1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘২০ কোটি টাকা আমরা খেয়ে ফেলিনি’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩০ জুন ২০২০

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত সেখানকার চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের দুই মাসে ব্যয় এক লাখ টাকা৷ এটা থাকা-খাওয়া এবং যানবাহনের খরচ৷

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই মাসে ব্যয় এক লাখ টাকা৷
ছবি: DW/H. Ur Radhid

তারা দুই মাসের এই খরচ মেটাতে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে৷ কিন্তু এই খরচ নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন৷ বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুধু ঢাকা মেডিকেল নয়, এর সাথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও জড়িত৷ প্রশ্ন উঠেছে মন্ত্রণালয় একে ‘ত্রুটিপূর্ণ' বলেও অনুমমোদন দিলো কীভাবে?

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে মে-জুন মাসের জন্য এই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ও এই বরাদ্দ পাশ করেছে৷ আর তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় এখন হই-চই শুরু হয়েছে৷ ঢাকা মেডিকেল এর ভবন-২ ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিউটের করোনা ইউনিটের জন্য চিকিৎসক , স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্যান্য কর্মচারীদের জন্য এই খরচ ধরা হয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার জাতীয় সংসদে এই খরচ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এক মাসে ২০ কোটি টাকা খাবারের বিল, এটি অস্বাভাবিকই মনে হচ্ছে৷ এটি আমরা পরীক্ষা করে দেখছি৷ এত অস্বাভাবিক কেন হবে? যদি কোনো অনিয়ম হয়, অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেবো৷’’

এ কে এম নাসিরউদ্দিন

This browser does not support the audio element.

অবশ্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরউদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘এই টাকা আমরা বরাদ্দ পেয়েছি দুই মাসের খাবার, যানবাহন, হোটেল ভাড়ার জন্য৷ এখনো খরচ হয়নি৷ আমরা বিল পেলে সেই অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করব৷ আমরা ২০ কোটি টাকা খেয়ে ফেলেছি বলে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে৷ বিল কম হলে টাকা সরকারি কোষাগারে থেকে যাবে৷’’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট দেখেই পাশ করেছে৷ কোনো অসঙ্গতি থাকলে তারা তো অনুমোদন দিত না বলে দাবী করেন পরিচালক৷

ঢাকা মেডিকেলের তথ্য অনুযায়ী সেখানে এখন ৭০০ করোনা রোগী আছেন৷ করোনা চিকিৎসায় এখন তাদের মোট দুই হাজার চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, অন্যান্য কর্মচারী ও আনসার কাজ করেন৷ তাদের প্রত্যেকের দিনে দুই বেলার খাবার ও সকালের নাস্তার খরচ ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা৷ তাদের থাকার জন্য ৩০টি হোটেল ভাড়া করা হয়েছে ৷ যার বেড ভাড়া  ৫০০ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা৷ তাদের আনা নেয়ার জন্য  যানবাহন ভাড়া করা হয়েছে ৷ এছাড়া চারটি ডাবল ডেকার বাসও ভাড়া করা হয়েছে৷ এইসব খরচ বাবদ ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে৷ যে ৩০টি হোটেল ভাড়া করা হয়েছে তারমধ্যে রিজেন্সি ও লা-ভিঞ্চির মত হোটেলও আছে৷

হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সাত দিন দায়িত্ব পালনের পর ১৪ দিন কোয়ারান্টিনে থাকেন৷সুস্থ থাকলে পরের সাত দিন তারা বাসায় থাকেন৷ যারা আক্রান্ত হন তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়৷ ২১ দিনের থাকা খাওয়া এবং যানবাহন সবই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় হয়৷ এই সবকিছুর খরচই এর মধ্যে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷

পরিচালক বলেন,‘‘আমাদের মাসে ৫০ লাখ টাকা যায় যনবাহনে, হোটেল ভাড়া আছে৷ খাবার খরচ আছে৷ পরিচ্ছন্নতার খরচ আছে৷ আমরা রেলওয়ে হাসাপাতালের কোভিড ইউনিটও চালাই৷ ২০ কোটি টাকার মধ্যে এক কোটি টাকা ওই হাসপাতালের জন্য৷ আমরা যে ব্যয় করেছি তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী করেছি৷’’

ঢাকা মেডিকেলে কোভিড চিকিৎসার শুরুতে এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়৷ এর বাইরে আর কোনো টাকা এখনো খরচ করা হয়নি বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করে৷ এখন বিল তৈর হচ্ছে৷ নতুন ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ থেকে সেই বিল পরিশোধ হবে৷ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিরউদ্দিন বলেন,‘‘এটা অংকের ব্যাপার৷ যোগ, বিয়োগ , ভাগ করলেই বোঝা যাবে৷ রাখঢাকের কিছু নাই৷’’

ড. ইফতেখারুজ্জামান

This browser does not support the audio element.

তার কথা অনুযায়ী ২০ কোটি টাকাকে ২০০০ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে ভাগ করলে জনপ্রতি দুই মাসে খরচ হয় এক লাখ টাকা৷ আর মাসে ৫০ হাজার টাকা৷ প্রতিদিন গড়ে মাথাপিছু খরচ এক হাজার ৬৬৬ টাকা৷
এনিয়ে কথা বলার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে ফোন ও এসএমএস দিয়েও পাওয়া যায়নি৷ আর স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদও ফোন ধরেননি৷

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই যখন এই খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তখন এটা যে অগ্রহণযোগ্য তা বোঝাই যায়৷

এখানে বাজেট প্রাক্কলন, অনুমোদনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েক দফা অনিয়ম হয়েছে৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই বাজেটকে ত্রটিপূর্ণ বলেও কীভাবে অনুমোদন দিলো, অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্দ দিলো, সেটাই বড় প্রশ্ন৷
তিনি বলেন,‘‘ সরকার যে কোভিড মোকাবেলায় ফ্রন্ট লাইনার চিকিৎসকদের সুরক্ষা দিতে উদ্যোগ নিয়েছে সেটা অপব্যবহার করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণির কর্মকর্তা দুর্নীতি করছে৷ এভাবে বরাদ্দ নয়, প্রকৃত ব্যয়ের বিল শোধ করলে দুর্নীতি বন্ধ হবে৷ দুদকের এটা তদন্ত করা উচিত৷’’

তবে সংসদে মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়ার বিষয় নিয়ে যে কথা হয়েছে আমি খোঁজ নিয়েছি৷ গত রাতে আমি এটা দেখেছি৷ ৫০টি হোটেল ভাড়া হয়েছে৷ সেখানে তিন হাজার ৭’শ মানুষ একমাস থেকেছেন৷ প্রত্যেকটি রুমের ভাড়া ১১০০ টাকা৷ খাওয়ার খরচ যেটা বলা হয়েছে তা টোট্যালি রং৷ সেখানে দিনের তিনটি মিলের জন্য ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে৷’’ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ