আতশবাজির ঝলকানি আর আলোক উৎসবের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বরণ করে নেয়া হলো নতুন বছর ২০১৮ সালকে৷ এবার অবশ্য বাংলাদেশে বিনা অনুমতিতে উন্মুক্ত স্থানে ও বাড়ির ছাদে ‘থার্টিফাস্ট' পালন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু সে নিষেধ অমান্য করে অনেকেই বাসার ছাদে আতশবাজি পুড়িয়ে, পিকনিক করে বরণ করে নিয়েছেন ২০১৮ সালকে৷ এ বিষয়ে সাংবাদিক অনুপম দেব কানুনজ্ঞ ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘পটকা রে পটকা৷ ফানুস রে ফানুস৷ এ জাতি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা জাতি৷ এ জাতিকে ভুয়া নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দাবায়া রাখা যাবে না৷ উদযাপনে রাষ্ট্রীয় বাধা নিপাত যাক, হাসি-আনন্দ মুক্তি পাক৷''
কোলনে বর্ণিল বর্ষবরণ
বর্ণিল আতশবাজি আর উৎসবের মধ্য দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন শহরের মতো ২০১৮ সালকে স্বাগত জানিয়েছে জার্মানির কোলন শহরের বাসিন্দারাও৷ সেখানকার বর্ষবরণের জমকালো আয়োজন নিয়েই এই ছবিঘর৷
৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতে থাকে কোলন শহরের প্রাণকেন্দ্রে, রাইন নদীর দুই তীরে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
এক ঘণ্টারও বেশি
টানা এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে গোটা শহর জুড়েই চলে আতশবাজির মুহুর্মুহু এ খেলা৷ পরে একটা সময় আতশবাজির দাপটটা একটু কমে গেলেও, আরো অনেকটা সময় ধরে চলে আলোর সেই ফোয়ারা৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
আসল জায়গা
কোলন শহরে বর্ষবরণের রাতে সবচেয়ে বেশি আতশবাজি ছাড়া হয় কোলন ডোম এবং হোয়েনসোল্যার্ন সেতুর আশেপাশের এলাকা থেকে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
রাইনের দুই তীর
বর্ষবরণের এ আতশবাজি উপভোগ করতে রাইনের দুই তীর ছাড়াও ডয়েৎসার সেতুর উপরে জড়ো হন হাজারো মানুষ৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
প্রমোদ তরী
বর্ষবরণের জমকালো আতশবাজি উপভোগ করতে রাইনের মাঝে প্রমোদ তরীতেও উঠে পড়েন অনেকে৷ আসলে প্রমোদ তরী থেকে আলোর এই খেলা দেখার অভিজ্ঞতাটাই যে আলাদা!
ছবি: DW/M. M. Rahman
বন শহরে
জার্মানির বন শহরেও রাইন নদীর তীর থেকে আতশবাজি ছুঁড়ে স্বাগত জানানো হয় নতুন বছরকে৷ আলোয় আলোময় হয়ে ওঠে গোটা আকাশ৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
7 ছবি1 | 7
অপর এক সাংবাদিক মাসুদ কামাল অবশ্য ভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘একটু আগে নতুন বছর উদযাপনের উৎসব দেখলাম৷ আকাশে রাশি রাশি ফানুস, নানা ধরনের ফায়ার ওয়ার্কস৷ বাইরে হিম হিম হাওয়া৷ এতকিছুর মধ্যে দৃশ্যমান একটা বড় ব্যতিক্রম বোধকরি এমপিও ভুক্তির দাবি নিয়ে ঢাকায় আসা শিক্ষকদের অবস্থান৷ এই শীতের রাতেও বসে আছেন তারা প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে৷ ছ'দিন অবহেলিত অবস্থায় থাকার পর শুরু করেছেন অনশন৷ শিক্ষকদের বঞ্চিত অবস্থায় শীতের রাতে উন্মুক্ত রাস্তায় ঠেলে দিয়ে জাতি হিসাবে আমরা কি অর্জন করতে চাই? আমাদের সরকার প্রতিদিন উন্নয়নের কথা বলছেন, এই মর্মান্তিক দৃশ্য উন্নয়নের কোন চিত্রকে প্রতিনিধিত্ব করে?''
এদিকে বাংলাদেশের বাইরে অন্যান্য দেশে নানা আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়েছে৷ অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবার ব্রিজে বর্নিল আতশবাজি ফুটিয়ে ২০১৮ সালকে বরণ করে নেয়া হয়৷ নিউজিল্যান্ডেও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছে৷ রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে অকল্যান্ডের স্কাই টাওয়ার ভবন থেকে আতশবাজি পোড়ানো হয়৷
বর্ষবরণের রাতে জার্মানরা যা করেন
এটা এমন এক রাত যা গোটা বিশ্বেই উদযাপন করা হয়৷ তবে ‘সিলভেস্টার’ বা বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে জার্মানদের রয়েছে নিজস্ব কিছু প্রথা৷ ছবিঘর থেকে জেনে নিন সেগুলো কী কী৷
ছবি: imago/Michael Schulz
নতুন বছরে প্রবেশ
নতুন বছর শুরুর আগেই পরিচিতরা একে-অন্যকে ‘গুটেন রুচ’ জানান৷ এর অর্থ হচ্ছে আপনার নতুন বছরে প্রবেশটি যেন মসৃণ হয়৷ সেই পথে যেন কোনো বাধা-বিঘ্ন না থাকে৷
ছবি: picture-alliance
সৌভাগ্য কামনা
যদি কোনো জার্মান বর্ষবরণের আগে আপনাকে এই ছবির মতো কোনো উপহার দেন, তাহলে আপনার সেটা পছন্দ নাও হতে পারে৷ তবে খেয়াল রাখবেন এই উপহারের অর্থ হচ্ছে তিনি আপনার সৌভাগ্য কামনা করছেন৷
ছবি: Fotolia/B. Bonaposta
ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেতে পারেন
বর্ষবরণের রাতে বিভিন্ন পার্টতে শুধু ফিঙ্গার ফুডেই পেট ভরাতে পারেন আপনি৷ তবে অনেকে আবার এমন সব মেন্যু বানান সেরাতে, যেগুলো কয়েকঘণ্টা ধরে খাওয়া যায়৷ জার্মানরা বছরের শেষ খাবারটা সময় নিয়ে খেতে পছন্দ করেন৷
ছবি: Fotolia/thongsee
গলে যাওয়া সিসায় ভবিষ্যত
বর্ষবরণের রাতে অনেক জার্মান মোমের উপর চামচে সিসা রেখে তা গলান৷ এরপর সেই গলানো সিসা ঠান্ডা পানিতে ঢেলে দেওয়ার পর যে আকার ধারণ করে, তা থেকে নাকি আগামী বছরটা কেমন যাবে সেটা বোঝা যায়৷
ছবি: Fotolia/thongsee
চ্যান্সেলরের নতুন বছরের বক্তব্য শোনা
নতুন বছর উপলক্ষ্যে চ্যান্সেলরের ভাষণ জার্মানিতে একটা প্রথা৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেলও এই বক্তব্য অনেকবার দিয়েছেন৷ আসলে এটা চলছে টেলিভিশন আবিষ্কার হওয়ারও আগে থেকে৷ ১৯৬৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথমবার চ্যান্সেলরের নতুন বছরের বাণী টেলিভিশনে করা হয়েছিল৷ এ সব ভাষণের অবশ্য বছরভেদে তেমন একটা পরিবর্তন হয় না৷ একবার নাকি ভুল করে একই বক্তব্য পরের বছর প্রচার হয়েছিল৷ অবশ্য সেটা তেমন কেউ টের পাননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুভ নববর্ষ
নতুন বছরের শুরুর মুহূর্তে আপনি আপনার পাশে থাকা আপনজনদের চুমু দিতে পারেন, নতুন বছরের জন্য সৌভাগ্য কামনা করতে পারেন৷ এরপর অবশ্য যাঁরা পাশে নেই তাঁদের ফোন করে শুভেচ্ছা জানানোটাই রেওয়াজ৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
পটকা, আতশবাজিতে বাধা নেই
বর্ষবরণের রাত গোটা জার্মানি পটকার শব্দে মুখর থাকে৷ আর আকাশে দেখা যায় নানা রঙের আতশবাজি৷ জার্মানরা সাধারণত রাতের বেলা শব্দ করা পছন্দ না করলেও, বর্ষবরণের রাতে এতে কোনো বাধা নেই৷
ছবি: imago/Michael Schulz
7 ছবি1 | 7
ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লি, ব্যাঙ্গালুরু, মুম্বইতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ২০১৮ সালকে বরণ করে নেয়া হয়৷
হংকং-এ মধ্যরাতে প্রায় ১০ মিনিট ধরে সুরের তালে তালে আতশবাজি পোড়ানো হয়৷ ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় নতুন বছর উপলক্ষ্যে গণবিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল৷
দুবাইয়ে আতশবাজি পোড়ানোর সঙ্গে ছিল লেজার শোর আয়োজন৷ রাশিয়ার মস্কোয় মূল সড়কগুলোর মোড়ে আতশবাজি পোড়ানো হয়৷
ফ্রান্সে নানা রঙের আলোয় সাজানো হয় বিভিন্ন ভবন৷ কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে মানুষ নতুন বছরকে বরণ করে নেয়৷
নিউ ইয়র্কে টাইমস স্কয়াকে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে হাজির হয়েছিলেন ১০ লাখ মানুষ৷ মাইনাস ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও মানুষের আনন্দে কোনো ভাটা পড়েনি৷
যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে আতশবাজির ঝলকানিতে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়৷ তবে হোটেল, রেস্তোরাঁসহ প্রতিটি স্থানে মোতায়েন ছিল পুলিশ৷
এছাড়া ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে, মেক্সিকো, কোস্টারিকা, গুয়াতেমালাতে নানা আয়োজনকে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়েছে৷
লন্ডনে টেমস নদীর উপর আতশবাজি পোড়ানো হয়৷ নতুন বছরকে বরণ করে নিতে একই ধরনের আয়োজন ছিল জার্মানিতেও৷ কোলন, হামবুর্গ, মিউনিখে নতুন বছরকে বরণ করা হয় আতশবাজি পুড়িয়ে৷