রাশিয়ার আক্রমণের কোনো বিরাম নেই, ২৪ ঘণ্টায় তারা ৩৪ বার বিমান হামলা করেছে ইউক্রেনে, জানালেন জেলেনস্কি।
বিজ্ঞাপন
তারমধ্যে দনেৎস্কের শহর চ্যাসিভ ইয়ারে বিমান হামলায় ১৫ জন মারা গেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের অফিসের প্রধান বলেছেন, চ্যাসিভ ইয়ারে রাশিয়ার হামলা সন্ত্রাসবাদী কাজ। রাশিয়াকে সন্ত্রাসবাদী দেশের তালিকায় রাখার অনুরোধ করেছেন তিনি।
কৃষ্ণসাগরের বন্দর শহর মিকোলাইভে সোমবার ভোরে অন্তত নয়টি বিস্ফোরণ হয়েছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক উইলসন ওই শহরে আছেন। তিনি জানিয়েছেন, শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আওয়াজ পেয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাশিয়ার অধিকারে থাকা দক্ষিণের শহর খেরসন থেকে যেন বেসামরিক মানুষ চলে যান। কারণ, ইউক্রেনের সেনা সেই শহরে পাাল্টা আক্রমণ শানানোর পরিকল্পনা করেছে।
ক্যামেরায় ইউক্রেনের ধ্বংসস্তূপে আগামীর স্বপ্ন
যুদ্ধের সময়েও ইউক্রেনের মানুষ ভেঙে পড়েনি৷ তাই ধ্বংসযজ্ঞ আর মৃত্যুর মিছিলের মাঝেও চলছে স্বপ্ন রচনা৷ ফটোগ্রাফার স্তানিস্লাভ সেনিকের ক্যামেরায় চেরনিহিভের ধ্বংসস্তূপে স্কুল পরীক্ষার্থীদের ছবিগুলো সে কথাই বলে...
ছবি: Instagram/@senykstas
ধ্বংসস্তূপে অন্যরকম পরীক্ষা
যুদ্ধ শুরুর পর অনেকেই ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তবে যারা দেশ ছাড়েননি, তারা হয় দেশরক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন, নয়ত নিজেকে তৈরি রাখছেন, তৈরি করছেন দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য৷ যুদ্ধের মাঝেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ ধ্বংসপ্রায় চেরনিহিভের শিক্ষার্থীরা স্কুল ফাইনালও দিয়েছে৷ তাদের কয়েকজনকে নিয়ে স্তানিস্লাভ সেনিকের ফটোশুটটাও ছিল অন্যরকম এক পরীক্ষা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
অচেনা রূপে চেনা শহর
এই দুই কিশোরীর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভেই জন্ম, বেড়ে ওঠা৷ তাদের প্রিয় শহর আজ রুশ হামলায় ধ্বংসপ্রায়৷ তবে ধ্বংসপ্রায় শহরটিও তাদের প্রিয়৷ এই শহরকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে তারা৷ স্তানিস্লাভ সেনিকের আইডিয়াটা তাই পছন্দ হয়েছে তাদের৷ বোমায় ভেঙে পড়া এক ভবনেই তাই ফটোশুটে অংশ নিয়েছে তারা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
দুঃস্বপ্নময় বর্তমানে সুন্দর এক স্বপ্ন
স্তানিস্লাভ সেনিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফটোশুটটা ওরা চেরননিহিভের জীর্ণ, বিবর্ণ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে করতে রাজি হয়েছে মূলত একটি কারণে৷ বাকিদের মতো ওরাও ভেবেছে, এই ছবি থেকে যাবে স্মৃতি হয়ে৷ দিন বদলাবে৷ আসবে সুদিন৷ চেরনিহিভ একদিন আবার সেজে উঠবে নতুন সাজে৷ তখন এই দুই কিশোরী তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই ছবি দেখিয়ে বলতে পারবে, ‘‘দেখো, আমরা এই ধ্বংসপ্রায় শহরটাকে ভালোবেসে বেসে আবার বাঁচিয়ে তুলেছি৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ওরা আর ভয় পায় না, মন খারাপ করে না’
ছবির এই মানুষটিই স্তানিস্লাভ সেনিক৷ ছবি তোলাকে পেশা করেছেন পাঁচ বছর আগে৷ রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত চেরনিহিভ শহরে শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে ফটোশুটে অংশ নেবে কিনা- এ নিয়ে তার অনেক সংশয় ছিল৷ কিন্তু কথা বলে বুঝলেন, শিক্ষার্থীদের ফটোশুটে কোনো আপত্তি নেই৷ আরো দেখলেন, ‘‘ওরা এখন আর ভয় পায় না, প্রিয় শহরের ধ্বংসপ্রায় রূপ দেখে খুব বেশি মন খারাপও করে না৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
দুমড়ানো-মোচড়ানো গাড়ির ছাদে ওরা পাঁচজন
স্বাভাবিক অবস্থায় এই চেহারার গাড়ি কোনো শহরেই যত্ন করে রাখা হয় না৷ যুদ্ধ শেষ হলে এই দুটোকেও হয়ত আর কোথাও দেখা যাবে না৷ তবে এই পাঁচ শিক্ষার্থীর এই ফটোশুটের কল্যাণে আগামী পৃথিবীর অনেকেই নিশ্চয়ই মনে রাখবে গাড়ি দুটোর কথা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ভুল বুঝবেন না’
ফটোশুটে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছে, কেউ যদি ছবিগুলো দেখে মনে করেন, চেরনিহিভের ধ্বংসপ্রায় চেহারা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গর্বিত আর এ কারণেই তারা সেখানে ফটোশুটে অংশ নিয়েছে- তাহলে খুব বড় ভুল করা হবে৷ তাদের অনুরোধ, ‘‘প্লিজ, আমাদের ভুল বুঝবেন না, আমরা আসলে এই দুঃসময়টাকে ফ্রেমে ধরে রাখতে চাই, আগামী প্রজন্মকে ছবি দেখিয়ে বলতে চাই ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধের কথা৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
6 ছবি1 | 6
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলি তাদের যে হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম(হিমরাস) দিচ্ছে, তাতে যুদ্ধক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনকে আরো চারটি হিমরাস দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। ফলে ইউক্রেনের হাতে ১২টি হিমরাস থাকবে। এছাড়াও অ্যামেরিকা তাদের প্রচুর গোলাবারুদ সরবরাহ করছে।
এই পশ্চিমা অস্ত্রের সাহায্যেই দক্ষিণের শহরগুলি রাশিয়ার হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে ইউক্রেন। যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদপত্রকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সমুদ্রতীরবর্তী শহরগুলিকে অধিকার করার নির্দেশ দিয়েছেন। দেশের অর্থনীতির পক্ষে এই শহরগুলি অধিকার করাটা জরুরি।
ইউক্রেনের অবস্থা দেখে তাইওয়ানে বন্দুক চালানো শেখার হিড়িক
বড় প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে যা করেছে, তাইওয়ানের সঙ্গেও তো তেমন হতে পারে! বড় প্রতিবেশী দেশ চীন এমন আশঙ্কায় ফেলেছে তাইওয়ানবাসীদের৷ সেখানে তাই অনেকেই নিচ্ছেন বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণ৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Ann Wang/REUTERS
তাইওয়ানেও যুদ্ধের আশঙ্কা
বড় প্রতিবেশী দেশ যখন-তখন তার ছোট প্রতিবেশীর ওপর হামলা চালাতে পারে- এই বিষয়ে এখন আর কোনো সংশয় নেই অনেক তাইওয়ানবাসীর মনে৷ তাদের অনেকেই মনে করেন, চীনও যে কোনো সময় তাইওয়ানে হামলা চালাতে পারে এবং সেরকম হলে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যেহেতু লড়তে হবে, তার প্রস্তুতি এখনই শুরু করা ভালো৷ সেই ভাবনায় ইতিমধ্যে বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণে নাম লিখিয়েছেন অনেকে৷
ছবি: Ann Wang/REUTERS
আগের তুলনায় তিন-চারগুণ!
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া৷ তারপর থেকে তাইওয়ানবাসীদের মাঝে বন্দুক প্রশিক্ষণে আগ্রহ যে হারে বাড়ছে এমন আগে কখনো দেখা যায়নি৷ রাজধানী তাইপের অদূরের পোলার লাইট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী মাক্স-চিয়াং জানালেন, জীবনে কোনোদিন বন্দুক হাতে নেননি, এমন অনেকেই আসছেন বন্দুক চালানো শিখতে৷ সংখ্যাটা নাকি আগের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ!
ছবি: Ann Wang/REUTERS
সর্বস্তরে আগ্রহ
গত তিন মাসে তাইওয়ানের প্রায় সব বয়স আর পেশার মানুষের মাঝেই বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণে আগ্রহ বেড়েছে৷ বলা হচ্ছে, ট্যুর গাইড থেকে ট্যাটু আর্টিস্ট পর্যন্ত মোটামুটি সবাই বিশেষ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে গুলি চালানোয় দক্ষ হতে চাইছেন৷
ছবি: Ann Wang/REUTERS
রাজনীতিবিদরাও শঙ্কিত
ইউক্রেন পরিস্থিতি তাইওয়ানের রাজনীতিবিদদের বড় একটা অংশকেও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে৷ তাদের কেউ কেউ যু্দ্ধপরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছেন৷ ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির নেতা লিন পিং-ইউ জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরু হলে যাতে কিছুদিন ঘরে নিরাপদে দু-মুঠো খেয়ে বাঁচতে পারেন তা নিশ্চিত করতে শুকনো খাবার এবং ব্যাটারির মতো কিছু জিনিস জমিয়ে রেখেছেন৷ জনগণকেও এমন প্রস্তুতি রাখতে বলেছেন তিনি৷
ছবি: Ann Wang/REUTERS
যুদ্ধে অনিহা, তবু হাতে বন্দুক...
ট্যাটু আর্টিস্ট সু চুন বললেন, ‘‘বেশির ভাগ মানুষই যুদ্ধে যেতে চায় না৷ যুদ্ধ আমিও চাই না৷ কিন্তু এখন যা যা ঘটতে দেখছি, তাতে যুদ্ধের মানসিক প্রস্তুতি আমি নিয়ে রাখবো৷’’ তিনি আরো জানান, সবার মতো আপাতত এয়ারগান চালানো তো শিখবেনই, সঙ্গে সম্ভব হলে সম্মুখযুদ্ধের কায়দা-কানুন এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে রক্ষা করার যাবতীয় কৌশলও রপ্ত করবেন৷
ছবি: Ann Wang/REUTERS
5 ছবি1 | 5
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তিনি বন্ধু দেশের জেনারেল ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের কাছে চিঠি লিখে জানাচ্ছেন, কেন ওই শহরগুলি তাদের দখল করাটা দরকার। তাই তিনি প্রয়োজনাীয় অস্ত্রশস্ত্র চেয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, ''যেভাবে যুদ্ধ হচ্ছে, তাতে সোভিয়েত আমলের অস্ত্রসম্ভার দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। আমাদের হাতে তিরিশ বছর আগেকার অস্ত্রশস্ত্র ছিল। গত তিন মাসে আমরা নতুন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়েছি।''