গত দুই দশকের মধ্যে ২০২৩ সালে জার্মানিতে রাজনৈতিক হামলা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ও জার্মানিতে রাজনৈতিক মেরুকরণ বৃদ্ধি এর কারণ বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন৷
বিজ্ঞাপন
ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ অফিস, বিকেএর প্রধান হলগার ম্যুনশ মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, গত ১০ বছরে রাজনৈতিক হামলা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে৷ সংখ্যার হিসেবে ২০২৩ সালে মোট ৬০ হাজার ২৮টি হামলা হয়েছে৷ ২০০১ সাল থেকে এমন পরিসংখ্যান রেকর্ড করা শুরুর পর থেকে ২০২৩ সালের সংখ্যাটিই সবচেয়ে বেশি বলে জানান ম্যুনশ৷
ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফ্যাজা বলেন, ‘‘এগুলো এমন কাজ যা আমাদের উন্মুক্ত সমাজ ও বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যায়৷ এগুলো এমন কাজ, আমাদের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যায়৷''
সংখ্যা এত বাড়ার কারণ হিসেবে ইহুদিবিদ্বেষের ঘটনা বাড়া অন্যতম কারণ বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়৷ ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পর ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলে জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষের ঘটনা বাড়তে থাকে৷ ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এমন ঘটনা দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানান জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
ম্যুনশ বলেন, ‘‘৭ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে৷''
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেব বলছে, ডানপন্থি আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে করা অপরাধের সংখ্যা গতবছর তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ বেড়েছে৷ এসব অপরাধের মধ্যে আছে কারও বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো, সম্পত্তির ক্ষতি করা, অপমান, ঘৃণার উসকানি দেওয়া, জবরদস্তি করা ও হুমকি দেওয়া এবং সমাবেশের নিয়ম লঙ্ঘন৷
বামপন্থি আদর্শের অনুসারীদের অপরাধও ২০২৩ সালে ১১.৪৮ শতাংশ বেড়েছে৷
ডান বা বামপন্থি আদর্শে অনুপ্রাণিত সহিংস অপরাধের সংখ্যাও ২০২৩ সালে যথাক্রমে ৮.৫৫ ও ৮.৭৯ শতাংশ বেড়েছে৷
জার্মানির এএফডি নেতাদের কয়েকটি আলোচিত মন্তব্য
জার্মানির অভিবাসনবিরোধী অতি-ডানপন্থি এএফডি দলের নেতারা আক্রমণাত্মক ও উদ্ভট মন্তব্যের জন্য পরিচিত৷ ছবিঘরে এমন কয়েকজনের মন্তব্য থাকছে৷
ছবি: Britta Pedersen/dpa/picture alliance
বিয়র্ন হ্যোকে
টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের এএফডি প্রধান হ্যোকে ২০১৭ সালে বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়ালকে ‘মনুমেন্ট অফ শেম’, অর্থাৎ ‘লজ্জার স্মৃতিসৌধ’ বলে আখ্যায়িত করে প্রথমবারের মতো শিরোনামে এসেছিলেন৷ নাৎসি অতীত নিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করা বন্ধ করতেও বলেন তিনি৷ এরপর ২০২৩ সালে তিনি বলেন, ‘‘এই ইইউকে অবশ্যই মরতে হবে যেন সত্যিকারের ইউরোপ বাঁচতে পারে৷’’ ২০১৯ সালে আদালত বলেছিল, হ্যোকেকে ফ্যাসিস্ট বলা হলে সেটা অপবাদ দেওয়া হবে না৷
ছবি: picture-alliance/Arifoto Ug/Candy Welz
আলিস ভাইডেল
এএফডির অন্যতম পরিচিত মুখ দলের কো-চেয়ার ভাইডেল ২০১৮ সালে জার্মান সংসদে বলেছিলেন, ‘‘বোরকা, হেডস্কার্ফ পরা মেয়ে, ছুরি নিয়ে চলা মানুষ ও অলসেরা আমাদের সমৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক রাষ্ট্রের সুফল পাবে না৷’’
ছবি: Sebastian Kahnert/dpa/picture-alliance
আলেক্সান্ডার গাউলান্ড
এএফডির সাবেক সংসদীয় নেতা গাউলান্ড ২০১৮ সালে দলের তরুণ সদস্যদের সামনে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেছিলেন, জার্মানির একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যেটা (হিটলারের) ১২ বছরের শাসনামলের চেয়ে বেশিদিন টিকে ছিল৷ ‘‘জার্মানির এক হাজারেরও বেশি বছরের সফল ইতিহাসে হিটলার আর নাৎসিরা পাখির বিষ্ঠার দাগ মাত্র,’’ বলেন তিনি৷
ক্রিস্টিয়ান ল্যুথ
বিতর্কিত মন্তব্য করে কয়েকবার পদ অবনমন হয়েছে সাবেক প্রেস অফিসার ল্যুথের৷ এরপরও তিনি ডানপন্থি এক ইউটিউব ব্লগারকে বলেছিলেন, ‘‘আমরা পরেও তাদের (অভিবাসীদের) গুলি করতে পারব, সেটা কোনো বিষয় নয়৷ বা গ্যাস দিতে পারব৷ আমার কাছে এটা কোনো বিষয় নয়৷
ছবি: Soeren Stache/dpa/picture-alliance
বেয়াট্রিক্স ফন স্টর্শ
ইউরোপীয় এই সাংসদ ২০১৬ সালে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘যারা আমাদের সীমান্তে দেয়া বাধা মানবে না, তারা আসলে হামলাকারী৷ তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে হবে- সেটি নারী ও শিশুদের গুলি করে হলেও৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
ফ্রাউকে পেট্রি
২০১৬ সালে জার্মানির একটি আঞ্চলিক পত্রিকাকে এএফডির সেই সময়কার প্রধান পেট্রি বলেছিলেন, ‘‘অবৈধভাবে জার্মানিতে প্রবেশকারী শরণার্থীদের দিকে জার্মানির বর্ডার পুলিশের গুলি ছোড়া উচিত৷’’
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
হারাল্ড ভায়এল
বুন্ডেসটাগ সদস্য ভায়এল ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন, তিনি আশা করছেন জার্মানিতে যেন ‘অনেক শীত’ পড়ে৷ তাহলে জ্বালানির জন্য অনেক খরচ হবে৷ ‘‘তা নাহলে সবকিছু এখন যেভাবে চলছে সেভাবেই চলতে থাকবে,’’ বলেন তিনি৷ অবশ্য এই কথা বলার সময় যে তার মাইক্রোফোন অন ছিল সেটি তিনি বুঝতে পারেননি৷