অনেক মানুষের কাছেই ইন্টারনেট ব্যবহার এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবার মতো৷ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে দৈনিন্দিন জীবনে ইটারনেট ব্যবহারের না করে চলাফেরাও করাও মুশকিল৷
জার্মানিতে ৬৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার না করা মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশিছবি: Ute Grabowsky/photothek/picture alliance
বিজ্ঞাপন
প্রযুক্তির এই যুগে ঠিকানা খুঁজে পাওয়া, কারো বিষয়ে সন্ধান করা, কোনো বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া ,বিমান টিকিট কেনা কিংবা দৈনন্দিন কেনাকাটা অর্থাৎ দিনের প্রয়োজনীয় সব কিছুতেই দরকার ইন্টারনেট৷ কিন্তু ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে দেশের চার ভাগ মানুষ জীবনে কখনো ইন্টারনেট ব্যবহার করেননি, এমন তথ্য সামনে আসলে ভ্রু কুঁচকাতে হয় বৈকি৷
সবশেষ এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে এই তথ্য৷ জার্মানির জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের ২০২৪ সালের হিসাবে দেখা গেছে, দেশটির ২৮ লাখ মানুষ জীবনে কখনো ইন্টারনেট ব্যবহার করেননি৷ এই সংখ্যা জার্মানির মোট জনসংখ্যার চার ভাগ৷ সরকারের হিসেবে অনুযায়ী, জার্মানির জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে আট কোটি৷
পুরো ইউরোপ জুড়ে পরিচালিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার বিষয়ক গবেষণা থেকে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷
সরকারের দপ্তরের তথ্য মতে, ১৬ থেকে ৭৪ বছর বয়সিরা এই তালিকায় রয়েছেন৷ যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন না তাদেরকে অফলাইনার বলে অভিহিত করেছে সরকার৷ পরিসংখ্যান আরো বলছে, ৬৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সিদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার না করার প্রবণতা বেশি৷ দেখা গেছে, বয়স যতো কম, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ততো বেশি৷
ইউরোপের অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি
পরিসংখ্যান বলছে, ইউরোপের শতকরা পাঁচ ভাগ লোক জীবনে কখনো ইন্টারনেট ব্যবহার করেননি৷
নেদারল্যান্ডস ওবং সুইডেনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ দেশ দুটিতে অফলাইনারদের সংখ্যা এক ভাগের কম৷
ইন্টারনেট ব্যবহরা না করার দিক থেকে তালিকার শীর্ষে রয়েছে ক্রোয়েশিয়৷ দ্বিতীয় অবস্থানে গ্রিস৷ ক্রোয়েশিয়াতে এই সংখ্যা শতকরা ১৪ ভাগ এবং গ্রিসে শতকরা ১১ ভাগ৷
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন বলছে, ২০২৪ সালে বিশজুড়ে ৩২ ভাগ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করেননি৷
পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারনেট ‘মেটাভার্স’
ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ মেটাভার্সকে বলছেন, পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারনেট৷ মাইক্রোসফট টিমসের মতো প্ল্যাটফর্ম আর ফোর্টনাইট, মাইনক্রাফট, রোব্লকসের মতো ভিডিও গেমে এখনই সেই ইন্টারনেটে স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে৷
ছবি: Andre M. Chang/ZUMAPRESS/picture alliance
মেটাভার্স কী?
আপনার একটি সাধারণ দিনের কথা ভাবুন৷ সারাদিন অফিসে একের পর এক মিটিং করলেন৷ এক ফাঁকে এক সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলে তার সঙ্গে সন্ধ্যায় কনসার্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন৷ এরপর কনসার্ট শেষ করে বাসায় ফেরার পথে দোকান থেকে টি-শার্ট কিনলেন৷ কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে, এর সবকিছুই আপনি করলেন ঘরে বসে! হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন, ঘরে বসে৷ এটাই মেটাভার্স৷
ছবি: Andre M. Chang/ZUMAPRESS/picture alliance
কীভাবে কাজ করে?
ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ মেটাভার্সকে বলছেন, পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারনেট৷ গত আগস্ট মাসে ফেসবুক ‘হরাইজন ওয়ার্করুমস’ চালু করেছে৷ এর মাধ্যমে ‘ওকুলাস কোয়েস্ট টু’ হেডসেট ব্যবহার করে একটি অফিসের কর্মীরা ঘরে বসে ভার্চুয়ালি মিটিং করতে পারেন৷ উপরের ছবিটা দেখলে কিছুটা ধারনা পাওয়া যাবে৷ আপনি যদি এতে অংশ নিতে চান তাহলে আপনার ‘ভার্চুয়াল অবতার’ তৈরি করতে হবে৷ ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহার করে এটা সম্ভব হবে৷
ছবি: Facebook/dpa/picture alliance
এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে
মেটাভার্সের বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে৷ তবে ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্স গত জুলাই মাসে জানিয়েছে, ২০২৪ সাল নাগাদ মেটাভার্সের বাজারমূল্য ৮০০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে৷ মেটাভার্সের সম্ভাবনা অনুমান করে ফেসবুক, মাইক্রোসফট, এপিক গেমসের মতো কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে এই খাতে বিনিয়োগ শুরু করে দিয়েছে৷ তবে এটি পুরোপুরি সফল হতে বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে সমন্বয় হতে হবে, যা একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে৷
ছবি: imago/Westend61
গেমাররা এখনই মেটাভার্সের মধ্যে আছেন
সেকেন্ড লাইফ (ছবি), ফোর্টনাইট, মাইনক্রাফট ও রোব্লকস ভিডিও গেমগুলো বিশ্বব্যাপী অনেক জনপ্রিয়৷ সেখানে গেমাররা একসঙ্গে কাজ করেন, একজন আরেকজনকে সহায়তা করেন, বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেন এবং বাস্তব জগতের টাকা দিয়ে ভার্চুয়াল পণ্য ও সেবা কেনেন৷ এসবকিছুই মেটাভার্সের অংশ৷ এছাড়া মাইক্রোসফট টিমস ও স্লেকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোও মানুষকে মেটাভার্সের ধারনার সঙ্গে পরিচিত করে তুলছে৷
ছবি: imago/Friedrich Stark
এনএফটি প্রযুক্তি
মেটাভার্সের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে ‘নন-ফানজিবল টোকেন’ বা এনএফটি৷ এ বছরের শুরুত কয়েকটি ছবি দিয়ে তৈরি একটি কোলাজের জেপিজি ফাইল ৫৮৯ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে৷ ইতিমধ্যে ডিজিটাল রিয়েল এস্টেট ও প্রোপার্টির এনএফটির বেচাকেনা শুরু হয়েছে৷ আর্ট ডিলার ‘সদবিস’ সম্প্রতি একটি ডিজিটাল রিয়েল এস্টেট কিনে সেখানে ভার্চুয়াল আর্ট শো করেছে৷
ছবি: DW
ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার
এনএফটি কেনা ও এর মালিকানার হিসাব এথারিয়াম ব্লকচেইনে রাখা হচ্ছে৷ এটা বিটকয়েনের পর সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্স ইথারের নেটওয়ার্ক৷ ফলে ভবিষ্যতে মেটাভার্সের মূল অবকাঠামো হয়ে উঠতে পারে এনএফটি ও এথারিয়াম৷