২৫ মার্চে স্বচক্ষে দেখা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা
সালেক খোকন
২৪ মার্চ ২০২৩
ফিরে এলো ২৫ মার্চ৷ ১৯৭১ সালে এই রাতেই নিরীহ বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী৷ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের অভিযানের মাধ্যমে শুরু করেছিল গণহত্যা৷ সেই রাতের কথা জানাচ্ছেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা৷
বিজ্ঞাপন
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মুহূর্ত৷ রাতেই পৃথিবীর ইতিহাসের ভয়াবহতম গণহত্যার শিকার হয় স্বাধীনতাকামী বাঙালি৷ ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া বহর নিয়ে রাজপথে নামে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী৷
রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানার ইপিআর ব্যারাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা ও পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তারা হত্যাযজ্ঞ চালায়৷
সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, ঢাকায় ২৫ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত পাঁচ দিনে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করেছিল ১ লাখ বাঙালিকে৷
২৫ শে মার্চ রাত নিয়ে কথা হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে তখন অস্ত্রাগারের দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল মো. আবু শামার সঙ্গে৷ তার মুখে ভয়াবহ সেই রাতের বর্ণনা উঠে এসেছে এভাবে, ‘‘রাজারবাগে আক্রমণটা হবে গোয়েন্দাদের মাধ্যমে সে সম্পর্কে ২৩ ও ২৪ মার্চেই ক্লিয়ার হয়ে যাই৷ পাকিস্তানের আইএসআই গোয়েন্দা সংস্থা রাজারবাগকে সিরিয়াসভাবে টার্গেট করে রেখেছিল৷ কারণ, ইস্ট পাকিস্তানের বৃহত্তম পুলিশ লাইনস ছিল রাজারবাগ৷ সেখানে বাঙালি সদস্য ছিল সবচেয়ে বেশি৷’’
‘‘রাত আনুমানিক সাড়ে দশটা৷ একটা ওয়্যারলেস মেসেজ আসে তেজগাঁও এলাকায় পেট্রোলে থাকা ওয়্যারলেস অপারেটর আমিরুলের কাছ থেকে৷ মেসেজে বলা হয়, ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৩৭ ট্রাক সশস্ত্র সেনা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে৷ খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷ সেন্ট্রিও তখন পাগলা ঘন্টি পিটায়৷’’
‘‘অস্ত্রাগারে গিয়ে দেখলাম তালা মারা৷ সেন্ট্রি বলে, ‘হাশেম স্যার (সুবেদার আবুল হাশেম) তালা মাইরা চাবি নিয়া গেছে মফিজ স্যারের বাসায়৷’ দৌড়ায়া গেলাম সেখানে৷ তার কাছে অস্ত্রাগারের চাবি চাই৷ প্রথম দিতে চায়নি৷ চাপের মুখে তিনি একটা অস্ত্রাগারের চাবি দেন৷’’
‘‘ওই চাবি নিয়া একটা অস্ত্রাগারের দরজা খুলে দিই৷ এরপর শাবল দিয়া আরেকটির তালা ভেঙে ফেললে ভেতরের অস্ত্রগুলো যে যার মতো নিয়ে যায়৷ অবাঙালি সদস্যরা আগেই পালিয়ে যায় পুলিশ লাইনস থেকে৷ শুধু সুবেদার বদরুদ্দিন খান অবাঙালি হয়েও আমাদের পক্ষে ছিলেন৷’’
‘‘শান্তিনগরে ডন স্কুলের ছাদের ওপরে আর মালিবাগ এসবি ব্যারাকের ছাদে আমাদের দুইটা গ্রুপ চলে যায়৷ প্যারেড গ্রাউন্ডে একটা গ্রুপ, এক নম্বর ও দুই নম্বর গেইট, মূল ভবনের ছাদ ও বিভিন্ন স্থানে পজিশন নিয়ে অপেক্ষায় থাকি আমরা৷’’
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু দুর্লভ ছবি
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-র সংগ্রহে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু দুর্লভ ছবি রয়েছে৷
ছবি: AP
উত্তাল মার্চ
১৯৭১ সালের ২৩ শে মার্চ ঢাকার রাস্তায় স্বাধীনতার দাবিতে হারপুন হাতে বিক্ষোভ মিছিল৷
ছবি: AP
যশোরে মুক্তিবাহিনী
২ এপ্রিল ১৯৭১৷ যশোরে মার্চ করছে মুক্তিবাহিনী৷
ছবি: AP
ত্রিপুরায় বাংলাদেশি শরণার্থী
১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল৷ প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে৷ প্রাণ বাঁচাতে ভারতের ত্রিপুরার মোহনপুরের একটি স্কুল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশিরা৷
ছবি: AP
ভারত সীমান্তের কাছে বাংলাদেশিদের অবস্থান
১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল৷ ভারত সীমান্তের ৩০ মাইলের মধ্যে কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেকেই অবস্থান করছিল৷
ছবি: AP
বেনাপোলের কাছে শরণার্থী শিবির
১৪ এপ্রিল ১৯৭১, যশোরের বেনাপোলের কাছে ভারত সীমান্তে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল পাঁচ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি৷
ছবি: AP
আহত মুক্তিযোদ্ধা
১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর বোমা হামলায় আহত একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাচ্ছেন বেসামরিক মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধারা৷
ছবি: AP
মুক্তিবাহিনী
১৯৭১ সালের ৩ রা আগস্ট৷ ঢাকার কাছে মুক্তিবাহিনীর সদস্য হেমায়েতউদ্দীন একটি গোপন ক্যাম্প থেকে মেশিনগান তাক করে রেখেছেন৷
ছবি: AP
১৯ বছর বয়সি শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে প্লাটুন
১৩ নভেম্বর ১৯৭১৷ ফরিদপুরে রাইফেল হাতে তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ৷ ৭০ সদস্যের একটি প্লাটুন গড়া হয়েছিল সেখানে৷ সেই প্লাটুন দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক ও চিকিৎসা দ্রব্য সরবরাহ করত৷ একদম বামে থাকা ১৯ বছর বয়সি তরুণটি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র৷ ৭০ জনের প্লাটুনের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি৷
ছবি: AP
মুক্তিবাহিনীর পারুলিয়া দখল
১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর৷ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পারুলিয়া গ্রাম দখল করে নেয় মুক্তিবাহিনী৷
ছবি: AP
আখাউড়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী
২৯ নভেম্বর, ১৯৭১৷ আখাউড়ায় অস্ত্র পাহাড়া দিচ্ছে পাকিস্তানি সেনারা৷ তাদের দাবি ছিল, ভারতীয় সৈন্যদের কাছ থেকে এসব অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে৷
ছবি: AP
ভারতীয় সেনাদের হামলা
২ ডিসেম্বর, ১৯৭১৷ যশোরে পাকিস্তানি সেনাদের উপর গোলাবর্ষণ শুরু করে ভারত ৷ এক পাকিস্তানি সেনাসদস্য রাইফেল নিয়ে অন্যত্র যাচ্ছে৷ অন্য সেনারা তখন অস্ত্র তাক করে পরিখার মধ্যে রয়েছে৷
ছবি: AP
ভারতীয় সেনা
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর৷ ভারতীয় সীমান্তের কাছে ডোঙ্গারপাড়ায় খোলা মাঠে মেশিনগান তাক করে রেখেছেন এক ভারতীয় সেনা৷
ছবি: AP
ডিসেম্বরেও ঢাকায় পাকিস্তানি সার্জেন্ট
১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১৷ রাজধানী ঢাকার অদূরে একটি এলাকায় একজন পাকিস্তানি সার্জেন্ট দুই সেনাকে নির্দেশনা দিচ্ছে৷
ছবি: AP
যুদ্ধবিরতি
রবিবার ১২ ডিসেম্বর. ১৯৭১৷ ঢাকা বিমানবন্দরে অপেক্ষায় আছেন বিদেশিরা৷ একটি ব্রিটিশ বিমান অবতরণ করেছে৷ ৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির সময় বিদেশিদের নিয়ে যাওয়ার জন্যই ঐ বিমানটি পাঠানো হয়েছিল৷
ছবি: AP
ভারতীয় ট্যাংক
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক বগুড়ার দিকে রওনা হয়েছে৷
ছবি: AP
চার রাজাকারকে হত্যার পর মুক্তিবাহিনীর প্রতিক্রিয়া
হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা চার রাজাকারকে হত্যার পর আল্লাহ’র উদ্দেশে শুকরিয়া জানাচ্ছেন মুক্তিসেনারা৷
ছবি: AP
16 ছবি1 | 16
‘‘রাত আনুমানিক ১১টা৷ পাকিস্তানি কনভয়ের ওপর শান্তিনগরে ডন স্কুলের ছাদের ওপর থেকে পুলিশ প্রথম গুলি চালায়৷ আমরাও শব্দ পাই৷ পাকিস্তানি আর্মিদের ওপর ওটাই ছিল প্রথম আক্রমণ৷’’
‘‘শাহজাহান, আব্দুল হালিম, ওয়্যারলেস অপারেটর মনির, গিয়াসউদ্দিনসহ পজিশনে থাকি মূল ভবনের ছাদে৷ রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজারবাগের দিকে ওরা আক্রমণ করে৷ আমাদের ১০টা গুলির বিপরীতে ওরা জবাব দিয়েছে প্রায় কয়েক হাজার গুলির মাধ্যমে৷ ওরা ট্যাংক, মর্টার ও হেভি মেশিনগান ব্যবহার করে৷ অল্প সময়ের ভেতর টিনশেডের ব্যারাকগুলোতে আগুন লেগে যায়৷ জীবন বাঁচাতে ভেতর থেকে পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করে৷ পাকিস্তানি সেনারা তখন ব্রাশফায়ার করে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করে৷’’
‘‘ফজরের আজানের পর আর্মিরা রাজারবাগের এক ও দুই নম্বর গেট দুটি ট্যাংকের সাহায্যে ভেঙে ভেতরে ঢোকে৷ আসে ১০টি খালি ট্রাকও৷ এক থেকে দেড়শ পুলিশের লাশ পড়ে ছিল৷ ওগুলো ট্রাকে করে ওরা সরিয়ে ফেলে৷’’
‘‘ভেতরে ঢুকে ছাদে উঠে টেনেহিঁচড়ে নামায় আমাদের৷ বেয়োনেট দিয়েও খুঁচিয়েছে, অস্ত্র কেড়ে নিয়ে হাত ওপর দিকে তুলে মারতে মারতে নীচে নামিয়েছে৷ তারপর রাস্তায় ফেলে ক্রলিং করায় আর নির্দয়ভাবে পেটায়৷’’
‘‘দেখলাম একটা ময়লার ড্রেনে পড়ে আছে আমাদের ক্যান্টিন বয়৷ বয়স চৌদ্দ বছরের মতো৷ আর্মিরা তাকে সেখান থেকে উঠিয়ে পিচঢালা রাস্তায় এনে আছড়ায়৷ তার মুখ ফেটে রক্ত বের হতে থাকে৷ ছেলেটা কাঁপতে কাঁপতে বলছিল ‘‘পানি, পানি৷’’ এক পাকিস্তানি আর্মি পাশে নিয়ে প্যান্টের জিপার খুলে তার মুখে প্রস্রাব করে দেয়৷ ওই মুহূর্তটা খুবই খারাপ লাগছিল৷ মানবতা প্রতি মুহূর্তে পদদলিত হয়েছে রাজারবাগে!’’
‘‘তিনদিন আটকে রেখে আমাদের ওপর নির্মমভাবে টর্চার করে ওরা৷ রাইফেলের বাঁটের আঘাত, বুটের নীচে ছিল লোহার পাত, সেটা দিয়ে দেয় লাথি, শরীরের প্রতিটি জায়গা ছিলে যায়, রক্তাক্ত হই৷ মুখেও আঘাত করেছে৷ সবগুলো দাঁতের গোড়া ভেঙে যায়৷ ফলে সব দাঁতই পড়ে গেছে৷ এক ফোঁটা পানিও খেতে দেয়নি৷ শরীরের রক্ত মুখে চলে এলে লবণ-কাঁটা লাগতো৷ ভাবিওনি বেঁচে থাকবো৷ বেঁচে আছি এটাই আল্লাহর রহমত৷’’
আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোরের ফটোগ্রাফার হিসেবে শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবিরের প্রায় সাড়ে ৫০০ ছবি তুলেছেন আলোকচিত্রী আবদুল হামিদ রায়হান৷ ছবিঘরে দেখুন তার কয়েকটি৷
২৫ মার্চ, কুষ্টিয়া
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের পর থেকেই উত্তপ্ত হতে থাকে কুষ্টিয়া৷ ২৩ মার্চ ইসলামিয়া কলেজ মাঠে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে শোডাউন করেন ছাত্র-মজুর-জনতা৷ ২৫ মার্চ ১৯৭১, কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠে হয় আরেকটি সমাবেশ৷ ছবিটি সেই সময়ের৷
পতাকা উত্তোলন
কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠের সেদিনের সমাবেশে ছাত্র নেতারা স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন গোলাম কিবরিয়া, আব্দুর রউফ চৌধুরী, নূরে আলম জিকো প্রমুখ৷ সেই আন্দোলনে হামিদ রায়হান নিজে শুধু যুক্তই থাকেননি ক্যামেরায় ছবিও তুলে রেখেছেন৷
ছবি: Abdul Hamid Raihan
তির-ধনুকে প্রস্তুতি
কয়েক হাজার মানুষ সেদিন জড়ো হয়েছিলেন কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠে৷ পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রস্তুতি হিসেবে লাঠি, তির-ধনুক, দা ও নকল রাইফেল নিয়ে জড়ো হন তারা৷ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ অংশ নেন সেই সমাবেশে৷
ছবি: Abdul Hamid Raihan
শিকারপুর ট্রেনিং ক্যাম্প
প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তখন বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন শুরু করেছেন৷ পুরোদমে চলছে যুদ্ধ৷ বাংলাদেশ ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোর কাজ করছিল বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে৷ ১৫ সেপ্টেম্বর ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোরের ফটোগ্রাফার হিসেবে যোগ দেন আবদুল হামিদ রায়হান৷ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার শিকারপুর ট্রেনিং ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুশীলনের এই ছবিটি তিনি তুলেছেন ২০ নভেম্বরে৷
ছবি: Abdul Hamid Raihan
প্রশিক্ষণে মুক্তিযোদ্ধারা
একই সময়ে শিকারপুর ট্রেনিং ক্যাম্পে অনুশীলনরত আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা৷ আবদুল হামিদ রায়হান ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন ট্রেনিং ক্যাম্প, শরণার্থী ক্যাম্প ও মুক্তাঞ্চলগুলোতে৷ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হামলায় ধ্বংস হওয়া সেতু, কালভার্ট ও ভবনের ছবিও উঠে এসেছে তার ক্যামেরায়৷ সেসব ছবি স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছিল।
পাক সেনাদের রকেট বোমা
এই ছবিটি তোলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর৷ যশোরের পিকনিক কর্নারের পাক বাহিনীর ফেলে যাওয়া তাজা রকেট বোমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে দুই শিশু৷
রাজাকার আটক
চার রাজাকারকে আটক করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা৷ একজন মুক্তিযোদ্ধার হাতে একটি পোস্টার দেখা যাচ্ছে যাতে লেখা, ‘‘রক্তের ঋণ রক্তে শুধবো, দেশকে এবার মুক্ত করবো৷’’ ছবিটি কুষ্টিয়া থেকে তুলেছিলেন আবদুল হামিদ রায়হান৷
এ এইচ এম কামরুজ্জামানের পরিদর্শন
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন তৎকালীন অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান৷ তার সঙ্গে ছিলেন মেজর জলিল, ব্যারিস্ট্রার আমীর-উল-ইসলাম, মেজর হায়দার প্রমুখ৷ আবদুল হামিদ রায়হান এই ছবিটি তুলেছেন ০২ ডিসেম্বর৷
স্বেচ্ছাসেবীদের দল
ভারতে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়োগ দিতো বাংলাদেশ ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোর৷ ক্যাম্পগুলোতে স্কুল চালানো, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা দিতেন তারা৷ ক্যাম্পের যুবক-যুবতীদের সংগঠিত করে বিভিন্ন কাজে যুক্ত রাখতেন স্বেচ্ছাসেবীরা৷ ছবিতে ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোরের সঙ্গে যুক্তদের একাংশকে দেখা যাচ্ছে৷
অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধা
এক মুক্তিযোদ্ধার বন্দুক তাক করা এই ছবিটি তোলা সাতক্ষীরার দেবহাটায়৷ কয়েকবছর আগে দৃক গ্যালারিতে ছবিটি প্রদর্শিত হয়৷ সেটি দেখে ছবির মুক্তিযোদ্ধাকে খবর দেন তার এক নিকটাত্মীয়৷ আবদুল হামিদ রায়হান জানান, ‘‘নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে একাত্তরে নিজের ছবি দেখে আমাকে কান্নায় জড়িয়ে ধরেন ওই মুক্তিযোদ্ধা৷ তখনই জানি তার নাম মোসলেহ উদ্দিন৷’’
স্বীকৃতি পাওয়ার উল্লাস
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ভারত৷ সেদিন কলকাতায় মিছিল বের করেন বাংলাদেশিরা৷ একটি মিছিলে প্ল্যাকার্ড হাতে ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ৷
৫৪০টি ছবি
একাত্তর সালে আবদুল হামিদ রায়হান তার ক্যামেরা দিয়ে সংগ্রহ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক সচিত্র দলিল৷ শরণার্থী ক্যাম্প ও সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন অ্যাকশন ক্যাম্পে প্রায় সাড়ে ৫০০ ছবি তোলেন তিনি৷ সেগুলো ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংস্থায় পাঠানো হতো৷ ছবি দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তোলায় ভূমিকা রাখেন এই আলোকচিত্রী মুক্তিযোদ্ধা৷
ছবি: Salek Khokon
12 ছবি1 | 12
পুলিশ লাইনসের প্রতিরোধযোদ্ধারা কেউ-ই বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বীরউত্তম বা বীরপ্রতীক খেতাব পাননি৷ স্বাধীনতা লাভের এত বছর পরও রাজারবাগের প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়া কোনো পুলিশ সদস্যকেই স্বাধীনতা পুরস্কার বা অন্য কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হয়নি৷ পুলিশের প্রথম প্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের ইতিহাসটিও যুক্ত হয়নি কোনো পাঠ্যপুস্তকে৷ এমন নানা কষ্ট বুকে পুষেই বেঁচে আছেন রাজারবাগের প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়া পুলিশ যোদ্ধারা৷
ওই রাতে পাকিস্তানি সেনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল ও রোকেয়া হলেও গণহত্যা চালায়৷ বিশ্ববিদ্যালয় কৃর্তপক্ষ ১৯৫ জন শহিদের তালিকা করলেও বিভিন্ন তথ্য বলছে ওই রাতে সেখানে আড়াই শ থেকে তিন শ জনকে হত্যা করা হয়েছে ৷ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওয়্যারলেসের সংলাপেও হত্যার এমন সংখ্যার উল্লেখ পাওয়া যায়৷ জগন্নাথ হলে হত্যার শিকার হন ৪ শিক্ষক, ৩৬ ছাত্র এবং ২১ কর্মচারী ও অতিথি৷ ছয় ছাত্রকে পাকিস্তানি সেনারা কবর খোঁড়ার কাজে লাগায়৷ এরপরও তারা বাঁচতে পারেনি৷ ইকবাল হলে ওরা ১১ ছাত্রকে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে৷ এরপর রোকেয়া হলে আগুন ধরিয়ে দিলে ছাত্রীরা হল থেকে দৌড়ে বের হয়েআসে৷ তাদের তখন মেশিনগান দিয়ে অবিরাম গুলি করা হয়৷ অনেককে হত্যা করা হয় বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে৷ রশীদ হায়দার সম্পাদিত ১৯৭১: ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, অধ্যাপক রতনলাল চক্রবর্তীর সম্পাদনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা: ১৯৭১ জগন্নাথ হল, রঙ্গলাল সেন সম্পাদিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান নামের গ্রন্থ এবং মেজর সিদ্দিক সালিক (ঢাকার সে সময়ের মার্কিন কনসাল জেনারেল) কর্তৃক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে পাঠানো ‘উইটনেস টু স্যারেন্ডার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্যের উল্লেখ রয়েছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ছিলেন মোহাম্মদ রিয়াজউদ্দিন৷ ২৫ মার্চে রাতে কী কী দেখেছিলেন তিনি?
তাঁর ভাষায়, ‘‘২৫ মার্চ সকাল থেকেই হল ছাড়তে থাকে ছাত্ররা৷ শেষে ছিলাম মাত্র একচল্লিশ জনের মতো৷ ডাইনিং বন্ধ৷ রাতের খাবারের জন্য চলে যাই সচিবালয়ের পেছনে, চিটাগাং রেস্টুরেন্টে৷ হঠাৎ সাঁজোয়া যানের শব্দ৷ দেখলাম আর্মির কনভয় যাচ্ছে৷ ওদের চোখেমুখে হিংস্রতার ছাপ৷ দ্রুত হলের উত্তর গেটে আসতেই শুরু হয় কামানের গর্জন৷ গোলাগুলিরও শব্দ পাই অবিরত৷’’
‘‘আমরা চার বন্ধু হলের ছাদে অবস্থান নিই৷ নানা শঙ্কায় কাটে গোটা রাত৷ ওরা আগে আলোর মতো একটা গুলি ছোঁড়ে৷ এরপরই ফায়ার করতে থাকে৷ রাত দুইটার পর দেখি পুরান ঢাকার দিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে৷ চারপাশে শুধু গুলি, চিৎকার আর মানুষের কান্নার শব্দ৷ ফজরের আজান পড়েছে তখন৷ কিন্তু আজানের সময়ও পাকিস্তানি সেনারা গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছিল৷ কেন জানি ওরা ফজলুল হক হলে আসেনি৷ ফলে দৈবক্রমে বেঁচে যাই আমরা৷’’
‘‘২৬ মার্চ ভোরবেলায়, শহিদুল হক হলে অ্যাটাক হয়৷ ছয় জনের লাশও পড়েছিল৷ আর্মিরা আমাদের হলে আসে৷ আমরা যে যার মতো লুকিয়ে থাকি৷ আমি চলে যাই তিনতলায়, ৩৫২ নম্বর রুমের বারান্দায়৷’’
‘‘ওরা এলে দারোয়ান বলে, ‘এই হলে ভাল ছাত্ররা থাকে৷ ছুটির কারণে সবাই বাড়ি চলে গেছে৷ এখন কেউ নাই, স্যার৷' কিন্তু বাংলাদেশের একটি পতাকা তখনও হলের সামনে পতপত করে উড়ছিল৷ তা দেখে আর্মিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, অশ্লীল একটা গালি দিয়ে দারোয়ানের ওপরই চড়াও হয়৷ এরপর পতাকাটি নামিয়ে বুটের তলায় কিছুক্ষণ মাড়িয়ে তাতে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়৷ রাগে চারদিকে কয়েক রাউন্ড গুলিও ছোঁড়ে৷ একটি গুলি এসে পড়ে আমার ঠিক সামনেই৷ কোনো প্রত্যুত্তর না পেয়ে আর্মিরা তখন অন্যত্র চলে যায়৷ ফলে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি থেকেই ফিরে আসি৷’’
একাত্তরে তৌফিকুর রহমানরা থাকতেন সরকারি কোয়ার্টারে, চাঙ্খারপুলের রশিদ বিল্ডিংয়ে৷ ২৫ মার্চের রাতের কথা স্মরণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সারারাত গোলাগুলির শব্দ৷ ওরা যে গণহত্যা চালিয়েছে এটা ক্লিয়ার হই ভোরের দিকে৷ গেটের বাইরে গিয়েই থ বনে যাই৷ রাস্তা সুনসান৷ হঠাৎ কার্জন হলের দিক থেকে একটা আর্মিদের জিপ আসে৷ জিপে এলএমজি ফিট করা৷ ওরা ফায়ার করতে করতে আসছে৷ স্যান্ডেল ফেলে দৌড়ে দেয়াল টপকে কোনোরকমে বাসায় চলে আসি৷ বাসার সামনে টং দোকানে একটা ছেলে সিগারেট বিক্রি করতো, বরিশাল বাড়ি তার৷ দোকানের ভেতর থেকে সে বের হতে গেলে তাকেও গুলি করে হত্যা করে ওরা৷’’
‘‘পরে ভয়ে ভয়ে জগন্নাথ হলের দিকে যাই আমি৷ রাতে ওদিকেই গুলির শব্দ হচ্ছিল৷ দূর থেকে দেখলাম অনেক মানুষের গুলিবিদ্ধ ডেডবডি পড়ে আছে৷ কারো মাথায়, কারো বুকে, কারো পেটে গুলি লেগেছে৷ কয়েকজনকে বেওনেট দিয়ে খুচিয়েও মারা হয়েছে৷ রক্তের গন্ধ তখনো ছড়াচ্ছিল৷ এক রাতে ওরা ফুলবাড়িয়া রেললাইনের দুই পাশের বস্তিগুলোও পুড়িয়ে দেয়৷ মানুষের আর্তচিৎকারে ভারি হয়ে ওঠে ঢাকার বাতাস৷’’
বজলুল মাহমুদ বাবলুর বাড়ি ঢাকার সেন্ট্রালরোডে৷ তিনি বলেন, ‘‘সারারাত শুনেছি মানুষের আর্তচিৎকার ও গুলির শব্দ৷ পরেরদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ ওঠে৷ মানুষ তখন ঢাকা থেকে পালাতে থাকে৷ মোড়ে মোড়ে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি আর্মি৷ নিউ মার্কেটের দিকে এগোতেই দেখি লাশের স্তূপ৷পলাশী হয়ে ইকবাল হলের দিকে যেতেই চোখে পড়ে শত শত লাশ৷ ওইদিন ঢাকার রাজপথে ছিল পঁচা লাশের গন্ধ৷’’
কামরুল আমানরা থাকতেন নারায়ণগঞ্জে৷ ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার কথা তিনি তুলে ধরেন এভাবে, ‘‘কারফিউ চলছিল৷ তা শিথিল হতেই রওনা হই ঢাকার দিকে৷ মাতুয়াইলে এসে দেখি রাস্তার ঢালে পড়ে আছে ৭-৮জনের গলাকাটা লাশ৷ তাদের কখন মারা হয়েছে কেউ জানেন না৷ দেহ তখনও কই মাছের মতো নড়ছিল৷ এ যেন জিন্দা লাশ! বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় গিয়ে দেখি একজনের হাতের কব্জি বেরিয়ে এসেছে মাটির ওপরে৷ তারপরে ছুটে যাই শাঁখারি পট্টিতে৷ কী নির্মমভাবে ওরা মানুষ পুড়িয়েছে! কোর্ট বিল্ডিংয়ের পাশেই শাঁখারি পট্টির প্রবেশমুখ৷ সেটি বন্ধ করে আগুন দিয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনারা৷ সবাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে৷ কয়েকটি বাড়িতে তখনও আগুন জ্বলছিল৷ একটি বাড়িতে পা রাখতেই গা শিউরে ওঠে৷ মানুষ পুড়ে তার চর্বি গলে মেঝেতে পড়ে আছে৷ তাতে পড়েছে আমার পা৷ এর চেয়ে ভয়াবহ আর মর্মান্তিক দৃশ্য আর কী হতে পারে!’’
২৫ মার্চে ঢাকার গণহত্যায় শহিদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনও প্রণয়ন করা হয়নি, সংরক্ষণ করা হয়নি গণহত্যার স্থানগুলোও৷ বরং নিশ্চিহ্ন ও দখল হয়ে গেছে একাত্তরের অনেক স্মৃতিস্থান৷ সবই রক্ষার দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রের৷
এছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে পাকিস্তানি সেনারা এদেশে যে সীমাহীন গণহত্যা চালিয়েছে, তার জন্য এত বছরেও ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা ন্যূনতম দুঃখ প্রকাশও করেনি পাকিস্তানের কোনো সরকার, বিচার করেনি তৎকালীন একজন জেনারেলেরও৷ ওইসময়ে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘জেনোসাইড ওয়াচ’ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ‘লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন’৷ গত অক্টোবর মাসে ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি’ শীর্ষক ৮ পৃষ্ঠার একটি প্রস্তাবও তোলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে৷ তা বাংলাদেশের পক্ষে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সহায়ক হবে বলে মনে করেন অনেকেই৷ কিন্তু এ বিষয়ে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় বিশেষ উদ্যোগ৷একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার অপরাধ প্রমাণের তথ্য-উপাত্ত ও প্রামাণ্য সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা তুলে ধরার মাধ্যমে বিশ্বজনমত গড়ার কার্যকরী কর্মসূচি নিতে হবে সরকারকেই৷ কিন্তু সে উদ্যোগ কবে প্রকাশ্য হবে?
মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশেষ কিছু ছবি প্রকাশ করেছিল সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)৷ দেখে নিন অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার ইতিহাস...
ছবি: AP/picture alliance
‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’
৭ই মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ৷ লাখো মানুষের উপস্থিতিতে এই ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: AP/picture alliance
সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা
১৯৭১ সালের ২রা এপ্রিল, যশোরে একটি রিকশায় অস্ত্র হাতে দুই মুক্তিযোদ্ধা৷
ছবি: AP/picture alliance
মুক্তিবাহিনীর মার্চ
এটাও ২রা এপ্রিলের ছবি৷ যশোরে মুক্তিসেনারা মার্চ করছেন৷
ছবি: AP/picture alliance
প্রত্যয়ী মুক্তিসেনা
১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিলের এই ছবিতে কুষ্টিয়ায় মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা জয় বাংলা শ্লোগান দিচ্ছেন৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
সবার মুখে ‘জয় বাংলা’
১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিলের এই ছবিটিতে পাংশা গ্রামে শত শত মানুষ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিচ্ছেন৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
রাজধানী ছাড়ছে আতঙ্কিত মানুষ
১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিলের ছবি এটি৷ বাসে করে রাজধানী ছাড়ছেন সাধারণ মানুষ৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
ঘর ছেড়ে পরবাসে
১৯৭১ সালের ১৯শে এপ্রিলের ছবি এটি৷ মেহেরপুর থেকে ভারতে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে যাচ্ছেন এই শরণার্থীরা৷
ছবি: AP/picture alliance
রণাঙ্গনে ভারতীয় সেনা
তখন ভারতে হামলা চালিয়েছে দিশাহারা পাকিস্তান৷ তাই রণাঙ্গনে সরাসরি নেমে পড়ে ভারতীয় সেনা৷ ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বরের এই ছবিতে পূর্ব পাকিস্তানের ভেতরে দেখা যাচ্ছে ভারতীয় সেনাদের৷
ছবি: AP/picture alliance
যশোর রোডে ভারতীয় সেনা
ছবিটি ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বরের৷ যশোর থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে অবস্থান নিয়েছে ভারতীয় সেনারা৷
ছবি: AP/picture alliance
জনসমাবেশ
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বরের ছবি এটি৷ বিজয়ের মাত্র পাঁচ দিন আগে একটি জনসমাবেশে শ্লোগান দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ একজন মুক্তিযোদ্ধা তাদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ পেছনে সিটি হলে ছাদের উপর টহল দিচ্ছে ভারতীয় সেনা৷
ছবি: AP/picture alliance
বিদেশিদের দেশে ফেরা
১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বরের ছবি এটি৷ ঢাকায় পৌঁছেছে ব্রিটিশ বিমান৷ বিদেশিদের ঢাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ ৬ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতির সময় বিদেশিরা এই বিমানে করে ঢাকা ছাড়েন৷
ছবি: AP/picture alliance
ভারতীয় সেনাদের স্বাগত
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ করছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক, বগুড়ার দিকে রওনা হওয়ার পথে তাদের স্বাগত জানাচ্ছে সাধারণ গ্রামবাসী৷
ছবি: AP/picture alliance
আত্মসমর্পণ
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে সই করছেন৷ পাশে আছেন ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর কমান্ডার লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরা৷ সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের উপ-সেনাপ্রধান এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার৷
ছবি: AP/picture alliance
রাজাকারের শাস্তি
ছবিটি ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বরে ঢাকায় তোলা৷ মুক্তিবাহিনীর হাতে মারা যাওয়ার আগে তিন রাজাকারসহ উপস্থিত সবাই আল্লাহ’র কাছে হাত তুলে প্রার্থনা করছেন (নীচে বসা তিন রাজাকার)৷ পাঁচ হাজার মানুষের সামনে রাজাকারদের ‘মৃত্যুদণ্ড’ কার্যকর করা হয়৷
ছবি: Horst Faas/AP/picture alliance
বিহারি ক্যাম্প
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় ভারতের বিহার থেকে উর্দুভাষী মুসলমানরা পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন৷ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের অনেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন৷ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর হাতে অনেকে মারাও যান৷ এই ছবিটি ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে তোলা৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির ছবি এটি৷ পাকিস্তানের বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ-বিধ্বস্ত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন৷ ঢাকায় পৌঁছানোর পর লাখো মানুষ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে তাঁকে সংবর্ধনা জানায়৷ ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে ভাষণ দেন তিনি৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
স্বাধীনতার পর কলকাতায় শেখ মুজিবুর রহমান
এই ছবিটি ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির৷ কলকাতা বিমানবন্দরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বাগত জানাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে৷