প্রায় দুই কোটি টাকা জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে মোশতাক খা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি৷ তুরস্ক থেকে একটি এনজিওর নামে ঐ টাকা এনে জঙ্গি অর্থায়নের কাজে লাগানো হয়েছে বলে ধারণা সিআইডির৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার রাত ৮টার দিকে ২৬ বছরের মোশতাক খাকে সিলেটের হবিগঞ্জ থেকে আটক করা হয়৷ মঙ্গলবার সকালে তাকে ঢাকায় সিআইডি সদর দপ্তরে আনা হয়৷ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১০ বছর আগে অবৈধভাবে তুরস্ক যান মোশতাক৷ তুরস্কে তিনি বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ বিদেশে থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এনজিও, গার্মেন্টস ও ব্যক্তির নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন করেন তিনি৷ দেশে ফেরেন পাঁচ বছর আগে৷ এর পর থেকে আটটি প্রতিষ্ঠান ও একাধিক ব্যক্তির মাধ্যমে এক কোটি ৮৯ লাখ টাকা লেনদেন করেছেন মোশতাক৷
সিআইডি-র বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মোশতাক তুরস্কে গিয়ে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছে৷ ২০১৪ সালে তার বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মামলা হয়৷ তার ফেসকুকের আইডি থেকে তাকে শনাক্ত করা হয়৷ দেশে আল কাওসার নামে নিবন্ধনহীন একটি এনজিও পরিচালনা করতেন মোশতাক৷ এই এনজিওর মাধ্যমে ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে ওই টাকা তুরস্ক থেকে আনা হয়৷ ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা আনা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেয়া হয়নি৷ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সে এই টাকা আনে৷''
মোল্যা নজরুল ইসলাম
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এই টাকা বিতরণ হয়েছে, তেমন কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম বলেছে মোশতাক৷ টাকা আনার পরই তা দ্রুত বিতরণ করা হয় বলে জানায় সিআইডি৷
সিআইডি জানায়, ‘‘মোশতাকের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিস্ফোরক, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মারামারির মামলা৷ তুরস্কে যাওয়ার আগে সে ইসলামি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল বলেও জানা গেছে৷ টাকা লেনদেনের উৎস সম্পর্কে সদুত্তর দিতে না পারায় মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷''
মোল্যা নজরুল জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে দানের কথা জানিয়েছে মোশতাক৷ ‘‘সেইসব ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে আমরা জঙ্গি অর্থায়নের তদন্তের গভীরে যেতে চাই৷ আমরা জানতে পেরেছি সে তার বাড়ি হবিগঞ্জ এলাকায় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল৷ সরাসরি কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সে জড়িত কিনা এবং কোনো জঙ্গি সংগঠনকে সরাসরি অর্থ দিয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷ তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সে জঙ্গি অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত৷''
এদিকে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, যেসব জঙ্গি বিদেশে পলাতক রয়েছে, তাদের ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে৷ ‘‘আমরা এরই মধ্যে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি জঙ্গিদের একটি অংশকে চিহ্নিত করতে পেরেছি'', বলছেন মনিরুল৷
ছবিতে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ঘিরে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ সেনা অভিযানের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেছে আইএসপিআর৷ ঐ বাড়িটি থেকে ৭৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের উদ্ধার অভিযানের কিছু মুহূর্ত৷
ছবি: DW/ISPR
২৩শে মার্চের ঘটনা
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে ‘আতিয়া মহল’ নামের একটি পাঁচ তলা ভবন জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে ফেলে পুলিশ৷ শনিবার সকালে সেখানে শুরু হয় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’৷
ছবি: Getty Images/AFP
জোড়া বিস্ফোরণ
সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার পরপরই কাছের পাঠানপাড়ায় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পাওয়া যায়৷ বিস্ফোরণের শব্দ শুনে অভিযানস্থল থেকে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা সেখানে ছুটে যান৷ এরপর ঘটে দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি৷ জোড়া বিস্ফোরণে দুই পুলিশসহ ছয়জন নিহত হয়৷ র্যাবের গোয়েন্দাপ্রধানসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন৷
ছবি: Getty Images/AFP
প্যারা কমান্ডোর অভিযান
সবুজ রঙের দেয়াল ঘেরা আতিয়া মহলের দুটি বাড়ি৷ এসব বাড়িতেই জঙ্গি৷ তাদের হাতে জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযানে ব্যস্ত সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা৷
ছবি: DW/ISPR
জঙ্গিদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র
বাড়ির ভেতরে থাকা জঙ্গিদের কাছে ‘স্মল আর্মস’, বিস্ফোরক ও আইইডি আছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর৷ ভবনের বিভিন্ন স্থানে তারা আইইডি পেতে রাখায় পুরো বাড়ি বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে৷ এ কারণে অভিযানে সময় লাগছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী৷
শনিবার, অর্থাৎক ২৫শে মার্চ সকালে অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই বাড়িতে আটকেপড়া মানুষদের মধ্যে ৭৮ জনকে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা উদ্ধার করে আনেন৷ জিম্মিদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে সেনা কর্মকর্তারা বলছেন, তাতে তারা পুরোপুরি সফল হয়েছেন৷
ছবি: DW/ISPR
নারীদের উদ্ধার
জঙ্গি আস্তানা থেকে এক নারীকে উদ্ধার করে পাশের বাড়ির ছাদ হয়ে বের করে আনছেন সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা৷
ছবি: DW/ISPR
বৃষ্টির মধ্যেই মুক্তি
বৃষ্টির মধ্যেই জঙ্গি আস্তানা থেকে জিম্মিদের উদ্ধার করে আনলেন সেনা কমান্ডোরা৷
শিশু কোলে এক নারীকে জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করে আনছেন সেনা কমান্ডোরা৷
ছবি: DW/ISPR
যে ছবিটি ভাইরাল
জঙ্গি আস্তানায় আটকে পড়েছিল এই শিশুটি৷ তাকে কোলে করে বের করে আনেন এক সেনা কমান্ডো৷ এই ছবিটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল৷
ছবি: DW/ISPR
অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ
জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা ব্যক্তিদের প্রথমে পাশের একটি বাড়িতে রাখা হয়, বিকালে তারা বেরিয়ে আসেন ওই এলাকা থেকে৷ তাদের চোখে মুখে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগের চিহ্ন৷
ছবি: DW/ISPR
জঙ্গি আস্তানা সেনা নিয়ন্ত্রণে
সোমবার সকাল থেকে থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণ চলছিল৷ অভিযানের চতুর্থ দিন শেষে পাঁচ তলা ওই আতিয়া মহলে চারজনের লাশ পাওয়ার কথা জানিয়েছে সেনাবাহিনী। বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ঢুকে পড়ে সাঁজোয়া যান৷ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের ওয়েবসাইটে অভিযানের পাঁচটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে৷