কাজের বাজার এখনই ঠিক হওয়ার সুযোগ নেই। আরো মানুষ চাকরি হারাবেন। রিপোর্ট পেশ করল জাতিসংঘ।
বিজ্ঞাপন
২০২৩ সাল পর্যন্ত কাজের বাজারে করোনার প্রভাব থাকবে। কাজ হারাবেন আরো বহু মানুষ। কমবে কর্মসংস্থান। বাড়বে দারিদ্র্য। বুধবার এমনই এক রিপোর্ট পেশ করেছে জাতিসংঘের সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন। গোটা পৃথিবীর যে চিত্র তাদের রিপোর্টে ফুটে উঠেছে তা যথেষ্ট আশঙ্কার কারণ।
শিক্ষিতদের এক-তৃতীয়াংশ বেকার
সরকারি স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস-এর গবেষণা বলছে, এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তরুণদের এক-তৃতীয়াংশ পুরোপুরি বেকার৷ গত ডিসেম্বরে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়৷ ছবিগুলো ফাইল থেকে নেয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. H. Chowdhury
শিক্ষিতদের এক-তৃতীয়াংশ বেকার
সরকারি স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা সংস্থা ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান’ বা বিআইডিএস-এর গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণার ফল বলছে, দেশে এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তরুণদের এক-তৃতীয়াংশ (৩৩.১৯ শতাংশ) পুরোপুরি বেকার৷ ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সি ১৫ হাজার ২৫ জন শিক্ষিত তরুণ ফেসবুক ও ইমেলের মাধ্যমে এই জরিপে অংশ নেন৷
ছবি: Sawpan Chandra Dash
কতদিন ধরে বেকার?
জরিপ বলছে, শিক্ষাজীবন শেষে এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত বেকার ছিলেন ১১.৬৭ শতাংশ, দুই বছরের চেয়ে বেশি সময় ধরে বেকার ১৮.০৫ শতাংশ এবং ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত বেকার ১৯.৫৪ শতাংশ৷
ছবি: Sawpan Chandra Dash
সবচেয়ে বেশি বেকার স্নাতকেরা
গবেষণা বলছে, প্রায় ৩৬.৬ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার৷ স্নাতকোত্তরদের মধ্যে এই হার ৩৪.৩ শতাংশ৷ আর এসএসসি ও এইচএসসি পাস করাদের মধ্যে বেকারত্বের হার যথাক্রমে ২৬.৭৯ ও ২৭.৯৫ শতাংশ৷
ছবি: Bangla Tribune
চাকরির জন্য অপেক্ষা
গবেষণা বলছে, পড়াশোনা শেষ করার ছয় মাসের মধ্যে চাকরি পেয়েছেন অর্ধেক তরুণ (৫০.৭৪)৷ ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩১ শতাংশকে৷ আর ১৮ শতাংশ তরুণকে দুই বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে৷
ছবি: Abdur Razzaque
দুইবছর পরও বেকার
মাস্টার্স পাস করার দুই বছর পরও বেকার ছিলেন ১৯.২১ শতাংশ৷ অনার্সের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ৮.৭৩ শতাংশ৷
ছবি: DW/A. Khanom
প্রথম শ্রেণি পাওয়াদের বেকারত্ব
অনার্সে প্রথম শ্রেণি পাওয়াদের ১৭.২১ শতাংশ শিক্ষার্থী দুই বছরেরও বেশি সময় কর্মহীন অবস্থায় ছিলেন৷ মাস্টার্সের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি আরও বেশি, ২৬.৮ শতাংশ!
ছবি: Sawpan Chandra Dash
উচ্চ বেতন
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা মাস্টার্স পাস করেছেন তাদের ২৮.৭৫ শতাংশের মাসিক বেতন ৪০ হাজার টাকার উপরে৷ আর অনার্স ডিগ্রিধারীদের ১৮.২ শতাংশ মাসে ৪০ হাজারের বেশি বেতন পান৷ অর্থাৎ মাস্টার্স করলে বেশি বেতনে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. H. Chowdhury
কম বেতন
মাস্টার্স পাস করে মাসিক ১০ হাজার টাকার নীচে বেতনে চাকরি করছেন ৫.৯২ জন৷ আর ১১.৪৩ শতাংশ অনার্স ডিগ্রিধারীর বেতন মাসে ১০ হাজার বা তার চেয়ে কম৷
ছবি: DW/H.U.R Swapan
8 ছবি1 | 8
২০১৯ সালের শেষ পর্ব থেকে করোনার প্রকোপ শুরু হয়। ২০২০ সালের গোড়ায় তা ব্যাপক চেহারা নেয়। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। তখন থেকেই কাজের বাজারে মন্দা শুরু হয়েছিল। ইউরোপ, অ্যামেরিকা সহ গোটা পৃথিবীতেই মানুষ কাজ হারাতে শুরু করেন। বিশেষত যারা দিন মজুরের কাজ করেন, তারা সবার আগে কাজ হারান। বেসরকারি ক্ষেত্রে এবং কর্পোরেট সেক্টরেও বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন। জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের যেখানে কাজ হারিয়েছিলেন ১৮৭ মিলিয়ন মানুষ, সেখানে ২০২২ সালে ২০৫ মিলিয়ন মানুষ কাজ হারাবেন। ২০২০ এবং ২০২১ সালে সংখ্যাটি এর চেয়ে অনেক বেশি।
জাতিসংঘের ধারণা, ২০২৩ সালের আগে বাজার চাঙ্গা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ, ওই সময় পর্যন্ত নতুন চাকরির বাজার তৈরি হবে না। হার কমলেও, চাকরি হারাতেই থাকবেন অসংখ্য মানুষ। বাড়বে বেকারত্ব। এবং একই সঙ্গে বাড়বে দারিদ্র্য।
জাতিসংঘের আশঙ্কা, দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে যাবেন বহু মানুষ। তাদেরকে ফের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে বহু সময় লেগে যাবে। কারণ, গত কয়েক বছরে যে নতুন চাকরির বাজার তৈরি হয়েছিল, অতিমারির কারণে তা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। প্রচুর ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তা আবার গড়ে ওঠা কঠিন।
ডিডাব্লিউয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের প্রধান। সেখানে তিনি বলেছেন, এক ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে। কাজের বাজার অনেকটা পিছিয়ে গেছে। সেখান থেকে তাকে টেনে তুলতে অনেক বছর লেগে যাবে। এর ফলে একদিকে দারিদ্র্য বাড়বে, অন্যদিকে বাড়বে হতাশা। যার জেরে গৃহঅশান্তি, মেয়েদের উপর অত্যাচারের পরিমাণও বেড়ে যাবে।