রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স আরএসএফ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৪৮৮ জন সাংবাদিক জেলে ছিলেন - যা ১৯৯৫ সালে গণনা শুরুর পর সর্বোচ্চ৷
বিজ্ঞাপন
মিয়ানমার, বেলারুশ ও হংকংয়ে গণমাধ্যমের উপর হামলার কারণে এত সংখ্যক সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানিয়েছে আরএসএফ৷
অন্যদিকে, ২০২১ সালে ৪৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, যা গণনা শুরুর পর সবচেয়ে কম৷ মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীল পরিস্থিতি এর একটি কারণ বলে মনে করছে আরএসএফ৷
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা সংস্থা আরএসএফ বলছে, ২০২১ সালে ৬০ জন নারী সাংবাদিক আটক হয়েছেন৷ এটিও একটি রেকর্ড বলে জানিয়েছে তারা৷
কারাবন্দি
হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অনেক সাংবাদিককে আটক করেছে চীন৷ আরএসএফ এর হিসেবে সংখ্যাটি ১২৭, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ৷
এরপরেই আছে মিয়ানমার (৫৩), ভিয়েতনাম (৪৩), বেলারুশ (৩২) ও সৌদি আরব (৩১)৷
হত্যা
আরএসএফ বলছে সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় কম সংখ্যক সাংবাদিক ঐ অঞ্চলে গিয়েছেন৷ সে কারণে হত্যার সংখ্যাও কমেছে৷
২০২১ সালে মেক্সিকোতে সাতজন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন৷ এরপরে আছে আফগানিস্তান (৬), ইয়েমেন (৪) ও ভারত (৪)৷
‘শান্তির দেশে’ সাংবাদিকেরা কম নিরাপদ
যেসব দেশে যুদ্ধ বা সংঘাত চলছে, এক সময় সেখানে সাংবাদিকতার ঝুঁকি অনেক বেশি ছিল৷ কিন্তু রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে ভিন্ন কথা৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: UNESCO
করোনাকালেও ৫০ জনের মৃত্যু
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে সারা বিশ্বে নিহত হয়েছেন মোট ৫০ জন সাংবাদিক৷ সবারই মৃত্যুর কারণ সাংবাদিকতা৷২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে মৃত্যু হয় তাদের৷ ২০১৯ সালে সংখ্যাটা ছিল ৫৩৷ তবে মনে রাখা দরকার, ২০২০ সাল জুড়ে করোনার কারণে সাংবাদিকরা মাঠ পর্যায়ে তেমন কাজই করতে পারেননি৷
ছবি: Felix Marquez/AP/dpa/picture alliance
‘শান্তিময়’ দেশগুলোতে মৃত্যু বেশি
২০১৬ সালে নিহত সাংবাদিকদের শতকরা ৫৮ ভাগই ছিল যুদ্ধ চলছে এমন দেশগুলোতে৷ ২০২০ সালে সেরকম দেশে সাংবাদিক হত্যার হার কমে হয়ে যায় ৩২ ভাগ৷ অর্থাৎ, যুদ্ধের লেশমাত্র নেই এমন দেশগুলোতেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয় বাকি ৬৮ ভাগ সাংবাদিককে৷
ছবি: Colourbox
মেক্সিকোর ভয়াবহ পরিস্থিতি
২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি আট জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন মেক্সিকোতে৷ তারপরই রয়েছে ভারত, ফিলিপাইন্স আর হন্ডুরাস৷ ভারতে মারা গেছেন চার জন আর ফিলিপাইন্স এবং হন্ডুরাসে তিন জন করে৷
ছবি: Reuters/Diario El Mundo
জেনেবুঝে হত্যা
২০২০ সালে যে ৫০ জন সংবাদকর্মীকে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়, তাদের ৮৪ ভাগই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার৷ ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রকাশ করা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী সারা বিশ্বে সাংবাদিকদের পরিকল্পিতভাবে হত্যার প্রবণতাও বেড়েছে, কারণ, ২০১৯ সালে এমন হত্যার ঘটনা ছিল ৬৩ শতাংশ৷
ছবি: bilderbox
জেলজুলুম
২০২০ সালে মোট ৩৮৭ জান সাংবাদিককে বিভিন্ন দেশে গ্রেপ্তার বা জিম্মি করা হয়৷৩৮৭ জনের মধ্যে নিখোঁজও রয়েছেন কয়েকজন৷
ছবি: Imago Images/S. Boness
5 ছবি1 | 5
বাংলাদেশপরিস্থিতি
আরএসএফ বলছে, ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে একজন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন৷ তার নাম বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির৷
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটের পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান৷ ২৫ বছর বয়সি মুজাক্কির দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা বাজারের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন৷
এছাড়া ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হয়৷ আরএসএফ তার নাম ‘সিটিজেনস জার্নালিস্ট' ক্যাটাগরিতে উল্লেখ করেছে৷
২০২১ সালে বাংলাদেশে তিনজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে আরএসএফ৷ তারা হলেন দৈনিক জনতা ও ঝালকাঠির আঞ্চলিক দৈনিক সময়ের বার্তার নলছিটি প্রতিনিধি খলিলুর রহমান মৃধা, ডেল্টা টাইমসের আহমেদ খান বাবু এবং বাণিজ্য প্রতিদিনের মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান৷
আরএসএফ বলেছে, যে সাংবাদিকরা তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন কিংবা জেলে গেছেন শুধু তাদের তথ্য পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে৷ অর্থাৎ কোনো সাংবাদিক সাংবাদিকতা ছাড়া অন্য কোনো কারণে খুন কিংবা জেলে গিয়ে থাকলে তাদের তথ্য আরএসএফ গণনায় উল্লেখ করেনি৷
ইউরোপেও প্রশ্নবিদ্ধ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ সাংবাদিকদের সব সময় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় এমন দেশগুলোর উল্লেখ তো আছেই, সঙ্গে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রশংসিত ইউরোপের সমালোচনাও রয়েছে প্রতিবেদনে৷
ছবি: Imago/IPON
সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় ‘জেলখানা’ তুরস্ক
কোন দেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন বা পরাধীন, তা মূল্যায়ন করে প্রকাশিত এ বার্ষিক প্রতিবেদনে তুরস্ককে উল্লেখ করা হয়েছে ‘সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় জেল’ হিসেবে৷ ২০১৬ সালের কথিত ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে সে দেশে অনেক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে এর্দোয়ান সরকার৷ প্রতিবেদনে তুরস্ক আছে ১৫৭ নম্বরে৷
ছবি: Reuters/M. Cetinmuhurdar
গণমাধ্যমের ‘শত্রু’ ট্রাম্প
ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ ট্রাম্পকে প্রায়ই মিডিয়ার বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলতে শোনা যায়৷ গণমাধ্যমকে ‘জনগণের শত্রু’ বলে বিষোদগার করতেও দেখা গেছে তাঁকে৷ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৪৫তম স্থানে৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
রাশিয়া এবং চীনে গণমাধ্যমের দুরবস্থা
রাশিয়া, চীন এবং উত্তর কোরিয়ারও সমালোচনা করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, পুটিন ক্রেমলিনে ফেরার পর থেকে নানাভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে৷ সাংবাদিকরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন৷ সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত ৫০ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করে চীনেরও সমালোচনা করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান ১৪৮, চীন তার অনেক নীচে ১৭৬তম স্থানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Klimentyev
সেরা দশে এখনো ইউরোপের প্রাধান্য
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য ইউরোপ সবসময়ই প্রশংসিত৷ এবারও সেরা দশে ইউরোপেরই প্রাধান্য৷ তাই প্রথম থেকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে নরওয়ে, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ড৷ তারপর সপ্তম ও নবম স্থানেও ইউরোপের দুই দেশ বেলজিয়াম ও ডেনমার্ক৷ সবাইকে অবাক করে সেরা দশের ষষ্ঠ স্থানে ঢুকে পড়েছে ক্যারিবীয় দেশ জ্যামাইকা৷ নবম স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড৷
ইউরোপের কয়েকটি দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভয়ানকভাবে খর্ব হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ গাড়িবোমা বিস্ফোরণে সাংবাদিক, ব্লগার ডাফনে কারুয়ানা গালিজিয়া নিহত হওয়ার পর ১৮ ধাপ পিছিয়ে ৬৫ নম্বরে নেমে গেছে মাল্টা৷ স্লোভাকিয়াতেও এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন৷ তাই সেই দেশ ১০ ধাপ পিছিয়ে ২৭-এ৷ সাংবাদিকদের ‘স্লোভাকবিরোধী নোংরা বেশ্যা’ বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো৷
ছবি: picture alliance/AP/P.D. Josek
সবচেয়ে খারাপ কারা?
১৮০টি দেশকে নিয়ে তৈরি করা তালিকার শেষ দশে ইউরোপের কোনো দেশ নেই৷ সেখানে ১৭১তম দেশ ইকোয়েটোরিয়াল গিনি৷ তারপর থেকে ১৮০তম স্থান পর্যন্ত যথাক্রমে রয়েছে কিউবা, জিবুতি, সুদান, ভিয়েতনাম, চীন, সিরিয়া, তুরস্ক, ইরিত্রিয়া এবং উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture-alliance/Yonhap
এবং বাংলাদেশ
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে অন্তত ২৫ জন সাংবাদিক ও কয়েকশ’ ব্লগার এবং ফেসবুক ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে৷ দেশে সংবিধান এবং ইসলামের সমালোচনা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে প্রায়ই স্পষ্টবাদী ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি, সাংবাদিক এবং ব্লগারদের অনলাইনে হত্যার আহ্বান জানায় ইসলামী জঙ্গিরা৷ সূচকে এবার বাংলাদেশের অবস্থান আগের বছরের মতোই আছে, ১৪৬৷