২০২১ সালে পর্যটনের সম্ভাব্য ক্ষতি দুই ট্রিলিয়ন ডলার
২৯ নভেম্বর ২০২১
টানা দ্বিতীয় বছরের মতো করোনায় কাহিল হতে চলেছে পর্যটন শিল্প৷ জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, এ বছর মোট ক্ষতি দুই ট্রিলিয়ন ডলারও হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংকটের কারণে ২০২০ সালে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল পর্যটন শিল্পের৷ ভ্যাকসিন চলে আসায় এ বছর পর্যটন আবার চাঙা হয়ে উঠবে এমন আশা করা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না৷ সোমবার (ইউএনডাব্লিউটিও) এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর সারা বিশ্বে পর্যটন শিল্পের ক্ষতি দু্ই ট্রিলিয়ন ডলার (১.৭৭ ট্রিলিয়ন ইউরো) হতে পারে৷ অবশ্য ২০২০ সালেও দুই ট্রিলিয়ন ডলারেরই ক্ষতি হয়েছিল৷ কিন্তু জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে গত বছরের তুলনায় আয় শতকরা ৫৮ ভাগ বৃদ্ধি পাওয়ায় বছর শেষে সার্বিক চিত্রে বড় পরিবর্তনের আশা জাগে৷ কিন্তু বিশ্বের সব দেশে একই হারে করোনার টিকা না দেয়ায় এবং সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিভিন্ন দেশে আতঙ্ক ছড়ানোয় পর্যটন খাতে ক্ষতি বৃদ্ধির আশঙ্কা আবার বেড়েছে৷
যেসব অঞ্চলে উন্নতির ইঙ্গিত
ইউএনডাব্লিউটিও-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে ইউরোপ এবং অ্যামেরিকার পর্যটন শিল্পে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়৷ বিপরীতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ছিল এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায়৷ ২০১৯ সালের তুলনায় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলোর পর্যটনের সার্বিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯৫ ভাগ৷ এ পরিস্থিতির মূল কারণ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা৷ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীনসহ কিছু দেশ ‘জিরো কোভিড' নীতিতে চলায় সেসব দেশে ২০২১ সালেও পর্যটক যেতে পারেনি৷
ইউক্রেনে সৌদি পর্যটকদের ঢল
২০২০ সালে পুরো বছরে ইউক্রেনে গিয়েছিল মোট চার হাজার পর্যটক৷ এখন প্রতিদিন যায় তিন হাজারেরও বেশি পর্যটক৷ ইউক্রেনের পর্যটন শিল্পে এই সুবাতাস বয়ে এনেছেন সৌদি নাগরিকেরা৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
মহামারিতে পর্যটকের ‘মহাপ্লাবন’
ইউক্রেনের অনেক হোটেলে এখন পর্যটকদের জায়গা দেয়াই দায়! পর্যটনে উন্নয়নের জোয়ার কত ব্যাপক তা বোঝা গেল আন্তন তারানেনকোর কথায়৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ২০২০ সালে ইউক্রেনে এসেছিল মোট চার হাজার পর্যটক, এবার প্রতিদিন অন্তত সাড়ে তিন হাজার সৌদি নাগরিক আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে৷ ওপরের ছবিতে কিয়েভে এক সৌদি নাগরিকের সেল্ফি তোলার মুহূর্ত৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটকদের ঠিকানা...
করোনা মহামারি শুরুর আগে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে একটু আরাম খুঁজতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অনেক মানুষই ইউরোপে পাড়ি জমাতেন৷ এ মুহূর্তে ইউরোপের অনেক দেশে পর্যটকদের অবাধ যাতায়াতের সুযোগ একেবারেই নেই৷ সেই তুলনায় স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি অনেক কম বলে মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটকরা এখন ইউক্রেনে যাচ্ছেন৷ ওপরের ছবিতে কিয়েভে ঘুরতে যাওয়া এক কুয়েতি পরিবার৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
ইউক্রেনের বিশেষ উদ্যোগ
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত মার্চে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল ইউক্রেন৷ কঠোর লকডাউনের সুবাদে সংক্রমণ অনেক কমে আসায় জুন থেকে আবার শুরু হয়েছে দেশের ভেতরে এবং বাইরে বিমান চলাচল৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়িও অনেক কমানো হয়েছে৷ এখন করোনার পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট সঙ্গে থাকলেই ইউক্রেনে যাওয়া যায়৷ তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নাগরিকদের ইউক্রেনে যেতে ভিসাও লাগে না৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
তাদের জন্য বিশেষ সেবা
এতদিন পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ ছিল রাজধানী কিয়েভ৷ সাম্প্রতিক সময়ে লভিভ শহরেও যাচ্ছেন অনেকে৷ পর্যটকদের, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটকদের খুশি করতে নেয়া হচ্ছে নানা ধরনের উদ্যোগ৷ হালাল খাবার রাখা হচ্ছে সব হোটেলে৷ মেনু কার্ড তৈরি হচ্ছে আরবিতে৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
সৌদি আরব থেকে বিশেষ ফ্লাইট
নাগরিকদের ইউক্রেন সফর সহজ করতে রিয়াদ থেকে কিয়েভ সরাসরি ফ্লাইট চালু করেছে সৌদি সরকার৷ জুনে এই ফ্লাইট চালুর পর থেকে সৌদি নাগরিকদের ইউক্রেন যাওয়ার হিড়িক আরো বেড়েছে৷ শিগগিরই লভিভ শহর পর্যন্ত বিমান চলাচলের ব্যবস্থাও করবে সৌদি সরকার৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
5 ছবি1 | 5
তবে ২০২১ সালে ক্রোয়েশিয়া, মেক্সিকো এবং তুরস্কের পর্যটন-নীতি ছিল ভিন্ন৷ চলতি বছর ধীরে ধীরে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে শুরু করায় এসব দেশের পর্যটন শিল্পে চাঙাভাব ফিরে আসে৷
তবে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করায় আবার দেশে দেশে করোনাবিধির কঠোর প্রয়োগ শুরু হয়েছে৷ সব দেশে সমান হারে টিকা না দেয়ায় করোনা পরিস্থিতির আবার অবনতি হচ্ছে৷ বছরের বাকি সময়ে এর প্রভাব পর্যটন শিল্পে পড়বে বলে ইউএনডাব্লিউটিও-র আশঙ্কা৷