২০১৯-এর প্রতিবাদকে বলা হয় 'রক্তাক্ত নভেম্বর'। তারই স্মরণে ইরানে আবার বিক্ষোভ দেখাতে পথে পড়ুয়া ও শ্রমিকরা।
বিজ্ঞাপন
সরকার বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বিক্ষোভ দেখলেই কড়াভাবে তার মোকাবিলা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ইরানের আদালত এক বিক্ষোভকারীর প্রাণদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। পাঁচজনের কারাদণ্ড হয়েছে। কিন্তু তারপরেও তেহরান-সহ অন্য শহরে বিক্ষোভ থামানো যাচ্ছে না।
মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ তো আছেই, সেই সঙ্গে মঙ্গলবার যুক্ত হয়েছে ২০১৯ সালের সরকারি-বিরোধী প্রতিবাদের স্মরণে পথে নামা। গত কয়েকদিন ধরেই এই বিক্ষোভ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চলছিল। অনেকে লিখিত আবেদনও বাড়ি বাড়ি দিয়ে আসছিলেন। তার জেরে প্রচুর মানুষ বিক্ষোভে সামিল হন।
ছাত্র ও কর্মীদের ধর্মঘট
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, তেহরানের বাজারে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছে। সব দোকান বন্ধ।
তরুণ বিক্ষোভকারীদের আবেদন ছিল, মানুষ বাড়ি থেকে পথে নেমে রাস্তা দখল করে নিক। সব শহরের রাস্তা বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে যাক।
সামাজিক মাধ্যমে করা পোস্টে বলা হয়েছে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যায়লয়ে আগের মতোই বিক্ষোভ হতে থাকবে। সেই সঙ্গে পাড়ায় পাড়ায়, রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাতে হবে।
নরওয়ে-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, ১৬টি শহরে শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করেছে।
ইরানে বিক্ষোভের সমর্থনে বিভিন্ন দেশে দেয়ালচিত্র, বিক্ষোভ
ইরানে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভের সমর্থনে বিশ্বের অনেক দেশের গ্রাফিতি আর্টিস্টরা গ্রাফিতি আঁকছেন৷
ছবি: Francois Mori/AP/picture alliance
মেক্সিকোর ইরান দূতাবাসে
মেক্সিকোর ইরান দূতাবাসের দেয়ালে এক নারী স্প্রে-পেইন্ট দিয়ে ইরানবিরোধী বার্তা লিখছেন৷ চুল হিজাবে ঠিকভাবে ঢাকা হয়নি বলে তুলে নেয়া হয়েছিল ২২ বছর বয়সি কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনিকে৷ এর তিনদিন পর তার মৃত্যুর কথা জানানো হয়৷ এরপর থেকে ইরানে বিক্ষোভ চলছে৷ বিভিন্ন দেশের গ্রাফিতি আর্টিস্টরা এই বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন৷
ছবি: Gerardo Vieyra/NurPhoto/picture alliance
ফ্রাঙ্কফুর্টে বিক্ষোভ
মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভ থেকে ইরানে ইসলামি শাসনের পতনের দাবি উঠছে৷ ইরানে অনেক নারী নীতি পুলিশের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন৷ ছবিতে ইরানের বিক্ষোভের সমর্থনে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/dpa
মিলানে সিম্পসনের সংহতি
ইরান ও অন্যান্য দেশের অনেক নারী চুলের বাঁধন কেটে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ ছবিতে অ্যানিমেটেড সিটকম ‘দ্য সিম্পসন্স’ এর এক চরিত্রকে ঠিক তাই করতে দেখা যাচ্ছে৷ ইটালির মিলানে যে দেয়ালে এই ছবিটি আঁকা হয়েছে সেটি ইরানি কনসুলেটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত৷
ছবি: Andrea Fasani/ANSA/EPA-EFE
প্যারিসের অনারারি নাগরিক হবেন মাহসা আমিনি
ছবিতে প্যারিসে মাহসা আমিনির ম্যুরাল দেখা যাচ্ছে৷ প্যারিস কর্তৃপক্ষ আমিনিকে অনারারি নাগরিক করারও পরিকল্পনা করছে৷ প্যারিসের একটি এলাকার নামও তার নামে করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র৷
ছবি: Francois Mori/AP/picture alliance
‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের এই দেয়ালে আমিনির ছবির পাশে কুর্দি ভাষায় ‘জিন, জিয়ান, আজাদি’ লেখা হয়েছে৷ এর অর্থ হচ্ছে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’৷
ছবি: Boris Roessler/dpa/picture alliance
পোল্যান্ডে সংহতি মিছিল
পোল্যান্ডের ক্রাকোফে সংহতি মিছিল হয়েছে৷ ছবিটি সেখানকার৷
ছবি: Beata Zawrzel/NurPhoto/picture alliance
ডোমিনো ইফেক্ট
বিক্ষোভ এখন শুধু নারীদের জন্য কঠোর ড্রেস কোডের বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ নেই৷ ইরানে ইসলামি শাসনের বৈধতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন৷ ‘মোল্লাদের হটাও’, ‘একনায়কের মৃত্যু হোক’ এমন স্লোগানও দেয়া হচ্ছে৷ ছবিতে তেহরানের দেয়ালে আঁকা একটি ম্যুরাল দেখা যাচ্ছে৷ শেষ প্রান্তে দেশটির ধর্মীয় নেতা খামেনেইকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: NNSRoj
7 ছবি1 | 7
'রক্তাক্ত নভেম্বর' প্রতিবাদ কেন?
তিন বছর আগে ১৫ নভেম্বর তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন মানুষ। কয়েকদিন ধরে প্রতিবাদকারীরা ব্য়াংক , গ্যাস স্টেশন লুট করে, থানা আক্রমণ করে।
কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহ ইন্টারনেট বন্ধ রেখে প্রতিবাদ দমন করে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, অন্ততপক্ষে ৩০৪ জন মারা গেছিলেন। একশরও বেশি শহরে এই বিক্ষোভছড়িয়েছিল।
নরওয়ে-ভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস গ্রুপ জানিয়েছে, এখন মাহসা আমিনির হত্যার প্রতিবাদে যে বিক্ষোভ চলছে, সেখানেও ৩২৬ জনের বেশি বিক্ষোভকারী মারা গেছেন।