২০২৩ সালে ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ ২,৫০০ অভিবাসী: জাতিসংঘ
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
২০২৩ সালে এ পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষ টিউনিশিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ২০২২ সালের তুলনায় তা ২৬০ শতাংশ বেশি।
ছবি: DARRIN ZAMMIT LUPI/REUTERS
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করার সময় ২০২৩ সালে এ পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরে আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন।
গত বছরের একই সময়ের মধ্যে এক হাজার ৬৮০ জন অভিবাসী নিহত বা নিখোঁজ হয়েছিলেন।
ইউএনএইচসিআর নিউইয়র্ক অফিসের পরিচালক রুভেন মেনিকদিওয়েলা নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, ‘‘অভিবাসী ও শরণার্থীরা প্রতি পদক্ষেপে মৃত্যু ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি নিয়ে থাকে।"
নিউ ইয়র্কে যখন জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার পক্ষ থেকে এই বক্তব্য এসেছে, একই দিনে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা সমুদ্রপথে ইটালি আসা অভিবাসল কিভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায় তা নিয়ে আলোচনায় বৈঠকে বসেছেন।
ইইউ সদস্য রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাধারণ আশ্রয় ব্যবস্থায় সুদূরপ্রসারী সংস্কারের জন্য বছরের পর বছর ধরে আলোচনা চললেও কোনো ফলাফল আসেনি। এবারও বিভিন্ন শর্ত নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে ইটালি এবং জার্মানির মধ্যে।
জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেছেন, শরণার্থীর সংখ্যা ইতিমধ্যে জার্মানির সামর্থ্যের শেষসীমা ছুঁয়েছে৷ এক সাক্ষাৎকারে অভিবাসনপ্রত্যাশী রুখতে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের কথাও বলেন তিনি৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Markus Schreiber/picture alliance/AP/dpa
শরণার্থী ও আশ্রয় আবেদনের চাপ
ইউরোপীয় শরণার্থী সংস্থা বলছে, ইইউভুক্ত সব দেশ, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত যত আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে, তার এক-তৃতীয়াংশই জার্মানিতে৷ জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত শুধু ইউক্রেন থেকেই এসেছেন প্রায় ১১ লাখ আশ্রয়প্রার্থী৷ এছাড়া, আরো দু’লাখ আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৭ শতাংশ বেশি৷
ছবি: Adam Berry/Getty Images
আবাসন ও অন্যান্য সংকট
জার্মানিতে আসা বহু আশ্রয়প্রত্যাশী ও শরণার্থীকে থাকার জন্য বাসা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ৷ অস্থায়ী আবাসনগুলিতে থাকা কষ্টকর৷ ফুলদায় যেমন শরণার্থীদের থাকার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ৷ নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা শিশুদের দেখভাল করার পরিষেবাও৷ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫-১৬ সালে আসা আশ্রয়প্রত্যাশীদের অন্তত ২৫ শতাংশ এখনও প্রাথমিক আবাসনেই থাকেন৷ ফলে নতুনদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকছে না৷
ছবি: Ying Tang/NurPhoto/imago images
কেন এত চাপ জার্মানিতে
ইটালি বা স্পেনে আসা আশ্রয়প্রত্যাশীদের একটা বড় অংশ ইইউ’র নিয়ম অনুযায়ী সেখানে আবেদন না করে চলে আসেন জার্মানিতে৷ জার্মানিতে শুরু হয় আশ্রয় লাভের প্রক্রিয়া৷
ছবি: Nicolas Economou/NurPhoto/picture alliance
আবেদন-জট
জার্মানিতে যত আশ্রয়ের আবেদন জমা পড়ে, তার অর্ধেকেরও কম আবেদন গৃহীত হয়৷ যাদের আবেদন খারিজ হয়ে যায়, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সাময়িকভাবে থাকার অনুমতি (ডুলডুং) পান৷ ফেরত পাঠানো উচিত, এমন প্রায় ৯৫ হাজার আবেদনকারীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না জার্মান কর্তৃপক্ষ৷ এ কারণে তাদের অন্য কোথাও পাঠাতেও পারছে না৷
ছবি: Markus Schreiber/picture alliance/AP/dpa
অভিবাসনপ্রত্যাশী রুখতে সীমান্তে কড়াকড়ি
বুধবার ইটালির ‘কোরিয়েরে দেলা সেরা’ পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নতুন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুখতে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের কথা বলেছেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷ এর আগে জার্মানির ফ্রি ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও এ প্রস্তাব দেয়৷ ডানপন্থি ক্রিশ্চিয়ান সোশাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) মনে করে, শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দ ভাতা কমানো উচিত, যাতে নিশ্চিত আয়ের কথা ভেবে আরো বেশি আশ্রয়প্রার্থীরা জার্মানিতে না আসেন৷
ছবি: Sascha Schuermann/Getty Images
কেন বাড়ছে আশ্রয়ের আবেদন
ইউরোপের দেশগুলিতে শরণার্থী ব্যবস্থাপনার খামতির পাশাপাশি জার্মান কর্তৃপক্ষকে আরো চিন্তিত করছে আশ্রয়প্রার্থীদের উৎস৷ জার্মানিতে সাম্প্রতিক সময়ে আশ্রয় পাওয়াদের বড় একটা অংশই এসেছেন সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরানের মতো দেশ থেকে৷ এসব দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যত কঠিন হবে, তত বেশি বাড়বে দেশ ছেড়ে ইউরোপ পাড়ি দেবার ঝোঁক৷
ছবি: Ssgt. Emma James/U.S. Air/Planet Pix via ZUMA Press Wire/picture alliance
আইন বদলের ভাবনা
জার্মান সংবিধান অনুযায়ী, রাজনৈতিক আশ্রয়ের অধিকার সবার আছে৷ কিন্তু আইনের মানবিক দিক মাথায় রাখলেও বর্তমান সংকটকে মোকাবিলা করতে বেগ পাচ্ছে জার্মানি৷ তাই ইইউ শরণার্থী নীতিতে বদল আনতে চায় তারা৷ যাদের আবেদন গৃহীত হবার সম্ভাবনা কম, তাদের সীমান্ত থেকেই ফেরত পাঠাতে চায় জার্মানি৷ বর্তমান আন্তর্জাতিক আইন বা ইইউ নীতিমালায় এর অনুমোদন নেই৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
7 ছবি1 | 7
জাতিসংঘকীবলছে?
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের জানুয়ারি থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রায় এক লাখ ৮৬ হাজার মানুষ এরইমধ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছেছেন।
এর মধ্যে এক লাখ ৩০ হাজারই এসেছেন ইটালিতে। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাকি অভিবাসীরা এসেছেন গ্রিস, স্পেন, সাইপ্রাস এবং মাল্টায়।
সবচেয়ে বেশি অভিবাসী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছেন টিউনিশিয়া থেকে। এ সংখ্যা প্রায় এক লাখ দুই হাজার। লিবিয়া থেকে এসেছেন ৪৫ হাজার মানুষ।
মেনিকদিওয়েলা জানিয়েছেন, অন্তত ৩১ হাজার মানুষকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বা টিউনিশিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। লিবিয়ার ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ১০ হাজার ৬০০ জন।
মেনিকদিওয়েলা নিরাপত্তা পরিষদকে মনে করিয়ে দেন যে সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলো থেকে লিবিয়া এবং টিউনিশিয়ার উপকূলে আসার পথটুকু "বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অভিবাসন রুটের একটি।"
তিনি বলেন, ‘‘সাধারণের চোখের আড়ালে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।''
সামর্থ্যসীমিত: টিউনিশিয়ানপররাষ্ট্রমন্ত্রী
টিউনিশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামেল ফেকিহ ডিডাব্লিউকে বলেছেন, অভিবাসীদের ইউরোপের পথে যাত্রা ঠেকাতে তার দেশের সীমিত সামর্থ্য রয়েছে।
তিনি বলেন, "শুরু থেকেই আমরা এই বিষয়টির ওপর জোর দিয়েছি যে, অভিবাসন এর কারণগুলোর সমাধান না করে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব নয়। টিউনিশিয়া কেবল নিজস্ব সীমানা রক্ষা করতে পারে। (পরোক্ষভাবে) নিজস্ব সীমানা পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া অন্যদের জন্য সীমান্ত রক্ষী হিসাবে কাজ করতে পারে না।"
ফেকিহ তার দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ করেছেন। "টিউনিশিয়া একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। তাই আমরা সাব-সাহারান এবং সাহেল দেশগুলো থেকে এত সংখ্যক আফ্রিকান অভিবাসীদের নিতে অক্ষম।"
অভিবাসী বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস তিনটি প্রধান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে একটি যৌথ প্লাটফর্ম৷ প্লাটফর্মটিতে রয়েছে জার্মানির আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে, ফ্রান্স মিডিয়া মোন্দ, এবং ইটালিয়ান সংবাদ সংস্থা আনসা৷ এই প্রকল্পের সহ-অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷