কলকাতায় দু'দিনের বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি স্বয়ং জানিয়ে দিলেন যে, এই সম্মেলন ‘সুপার, সুপার, সুপার সাকসেস'!
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলন ‘ডেস্টিনেশন বেঙ্গল' প্রথমদিনেই ৩০ হাজার কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব পেয়েছিল৷ দ্বিতীয় দিন, সম্মেলনের সূচনা পর্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করলেন, ২ লক্ষ ৩৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকার লগ্নি-প্রতিশ্রতি এসেছে, বা সমঝোতাপত্র, অর্থাৎ ‘মেমোরান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং', বা এমওইউ সই হয়েছে৷ যদিও এটা সবারই জানা, যে লগ্নির প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবিক লগ্নি এক নয়৷ এমনকি এমওইউ সই হয়ে যাওয়ার পরও বহু লগ্নিকার শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যান৷ এই বাংলার ক্ষেত্রেই তেমন ঘটনা বার বার ঘটেছে৷ সেটা মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী জানালেন যে, গত দু'বছরের বাণিজ্য সম্মেলনে মোট ৪ লক্ষ ৯৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি এসেছিল৷ আর তার মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে ৪০ শতাংশ৷ মমতা বলেন, সর্বভারতীয় নিরিখে ৪০ শতাংশ নেহাত খারাপ নয়৷ কিছু কিছু রাজ্যে তো প্রতিশ্রুতিই সার, কাজের কাজ কিছু হয় না! এই কটাক্ষ ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাটের দিকে, যেখানে প্রচারের প্রাবল্য সত্ত্বেও বিনিয়োগ আসছে নাকি কম!
ডয়চে ভেলের মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
04:20
বাণিজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের শুরু করিয়ে দিয়েই মুখ্যমন্ত্রী এদিন রওনা হয়ে যান উত্তরবঙ্গ সফরে৷ সম্মেলনের ভার দিয়ে যান রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের হাতে৷ তবে তার আগে মমতা ধন্যবাদ জানান সম্মেলনে উপস্থিত ২৯টি দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের৷ বলেন, এঁরা আসায় বাংলার জোর বাড়ল৷ প্রতিবেশী চীন বাংলায় বিনিয়োগ করতে রাজি হয়েছে৷ উৎসাহ দেখিয়েছে জাপান, রাশিয়া, নরওয়ে, ইটালি, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি৷ দৃশ্যতই খুশি এবং উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এই শিল্প সম্মেলন সুপার, সুপার, সুপার সাকসেস৷ এরপর সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলা৷ দেশি-বিদেশি শিল্পপতিদের উদ্দেশ্যে মমতার অভয়বাণী — নির্দ্বিধায়, নিশ্চিন্তে বাংলায় লগ্নি করুন৷ কোনো সমস্যা হলে সরকার আছে, ২৪ ঘণ্টায় সমাধান হয়ে যাবে৷
তিলোত্তমা কলকাতার শহুরে কথকতা
কলকাতা শহর যে কোনো আলোকচিত্রীর জন্য এক রত্নখনি৷ তার দৈনন্দিন জীবনেও লুকিয়ে থাকে হাজার মজা, শুধু খুঁজে নিতে হয়৷ শহরটারও একটা মেজাজের আন্দাজ তার থেকে পাওয়া যায় বৈকি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
অচল যান
পুরনো জিনিসের দোকানে লাইন দিয়ে রাখা অচল সাইকেল৷ তাদের আর কোথাও যাওয়ার নেই, কিচ্ছু করার নেই৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ক্লান্ত পা
গাড়িতে মাল বোঝাই আর খালাসের কাজ করেন যেসব মজুর, তাঁরা বিশ্রাম নেওয়ার সময় পান কই! যাতায়াতের পথেই বিশ্রাম দেন ক্লান্ত পা-কে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
গভীর জলের মাছ
অতিকায় সব মাছ৷ তারা যতই গভীর জলের হোক, ঠিক ধরা পড়তে হয় জেলেদের হাতে৷ তার পর সটান শহরে, মাছের বাজারে, বঁটির সামনে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
‘সড়কছাপ’ স্টাইল
সবাই কি আর চুল কাটানোর জন্যে সেলুনে যেতে পারে! তাদের জন্যে আছে ফুটপাথের নাপিত৷ চটপট বাটিছাঁট৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
দ্বিখণ্ডিত
আসলে পোশাকের দোকানের ম্যানিকিন, গাড়িতে চড়ে এসেছিল নতুন রঙের পোঁচ গায়ে মাখতে৷ ফিরে যাচ্ছে দোকানের শোকেসে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
কফি হাউস
কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস৷ সারাদিনই ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড়ে সরগরম৷ কিন্তু অনেকেই আসেন দু’দণ্ড শান্তি পেতে৷ সে বনলতা সেনেরা থাকুক, বা না থাকুক৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
অন্য আড্ডা
হলোই বা বহুজাতিক ফাস্ট ফুড সংস্থার ম্যাসকট, তাকেও আড্ডায় সামিল করা বারণ নাকি! আসলে শহরে কোথাও বসে আড্ডা মারার জায়গা নেহাতই কম৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
মাটির কেল্লা
দেখে মনে হতে পারে আদিবাসীদের কোনো স্থাপত্য৷ আসলে উঁচু করে সাজিয়ে রাখা মাটির ভাঁড়, ফুটপাথের চায়ের দোকানে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
সবটাই সার্কাস
রাস্তার সার্কাস৷ খেলা দেখায় মাদারিওয়ালারা৷ আসলে এই নগরজীবন, পুরোটাই তো এক সার্কাস৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
9 ছবি1 | 9
মুখ্যমন্ত্রীর পর অর্থমন্ত্রী সম্মেলন পরিচালনার ভার নিয়ে ওই ২,৩৫,২৯০ কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাবের বিস্তারিত হিসেব দেন৷ এর মধ্যে সবথেকে বেশি, ৬১,৭৬৫.৭ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব এসেছে প্রত্যক্ষ উৎপাদন এবং পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে৷ তথ্য-প্রযুক্তি ও টেলিকম খাতে এসেছে ১৮,৫৪০.৭ কোটির প্রস্তাব৷ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতে মিলেছে ১০,৬৪৯.৩৯ কোটি টাকা লগ্নির প্রতিশ্রুতি৷ এছাড়া শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, পর্যটন ও হোটেল শিল্প, স্বাস্থ্য পরিষেবা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখা গেছে৷
অর্থমন্ত্রী এ দিনই জানিয়ে দেন, আগামী বছর ১৬ এবং ১৭ জানুয়ারি বাণিজ্য সম্মেলন হবে৷ রাজারহাটে নতুন কনভেনশন সেন্টার তৈরি হচ্ছে৷ তার কাজ সময়মতো শেষ হয়ে গেলে ওখানেই হবে সম্মেলন, যেখানে আনুমানিক ৩০০০ প্রতিনিধি যোগ দেবেন৷ আর তার আগে, ২৬ ও ২৭ নভেম্বর এশীয় বাণিজ্য সম্মেলন হবে কলকাতায়, যে সম্মেলন গতবার হল ব্যাংককে৷ ৭৫টি দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন সেই সম্মেলনে৷ কলকাতায় এই মাপের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের গুরুত্বই আলাদা, বলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন তিনি৷ বাংলায় শিল্পায়নের জন্য একটি ‘কোর কমিটি' তৈরি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, যে কমিটির চেয়ারম্যান হলেন রাজ্যের প্রথম সারির শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা৷ নতুন শিল্প-প্রস্তাব সরাসরি তাঁকেই মেসেজ করে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে৷ সম্ভবত সরকারি দীর্ঘসূত্রিতা এড়িয়ে শিল্পায়নে আরও গতি আনতেই এই নতুন ব্যবস্থা৷
মহাকরণের মহিমা উদ্ধার
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় শহর হিসেবে গড়ে উঠেছিল কলকাতা৷ ব্রিটিশ স্থাপত্যের একাধিক নিদর্শন আছে এই শহরে, রাইটার্স বিল্ডিং বা মহাকরণ তার অন্যতম৷ সম্প্রতি সেই ইমারত সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে৷ হচ্ছে ঐতিহ্যের পুনর্নির্মাণও৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ঐতিহ্যের স্মারক
কলকাতা শহরের ব্রিটিশ এলাকার সবথেকে ঐতিহ্যপূর্ণ এলাকা হলো ডালহাউসি চত্বর৷ সেই এলাকার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ইমারত রাইটার্স বিল্ডিং বা মহাকরণ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
গ্রেকো-রোমান স্থাপত্য
গ্রিক ও রোমান স্থাপত্যরীতিতে তৈরি অতিকায় এই মহাকরণের বাইরের চেহারা বেশ সম্ভ্রম জাগানো, কিন্তু ঐতিহাসিক এই স্মারক ক্ষয়ে যাচ্ছিল ভেতর থেকে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
আয়তন বৃদ্ধি
দীর্ঘ সময় মহাকরণ প্রশাসনিক ক্ষমতার সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে৷ বহু মন্ত্রক, সচিবালয় এবং বিভাগ ও তার কর্মীদের জায়গা করে দিতে বাড়িটিতে একাধিক অংশ বিভিন্ন সময়ে সংযোজিত হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
অপরিকল্পিত সংযোজন
কিন্তু মহাকরণের সব সংযোজনই মূল স্থাপত্যরীতির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ৷ প্রাচীন কাঠামোর ওপর চাপও ফেলছিল সেই অপরিকল্পিত বৃদ্ধি৷ নতুন সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, বর্ধিত অংশগুলো ভেঙে ফেলার৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত
শুরু হয়েছে নতুন অংশ ভেঙে ঐতিহাসিক এই ইমারতকে তার পুরনো চেহারা এবং ঐতিহ্য ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ৷ মহাকরণের স্থাপত্যের পুরনো নকশা অনুসারে এই সংস্কার চলছে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বিরাট কর্মযজ্ঞ
এখানে ছিল মহাকরণের ই ব্লক৷ এখন ধ্বংসস্তূপ৷ সব পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর এখানে হবে বাগান, ঠিক যেমনটা ছিল ১৮ শতকে তৈরি এই ইমারতের মূল নকশায়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
নিরাপদ হাতে
সরকারি পূর্ত দপ্তর আর শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বিশেষজ্ঞ স্থপতিরা মিলে এই সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছেন৷ একটাই উদ্দেশ্য, মহাকরণকে তার পুরনো গরিমা ফিরিয়ে দেওয়া৷