বৃহস্পতিবার ছিল রানা প্লাজা ধসের বর্ষপূর্তি৷ স্মরণকালের ভয়াবহ এই দুর্ঘটনাটি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, যেমন ফেসবুক এবং ব্লগে অনেকেই অনেক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷ এখানে থাকছে তারই কিছু অংশ৷
বিজ্ঞাপন
সামহয়্যার ইন ব্লগে মেহরাব হাসান লিখেছেন, ‘‘এতদিন ভুলে ছিলাম, ভুলে থাকতে হয়, পরিবেশ পরিস্থিতি ভুলে রাখতে বাধ্য করে৷ হয়ত একদিন রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির কথা মনেও থাকবে না৷ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি ভুলিয়ে দেয়া হবে, চাপা ক্ষোভ, অভিমান সব হারিয়ে যাবে৷ মনে করিয়ে দেবে না নিজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত মানবিকতাকে৷ আমরা শোক ভুলতে চাই না৷ তাই, ২৪ শে এপ্রিল রাষ্ট্রীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হোক৷''
আমার ব্লগে নাইমূল ইসলাম লিখেছেন,‘‘রানা প্লাজা ট্রাজেডির এক বছর হলো৷ এখনো থামেনি হাজারো স্বজনের কান্না৷'' তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, ‘‘হাজার হাজার লাশ লুকালেন, কেবল কয়েকটা টাকার জন্য৷'' প্রশ্ন তুলেছেন, এখন কেন তাঁদের ক্ষতিপূরণ, তাঁদের হক, তাঁদের পাওনা, তাঁদের আমানত, তাঁদের অধিকার স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছেন না৷'''
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বর্ষপূর্তি
২৪শে এপ্রিল, ২০১৩৷ সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছের সুউচ্চ ভবন ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ল বিকট শব্দে৷ ধসের আশঙ্কাকে আমলে না নেয়ার পরিণাম ১,১৩৫ জন পোশাক শ্রমিক, করুণ মৃত্যু৷ আহত এক হাজারেরও বেশি মানুষের এখনো দিন কাটে আতঙ্কে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাঁচা আর বাঁচানোর লড়াই
ভবন মালিক সোহেল রানার অর্থলিপ্সার নির্মম শিকার পোশাক শ্রমিকদের বাঁচানোর জন্য সরকারি উদ্যোগের অপেক্ষায় বসে থাকেননি সাধারণ মানুষ৷ দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসে একরকম খালি হাতেই অনেকে নেমে পড়েন উদ্ধার কাজে৷ নিজেদের প্রাণ বাজি রেখে বহু পোশাক শ্রমিককে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters
অসহায়ত্ব
আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকলেও, ঘটনাস্থলে উদ্ধারকর্মীর কমতি ছিল না৷ তবুও অনেকেই চলে গেছেন স্বজনদের কাঁদিয়ে৷ এ ছবির মতো অবস্থাতেও উদ্ধার করতে হয়েছে অনেক মৃতদেহ৷ ৮০০-রও বেশি মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা গেলেও, অনেকের পরিচয় আজও জানা যায়নি৷ কিছু লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে৷ কিন্তু ৮৭ জনের জন্য নতুন করে নমুনা চাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রেশমার ফেরা
রানা প্লাজা ধসের ১৭তম দিনে ঘটে বিস্ময়কর এক ঘটনা৷ ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে আর কাউকে জীবন্ত উদ্ধার করা সম্ভব নয় ভেবে সাধারণ উদ্ধারকারীদের অনেকে যখন ঘরে ফিরছেন, তখনই প্রায় সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২২ বছর বয়সি পোশাক শ্রমিক রেশমাকে৷
ছবি: Reuters
এখনো কাঁদে প্রাণ
ধসের পর ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন অনেকে৷ বিজিএমইএ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিয়েছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা৷ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১২৭ কোটি টাকা জমা হয়েছে ঠিকই, তবে বিতরণ করা হয়েছে ২২ কোটি টাকা৷ ভবন ধসের বর্ষপূর্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মুখে শোনা গেছে হতাশা আর ক্ষোভের কথা৷ পপি বেগমকে কেড়ে নিয়েছে রানা প্লাজা৷ ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে তাঁর কবর জিয়ারত করতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন বোন রোজিনা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মায়ের কান্না
জুরাইন কবরস্থানে রশিদা খাতুনের কবরের পাশে সফুরা খাতুন৷ ভবন ধসের প্রায় দশ মাস পর, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি পেয়েছিলেন সন্তানের লাশ খুঁজে পাওয়ার সান্ত্বনা৷
জুরাইন কবরস্থানে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করতে মূলত তাঁদের পরিবারের সদস্যরাই এসেছিলেন৷ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বর্ষপূর্তিতে আয়োজন ছিল অনেক, তবে জুরাইন কবরস্থানে ভিড় ছিল না তেমন৷ সেখানে এভাবেই হারানো স্বজনের ছবি হাতে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছিলেন এক নারী৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রদর্শনী
রানা প্লাজা ধসের ছবি নিয়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী৷ বাংলাদেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ৬০ জন আলোকচিত্র সাংবাদিকের তোলা ছবি স্থান পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ফুলের জলসা
রানা প্লাজা ধসে নিহতদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছে বেশ কিছু শ্রমিক সংগঠন৷
ছবি: DW/M. Mamun
মোনাজাত
জুরাইন কবরস্থানে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
সামহয়্যার ইন ব্লগে মাহদী হাসান শিহাব লিখেছেন, ‘‘রানা প্লাজা ধ্বসের অনুভূতি যে কত ভয়াবহ এবং বেদনাদায়ক তা হয়ত এই দুর্ঘটনা থেকে যাঁরা জীবন ফিরে পেয়েছে তারা জানে আর জানে যারা নিখোঁজ হয়েছে তাদের পরিবার৷ ১১২৯ জন মারা গেল, ২৫১৫ জন আহত হলো, অনেকেই থেকে গেল নিখোঁজ৷ কোনোদিন তাদের আর খোঁজ পাওয়া যাবে না৷''
তাঁর অভিযোগ, ‘‘রানা অন্যায়ভাবে সরকারি দলের মদদপুষ্ট হয়ে ভবন তৈরির স্ট্যান্ডার্ড না মেনেই এ ভবন তৈরি করেছিল৷ সামান্য খামখেয়ালিপনা ও সামান্য লোভের জন্যই সহস্রাধিক মানুষের জীবন গেল৷ আর বিশ্বদরবারে আমাদের মাথা যে কত উঁচু হলো, তা নাই বা বললাম! যা হয়েছে তা অপূরণীয় ক্ষতি৷ কিন্তু ভবিষ্যতে যেন সামন্য খামখেয়ালিপনা ও সামান্য লোভের কারণে এ ধরনের আর কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, তার জন্য আমরা এবং আমাদের সরকার কতটুকু সচেতন, কতটুকু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ?''
মোরতাজা লিখেছেন, ‘‘শোকাহত নই আমি, ক্ষুব্ধ! রানা প্লাজায় ডেকে নিয়ে মানুষ খুনের বিচার হলো না, হবে বলেও মনে হয় না৷ বছর গড়িয়ে গেলো, আরো যাবে৷ রাজনীতির চোরা গলি – বাজার রক্ষার জন্য অনবরত মিথ্যাচার, অ্যাডভোকেসির নামে মানুষের জীবনের মূল্য কমিয়ে আনা, মালিকদের চোয়ালের তলে লুকিয়ে থাকা পশুত্ব – আমরা অসহায়৷''
মোহাম্মদ মোজ্জামেল হক লিখেছেন, ‘‘ডিএনএ-৯৮, কবর ২৪/বি, লেন-১০৷ এটি একটি পরিচয়৷ একজন মানুষের পরিচয়৷ অথচ এক বছর আগেও নাম ছিল৷ অথচ মানুষটি এখন শুধুই নম্বর৷ রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন এমন ১০৫ হতভাগ্য৷ তারা সবাই সাভারে ধসেপড়া রানা প্লাজার ‘হত্যার' শিকার৷''
তিনি লিখেছেন, ‘‘জুরাইন কবরস্থানে বৃহস্পতিবার সকালে এসেছিলেন রানা প্লাজা ধসে নিহত ও নিখোঁজের পরিবারের সদস্যরা৷ যাঁদের স্বজন এখনও অশনাক্ত, তাঁরা কবরে-কবরে ঘুরে ফিরলেন৷ মেয়ে হারানোর শোকে বিহ্বল ধামরাইয়ের নিজাম উদ্দিন৷ মেয়ে হাফসা কাজ করতেন রানা প্লাজার গার্মেন্টে৷ মেয়ের লাশটা খুঁজে পাননি৷ শুধু জানেন, জুরাইনের ১০৫টি কবরের যে কোনো একটি৷''