আন্দোলন' আখ্যা দিয়েছেন৷ এই আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিলেন তিনি নিজে৷ তিনি ও তাঁর দল দক্ষিণপন্থি পপুলিস্ট ‘ফ্রঁ নাসিওনাল' বা ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কে পরাজিত করতে সমর্থ হন বটে, তবে নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ে৷ যে কারণে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল স্মরণ করিয়ে দেন যে, ফরাসি ভোটারদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ল্য পেনের দলকে সমর্থন করেছে৷ তবে মাক্রোঁ ফ্রান্স তথা ইউরোপের পক্ষে একটি বিরাট সুযোগ – গাব্রিয়েল যোগ করতে ভোলেননি৷
ফরাসি প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন সংস্কারের প্রস্তাব ইটালিতে সপ্রশংস সমর্থন পেয়েছে, বিশেষ করে সেই সব প্রস্থাব যখন দৃশ্যত সাবেক জার্মান অর্থমন্ত্রীর ঘৃণিত ব্যয়সংকোচ নীতির ঠিক বিপরীত৷ ইটালিতে নতুন নির্বাচন সংঘটিত হতে চলেছে৷ সব দলই আপাতত ব্যয়সংকোচের পরিবর্তে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির পক্ষে৷ বেপ্পে গ্রিলো-র পপুলিস্ট ‘পাঁচ তারা' আন্দোলন আপাতত জরিপে এগিয়ে: তারা তো সরাসরি ইউরো এলাকা পরিত্যাগের ডাক দিয়েছে৷ কাজেই ইটালির সুবিশাল রাষ্ট্রীয় ঋণ ২০১৮ সালেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে একটি বোঝা হয়ে থাকবে৷
উদ্বাস্তু বণ্টন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরে উদ্বাস্তু বণ্টনের সমস্যারও আপাতত কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না৷ বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের তথাকথিত ভিসেগ্রাড দেশগুলি ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের রায় সত্ত্বেও এক চুল নড়তে রাজি নয়৷ এই প্রকাশ্য বিদ্রোহ সত্ত্বেও ইইউ-এর সর্বশেষ শীর্ষবৈঠকে এক আঙ্গেলা ম্যার্কেল ছাড়া অন্য কোনো নেতা এ বিষয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করেননি৷ অর্থাৎ বিষয়টা কোনো না কোনো আপোশের দিকে এগোচ্ছে৷
অবশ্য ম্যার্কেলের হাতে একটি অস্ত্র আছে৷ ২০১৮-র মাঝামাঝি ইইউ-এর ২০২০ থেকে ২০২৭ সালের বাজেট নির্দিষ্ট হবে৷ ঐ বাজেটে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির মতো দেশ অত্যন্ত বদান্য অনুদান পেয়ে থাকে৷ অপরদিকে ইইউ-এর কোষাগারে সাকুল্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করে থাকে জার্মানি৷ কাজেই এখানে চাপ সৃষ্টি করার একটা সুযোগ ম্যার্কেলের রয়েছে – কিন্তু সেই চাপ প্রয়োগ করার মতো রাজনৈতিক ওজন অথবা মিত্র তাঁর থাকবে তো? মাক্রোঁ আপাতত এ বিষয়ে কিছুই বলছেন না৷
নানা মুডে আঙ্গেলা ম্যার্কেল
সারা বিশ্বের মিডিয়া জুড়ে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ছবি৷ তাঁর সরকারি মুখাবয়ব প্রায়শই গম্ভীর, কথা বলেন সুচিন্তিতভাবে৷ ছবি তোলেন দু’হাতের আঙুলগুলো জুড়ে, তাঁর সুপরিচিত ভঙ্গি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুবিখ্যাত ম্যার্কেল মুদ্রা
ব্রীড়া থেকেই হোক, বা ঝানু রাজনীতিকের পরিশীলিত ভঙ্গিই হোক, ম্যার্কেল যে হাতের আঙুলগুলো জোড়া দিয়ে কী বলতে চাইছেন, তা তিনি নিজেই জানেন...
ছবি: picture-alliance/dpa/Michael Kappeler
ইউরোপীয় রাজনীতিক
সার্বভৌম, উৎসাহী অথচ নিরুদ্বেগ অভিব্যক্তি নিয়ে ইউরোপীয় রাজনীতির মঞ্চে চলাফেরা করেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ ছবিতে তিনি ব্রাতিস্লাভায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাম্প্রতিক শীর্ষবৈঠকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Hoslet
চ্যান্সেলরের সঙ্গে সেলফি
উদ্বাস্তু সংকট ম্যার্কেলের রাজনৈতিক জীবনে একটা বড় প্রসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তবুও গতবছর বার্লিনের মারৎসান এলাকার একটি উদ্বাস্তু শিবিরে সিরিয়া থেকে আগত এক রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীকে তাঁর সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগ দেন ম্যার্কেল৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
সরকারপ্রধান
চ্যান্সেলর হিসেবে ম্যার্কেলকে দেখা যায় তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমা ও ভূমিকায়৷ সঙ্গে ভাইস চ্যান্সেলর সিগমার গাব্রিয়েল৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
নারীসুলভ
হঠাৎ কিছুটা অন্তরঙ্গতা ও একটি হাসি৷ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদকেও পার্ফেক্ট জেন্টলম্যান বলা চলে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Mori
জোট সরকার
ম্যার্কেলের দুই জোট সহযোগী, এসপিডি প্রধান সিগমার গাব্রিয়েল ও সিএসইউ প্রধান হর্স্ট জেহোফারকে দেখলে বোঝা যায়, ‘অ্যাঞ্জি’ মাথা ঠান্ডা না রাখলে বিপদ ঘটতে কতক্ষণ?
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. von Jutrczenka
বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তি
পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট ডিগ্রির অধিকারিনী ম্যার্কেলের ইন্টারনেট বা ডিজিটাল মিডিয়াগুলোর জন্যে খুব একটা সময় থাকে না৷ তবে টুইট করতে ভালোবাসেন৷ ২০১৫ সালে জাতিসংঘের একটি ফোরামে ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক সাকারবার্গের সঙ্গে আগ্রহ নিয়েই আলোচনা করছেন!
ছবি: picture-alliance/dpa
যাজক তনয়া
২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ প্রটেস্টান্ট যাজকের কন্যা ম্যার্কেলের পক্ষে একটি বিশেষ মুহূর্ত৷
ছবি: Reuters/A. Pizzoli
শ্যাম্পেন পান করার মতো উপলক্ষ্য চাই
যেমন জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে এলিসি চুক্তির ৫০ বছর পূর্তি৷
ছবি: AP
ক্ষমতার নেশা চেনেন ম্যার্কেল
২০১১ সালে ডয়চে ব্যাংকের প্রধান ইয়োসেফ আকারমান-এর সঙ্গে বৈঠকে সম্ভবত চলতি আর্থিক সংকট নিয়েই কথা হয়েছিল৷
ছবি: AP
ছুটিছাটায়
চ্যান্সেলরও মানুষ, তাঁরও ছুটি লাগে৷ তবে ছুটিতেও পাপারাৎসিদের হাত থেকে মুক্তি নেই আঙ্গেলা ম্যার্কেলের৷ ছবিতে তাঁর স্বামী ইওয়াখিম সাওয়ারকে দেখা যাচ্ছে (বাঁয়ে)৷
ছবি: dapd
সে অনেকদিন আগের কথা
তরুণ সিডিইউ রাজনীতিক আঙ্গেলা ম্যার্কেল দলীয় সতীর্থ আনেট শাভান ও প্রবীণ সিডিইউ রাজনীতিক এর্ভিন টয়ফেল-এর সঙ্গে দক্ষিণ জার্মানিতে সাইকেল টুরে৷ তখনও তাঁর মুখে অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতার ছাপ পড়েনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
12 ছবি1 | 12
মাক্রোঁ যোগ ম্যার্কেল?
আপাতদৃষ্টিতে এখন পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও ইউরোপের মুখপাত্র হলেন এমানুয়েল মাক্রোঁ: বিশেষ করে তিনি যেভাবে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বেঁধেছেন, অর্থাৎ নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে নরমে-গরমে খেলছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে৷ অপরদিকে ম্যার্কেলের মতো মাক্রোঁও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের জন্য আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতার পক্ষপাতী; ম্যার্কেলর মতোই তিনি পশ্চিম বলকানের দেশগুলির কালে ইইউ-তে যোগদান সমর্থন করেন৷
তবে শেষমেষ মাক্রোঁও ইউরোপ তথা ইইউ বা ইউরোপীয় রাজনীতিতে ফরাসি-জার্মান জুড়ির গুরুত্বের কথা জানেন৷ তাই সর্বশেষ ইইউ শীর্ষবৈঠকে তাঁর মন্তব্য: ‘‘প্রগতি করার জন্য আমাদের একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল জার্মানির প্রয়োজন৷'' যার উত্তরে দৃশ্যত একটু ক্লান্ত ম্যার্কেলের পরিকল্পিত আশাবাদিত্ব: ‘‘আমি শুধু এইটুকু বলতে পারি যে, আমি তাই চাই৷ আর যেখানে ইচ্ছে আছে, সেখানে পথও থাকবে – আমরা জার্মানিতে যেরকম বলে থাকি৷''