একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ৷ রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কের শেষ দিনে এই আবেদন জানানো হয়৷
বিজ্ঞাপন
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন নিহত এবং তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন৷ ঐ ঘটনায় হত্যাসহ দু'টি মামলা হয়৷ পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে বিশেষ এজলাসে মামলা দু'টির বিচার চলছে৷ মামলা দু'টি হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে৷
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ওই হামলার উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা ও আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করা৷ হামলার আগে ঢাকায় ১০টি বৈঠক হয়৷ ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠকগুলো তারেক রহমান ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মুজাহিদ, আব্দুস সালাম পিন্টু, হারিস চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন৷ টাকা এবং গ্রেনেড আসে পাকিস্তান থেকে৷ পকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিন-এর আব্দুল মজিদ বাট এই কাজে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল৷ বাংলাদেশে হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ-এর সদস্যরা৷''
‘আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে তাদের অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি’
তিনি বলেন, ‘‘এছাড়া সেই সময়ে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের কয়েকজন এই ষড়যন্ত্রে অংশ নেন৷ তারা মামলার আলামত নষ্ট, মামলা না নেয়া এবং হামলার গেয়েন্দা তথ্য থাকার পরও শেখ হাসনার নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ এমনকি মামলাটির তদন্ত তারা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল৷''
পুলিশ নিজে বাদী হয়ে মামলা করে এবং জজ মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে সাজানো জবানবন্দি দিতে বাধ্য করার মাধ্যমে মামলাটি ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করে৷ ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলাটির নতুন করে তদন্ত শুরু হলে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ পায়৷ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ষড়ন্ত্রকারী হিসেবে আরো অনেকের নাম আসে৷ মামলায় মোট আসামি হয় ৪৯ জন৷
অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘‘আমরা আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে তাদের অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি৷ তাই ৪৯ জন আসামিরই সর্বোচ্চ শাস্তি, অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছি৷''
‘রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে এই মামলা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে’
অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদিন মেসবাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৪৯ জন আসামির সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ এক নয়৷ তাছাড়া ৫১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জন সাক্ষীকে রাষ্টপক্ষ আদালতে হাজির করতে পেরেছে৷ এমনি এই মামলার প্রধান ‘ভিকটিম' তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তারা সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির করতে পারেনি৷''
তিনি দাবি করেন, ‘‘প্রথমে এই মামলার বিচার শুরুর পর ৬১ জনের সাক্ষী নেয়া হয়৷ তারপর নতুন করে আবারো মামলার তদন্ত শুরু করে মামলাটিকেই ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে৷ তদন্তই ভিন্ন খাতে নেয়া হয়েছে৷ আমি মনে করি, রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে এই মামলা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে৷''
আদালত সূত্র জানায়, পলাতক আসামিদের পক্ষের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষ হলেই এই মামলার রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করা হবে৷
রাষ্ট্রপক্ষের দাবিকে কতটা যুক্তিযুক্ত মনে করেন আপনি? মন্তব্য লিখুন নিচের ঘরে৷
জার্মানিতে আলোচিত যত ‘জঙ্গিবিরোধী’ মামলা
এ পর্যন্ত বেশ কিছু উগ্র ইসলামপন্থি বা জঙ্গিদের হামলা এবং হামলার চেষ্টা হয়েছে জার্মানিতে৷ কয়েকদিন আগে সর্বোচ্চ শাস্তিও হয়েছে এক ব্যক্তির৷ ছবিঘরে থাকছে জার্মানিতে আলোচিত কিছু ‘জঙ্গিবিরোধী’ মামলার কথা৷
ছবি: AP
বন শহরে বোমা বিস্ফোরণের ব্যর্থ চেষ্টা
২০১২ সালে বন শহরের কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনে তোলা ছবি এটি৷ ছবির ওই নীল ব্যাগে বোমা ছিল৷ এক ডানপন্থি রাজনীতিবিদকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ বোমা রাখা হয়েছিল বলে পুলিশের সন্দেহ৷ হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি এক ব্যাক্তির আজীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে ড্যুসেলডর্ফের আদালত৷ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে আরো তিনজনের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরের বাস স্টপে হামলা
জার্মানিতে প্রথম ‘উগ্র ইসলামপন্থির’ হামলাটি হয়েছিল ২০১১ সালের মার্চে৷ সেবার ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরের বাস স্টপে দুই মার্কিনিকে গুলি করে হত্যা করেছিল আরিদ উকা নামের এক ব্যক্তি৷ নিহত দুই মার্কিন নাগরিকের কয়েক দিনের মধ্যেই আফগানিস্তানে যাওয়ার কথা৷ জানা যায়, আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে গুলি করে দু’জন নিরপরাধ মার্কিনিকে হত্যা করে আরিদ৷ কসভোতে জন্ম নেওয়া আরিদেরও আজীবন কারাদণ্ড হয়েছে৷
ছবি: AP
সাওয়ারল্যান্ড সেল
‘সাওয়ারল্যান্ড সেল’ হচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে গড়ে ওঠা ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ ইউনিয়ন বা আইপিইউ-এর জার্মান শাখা৷ ১০ বছর আগে এই সংগঠনের হয়েই যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল চার জার্মান এবং এক তুর্কি বংশোদ্ভূত তরুণ৷ ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে পাঁচজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১০ সালে প্রত্যেকের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে৷
ছবি: AP
নকল পুলিশ
২০১৪ সালে ভুপার্টাল শহরে কমলা রঙের সিকিউরিটি ভেস্ট পরা একদল লোক রাস্তায় নেমে আসে৷ তাদের পোশাকে লেখা ছিল ‘শরিয়া পুলিশ’৷ লোকগুলো বিভিন্ন মানুষকে বার এবং ক্লাব বর্জন করে ইসলামি আইন মেনে চলার পরামর্শ দিতে থাকে৷ ওই লোকগুলোর নেতা হিসেবে কাজ করেছিলেন স্ভেন লাউ নামের এক সালাফিস্ট মুসলমান৷ পরে আইএস-এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ তার বিরুদ্ধে মামলা এখন বিচারাধীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bildfunk/M. Becker
বড় বড় কথা বলা সেই আইএস জঙ্গি
২০১৩ সালের অক্টোবরে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এ যোগ দিতে ডিন্সলাকেনের সালাফিস্ট মুসলমান নিলস ডি. সিরিয়ায় যায়৷ এক বছর পর আবার ফিরে আসে জার্মানিতে৷ ফিরে এসে সিরিয়ায় সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে জানায় সগর্বে৷ তারপর গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল
২০১৬ সালের জুলাই মাসে মামলার চূড়ান্ত শুনানির দিন হ্যারি এস. আদালতে বলে ‘‘সিরিয়ায় যাওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল৷’’ ব্রেমেনে খ্রিষ্টান থেকে মুসলমান হওয়া তরুণটি তার এক বছর আগেই সিরিয়ায় গিয়ে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর সঙ্গে তিন মাস কাটিয়ে এসেছে৷ সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দেয়ার অপরাধে তিন বছরের জেল হয়েছে তার৷