২০২২ সালে শীতকালীন অলিম্পিকে মিউনিখ আয়োজক হবে কিনা – এ বিষয়ে ভোটাভুটি হয়েছে রবিবার৷ ভোটে দেখা গেছে, মিউনিখবাসী অলিম্পিক আয়োজনের বিপক্ষে৷ অর্থাৎ, না ভোটের পক্ষে মত দিয়েছেন বেশিরভাগ অধিবাসীই৷
বিজ্ঞাপন
শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজনের প্রার্থী হতে যেখানে দরকার ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট, সেখানে সমর্থন গেল না ভোটের পক্ষে৷ রবিবার গণভোটের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে ২০২২ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের আবেদনের জন্য অনুমোদন চাওয়া হলে ‘না' ভোট পড়ে৷
ইন্টারন্যাশনাল স্কি ফেডারেশন এফআইএস-এর প্রেসিডেন্ট সোমবার জানিয়েছেন, মিউনিখবাসীর এই ভোটই বলে দিচ্ছে যে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি আইওসি-র উপর তাঁদের আস্থা নেই৷ প্রেসিডেন্ট গিয়ান ফ্রাঙ্গো কাসপার বার্তা সংস্থা ডিপিএ-কে বলেছেন, রবিবারের গণভোটে না ভোটের আধিক্যই এটা প্রমাণ করে৷ তিনি বলেন, ২০১৪ সালে সোচি শীতকালীন অলিম্পিক এবং ২০২২ সালে কাতারের ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে নিয়মিত শিরোনাম ও খবরও এ ব্যাপারে তাঁদের মনে কোনো আগ্রহ তৈরি করেনি৷
কাসপারের মতে, আয়োজনটা কোন দেশে হচ্ছে বা স্বাগতিক দেশ কোনটি – সেটা মূখ্য বিষয় না হয়ে সেখানকার নেতিবাচক দিকগুলো মূখ্য হয়ে উঠেছে, যা তাঁদের মনে ভীতির সঞ্চার করছে৷
আনন্দে ভাসছে টোকিও
২০২০ সালের অলিম্পিক আয়োজনের সুযোগ পেয়েছে জাপান৷ ৪৮ বছর পর আবার ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আয়োজনটি এলো টোকিওতে৷ জাপানের রাজধানী তাই ভাসছে আনন্দের বন্যায়৷
ছবি: Getty Images
‘আমরা পেরেছি, আমরা পেরেছি!’
আয়োজক হওয়ার লড়াই খুব কষ্টে জিততে হয়েছে টোকিওকে৷ সবাইকে অবাক করে গোপন ভোটাভুটির প্রথম পর্বে বাদ পড়ে যায় মাদ্রিদ৷ স্পেনের তখনই স্বপ্নভঙ্গ হলেও তুরস্ক টিকে ছিল৷ কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে ইস্তানবুল পেয়েছে মাত্র ৩৬ ভোট আর টোকিও ৬০ ভোট৷ ফলে তুরস্কে নেমে আসে হতাশা আর টোকিওবাসি ভাসে আনন্দ-উল্লাসে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
সুখেও কেঁদে ওঠে মন...
অলিম্পিক-লড়াই জিততে জি-টোয়েন্টি সম্মেলন থেকে শিনজো আবে সরাসরি চলে গিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে৷ রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে সেখানে গিয়ে অবশ্য মন খারাপ করে ফিরতে হয়নি জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে৷ টোকিওর আয়োজক হবার দাবি আদায় করেই ফিরেছেন৷ আনন্দে সবাই যেখানে হাসে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী তখন অনেকটা কাঁদতে কাঁদতেই বলেছেন, ‘‘২০২০ অলিম্পিকের আয়োজক হয়ে আমরা নতুন আশার জন্ম দেবো৷ ’’
ছবি: picture alliance/dpa
‘আগামীকে আবিষ্কার করো’
২০২০ অলিম্পিকের স্লোগানটা কিন্তু দারুণ – আগামীকে আবিষ্কার করো৷ টোকিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ডিজাইনেও রয়েছে ভবিষ্যৎ ভাবনার ছাপ৷ ডিজাইনার কিন্তু জাপানি নন৷ ইরাকি-ব্রিটিশ স্থপতি নারীর নাম জাহা হাদিদ৷ স্টেডিয়াম তৈরির কাজ এখনো শুরু হয়নি৷ জাহা হাদিদের ডিজাইনের বাস্তবায়ন শুরু হবে শিগগিরই৷
ছবি: Tokyo.jp
১৭ হাজার শয্যা
স্টেডিয়ামের মতো অলিম্পিক ভিলেজও থেমে আছে ডিজাইনারের কাগজে৷ তবে ছবির গ্রাফিক্স দেখেই অনুমান করা যায় ক্রীড়াবিদদের জন্য কী এলাহি কাণ্ড হতে চলেছে৷ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নিয়ে ক্রীড়াপল্লিটি তৈরি হবে ৪৪ হেক্টর জমির ওপর৷ সেখানে বিছানাই থাকবে ১৭,০০০টি৷
ছবি: tokyo2020.jp
ভয় নেই!
ফুকুশিমার নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের দুর্ঘটনা টোকিওর আয়োজক হবার পথ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল৷ তেজস্ক্রিয়তার আতঙ্ক একটু হলে দৌড় থেকে ছিটকে দিতো টোকিওকে৷ শিনজো আবে আশ্বস্ত করেছেন বলে রক্ষা৷ জাপানের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)-কে জানিয়েছেন, ফুকুশিমার পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে৷ তাছাড়া ফুকুশিমা যে টোকিও থেকে ২২৫ কিলোমিটার দূরে – এ কথা জানিয়ে সবাইকে নিশ্চিন্তও করেছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/Tokyo Electric Power Co
মেগাসিটি
টোকিও যেনতেন কোনো রাজধানী শহর নয়৷ রীতিমতো মেগাসিটি৷ সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী টোকিওতে এখন ৯০ লাখ মানুষের বাস৷ শহর কেন্দ্রের বাইরের বৃহত্তর এলাকা জুড়ে রয়েছে সাড়ে তিন কোটি মানুষ৷ অসংখ্য সুউচ্চ ভবন রয়েছে টোকিওতে৷ এত লোকের বাস সম্ভব হয়েছে সে কারণেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাপান পারে...
পৃথিবীর আর কোনো শহরে সম্ভবত টোকিওর মতো এত লোক এত সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিদিন যাতায়াত করেন না৷ যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য টোকিও সবসময়ই বিশেষ প্রশংসিত৷ রাজধানীর শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ প্রতিদিন ট্রেনে চড়েন৷ অটোমেটেড গাইডওয়ে ট্রানজিট ‘ইউরিকামোম’ কী অসাধ্যই না সাধন করে চলেছে!
ছবি: picture-alliance/dpa
স্মরণে ১৯৬৪
টোকিওতে প্রথমবার অলিম্পিক হয়েছিল ১৯৬৪ সালে৷ অথচ তার ২৪ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৪০ সালেই হতে পারতো সেই সৌভাগ্য, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধের কারণে সুযোগটি সেবার হাতছাড়া হয়ে যায়৷ বিশ্বযু্দ্ধের ধকল কিছুটা সামলে ওঠা জাপানে ১৯৬৪ সালের অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিল ৯৩টি দেশ৷ মোট প্রতিযোগী ছিল পাঁচ হাজার একশ একান্ন জন৷ ২০২০ সালের আসরে অংশগ্রহণকারী দেশ এবং প্রতিযোগী কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাঁর হাতে অলিম্পিক মশাল
ইয়োশিনোরি সাকাই-এর জন্ম ১৯৪০ সালের এক কালো দিনে৷ সেদিন হিরোশিমায় আণবিক বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ তাই জন্ম তাঁর মৃত্যুর বিভীষিকার মধ্যে৷ তবে এ জনম অনেকটা সার্থক হয় ১৯৬৪ সালে৷ অলিম্পিক মশাল টোকিওতে আসে তাঁর হাত ধরে, সারা বিশ্বের জন্য শান্তির বার্তাও ছিল সঙ্গে৷
ছবি: Getty Images
9 ছবি1 | 9
অলিম্পিকের ভেন্যু হিসেবে মিউনিখের যে চারটি জায়গার নাম প্রস্তাব করার কথা, প্রতিটি অঞ্চলের অধিবাসীরাই ‘না' ভোট দিয়েছেন৷ এই চারটি জায়গা হলো মিউনিখ শহর, গার্মিশ-পার্টেনকির্শেন, ট্রাউনস্টাইন এবং ব্যার্চটেসগাডেন্যার৷
এর আগে ২০১৮ সালে শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজনের জন্য মিউনিখ আবেদন করলেও সেবার জেতে দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচাং শহরটি৷ ২০২২ অলিম্পিক আয়োজনের প্রার্থী হতে আবেদন করবে নরওয়ের রাজধানী অসলো, ইউক্রেনীয় শহর লভিভ, বেইজিং-এর অদূরে ঝানজিয়াকু, কাজাখস্তানের আলমাতি এবং পোল্যান্ডের ক্রাকাও৷
বৃহস্পতিবারের মধ্যে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কাছে চূড়ান্ত নামসহ আবেদন পেশ করতে হবে৷ ২০১৫ সালে কুয়ালালামপুরে এ ব্যাপারে ভোট হবে৷