চাঁদে মানুষ নেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস৷ বিশেষ একটি যানে করে ২০২৪ সাল নাগাদ পর্যটকদের চন্দ্রপৃষ্ঠে নিতে শুরু করবে তাঁর প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন৷
বিজ্ঞাপন
মহাকাশ অভিযাত্রী বা গবেষক হিসেবে নয়, শুধু ঘোরার জন্যেই মানুষ চাঁদে যেতে পারবে৷ মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই এমন কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষ জেফ বেজোস৷ এজন্য অ্যামাজনের এই প্রতিষ্ঠাতা আগেই ‘ব্লু অরিজিন’ নামের একটি কোম্পানি খুলেছেন৷
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে এক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন জেফ বেজোস, যেই যানটিতে করে তিনি পর্যটকদের চাঁদে নামাতে চান তার একটি নমুনাও হাজির করেছেন সম্ভাব্য গ্রাহক, নাসার বিজ্ঞানী, গণমাধ্যমকর্মীসহ দর্শকদের সামনে, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘ব্লু মুন’৷ আকারে ছোটখাটো দুই তলা একটি বাড়ির সমান এটি, যা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, স্যাটেলাইটসহ চন্দ্রপৃষ্ঠে চলাচল করতে পারবে এমন সব যানও বহন করবে৷ সাথে থাকবে চার থেকে পাঁচ জন যাত্রী৷
যানটি দেখিয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে বেজোস বলেন, ‘‘এখন সময় হয়েছে চাঁদে ফিরে যাওয়ার এবং বসবাস শুরু করার৷’’
পুনর্ব্যবহারযোগ্য একটি রকেটে করে যানটি পাঠানো হতে পারে৷
চাঁদের পথে ইসরায়েল
চাঁদে মহাকাশ যান উৎক্ষেপণ করেছে ইসরায়েল৷ শুক্রবার ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরাল থেকে মহাকাশযানটি চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়৷ ছবিতে তারই কিছু দৃশ্য...
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Renna
দুটি রেকর্ড
ইতোমধ্যে চাঁদে রওনা হওয়া এই ইসরায়েলি স্পেসশিপ দুটো রেকর্ড করতে যাচ্ছে৷ প্রথমবারের মতো কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাঁদে রকেট পাঠাচ্ছে৷ দ্বিতীয় রেকর্ডটি হচ্ছে ইহুদি রাষ্ট্রের প্রথম চন্দ্রাভিযান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Renna
প্রতিষ্ঠানের নাম স্পেসআইএল
ইসরায়েলের বেসরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘স্পেসআইএল’৷ ২০১১ সালে স্পেসআইএল যাত্রা শুরু করে৷ চন্দ্রাভিযানে যাওয়ার জন্যে মহাকাশযান নির্মাণে তিন কোটি ডলার খরচ করছে প্রতিষ্ঠানটি৷
ছবি: imago stock&people
মিশন মুন অব ইসরায়েল
চাঁদে এ মহাকাশযান গবেষণার কাজে ব্যবহার হবে৷ তবে অন্য কিছু করার আগে ইসরায়েল চাঁদের মাটিতে নিজেদের একটি পতাকা স্থাপন করবে৷ মিশনটির নাম দেয়া হয়েছে ‘মুন অব ইসরায়েল’৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/I. B. Zion
বারোশিট
স্পেসআইএল রকেটটির নাম দিয়েছে ‘বারোশিট’৷ যেটি ‘মুন অব ইসরায়েল’ মিশন নিয়ে চাঁদে অবতরণ করবে৷ আর ‘বারোশিট’ শব্দটির অর্থ হিব্রু ভাষায় ‘শুরু’৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Denemark
গুগলের প্রতিযোগিতা
ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠান স্পেসআইএলের এ কাজের শুরু হয় গুগল লুনার এক্সপ্রাইজের অংশ হিসেবে৷ কম খরচে চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর পুরস্কার হিসেবে বিজ্ঞানীদের ৩০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা বলেছিল গুগল৷ এ প্রতিযোগিতায় যোগদান করে স্পেসআইএল৷ প্রতিযোগিতায় কেউ না জিতলেও স্পেসআইএল নিজ উদ্যোগে চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর চেষ্টায় অটল থাকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Schalit
মহাকাশযানের বিস্তারিত
মনুষ্যবিহীন এ মহাকাশযানের ওজন ৫৮৫ কিলোগ্রাম৷ এটির আকার হচ্ছে ব্যাসার্ধে ছয় ফুট এবং উচ্চতায় চার ফুট৷ চাঁদে যেতে এ মহাকাশযানটির এক হাজার পাউন্ড জ্বালানির প্রয়োজন হবে৷ স্পেসএক্স ফ্যালকন নাইন রকেটের সহযাত্রী হয়ে মহাকাশযানটি চাঁদে অবতরণ করবে৷
ছবি: Reuters/J. Skipper
চতুর্থ দেশ ইসরায়েল
এ নিয়ে ইসরায়েল চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের লক্ষ্যে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করলো৷ এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন চাঁদে রকেট পাঠিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মোট খরচ ৯৫০ লাখ ডলার
২০১১ সালে স্পেসআইএল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৯৫০ লাখ ডলার ব্যয় হয়েছে৷ এ প্রকল্পে সরকারি সহায়তা নেই৷ ইসরায়েলের বিলিওনেয়ার মরিস কান ব্যক্তি উদ্যোগে এর খরচ দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/T. Baur
8 ছবি1 | 8
মহাকাশ পর্যটন
ব্লু মুন প্রকল্পটিকে মূলত একটি বৃহৎ পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বেজোস৷ তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সেখানে কোনো অবকাঠামো না থাকায় এটির বাস্তবায়ন ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার৷
মহাকাশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা আর পর্যটনকেন্দ্রিক শিল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বিভিন্ন দেশ আর ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান৷
ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কও মহাকাশ পর্যটনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন৷ তাঁর প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স এরইমধ্যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট উদ্ভাবন করেছে, যার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি সফল অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে৷
ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্রেনসনও মহাকাশকেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে গ্যালাকটিক নামের একটি কোম্পানি চালু করেছেন৷ চলতি বছরই তাঁদের উদ্ভাবিত স্পেইস শিপটি মহাকাশে পাড়ি জমানোর কথা রয়েছে৷
বেজোস অবশ্য এমন এক সময় ব্লু অরিজিন নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা জানালেন যখন ট্রাম্প প্রশাসনও আগামী ৫ বছরের মধ্যে চাঁদে যাতায়তের জন্য অবাকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে৷ গত ২৬ মার্চ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ২০২৪ সাল নাগাদ চাঁদের কক্ষপথে একটি স্পেস প্লাটফর্ম গড়ে তোলার লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন৷ হোয়াইট হাউস চায় যে করেই হোক ২০২৪ সাল নাগাদ অ্যামেরিকার নভোচারীরা যাতে চাঁদের দক্ষিণ গোলার্ধে অবতরণ করতে পারে৷ উপগ্রহটি এই অংশটিতে বরফ অবস্থায় পানি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা থেকে রকেটের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানীর যোগান নিশ্চিত করা ও নভোচারীদের খাবার পানির যোগান দেয়া সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা৷
বেজোস ট্রাম্প প্রশাসনের এই পরিকল্পনা বিষয়ে বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে৷ আমরা এই সময়সীমাটি ধরার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারব, কেননা, তিন বছর আগেই আমরা এই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি৷’’
এফএস/এসিবি (রয়টার্স, এপি, এএফপি)
চাঁদে বরফ আছে
২০১৭ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, ভূপৃষ্ঠের মতো চাঁদের পৃষ্ঠেও পানি আছে৷ সম্প্রতি নাসার গবেষক দলও এই সম্ভাবনার খবরটি সমর্থন করেছে৷
ছবি: NASA
নাসার তথ্য
নাসার তোলা ছবিতে পরিষ্কার দেখা যায় যে, চাঁদে বরফ আছে৷ চাঁদ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ যন্ত্র এম-৩ সম্প্রতি তিনটি রাসায়নিক চিহ্ন বের করে নিশ্চিত করেছে বরফ আকারে পানি থাকার বিষয়টি৷
ছবি: picture alliance/dpa/Milliken lab/Brown University
মূল গবেষণা
ভারতীয় স্পেসক্রাফট চন্দ্রায়ন-১ আগের গবেষণাটি করেছিল৷ সে গবেষণা অনুযায়ী, পৃথিবীর পৃষ্ঠের মতোই চাঁদের পৃষ্ঠে পানি জমে আছে৷ এমনকি পৃথিবীর সমুদ্রে যে পরিমাণ পানি আছে, তার সমপরিমাণ পানি আছে সেখানেও৷
ছবি: NASA
ভুল ধারণা
একটা লম্বা সময় ধরে গবেষকদের ধারণা ছিল যে, চাঁদ হলো একটি অতিশুষ্ক উপগ্রহ৷ তখন গবেষকরা বলেন, বহুবছর আগে নব্য সৃষ্টি হওয়া পৃথিবীর সঙ্গে মঙ্গল গ্রহের সমান একটি গ্রহের সংঘর্ষের ফলে পৃথিবী থেকে ছিটকে গিয়ে চাঁদ তৈরি হয়৷ তখন এতটাই উত্তাপ ছিল যে, সব পানি শুকিয়ে গিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/NASA
কোত্থেকে এলো পানি
চাঁদে পানি এলো কীভাবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন গবেষকরা৷ তবে তাঁদের ধারণা, সংঘর্ষের পর সেই উত্তাপ থেকে কোনো-না-কোনোভাবে এই পানি বেঁচে গিয়েছিল, অথবা শীতল হবার আগে অন্য কোনো গ্রহাণু থেকে হয়তো পানি এসেছিল এখানে৷