২০৩৫ সাল থেকে ইউরোপের বাজারে আর কোনো ডিজেল ও পেট্রোলচালিত গাড়ি বিক্রি করা হবে না৷ পরিবেশের বিপর্যয় রোধে এমন একটি চুক্তি সাক্ষর করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহ এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্ট গাড়ি নির্মাতাদেরকে২০৩৫ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শতভাগ কমিয়ে আনছে এমন অবস্থা তৈরি করতে চায়৷ আর এর ফলে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে ইউরোপে জীবাশ্ম জ্বালানির গাড়ি বাজারে তাকবে না৷
পার্লামেন্টের প্রধান নেগোশিয়েটর ইয়ান হুইটেমা বলেন, গাড়িচালকদেরএটি একটি খুশির সংবাদ৷ এধরনের গাড়ির দাম কম হবে৷ আর এর ফলে সবাই গাড়ি কিনতে পারবে৷
ইইউর জলবায়ু রীতি বিষয়ক প্রধান ফ্রান্স টিমেনমানস বলেন, এ চুক্তিটি ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের একটি শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে যে, কার্বন নিঃসরণ বন্ধের দিকে এগোচ্ছে ইউরোপ৷
নতুন এই আইনে, ২০৩০ সাল থেকে নতুন গাড়ির বেলায়কার্বন নিঃসরণের বেলায়শতকরা ৫৫ ভাগ কমিয়ে আনতে চায়৷ যদিও বর্তমানে এটি ৩৭.৫ ভাগ৷ আর ২০৩৫ সাল নাগাদ তা শতভাগ হবে৷
তবে যে গাড়ি কার্বন নিরপেক্ষ জ্বালানি ব্যবহার করে চলে, ২০৩৫ সালের পর থেকে সেগুলো কীভাবে বিক্রি করা হবে সে বিষয়ে একটি খসড়া করবে ইইউ৷ উল্লেখ্য, আসছে নভেম্বরে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে এ বিষয়ে আরো দুটি চুক্তি সাক্ষর করতে চায় ব্রাসেলস৷
আরকেসি/আরআর
পৃথিবীকে বাঁচাতে কোন শহরের কী পরিকল্পনা?
আজ ধরিত্রী দিবস৷ কার্বন নির্গমন কমাতে গোটা বিশ্বে নানা উদ্যোগ চলছে৷ বিশ্বের বেশ কয়েকটি এলাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা সত্ত্বেও সিটি কাউন্সিল এবং মেয়ররা কার্বন নির্গমন কমানোর চেষ্টা করছেন৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Zoonar/picture alliance
‘সবুজ অর্থনীতি’
নিজেদের গ্রহকে নিজেদের রক্ষা করার লড়াই৷ তাই কোথাও বিনিয়োগ করতে হলে এই গ্রহই প্রকৃত জায়গা৷ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার একমাত্র চাবিকাঠি সবুজ অর্থনীতি৷ ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি সই হয়েছিল৷ বিশ্ব উষ্ণায়নের কথা মাথায় রেখে ওই চুক্তিতে স্থির হয়, অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যাতে বাড়তে না পারে, তার দিকে নজর রাখা হবে৷
ছবি: DW
তাপমাত্রা বাড়ছে
প্রাক-শিল্প স্তরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে, যা বাসযোগ্য গ্রহের গড় তাপমাত্রার দ্বিগুণ৷ একাধিক দেশের সরকার জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পকে ‘ক্লিন এনার্জি’-র তিন গুণ হারে ভরতুকি দিয়ে যাচ্ছে৷ জীবাশ্ম জ্বালানি লবির দীর্ঘকালীন প্রভাব থেকে শুরু করে ইউক্রেনের আক্রমণের ফলে জ্বালানি সংকটে সবের মাঝেও স্থানীয় স্তরে অনেকে কাজের চেষ্টা করে চলেছেন৷
ছবি: Zhi Zhiwen/dpa/picture alliance
জলবায়ু পরিবর্তন
গত বছর জলবায়ু সম্মেলনের সময় লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেন, ‘‘শহর এবং সরকারের মধ্যে পার্থক্য রাত এবং দিনের মতো৷’’ তবুও ইউরোপ এবং এশিয়ার শহরেও জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা চলছে৷
ছবি: David Klein/REUTERS
কোপেনহেগেন বিশ্বের প্রথম জলবায়ু নিরপেক্ষ শহর?
কোপেনহেগেন সরকার চায় ২০২৫ সালের মধ্যে শহরের অন্তত ৭৫ শতাংশ যাতায়াত হোক পায়ে হেঁটে, সাইকেলে কিংবা গণপরিবহণের মাধ্যমে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে শহরে অভ্যন্তরীণ জ্বালানি ইঞ্জিনের যানবাহন নিষিদ্ধ করা হবে৷
কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অন্যতম উৎস বিদ্যুৎ এবং তাপ৷ কোপেনহেগেন প্রশাসন কয়লা, তেল এবং গ্যাসকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি দিয়ে প্রতিস্থাপন করছে৷ আবাসনগুলিতে তৈরি হওয়া, উৎপাদনের ফলে তৈরি হওয়া ব্যাপক বর্জ্য কমাতে ‘স্মার্ট এনার্জি গ্রিড’ স্থাপন করেছে তারা৷
ছবি: Emil Helms/Ritzau Scanpix/AFP/Getty Images
কী ভাবছে ভারত?
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী দেশ হিসেবে, সেই পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ৷ মুম্বইয়ের মতো বিশাল জনসংখ্যার (দুই কোটি) শহরও এই পদক্ষেপে শামিল হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Design Pics/C. Caldicott
মুম্বই কী ভাবছে?
বৃষ্টি হলেই জল থৈ থৈ মুম্বই, তেমনই গরমের সময়ও ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা৷২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুনর্নবীকরণযোগ্য লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াবে মুম্বই৷ ২০২৩ সালের মধ্যে দুই হাজারের বেশি বৈদ্যুতিক বাস চলবে মুম্বইয়ে৷ শহরের ১০ শতাংশ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী বর্জ্য–বিশেষ করে বর্জ্য থেকে উৎপাদিত মিথেন৷ এর ফলে শহর জুড়ে বনায়ন শুরু হয়েছে মুম্বইয়ে৷
ছবি: Punit Paranjpe/AFP/Getty Images
প্যারিস : ১৫ মিনিটের শহর!
পায়ে হাঁটা এবং সাইকেল চালানোর উপযোগী শহর তৈরি করে কার্বন নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব৷ বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা যদি ১৫ মিনিটেই পাওয়া যায়? তাহলে তো গাড়ির প্রয়োজন হবে না৷ কার্বন নির্গমন কমবে৷ প্যারিসের মেয়র অ্যানে হিদালগো চান, ২০২৪ সালের মধ্যে শহরের প্রতিটি রাস্তায় সাইকেল লেন থাকুক৷ ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষতার লক্ষ্যপূরণ করা যাবে৷ এটাই হলো ১৫ মিনিটের শহরের পরিকল্পনা৷
ছবি: Marechal Aurore/ABACA/picture alliance
সিয়াটলও উদ্যোগী
শহর এবং আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ প্রায়ই জলবায়ু ইস্যুর বিষয়ে জাতীয় সরকারকে তুলোধোনা করে৷ স্ব-উন্নত শহুরে সমবায় আবাসনের ক্ষেত্রে ছোট ছোট আকারে বদল আনা সম্ভব৷ জার্মানির বিল্ডিং গ্রুপের ভাবনার উপর ভিত্তি করে সিয়াটলের লার্চ ল্যাব আর্কিটেকচার ফার্ম এই নিয়ে কাজ করছে৷ ‘লো এনার্জি’ আবাসন এবং ‘ইকোডিস্ট্রিক্ট’ তাদের লক্ষ্য৷
ছবি: Elaine Thompson/picture alliance/AP Photo
ফ্রাইবুর্গ: ইউরোপের সবুজতম শহর
জার্মানির ফওবান জেলার সবুজ শহর ফ্রাইবুর্গে ‘মডেল ইকো নেবারহুড’ তৈরি হয়েছে৷ এটি ‘জিরো এমিশন’ শহর৷ ২০৩০ সালের মধ্যে ৬০ শতাংশ নির্গমন কমাতে বদ্ধপরিকর স্থানীয় মানুষ এবং পৌরপ্রশাসন৷ এ শহরের পাঁচ হাজার ৬০০ জন বাসিন্দাদের কেউ গাড়ি ব্যবহার করেন না৷ রাস্তাগুলি সাইকেল এবং পথচারী-বান্ধব৷ ছাদে সৌরশক্তিসহ উজ্জ্বল রঙের ‘পাসিভহউস’ ভবন রয়েছে৷ বায়োগ্যাসচালিত শক্তি কারখানা বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করে৷