কয়লা-নির্ভরশীল দেশ পোল্যান্ডকে ছাড়াই ইউরোপে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনায় একমত হয়েছেন ইইউ নেতারা৷ নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাতে পোল্যান্ডকে আগামী সম্মেলন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ব্রাসেলসে ম্যারাথন আলোচনার পর শুক্রবার ইইউ নেতারা ওই পরিকল্পনায় মতৈক্যে পৌঁছাতে সক্ষম হন৷
ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট শার্লস মিশেল বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আমরা একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছি, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এ বিষয়ে ইউরোপের দৃঢ় সংকল্প বোঝাতে এ চুক্তি জরুরি ছিল৷''
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে ২০১৫ সালে প্যারিসে স্বাক্ষরিত জলবায়ু চুক্তির অন্যতম লক্ষ্যগুলোর একটি ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা৷ ইইউ নেতারা ইউরোপকে এই লক্ষ্যপূরণ করা প্রথম মহাদেশ হিসেবে দেখতে চায়৷
প্যারিস চুক্তিতে বিশ্বনেতারা বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পায়ন যুগের পর্যায়ের ওপরে সর্বোচ্চ দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে একমত হয়েছিলেন।
ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য ইইউর দেশগুলোকে অবশ্যই কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে হবে৷ এজন্য তাদের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করা ছাড়াও আরো কোন কোন উৎস থেকে কার্বন নিঃসরণ হয় তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷
পোল্যান্ডের জন্য এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অত্যন্ত কঠিন৷ কারণ দেশটির মোট জ্বালানির ৮০ শতংশের উৎস কয়লা৷ যে কারণে তারা শুরু থেকেই এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে এসেছে৷
পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন জার্মান তরুণরা
পরিবেশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন চলছে৷ পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এখনই পদক্ষেপ দরকার বলে মনে করেন জার্মান তরুণরা৷
ছবি: picture-alliance/Geisler-Fotopress/P. Graf
স্কুলে আন্দোলন
‘‘তোমরা যদি এভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাও তাহলে আমরা পড়াশুনা করে কী করব’’, এ প্রশ্নটিই সামনে এনেছেন জার্মান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তরুণরা৷ সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার এ বিষয়ে প্রতিবাদের কথা ভাবছেন তাঁরা৷
ছবি: DW/G. Rueter
ভাবার সময় নেই!
পরিবেশ বিষয়ে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমিয়ে আনার শর্ত পূরণে ভাবার আর সময় নেই৷ তা বাস্তবায়নের কাজে এখনি নেমে পড়তে হবে, বলছেন সবাই৷
ছবি: DW/G. Rueter
নির্বাচনেও প্রভাব তরুণদের
শুধু আন্দোলনেই সীমাবদ্ধ নেই এই তরুণদল৷২০১৯ সালের ইউরোপিয়ান কমিশনের নির্বাচনে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি তরুণদের শতকরা ৩৪ ভাগ পরিবেশবান্ধব রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: DW/G. Rueter
রাস্তায় আন্দোলন
তরুণদের বেশ কয়েটি সংগঠন রয়েছে জার্মানিতে, যেগুলো পরিবেশ সুরক্ষায় সক্রিয়৷ এর মধ্যে একটি হলো ‘এন্ড অব টিরেইন’৷ কয়েক বছর আগে কয়লা উত্তোলনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছিল সংগঠনটির হাজার হাজার তরুণ৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/J. Grosse
‘আমাদের ভবিষ্যৎ তোমাদের হাতে’
তরুণদের প্রথম লক্ষ্য হলো প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণের হার কমিয়ে আনতে সরকারকে প্রভাবিত করা৷ এ আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে তাঁদের বাবা, মা, স্কুল শিক্ষসহ অনেকেই৷ তাঁদের আরো দাবি হলো, দেশটির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে বন্ধ করা৷
ছবি: AFP/Getty Images/T. Schwarz
5 ছবি1 | 5
শুক্রবার এ নিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে বিতর্কের পর দেশটি শেষ পর্যন্ত ওই পরিকল্পনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়৷ পোল্যান্ড সরকারের যুক্তি, তাদের আরও সময় প্রয়োজন৷
ইইউ নেতারাও পোলান্ডকে আরও কিছুটা সময় দিতে চান৷ জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সাংবাদিকদের বলেন, পোল্যান্ডের হাতে ২০২০ সালের জুন পরবর্তী সম্মেলন পর্যন্ত সময় আছে৷ ওই সময়ের মধ্যে তারা লক্ষ্যপূরণের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে৷
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকেও পোল্যান্ডকে দলে টানতে ইইউ নেতারা কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন৷
তবে শুধু পোল্যান্ডই নয় চেক রিপাবলিক থেকেও ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়েছিল৷ পরে যখন বলা হয়, দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করতে পারবে, তখন চেক সরকার আপত্তি তুলে নেয়৷
বিজ্ঞানীরা অবশ্য প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পায়ন যুগের পর্যায়ের ওপরে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নাটকীয়ভাবে হ্রাস করতে হবে বলে সতর্ক করেছেন৷
২০১৮ সালে প্রকাশিত ইইউর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত দুই দশকে ইইউভূক্ত দেশগুলোতে কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমেছে৷ তারপরও প্রতিবছর তারা ৯ দশমিক ৬ শতাংশ হারে কার্বন নিঃসরণ করে৷
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে ভূমিকা রাখতে পারেন যেভাবে
লক্ষ্যটি খুবই সহজ৷ কার্বন ডাই অক্সাইড জলবায়ুর সবচেয়ে বড় শত্রু৷ আর গাড়ি, স্মার্টফোনের মতো কিছু জিনিস, যা থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদিত হয়, সেগুলোর ব্যবহার কম করলে অর্থ খরচ কমবে, জলবায়ুর জন্যও মঙ্গল বয়ে আনবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Chinatopix
এ বিষয়ে কথা বলা
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আপনার কোন ছোট পদক্ষেপ বড় প্রভাব ফেলতে পারে? এটা নিয়ে কথা বলুন পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে৷ আর এটা নিশ্চিত করুন যে, এ বিষয়ে তারা যাতে ভালো সিদ্ধান্ত নেয়৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷
ছবি: Gemeinde Saerbeck/U.Gunnka
নিজের বাড়িতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার
বাড়িতে বৈদ্যুতিক সেবা দেয়ার জন্য এমন কোম্পানিকে বেছে নিতে হবে যারা তাদের বিদ্যুত উৎপাদনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাতাস বা সৌরশক্তি ব্যবহার করে এবং যাতে তারা ‘গ্রিন ই এনার্জি’র অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়৷ যদি এটা সম্ভব না হয়, তাহলে নিজের বিদ্যুৎ বিলের দিকে নজর রাখুন৷ অনেক কোম্পানি বিলে লিখে দেয়, তাদের বিদ্যুত উৎপাদনে কতটা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Chinatopix
আবহাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা
ঠান্ডার সময় বাড়ির তাপমাত্রা বাড়ানো বা গরমের সময় শীতল করতে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়৷ তাই নিজের আবাসস্থলকে ‘এনার্জি এফিসিয়েন্ট’ বা জ্বালানি সাশ্রয়ী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, যাতে ঘরে বাতাস চলাচল এবং বাতাস বন্ধ রেখে উত্তাপ বাড়ানোর সহজ ব্যবস্থা থাকে৷
ছবি: Imago/Westend61
জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি
১৯৮৭ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের যন্ত্রপাতির প্রচলন হয়৷ এ ধরনের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে এ পর্যন্ত সেখানকার বাতাসকে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড মুক্ত রাখা গেছে, যা বছরে ৪৪ কোটি গাড়ি থেকে নিঃসরণ হয়৷ জ্বালানি সাশ্রয়ী খুব কম খরচে কার্বন নিঃসরণ রোধের সহজ উপায়৷ তাই রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন এবং এ ধরনের যন্ত্রপাতি কেনার সময় ‘এনার্জি স্টার’ লেবেল দেখে কেনা উচিত৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/C. Ohde
পানি খরচ কমানো
পানির অপচয় রোধ করেও কার্বন দূষণ কমানো যায়, কেননা, পানি পাম্প করতে, গরম করতে বা ঠাণ্ডা করতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হয়৷ তাই গোসল করার সময় কম পানি খরচ করুন৷ প্রয়োজন না হলে দাঁত মাজার সময় পানির কল বন্ধ রাখুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
যেসব খাবার কিনছেন পুরোটা খান, মাংসের উপর চাপ কমান
যুক্তরাষ্ট্রে ১০ ভাগ জ্বালানি খরচ হয় খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেটজাত করা এবং সরবরাহে৷ তাই খাবার কম অপচয় করলে জ্বালানি বা শক্তি কম খরচ হয়৷ গবাদি পশু পালনে প্রচুর জ্বালানি অপচয় হয়৷ তাই মাংস খাওয়া কমালে বিরাট পরিবর্তন আসতে বাধ্য৷
ছবি: Colourbox
ভালো বাল্ব কিনুন
অন্য সব বাল্বের চেয়ে এলইডি বাল্ব শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত কম বিদ্যুৎ খরচ করে৷ এসব বাল্ব দীর্ঘস্থায়ী এবং খরচও কম৷ ১০ ওয়াটের এলইডি বাল্ব, সাধারণ ৬০ ওয়াটের বাল্বের কাজ দেয় এবং এতে অনেক কম খরচ হয়৷
ছবি: AP
প্লাগ খুলে রাখুন
বাড়ির সব যন্ত্রপাতি যোগ করলে হয়ত দেখা যাবে ৬৫টি আলাদা যন্ত্রপাতি আছে যেগুলো বিদ্যুতের সাহায্যে চলে৷ তাই যেসব যন্ত্রপাতি পুরোপুরি চার্জ হয়ে গেছে, সেগুলো চার্জে দিয়ে না রাখা, বা কোনো টাইমার সেট করা যাতে নির্দিষ্ট সময় পর চার্জিং বন্ধ হয়ে যায়৷ এছাড়া কম্পিউটার বা ট্যাব, ফোনের মনিটর কম পাওয়ার মোডে দিলেও জ্বালানির কম অপচয় হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Pape
জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন ব্যবহার
গ্যাস-স্মার্ট গাড়ি, যেমন হাইব্রিড বা ইলেকট্রিক যান চালালে জ্বালানি এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়৷
ছবি: picture-alliance/CTK Photo/P. Mlch
বিমান, ট্রেন এবং অটোমোবাইলের ক্ষেত্রে আর একবার ভাবুন
বড় শহরগুলোতে যতটা পারেন হাঁটুন বা গণ পরিবহন ব্যবহার করুন৷ এর ফলে ব্যয়ও কমবে, জ্বালানির অপচয়ও কম হবে৷ সবচেয়ে বড় কথা এর ফলে বায়ু দূষণ অনেক কমবে৷ এছাড়া অনেক মানুষ যদি বিমানে চড়া কমিয়ে দেয়, তাহলে বড় ধরনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যাবে৷ কেননা, আকাশ পথে চলাচল জলবায়ু দূষণের অন্যতম বড় মাধ্যম৷ বিমানের বিকল্প হিসেবে যদি ট্রেনে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে, সেটাই বেছে নিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Balzarini
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধান
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ এরইমধ্যে লবণ সহিষ্ণু ধান নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ মাটি লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় সূর্যমুখীর ফুলের আবাদও বেড়েছে৷ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট৷ প্রচলিত ধানের বদলে এ ধরনের ধান চাষ যত বাড়বে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ততই সহজ হবে৷