বিশ্বের ৩৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন ২০২২ সাল বিদায়ী বছরের চেয়ে ভালো কাটবে৷ ২৮ শতাংশ আরো খারাপ একটি বছরের আশঙ্কা করছেন৷ বিশ্বখ্যাত জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনালের জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Schutt
বিজ্ঞাপন
নতুন বছর কতটা ভালো কাটবে? কতটা আশাবাদী বিভিন্ন দেশের মানুষ? বিশ্বখ্যাত জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল প্রতিবছরই তা নিয়ে জরিপ করে৷
এবার জরিপে অংশ নিয়েছেন ৪৪টি দেশের মানুষ৷ তারমধ্যে ২০২২ সাল নিয়ে সবচেয়ে আশাবাদী ইন্দোনেশীয়ারা৷ দেশটির ৭৬ শতাংশ নাগরিকই বিগত বছরের চেয়ে নতুন বছর ভালো কাটবে বলে প্রত্যাশা করছেন৷ প্রথম পাঁচে ইন্দোনেশিয়ার পরে রয়েছে আলবেনিয়া (৭০%), নাইজেরিয়া (৬৮%), আজারবাইজান (৬২%) ও ভিয়েতনাম (৫৯%)৷
অন্যদিকে নতুন বছর নিয়ে সবচেয়ে নিরাশ আফগানরা৷ দেশটির ৫৬ শতাংশ মানুষই আরো একটি খারাপ বছরের আশঙ্কা করছেন৷ তাদের পরে রয়েছে তুরস্ক (৫৬%), বুলগেরিয়া (৪৮%), পোল্যান্ড (৪৭%), চেক রিপাবলিক (৪৫%) ও পাকিস্তান (৪১%)৷
গ্যালাপ তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরগুলোকে একত্রিত করে স্কোরের ভিত্তিতে হোপ ইনডেক্স বা আশা সূচকও তৈরি করেছে৷ তাতেও ইন্দোনেশিয়ানরাই (+৭২) বিশ্বের সবচেয়ে আশাবাদী মানুষ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন৷ তারপরে রয়েছেন আলবেনিয়া (৬৫+), আজারবাইজান (+৫৩), নাইজেরিয়া (+৫১), মেক্সিকো (+৪৭) ও ভিয়েতনামের (+৪৭) জনগণ৷
টানা তিন বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষে জার্মানি
২০১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারা দেশ হলো জার্মানি৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Reuters
একটানা তিন বছর
বিশ্বে নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মানুষ আস্থা রাখছেন জার্মানির ওপর, জানাচ্ছে গ্যালাপ৷ তাদের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে করোনা সংকটের আগে পর্যন্ত বিশ্বের চিত্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. von Jutrczenka
প্রথম জার্মানি, দ্বিতীয় কে?
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মোট ৪৪ শতাংশের পছন্দ ছিল জার্মানি৷ দ্বিতীয় স্থানে ৩৩ শতাংশের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু গবেষকদের মত, করোনা সংকট মোকাবিলার কথা বিবেচনা করলে অ্যামেরিকার পক্ষে থাকা মানুষ আরো কমবে ভবিষ্যতে৷
ছবি: imago images/B. Trotzki
দ্বিতীয় স্থানের জন্য লড়াই
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিশ্বের আস্থা অর্জনের লড়াইয়ে হাড্ডাহাড্ডি অবস্থানে ছিল চীন (৩২ শতাংশ) ও রাশিয়া (৩১ শতাংশ)৷ ২০১৮ সালের সমীক্ষায় চীন ৩৪ শতাংশের আস্থা পাওয়ায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল৷
ছবি: imago images/Panthermedia/Kentoh
যেখানে পিছিয়ে অ্যামেরিকা
অ্যামেরিকার বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি মানুষ ছিলেন ইউরোপে (৬১ শতাংশ)৷ আফ্রিকায় ২০০৯ সালে অ্যামেরিকার পক্ষে ছিলেন ৮৫ শতাংশ মানুষ, যা এখন এসে ঠেকেছে ৫২ শতাংশে৷ অস্ট্রেলিয়া থেকে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৬৭ শতাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তাদের রায় দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar
কেন মার্কিন ভাবমূর্তির পতন
বারাক ওবামার নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসাবে দেখেছেন বিশ্বের মানুষ, যা ট্রাম্পের সময়ে ব্যাপকভাবে বদলে গিয়েছে৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
বিশ্বের নতুন নেতৃত্ব
২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই তালিকার শীর্ষে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ শুধু ২০১১ ছাড়া, যখন সেই স্থান দখল করে জার্মানি, অ্যামেরিকার শীর্ষস্থান হাতছাড়া হয়নি৷ ১৩৫টি দেশ থেকে আসা সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মতামতের উপর ভিত্তি করেছে এই সমীক্ষা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
6 ছবি1 | 6
অন্যদিকে সবচেয়ে হতাশাগ্রস্ত তুরস্ক (-৩৪), বুলগেরিয়া (-৩৪), আফগানিস্তান (-৩২), পোল্যান্ড (-৩০) ও চেক রিপাবলিকের (-২৫) মানুষ৷
‘আমরা আমাদের ভবিষ্যত জানি না'
এই জরিপ নিয়ে ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট কানচো স্টয়চেভ৷ গ্যালাপ ভবিষ্যৎ নিয়ে জরিপ করলেও তার মতে, ‘‘আমরা শুধু একটা বিষয়ই নিশ্চিত করে বলতে পারি আর তা হলো আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ জানতে পারি না, যদিও আমরা অনেকসময় মনে করি যে আমরা সেটা পারি৷''
২০২১ সাল যে সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে এবারে জরিপে তার ছাপ পড়েছে বলে মনে করেন তিনি৷ কানচো বলেন, ‘‘বৈশ্বিক জনমত অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আরো ঘনীভূত সংকটের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন৷ এ বিষয়টি বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইউরোপে, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপে৷ সেখানে দুই তৃতীয়াংশ মানুষই খারাপ কিছুর আশঙ্কা করছেন৷ ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে অভূর্তপূর্ব অর্থনৈতিক প্রণোদনায় গত বছরটি তাদের জন্য ইতিবাচক ছিল, অন্য কথায় মানুষের নৈরাশ্যকে সীমিত পরিসরে আটকে রাখতে পেরেছিল৷ কিন্তু (জরিপের ফলাফলে) মনে হচ্ছে আরো খারাপ সময়ের এখনও বাকি আছে৷''
প্লাস্টিক দিলে মিলবে বই
ইন্দোনেশিয়ার এক লাইব্রেরিয়ান বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলছেন শিশুদের৷ সেই সঙ্গে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতাও বাড়াচ্ছেন অভিনব উপায়ে৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Ajeng Dinar Ulfiana/REUTERS
ছোট উদ্যোগ, বড় প্রভাব
রাদেন রোরো হেনদারতি প্রতি সপ্তাহান্তে তার তিন চাকার গাড়ি নিয়ে ছুটে যান মুনতাগ গ্রামে৷ তাকে দেখে ছুটে আসে শিশুরা৷ আসে বই পড়তে৷ তারা কুড়িয়ে আনা প্লাস্টিক তুলে দেয় রাদেনের হাতে, তার বিনিময়ে পায় মজার মজার বই৷ তিন চাকার গাড়ি নিয়ে লাইব্রেরিয়ান রাদেন যখন বাড়ি ফেরেন, মন জুড়ে থাকে শিশুদের বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের মাঝে পরিবেশ-সচেতনতাও বাড়াতে পারার আনন্দ!
ছবি: Ajeng Dinar Ulfiana/REUTERS
প্লাস্টিকের ‘সদ্ব্যবহার’
কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিকের কাপ, ব্যাগ ইত্যাদির বিনিময়ে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার থেকে বই নিয়ে শিশুরাই যে শুধু উপকৃত হয়, তা কিন্তু নয়৷ ইন্দোনেশিয়ায় পরিবেশ দূষণে বড় ভূমিকা রাখছে প্লাস্টিক৷ রাদেন বইয়ের বিনিময়ে পাওয়া প্লাস্টিক তার সহকর্মীদের সহায়তায় পুনর্ব্যবহারযোগ্য করেন, কিছু সামগ্রি বিক্রিও করেন৷
ছবি: Ajeng Dinar Ulfiana/REUTERS
‘আবর্জনার লাইব্রেরি’
তিনচাকার গাড়ি শিশুদের কাছে যায় ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার হয়ে আর ফেরে প্রতিবার ১০০ কিলোগ্রামের মতো প্লাস্টিক নিয়ে৷ তাই উদ্যোক্তারা তিন চাকার গাড়িটির নাম দিয়েছেন ‘ট্র্যাশ লাইব্রেরি’, অর্থাৎ ‘আবর্জনার লাইব্রেরি’৷ রাদেন মনে করেন এমন পাঠাগার আরো অনেক দরকার, কারণ, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াই করে এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে এ ধরনের আবর্জনা কমানোর কাজও গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে৷’’
ছবি: Ajeng Dinar Ulfiana/REUTERS
পরিবেশ-সচেতন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম
মুনতাগ গ্রামের অনেক শিশুকে এখন আর বই পড়া বা ঘরে-বাইরের প্লাস্টিক সংগ্রহ করে রাদেন রোরোর হাতে তুলে দেয়ার কথা বলতে হয় না৷ সময় করে নিজের উদ্যোগেই প্লাস্টিক সংগ্রহ করে সপ্তাহান্তে নতুন বই পাওয়ার আশায় জমায় তারা৷ স্কুল ছুটির পরও একসঙ্গে বসে বই পড়তে দেখা যায় তাদের৷
ছবি: Ajeng Dinar Ulfiana/REUTERS
ভিডিও গেম ছেড়ে বইয়ের ভুবনে
রাদেন রোরো হেনদারতি আরেকটা পরিবর্তন এনেছেন গ্রামের শিশুদের জীবনে৷ গ্রামের যে শিশুরা আগে ভিডিও গেম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, তাদের অনেকেরই এখন সময় কাটে বইয়ের সান্নিধ্যে৷ করোনা সংকটের সময় সারা বিশ্বেই শিশুদের যেখানে ইন্টারনেট-নির্ভরতা বেড়েছে, জাভা দ্বীপের কাছে গ্রামটির চিত্র তখন একেবারে ভিন্ন৷
ছবি: Ajeng Dinar Ulfiana/REUTERS
শিক্ষায় অবদান
করোনা সংকটের সময় বিশ্বের অনেক দেশের মতো ইন্দোনেশিয়ারও অনেক স্কুল এখনো কার্যত বন্ধ৷ সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাঙ্কের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর ফলে সে দেশের অন্তত ৮০ ভাগ শিশু ওইসিডি-র ন্যূনতম মান অনুযায়ী পড়ালেখা করতে পারবে না৷ তিন চাকার গাড়িতে ছয় হাজার বই শিশুদের পড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে সেই আশঙ্কাও কিছুটা কমাচ্ছেন রাদেন৷
ছবি: Ajeng Dinar Ulfiana/REUTERS
6 ছবি1 | 6
গ্যালাপ গত ৪০ বছর ধরে বিশ্বের সুখী দেশ নির্বাচন করে আসছে৷ সাধারণত সম্পদশালী দেশগুলোর মানুষকে সুখী মনে করা হলেও তাদের জরিপে ভিন্ন চিত্র উঠে আসে৷ কানচো বলেন, ‘‘ধনী বা সবচেয়ে উন্নত দেশের তালিকায় সুখী দেশ নেই৷ এই বছর যেমন কলম্বিয়া প্রথম হয়েছে৷ সাধারণত যেসব দেশে তরুণ জনগোষ্ঠী বেশি তারাই এই র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকে৷ ধনী দেশগুলোতে সাধারত বয়স্ক আর অসুখী মানুষ বেশি৷'' তিনি মনে করেন মানুষ সুখী হবে কীনা সেটি কেবল সম্পদ দিয়ে বিবেচনা করা যায় না৷ দেশভেদে সংস্কৃতি, মানসিকতা এবং ঐতিহ্য ও সংস্কারের পার্থক্যের উপরও নির্ভর করে কারা বেশি আর কারা কম সুখী৷
গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার জার্মানরা নতুন বছর নিয়ে কম আশাবাদী৷ দেশটির মাত্র ৩২ শতাংশ মানুষ ২০২২ সাল নিয়ে ইতিবাচক৷ জনগণের ব্যক্তিগত সুখের দিক থেকে তাদের অবস্থান জাপান, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোর নীচে৷ এ বিষয়ে কানচো বলেন, ‘‘জরিপ থেকে যা দেখা যাচ্ছে, জার্মানরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিরক্ত, ক্লান্ত এবং আত্মবিশ্বাসী নন৷ লকডাউন, টিকা, নতুন সরকারের গঠন প্রক্রিয়ার অনিশ্চয়তা, ইউরোপের ধীরগতি, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে পশ্চিমের বিরোধ এর কারণ হতে পারে৷''
তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে গ্যালাপ মানুষের ব্যক্তিগত অভিব্যাক্তি বা পছন্দ-অপছন্দ জানার চেষ্টা করে না, বরং জনগণের ভাবনা তুলে আনার চেষ্টা করে৷