বিয়ে অনেকেই করেন৷ মধুচন্দ্রিমা সবার ভাগ্যে জোটে না৷ নিউজিল্যান্ডের এক নবদম্পতি বিয়েকে স্মরণীয় করতে গিয়েছিলেন ফকল্যান্ডে৷প্রায় বন্দিদশায় কেটেছে পাঁচটি মাস!
বিজ্ঞাপন
নেভিল ক্লিন্টন আর ফিওনা ক্লিন্টনের পঁচিশ বছরের সংসার৷ তিনটি সন্তানও আছে তাদের৷ কিন্তু ২৫ বছর একসঙ্গে সুখে-শান্তিতে বাস করলেও, তিন সন্তানের বাবা-মা হলেও এতদিন বিয়ে করেননি৷ বিয়েতে বিশেষ আস্থাই ছিল না, করবেন কী!
বিয়েটা অবশেষে করলেন৷ করলেন একটা বিশেষ দিন দেখে৷ ২০২০ সালের লিপইয়ার, অর্থাৎ ২৯ ফেব্রুয়ারি ২৫ বছরের পুরোনো জুটি গাঁটছড়া বাঁধলেন৷ সেদিনই হানিমুন করতে রওনা দিলেন নেভিলের জন্মভূমি ফকল্যান্ডের উদ্দেশে৷
শৈশবেই ফকল্যান্ড ছাড়লেও জন্মস্থানের প্রতি দুর্দমনীয় একটা আকর্ষণ ছিল ৫৯ বছর বয়সি নেভিলের৷সামাজিকভাবে সদ্য স্ত্রী হওয়া ফিওনাও চেয়েছিলেন কয়েকটা দিন চুটিয়ে আনন্দ করবেন সেখানে, তারপর যাবেন ব্রাজিলে, দক্ষিণ অ্যামেরিকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় অঞ্চলটা ঘুরে দেখে তারপর ফিরবেন অকল্যান্ডে নিজেদের বাড়িতে৷
করোনার বিরুদ্ধে কারা জেতে, কারা জেতে না
ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমানে সমানে লড়ে, কিন্তু এই লড়াইয়ে ব্রাজিল পাত্তাই পায় না৷ ৪৫ বছর আগের এক যুদ্ধের মতো পুঁচকে ভিয়েতনামের কাছে আবার লজ্জা পায় যুক্তরাষ্ট্র৷ করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের আরো কিছু বিষয় থাকছে ছবিঘরে..
ছবি: Getty Images/AFP/S. Lima
দেশ অপ্রস্তুত আর প্রেসিডেন্ট একগুঁয়ে হলে যা হয়
চীনে করোনা সংকট দেখা দেয়ার দু’মাস পরও যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতি, করোনা টেস্ট শুরু করায় বিলম্ব, ইটালিতে মৃত্যুর মিছিল দেখেও করোনাকে ট্রাম্পের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, মধ্য এপ্রিলেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাওয়া- ইত্যাদির উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি৷ বিশেষজ্ঞরা যা চান ট্রাম্প তার ঠিক বিপরীত দিকে হাঁটতে চেয়েছেন৷ ফলাফল পরাশক্তি হয়েও করোনার কাছে নাস্তানাবুদ হওয়া৷
শীতল যুদ্ধের যুগ আর নেই৷ তবে এ যুগেও কমিউনিস্ট শাসিত কিউবা আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মধুর হয়নি ৷ যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু এক লাখ ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে, অথচ কিউবায় মারা গেছে মাত্র ৮৩ জন৷ হোক না মাত্র এক কোটি ১৪ লাখ মানুষের দেশ, করোনাকে এভাবে বোতলবন্দি করলো কিভাবে তা-ই এখন কৌতুহলের কেন্দ্রে৷ গার্ডিয়ান বলছে, শুরু থেকে সপ্তাহের সাতদিন ঘরে ঘরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে তা সম্ভব করেছে কিউবা৷
ছবি: pictrure-alliance/AP Photo/I. Francisco
বিশেষজ্ঞরা স্বেচ্ছাচারিতার কবলে পড়লে যা হয়
লকডাউন প্রশ্নে ট্রাম্পের বিরোধিতা করে কোণঠাসা হয়েছেন জাতীয় অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের প্রধান ডা, অ্যান্থনি ফাউচি, একই বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বিরোধিতা করে দায়িত্ব হারিয়েছেন ব্রাজিলের দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ সামাজিক দূরত্ব মানার সরাসরি বিরোধিতা করা বলসোনারোর দেশও এখন ধুঁকছে৷ গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে কিউবার চেয়ে সত্তর গুন পিছিয়ে আছে ব্রাজিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Lima
ভিয়েতনাম হলে যা হয়
ভিয়েতনামও করোনার বিরুদ্ধে দারুণ সফল৷ দেশ ছোট আর অর্থনীতি দুর্বল হলেও বড় যুদ্ধে ভিয়েতনাম কখনো হারেনি৷ ৩৫ বছর আগে সামরিক যুদ্ধে ব্যর্থ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, এখন ব্যর্থ হচ্ছে করোনা ভাইরাস৷ দ্রুত সীমান্ত বন্ধ করা, অল্প সময়ে বেশি পরীক্ষা করানো, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন- সব নিয়ম কঠোরভাবে মেনে সফল হয়েছে ভিয়েতনাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Hau Dinh
সরকার এবং সরকারপ্রধান অপরিনামদর্শী না হলে যা হয়
জনমনে অসন্তোষ দেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বন্ধ করেছিল ব্রাজিল সরকার৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা আবার চালু হয়েছে৷ ফুটবলে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে আর্জেন্টিনা ২৬ হাজারের মতো সংক্রমণ আর মাত্র ৭৮৭ জন করোনায় মৃত্যু নিয়ে এখনো অনেক ভালো অবস্থায়৷ আর্জেন্টিনার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি, বিপরীতে ব্রাজিলের জনসংখ্যা ২১ কোটির কাছাকাছি হলেও ব্যবধানটা কিন্তু সেই তুলনায় অনেক বড়!
ছবি: Getty Images
করোনাকে বেশি সময় দিলে যা হয়
করোনা যখন হানা দিলো, তখন পরীক্ষার প্রস্তুতি, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের জোগান- সব কিছুরই ঘাটতি ছিল ইউরোপের দেশটিতে৷ লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব মানতে চাননি অনেকে৷ ফলে বিপদ বেড়েছে দ্রুত৷ এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক৷ এ পর্যন্ত ইটালিতে ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ডাক্তার মারা গেছেন একশ’রও বেশি৷ বেশির ভাগ ডাক্তারই মারা গেছেন পিপিই ছাড়া চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/E. Mattia Del Punta
ছোট দেশও ‘গাইডলাইন’ মানলে যা হয়
প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডে আর করোনায় সংক্রমিত রোগী নেই৷ বিশ্লেষকরা বলছেন মূলত গাইডলাইন মেনে চলার কারণেই এমন সাফল্য এসেছে৷ ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের স্কুল অব ফার্মাসির শিক্ষক ওকসানা পাইসিক বলেন, ‘‘ প্রথমে খুঁজে বের করা, তারপর টেস্ট করা, আইসোলেট করা, প্রত্যেক রোগীকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা, সংক্রমণ ধরা পড়লে কোয়ারান্টিনে পাঠানো- এসব মেনেই নিউজিল্যান্ড সফল হয়েছে৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Baker
7 ছবি1 | 7
কিন্তু বিধি বাম!
৭ মার্চ ফকল্যান্ডে পৌঁছালেন কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার নেভিল আর শিল্পী ফিওনা৷ শুরু হয়ে গেল করোনার ভয়াবহ বিস্তার৷ শুরু হলো প্রবীণ এক আত্মীয়ার সঙ্গে থেকে লকডাউন অবসানের দিন গোনা৷ ব্রাজিলের ফ্লাইট বাতিল৷ সব দেশেই বিমান চলাচল বন্ধ৷ কবে ফেরা হবে কে জানে!
তাস খেলে, আলবাট্রস আর ডলফিন দেখে দেখে কাটতে লাগল একের পর এক অনিশ্চয়তায় ভরা দিন৷ কিন্তু ফিরতে তো হবে৷ ফিরবেন কিভাবে?
অবশেষে ভাবলেন মাছধরা নৌকায় চড়ে ফিরে যাবেন ‘সুইট হোম’-এ৷
যাত্রাটা অবশ্য খুব ‘সুইট’ ছিল না৷ এক মাসেরও বেশি সময়ে আর্জেন্টিনা থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরের ফকল্যান্ড থেকে আটলান্টিকের স্রোত ভেঙে ভেঙে ৯,২০০ কিলোমিটার (৫০০০ নটিক্যাল মাইল) পেরিয়ে নিজের শহর অকল্যান্ডে ফেরা তো চাট্টিখানি কথা নয়৷