রাজনীতি থেকে সমাজ, পরিবেশ থেকে আন্দোলন, অপরাধ থেকে বিনোদন সব ক্ষেত্রেই ২০২৪ হলো ভারতে পরিবর্তনের বছর।
বিজ্ঞাপন
প্রতিটি বছরই পরিবর্তন নিয়ে আসে। কখনো কম, কখনো বেশি। ২০২৪-এর ভারতে পরিবর্তনের পাল্লা বেশ ভারি। এই বছর ভারতে এমন কিছু বদল হয়েছে বা হচ্ছে, যা রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ। যার প্রভাব দেশ ও মানুষের জীবনে ভালোভাবেই পড়েছে এবং পড়বে।
২০১৪ ও ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। তারা একার ক্ষমতায় সরকার গঠনের জায়গায় ছিল। সেসময় এনডিএ জোট বহাল থাকলেও এই দশ বছর মূলত ছিল বিজেপি-র শাসন।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয় ৪ জুন। সেই ফল ভারতের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। কারণ, বিজেপি সবচেয়ে বড় দল হওয়া সত্ত্বেও পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তারা পায় ২৪০টি আসন, যা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে ৩২টি আসন কম। এনডিএ-র বাকি শরিক দলগুলি ৫৩টি আসন পাওয়ায় বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র আসনসংখ্যা দাঁড়ায় ২৯৩। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথমবার এনডিএ-র শরিক দলগুলির উপর নির্ভরশীল থেকে সরকার চালাতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীকে। তিনি পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে জওহরলাল নেহরুর রেকর্ড ছুঁতে পারলেও বিজেপিকে পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিতে পারেননি। তাই চন্দ্রবাবু নাইডু, নীতিশ কুমারদের উপর নির্ভর করেই সরকার চালাতে হচ্ছে মোদীকে। এটা একটা বড় পরিবর্তন।
লোকসভা নির্বাচনের ফলে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে। তা হলো, ১০ বছর পর ভারতের জাতীয় কংগ্রেস তুলনামূলকভাবে ভালো ফল করেছে। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে কংগ্রেসের ফল এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, লোকসভায় বিরোধী দলনেতার আসনও পায়নি। কিন্তু এবার তারা লোকসভায় ৯৯টি আসনে জিতেছে। রাহুল গান্ধী বিরোধী নেতা হয়েছেন। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জিতেছে ২৩৪টি আসনে। ফলে লোকসভায় বিরোধী দলগুলির শক্তি শুধু যে বেড়েছে তাই নয়, জাতীয় স্তরে কংগ্রেস এবং রাহুল গান্ধীর গুরুত্ব বেড়েছে।
ভারতে ভোট : নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাহাড়, মরুভূমি, নদী পাড়ি দেয়া
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৯৭ কোটি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি৷ ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাহাড়, মরুভূমি, নদী পাড়ি দিতে হচ্ছে৷
ছবি: Anupam Nath/AP Photo/picture alliance/dpa
বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক অনুশীলন
ভারতে এখন লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে৷ সাত পর্বের নির্বাচনের তিনটি পর্ব ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে৷ বাকি পর্বগুলো শেষ করে ৪ জুন ফল ঘোষণা করা হবে৷ প্রায় ৯৭ কোটি (বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি) ভোটার লোকসভার ৫৪৩ জন সদস্য নির্বাচিত করবেন৷
ছবি: Deepak Sharma/AP/picture alliance
নির্বাচনি আইনে শর্ত
ভারতের নির্বাচনি আইন বলছে, একজন ভোটারের কাছ থেকে ভোটকেন্দ্রের দূরত্ব দুই কিলোমিটারের বেশি হতে পারবে না৷ এছাড়া একটি ভোটকেন্দ্রে অন্তত ছয়জন পোলিং স্টাফ ও দুজন পুলিশ সদস্য থাকতে হবে৷ এসব শর্ত মানতে প্রত্যন্ত এলাকায় ছুটে যেতে হচ্ছে নির্বাচন কর্মকর্তাদের৷ ছবিতে কর্মকর্তাদের আসামের মাজুলীর বাগমরা চাপোরিতে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Anupam Nath/AP Photo/picture alliance
ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা
ভারতের নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোটিং উপকরণ বহনে হেলিকপ্টার, বাস, ট্রাক, নৌকা, এমনকি গাধা, খচ্চরও ব্যবহার করছেন৷ তারা জঙ্গল, তুষারাবৃত পাহাড়, ছোট নদীও হেঁটে পার হয়ে তাঁবু, শিপিং কনটেনার, প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলসহ বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করছেন৷ ছবিতে কর্মকর্তাদের পাহাড়ি পথ পেরিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রত্যন্ত গ্রাম ডেসায় যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Channi Anand/AP Photo/picture alliance
একজন ভোটারের জন্যও ভোটকেন্দ্র
গুজরাটের গির অরণ্যের গহীনে একটি মন্দির আছে৷ সেটির দেখাশোনা করেন মহন্ত হরিদাস উদাসীন৷ মঙ্গলবার (৭ মে) তিনি ভোট দিয়েছেন৷ নির্বাচন আইন মেনে তার জন্য ভোটকেন্দ্র বসাতে সেখানে গিয়েছিলেন কয়েকজন কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য৷ প্রচণ্ড গরমের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা বাসে করে অসমতল পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের৷ এছাড়া ভোটার একজন হলেও আইন মেনে সারাদিনই ভোটকেন্দ্র খোলা রাখতে হয়েছিল তাদের৷
ছবি: Indranil Mukherjee/AFP/Getty Images
পাহাড়ি পথ পাড়ি
জম্মু ও কাশ্মীরের প্রত্যন্ত গ্রাম ডেসায় ভোটকেন্দ্র বসাতে এক নির্বাচনি কর্মকর্তা ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে ছোট্ট এক ঘোড়ার পিঠে চেপে বসেছেন৷ বাকি কর্মকর্তারা পাহাড়ি এই পথ হেঁটে পার হচ্ছেন৷
মেঘালয়ের শিলংয়ের এক কুলি পিঠে ভোটিং মেশিন নিয়ে একটি সাসপেনশন ব্রিজ পার হচ্ছেন৷
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
মরুভূমিতে হাঁটা
রাজস্থানের মরুভূমি এলাকায় অবস্থিত আকলি গ্রামে ভোটকেন্দ্র বসাতে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা৷
ছবি: Deepak Sharma/AP Photo/picture alliance
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভোটকেন্দ্র
১ জুন হিমাচল প্রদেশের তাশিগাংয়ে ভোটগ্রহণ হবে৷ সেখানকার ভোটকেন্দ্রটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত ভোটকেন্দ্র৷ সমুদ্র থেকে ১৫ হাজার ২৫৬ ফুট (৪,৬৫০ মিটার) উঁচুতে অবস্থিত৷ ছবিতে ২০০৯ সালের নির্বাচনের সময় সাড়ে ১৫ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত হিকিম গ্রামের নারীদের ভোট দিতে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
10 ছবি1 | 10
লোকসভায় বিজেপি বিশাল ধাক্কা খেয়েছে উত্তরপ্রদেশে। সেখানে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি এবং তাদের জোটসঙ্গী কংগ্রেস ৪৩টি আসনে জয়ী হয়েছে। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে গতবারের তুলনায় অনেক খারাপ ফল করেছে বিজেপি। বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদী জিতলেও ভোটের ব্যবধান কমে গেছে অনেকটাই। উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় ভোটের আগে প্রচুর ধুমধাম করে নির্মীয়মান রামমমন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপরেও যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে এই হার বিজেপি-র কাছে বিশাল ধাক্কা।
রাহুল গান্ধী এবার লোকসভায় দুইটি আসনে লড়েছিলেন। উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি এবং কেরালার ওয়েনাড়ে। দুইটি কেন্দ্রেই তিনি জেতেন। পরে রাহুল রায়বেরিলি রেখে, কেরালার ওয়েনাড় ছেড়ে দেন। সেখান থেকে উপনির্বাচনে লড়ে জিতে এসেছেন রাহুলের বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কংগ্রেসের নেহরু-গান্ধী পরিবারের আরো এক সদস্য সাংসদে প্রবেশ করলেন।
তবে এই পরিবর্তনের বছরে লোকসভা নির্বাচন কংগ্রেসের কাছে সুখবর নিয়ে এলেও বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে তারা একেবারেই প্রত্যাশামতো ফল করতে পারেনি। একমাত্র ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের জেএমএম-কংগ্রেস জোট বিধানসভা ভোটে জিতে আবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। কিন্তু হরিয়ানায় সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস হেরেছে। তবে তাদের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা লেগেছে মহারাষ্ট্রেয লোকসভায় পশ্চিম ভারতের এই রাজ্যে বিজেপি-জোট গোহারান হেরেছিল, সেখানেই বিধানসভা নির্বাচনে তারা হইহই করে জিতেছে।
২০২৪ এ ঝরে পড়া নক্ষত্রেরা
নক্ষত্ররও পতন হয়। কিন্তু কখনো কখনো তাদের পতনে সৃষ্টি হয় এক নিদারুণ শূন্যতা, যা অনেকাংশেই অপূরণীয়। ২০২৪ এ আমরা হারিয়েছি বিশ্ব বরেণ্য কয়েকজন সংগীতজ্ঞ, অভিনয় শিল্পীকে।
ছবি: Martin Harris/Captital Pictures/picture alliance
ওস্তাদ রশিদ খান
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ রশিদ খান ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই উত্তরপ্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৬ সালে পদ্মশ্রী এবং সেইসাথে সঙ্গীত নাটক একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০২২ সালে তিনি ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণে ভূষিত হন। গত ৯ জানুয়ারি মাত্র ৫৬ বছর বয়সে শেষ হয় তার পথচলা।
ছবি: privat
পঙ্কজ উধাস
১৭ মে ১৯৫১ গুজরাটে জন্মগ্রহণ করেন পঙ্কজ উধাস৷ আশির দশকে গজলের অনুষ্ঠান, অ্যালবাম এবং ছবির গানে শ্রোতা, দর্শকদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন পঙ্কজ৷ ‘চান্দি জ্যায়সা রঙ হ্যায় তেরা', ‘দিওয়ারোঁ সে মিল কর রো না', ‘আহিস্তা, আহিস্তা'-সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শিল্পীর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অ্যালবামের নাম ‘নাশা', ‘পয়মানা',‘হামসফর'৷ মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন পঙ্কজ উধাস৷
ছবি: AFP
সাদী মুহাম্মদ
রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও সুরকার সাদী মুহাম্মদ শহীদ পরিবারের সন্তান৷ সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক সাদীর জন্ম ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর, ঢাকায়। রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করা এই শিল্পী ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৩ মার্চ তিনি স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নেন।
ছবি: Sazzad Hossain/DW
শাফিন আহমেদ
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল মাইলস-এর বেজ গিটারিস্ট এবং প্রধান গায়ক শাফিন দীর্ঘদিন মঞ্চ মাতিয়েছেন দেশে ও বিদেশে। ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭৯ সালে মাইলসে যোগ দেন। তার গাওয়া জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে চাঁদ তারা সূর্য, জ্বালা জ্বালা, ফিরিয়ে দাও অন্যতম। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হওয়ায় গত ২৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ছবি: privat
ডেম মার্গারেট নাটালি স্মিথ
ব্রিটিশ অভিনেত্রী ডেম মার্গারেট নাটালি স্মিথের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের ইলফোর্ড শহরে। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি দুটি একাডেমি পুরস্কার, চারটি এমিসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ‘হ্যারি পটার’-এর সব কটি ছবিতে অধ্যাপক ম্যাকগোনাগলের চরিত্রে নজর কেড়েছিলেন। ২৭শে সেপ্টেম্বর ৮৯ বছর বয়সে লন্ডনের চেলসি অ্যান্ড ওয়েস্টমিনস্টার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী লিয়াম পেইন বিখ্যাত ইংলিশ-আইরিশ পপ ব্যান্ড দল ‘ওয়ান ডিরেকশন’-এর সদস্য ছিলেন। সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যান্ডের শিল্পী লিয়ামের জন্ম ২৯ আগস্ট ১৯৯৩ উলভার হ্যাম্পটন, ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস , ইংল্যান্ডে। গত ১৬ অক্টোবর আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস আইরেসের একটি আবাসিক হোটেল রুমের বারান্দা থেকে পড়ে মারা যান তিনি।
ছবি: Vianney Le Caer/Invision/AP/dpa/picture alliance
হেলাল হাফিজ
১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কবির একমাত্র কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’। তার কবিতার জনপ্রিয় দুটি পঙ্ক্তি ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কবিতাপ্রেমীদের মুখে মুখে ফেরে। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। হেলাল হাফিজ ১৩ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
ছবি: Sazzad Hossain/DW
ওস্তাদ জাকির হোসেন
তবলা বাদক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ওস্তাদ জাকির হোসেন অনেকের মতে সর্বকালের অন্যতম সেরা তবলা বাদক। ১৯৫১ সালের ৯ মার্চ মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ভারত সরকার এই গুণী শিল্পীকে ১৯৮৮ সালে পদ্মশ্রী, ২০০২ সালে পদ্মভূষণ ও ২০২৩ সালে পদ্মবিভূষণ পদকে ভূষিত করে। ওস্তাদ জাকির হোসেন চারবার গ্র্যামি পুরস্কার জেতেন। ১৫ই ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
ছবি: Martin Harris/Captital Pictures/picture alliance
8 ছবি1 | 8
ফলে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেস ও বিজেপি-র ভোটের ফল পেন্ডুলামের মতো পরিবর্তিত হয়েছে।
সেইসঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশে আবার ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন তেলুগু দেশম নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু। ওড়িশায় ২৪ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর হেরে গেছেন নবীন পট্টনায়েক। মহারাষ্ট্রে আবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন দেবেন্দ্র ফড়নবিস। এই সব পরিবর্তন একটা কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে, রাজনীতিতে চিরকাল কারো সমান যায় না। কাউকেই হিসাবের বাইরে রাখা যায় না। জীবনের মতোই এক্ষেত্রে সাফল্য়ের পর ব্যর্থতার মুখ দেখতে হতে পারে। ব্যর্থতার পরেও সাফল্য আসতে পারে।
ভারতের রাজনীতিতে ২০২৪ সালের আরেকটি বড় ঘটনা অবশ্যই জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভার ভোট। লোকসভার সময়ই দেখা গিয়েছিল, জম্মু ও কাশ্মীরে মানুষ ভোট দিচ্ছেন। নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নেয়ার ব্যাপারে আগের তুলনায় তারা অনেক বেশি উৎসাহ দেখিয়েছেন। বিধানসভার সময় দেখা গেলো, সেই ধারা বজায় আছে। জম্মু ও কাশ্মীরে গত ১০ বছরের মধ্য়ে প্রথম বিধানসভা ভোট হলো। বিশেষাধিকার বাতিল করার পরও প্রথম ভোট হলো। জম্মু ও কাশ্মীর এখন আর পূর্ণ রাজ্য নয়। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মাত্র। সেখানে বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৬৩ শতাংশের বেশি। সেখানে ওমর আবদুল্লার নেতৃত্বে এনসি, কংগ্রেস ও বামেদের জোট ৪৯টি আসন পেয়েছে। ওমর মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।
ভারতের রাজনীতিতে এত পরিবর্তনের মধ্যে শুধু একটা কথা মনে রাখা ভালো, পশ্চিমবঙ্গের ভোটে সহিংসতার রাজনীতির ধারা একইরকম আছে। পশ্চিমবঙ্গে ২০২৪ সালে যত নির্বাচন হয়েছে, সব ক্ষেত্রে সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে, ভোটের দিন বাইক বাহিনীর তাণ্ডব, ভোটার ও বিরোধী দলের প্রার্থীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। বাকি ভারত ভোটে সহিংসতা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ ২০২৪ সালেও আগের ধারা অনুসরণ করে ভোটে সহিংসতার পথেই থেকেছে। এখানে তাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য দপ্তরের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুমকি চিকিৎসকদের
তিনদিন রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের বাইরে অবস্থান বিক্ষোভ চালানোর পর এবার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা চিকিৎসকদের।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আবার প্রতিবাদে ডাক্তাররা
পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কাউন্সিলে ফিরেছেন অভীক দে এবং বিরূপাক্ষ বিশ্বাস। সোমবার কাউন্সিলের বৈঠকে যোগও দেন অভীক। তার প্রতিবাদে সোমবার দুপুর থেকে পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিলের দফতরের সামনে অবস্থানে বসেছেন ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স’-এর প্রতিনিধিরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেন অভীক, বিরুপাক্ষ
অভীক, বিরূপাক্ষদের কাউন্সিলের বৈঠকে যোগ দেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা কেন প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা নিয়ে বার বার প্রশ্ন ওঠে অবস্থানস্থল থেকে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মেডিকেল কাউন্সিলের সামনে রাতভর অবস্থান
সল্টলেকে মেডিক্যাল কাউন্সিলের দপ্তরের বাইরে ত্রিপল টাঙিয়ে রাতভর অবস্থান করেছেন সিনিয়র ডাক্তারেরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেন এই বিক্ষোভ
বিক্ষুদ্ধ চিকিৎসকদের দাবি, কাউকে না জানিয়ে অভীক কাউন্সিলের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন সোমবার। মঙ্গলবারের বৈঠকে তিনি যোগ না দিলেও তিনি আবার ফিরে আসতে পারেন, এমনই আশঙ্কা চিকিৎসকদের।
চিকিৎসক আন্দোলনকারীদের গান ও আবৃত্তিতে মেতে উঠেছিল কাউন্সিল চত্বর।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
চিকিৎসকদের দাবি
বিক্ষুব্ধ চিকিৎসকদের দাবি অভীক দে এবং বিরুপাক্ষ বিশ্বসকে আরজি করের ক্রাইম সিনে দেখা গেছিল। ফলে তাদের বরখাস্ত করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে হবে। কেন তাদের ফিরিয়ে আনা হলো, তার জবাব দিতে হবে মেডিকেল কাউন্সিলকে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আদালতের রাস্তা
১০. মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসকেরা অবস্থান বিক্ষোভ তুললেও চলতি সপ্তাহেই তারা কলকাতা হাইকোর্টে এই বিষয়ে মামলা করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিক্ষোভ কর্মসূচি জারি থাকবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
8 ছবি1 | 8
আরজি কর-এ চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ব্যাপক আন্দোলন
গত ৯ অগাস্ট আরজি করে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ। সরকারি হাসপাতালে এই ঘটনা রাজ্যের মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তারপর সামনে আসতে থাকে হাসপাতালের বেনিয়ম, দুর্নীতি, অবিচার, অত্যাচারের একের পর এক কাহিনি। শুরু হয় জুনিয়র ডাক্তার ও সাধারণ মানুষের আন্দোলন। রাত দখলের ডাক দেয়া হয়। আর সেই আন্দোলনের মধ্যেই আরজি করে দুষ্কৃতীরা ঢুকে ভাঙচুর চালায়। অভিযোগ, সেটা ছিল প্রমাণ লোপের চেষ্টা।
তারপর আরজি করের ঘটনা নিয়ে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাদের সমর্থন করলেন সাধারণ মানুষ। তারাও নেমে এলেন রাস্তায়। মেয়েরা রাতদখল করলেন। সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লো কলকাতা থেকে জেলা শহরেও। কলকাতায় যে মানুষরা কখনো হয়ত আন্দোলনে, প্রকাশ্য প্রতিবাদে সামিল হননি, তারাও রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করলেন। দাবি জানালেন ন্যায়বিচারের। হাজার হাজার মানুষের প্রতিবাদ, ক্ষোভ,অসন্তোষ আছড়ে পড়লো রাজপথে। জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়ালেন সিনিয়র ডাক্তাররা। শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও সমর্থন করলেন আন্দোলনকারীদের। সুপ্রিম কোর্ট নিজে থেকে মামলার শুনানি শুরু করলো। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ও ন্যূনতম সুয়োগসুবিধা নিশ্চিত করতে কমিটি গঠন করা হলো। সিবিআই তদন্ত শুরু করলো।
তারপর? তুষের আগুনের মতো যে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল, তা একদিন হঠাতই শেষ হয়ে গেল। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি সম্বল করে আবার কাজে ফিরলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সংগঠিত রাজনীতির কাছে ওই প্রতিবাদ থেমে গেলো। ২০২৪-এ আরজি করের ঘটনা ও পরবর্তী আন্দোলন অন্তত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, নারীদের অবস্থা, নির্যাতনের বহর, দেখিয়ে দিয়েছে, সাধারণ মানুষের ধৈর্য়ের বাঁধও একসময় ভেঙে যায়। তারা তখন প্রতিবাদে সামিল হয়। হয়ত সে আন্দোলন ব্যর্থ হয়, কিন্তু তা আমাদের অনেককিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়।
মণিপুর এখনো জ্বলছে
শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৩ মে। মণিপুরে মেইতেই বনাম কুকিদের সংঘাত। এক বছর পর ২০২৪ সালের ২৪ মে সরকারি হিসাব হলো, ২২১ জন মারা গেছেন, এক হাজার জন আহত, ৩২ জন নিখোঁজ। ৬০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। চার হাজার ৭৬৮টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সহিংসতা থামেনি।
ডিসেম্বরের শেষে এসেও বোঝা যাচ্ছে না, কবে এই সহিংসতা থামবে। কী হবে সেই সমাধানসূত্র। মেইতেই এলাকায় একাধিক ত্রাণশিবিরে ঘরছাড়া মানুষ বসবাস করছেন। আবার কুকিদের এলাকাতেও আছে এরকম অসংখ্য ত্রাণশিবির। দুই এলাকাতেই ছড়িয়ে আছে পোড়া ঘরবাড়ি। একই দেশের একই রাজ্যের মানুষ লড়াই করে যাচ্ছেন একে অপরের বিরুদ্ধে। ভুল বলেছিলাম, ২০২৪ তো শুধু পরিবর্তনের বছর নয়। মণিপুরের পরিস্থিতির তো পরিবর্তন হয়নি। আশা করব, ২০২৫ মণিপুরে পরিবর্তন আনবে। শান্তি ফিরবে। বন্দুকের আওয়াজ নয়, সেখানে থাকবে সৌহার্দ্য়ের বাতাবরণ। যে পরিবর্তন আমরা ২০২৪-এ দেখতে পাইনি, তা যেন ২০২৫-এ পাই।
গরম, বৃষ্টি, বন্যা, ধস, বায়ুদূষণের বছর
তবে যে পরিবর্তনের বিপদ ভারতে প্রতিবছর বাড়ছে, তা হলো জলবায়ু পরিবর্তন। ২০২৪ আবার বুঝিয়ে দিয়েছে, অসচেতন মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কাজের ভার আর প্রকৃতি নিতে পারছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ফল ভয়ংকর হচ্ছে। ২০২৪ সাল-জুড়ে বিভিন্ন সময়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্য়া হয়েছে, ভয়াবহ ধসের কবলে পড়েছে একের পর এক এলাকা, জলের তলায় চলে গেছে চেন্নাই, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বেহাল হয়েছে জনজীবন, রাজস্থান ও দিল্লির কিছু জায়গায় তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে, আর বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে রেকর্ড করেছে দিল্লি।
জুন মাসে আসামে ভয়াবহ বন্যা হয়। ১০৯ জন মারা যান। প্রায় দেড় হাজার গ্রাম ও চার লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। ৪০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হন। ব্রক্ষ্মপুত্রের জলে ভেসে যায় কাজিরাঙ্গা ন্য়াশনাল পার্ক। ১০টি গণ্ডার-সহ দুইশ পশুর মৃত্যু হয়। ব্রক্ষ্মপুত্র-সহ ১৩টি নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে থাকে। আসাম ছাড়াও মণিপুর, সিকিম, অরুণাচলেও বন্যা হয়।
অগাস্টের শেষে ঘূর্ণিঝড় আসনা আছড়ে পড়ে গুজরাট, মধ্যপ্রদেশে। প্রবল বৃষ্টির জলে ভাসে কচ্ছ ও সৌরাষ্ট্র অঞ্চল। বন্য়ায় ৪৯ জন মারা যান। ১৭টা শহর, প্রায় সাত হাজার গ্রাম, চার হাজার ১৭৩ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্য়ার ফলে গুজরাটের ক্ষতি হয়েছিল ২৫০ কোটি টাকা।
গত বর্যায় ৫১বার ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘফাটা বৃষ্টিতে ভেসেছে হিমাচল। এর ফলে চকিত বন্য়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ধস নেমেছে। ৩১ জন মারা গেছেন। বিভিন্ন জায়গায় ধসের ফলে বিপুল ক্ষতি হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার ক্লাউডবার্স্ট ও ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।
ভারতে আগামী প্রজন্মের জলবায়ু ও নারীবান্ধব স্কুল
ভারতের রাজস্থান রাজ্যে রাজকুমারী রত্নাবতী বালিকা বিদ্যালয়ের অনন্য নির্মাণশৈলী, মরুর বুকেও বিদ্যালয়ের ভেতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে৷
ছবি: IDREES MOHAMMED/AFP
মরুভূমিতে ‘ইউএফও’
ঐতিহ্যবাহী নির্মাণ পদ্ধতি ও সমসাময়িক নকশার সংমিশ্রণের জন্য ভারতের থর মরুভূমিতে রাজকুমারী রত্নবতী বালিকা বিদ্যালয় একটি মরূদ্যানের মতো৷ এর শ্রেণিকক্ষগুলো একটি খোলা, উপবৃত্তাকার আঙ্গিনায় স্থাপন করা হয়েছে, যা দেখতে রোমান কলোসিয়াম বা একটি ইউএফওর মতো৷ সৌর বিদ্যুতের প্যানেলগুলো এই স্থানটিতে সবুজ শক্তি সরবরাহ করে৷
ছবি: IDREES MOHAMMED/AFP
শেখার প্রবল ইচ্ছা
বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত নারী শিক্ষার্থীদের জন্য শীতল তাপমাত্রা বেশ স্বস্তিদায়ক৷ শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনে এটি একটি বৈচিত্র্য নিয়ে আসে৷ আট বছর বয়সি খুশবু কুমারী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘স্কুলে যেতে ভালো লাগে’’৷ বাড়িতে তার পরিবার একটি ফ্যানও বহন করতে পারে না৷
ছবি: IDREES MOHAMMED/AFP
ব্যতিক্রম স্থাপত্য
দেয়ালের ছিদ্রগুলো দিয়ে বাতাস চলাচল করে৷ এতে ভেতরটা শীতল থাকে৷ এটি বিদ্যালয়টির অভ্যন্তরের তাপমাত্রা বাইরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ ঠাণ্ডা রাখে৷ রাজস্থানের জন্য এটি একটি বড় প্রাপ্তি৷ এখানে গ্রীষ্মের মাসগুলোতে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট)-ও ছাড়িয়ে যেতে পারে৷ বিদ্যালয়টির নকশা করেছিলেন মার্কিন স্থপতি ডায়ানা কেলগ৷
ছবি: IDREES MOHAMMED/AFP
বাবারা মেয়েদের জন্য নির্মাণ করেন
বিদ্যালয়টি নির্মাণ করেছিলেন স্থানীয় কর্মীরা যাদের মধ্যে অনেকেই সেখানে পড়া নারী শিক্ষার্থীদের বাবা৷ তাদের মধ্যে একজন, মনোহর লাল৷ স্থপতি কেলগ বলেন, ‘‘নির্মাণ শ্রমিকরা এখানকার পাথরের সাথে পরিচিত ছিলেন, তাই ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যগুলো সংযোজন করা সহজ ছিল’’৷
ছবি: IDREES MOHAMMED/AFP
সোনালি ইট
বিদ্যালয়টি নিকটবর্তী জয়সালমীর শহরের দ্বাদশ শতকের বিখ্যাত দুর্গের জন্য ব্যবহৃত একই ধরনের হলুদ বেলেপাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে৷ এ কারণেই শহরটিকে ‘গোল্ডেন সিটি’ নামকরণ করা হয়েছিল৷ দুর্গের মতো, তাপ এড়াতে বিদ্যালয়ের বাইরের দেয়ালে পুরু পাথর রয়েছে৷ আর্দ্রতা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে ভেতরকার দেয়ালগুলো চক দিয়ে সাদা করা হয়৷
ছবি: IDREES MOHAMMED/AFP
শিক্ষায় বিনিয়োগ
বিদ্যালয়টিতে ১৭০জন নারী শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পারেন৷ প্রকল্পটি আংশিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সি.আই.টি.টি.এ এডুকেশন ফাউন্ডেশনের সহায়তা পেয়েছে৷ যেখানে বর্তমানে কোনো টিউশন ফি নেই৷ পাশাপাশি স্কুলের পোশাক, উপকরণ, একটি বইয়ের ব্যাগ ও উষ্ণ খাবারও সরবরাহ করা হয়৷ বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছে রাজস্থানের বিখ্যাত রাজকুমারী রত্নবতীর নামে৷
ছবি: IDREES MOHAMMED/AFP
শক্তিশালী নারীর প্রতীক
নারীশিক্ষায় সমর্থন রাজস্থানের জন্য একটি বড় অর্জন৷ যেখানে তাদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সুবিধা কম৷ রাজ্যের প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার মাত্র ৫২ শতাংশ৷ স্কুলটির নকশায়ও নারীত্বের একটি ভূমিকা পালন রয়েছে৷ স্থপতি ডায়ানা কেলগ এএফপিকে বলেছেন, ডিম্বাকৃতি রূপটি ‘শক্তির নারী প্রতীক’ দ্বারা অনুপ্রাণিত৷
ছবি: IDREES MOHAMMED/AFP
7 ছবি1 | 7
জুলাই মাসে কেরালার ওয়েনাড়ে প্রবল বৃষ্টির পর একের পর এক ধস নামতে তাকে। কেরালার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর এই প্রাকৃতিক দুর্য়োগে ২৫৪ জন মারা যান, ৩৯৭ জন আহত হন, ১১৯ জন নিখোঁজ হন। নির্বিচারে জঙ্গল কাটা, বাড়ি বানানো ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে এই অবস্থা বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।
উত্তরপ্রদেশে জুলাই ও সেপ্টেম্বরে বন্যায় প্রচুর ক্ষতি হয়েছে, মানুষ মারা গেছেন। কয়েক মাস আগে অন্ধ্রের বিজয়ওয়াড়ায় বৃষ্টি ও বন্যার ফলে ৩৫জন মারা যান। দুই লাখ ৭০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
২০২৪ সালের এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা বলে দিচ্ছে, জয়বায়ু পরিবর্তনের বিপদ কতটা বাড়ছে। এটাও বলে দিচ্ছে, প্রয়োজনের তুলনায় আমরা এই বিপর্যয় রুখতে কিছুই করছি না। ন্যূনতম সচেতনতা পর্যন্ত নেই। ২০২৫-এর এই মানসিকতার পরিবর্তন হবে কি? কে জানে?
রেল দুর্ঘটনার বছর
২০২৪-এ ভারতে একের পর এক রেল দুর্ঘটনাহয়েছে। রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ভারতে ২৯টি রেল দুর্ঘটনা হয়েছে। ১৭জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন ৭১ জন। এই দুর্ঘটনার পিছনে আছে যান্ত্রিক গোলয়োগ, মানুষের ভুল ও অন্তর্ঘাতের মতো বিষয়গুলি।
এতগুলি রেল দুর্ঘটনা অন্তত একটা বিষয় মনে করিয়ে দিচ্ছে, রেল ব্যবস্থায় সবকিছু ঠিকঠাক চলছে না। দীর্ঘদিন ধরে সরকারের প্রবণতা হলো, রেল ব্যবস্থার সংস্কার না করে জনমোহিনী প্রকল্প হাতে নেয়া। একের পর এক ট্রেন চালানো। সিগন্যাল ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, পুরনো রেল লাইনের বদল, বিকল্প রেলপথ, দ্রুতগতির ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা না করে জোড়াতালি দিয়ে ট্রেন চালালে সমস্যার সমাধান হয় না। রেল হলো ভারতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। ২০২৫ সালে ভারতীয় রেলের হাল ফিরবে কি?
বিদায় ২০২৪
২০২৪ শেষ হচ্ছে। একটা বছর কিছু ভালো জিনিস নিয়ে আসে, কিছু খারাপও হয়। এটা এমন একটা বছর যখন বিশ্বে দুইটি যুদ্ধ চলছে। অনেক দেশে অস্থিরতা দেখা গেছে। তার প্রভাব ভারতের উপরেও পড়েছে। অর্থনীতির উপর চাপ বেড়েছে। জিনিসের দামও ভয়ংকরভাবে বেড়ে গেছে। তবে সেসব সামলেও দেশের গরিবদের কাছে বিনা পয়সায় রেশন পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। কিছু ক্ষেত্র চাপে থাকলেও তথ্যপ্রযুক্তি, পরিষেবা-সহ অনেক ক্ষেত্রে ভালো কাজ হচ্ছে। পরিবর্তনের বছরের শেষে কিছু উদ্বেগ থাকলেও আশাও আছে।