৩০ দিনের সিলেবাসের মূল্যায়নে কী হবে?
২৬ অক্টোবর ২০২০বাংলাদেশে করোনার কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে৷ এরমধ্যে অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার নানা চেষ্টা চলছে৷ তবে তা তেমন সফল হচ্ছে না৷ কারণ বাংলাদেশের বিশেষ করে গ্রামের শিক্ষার্থীদের অনলাইন সুবিধা নাই বললেই চলে৷ আর সংসদ টেলিভিশন স্যাটেলাইট হওয়ায় এর মাধ্যমে যে পাঠদান করা হচ্ছে তাও সবাই নিতে পারছে না৷
স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় এরইমধ্যে এইচএসসি পরীক্ষায় অটোপাস পাচ্ছেন সব পরীক্ষার্থী৷ পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা হবে না সে সিদ্ধান্ত আগেই জানানো হয়েছে৷ তবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩০ দিনের সিলেবাসে মূল্যায়ন করা হবে৷ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক জানান, নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এই ৩০ দিনের সিলেবাসে প্রতি সপ্তাহে একটি করে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে৷ শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে সেই এসাইনমেন্ট শেষ করে স্কুলে জমা দেবে৷ তার ভিত্তিতেই তাদের মূল্যায়ন করা হবে৷
তিনি বলেন, ‘‘উদ্দেশ্য হচ্ছে যে বিষয়গুলোর ধারাবাহিকতা পরবর্তী ক্লাসেও থাকবে সেটা সেটায় শিক্ষার্থীরা কতটা দক্ষ তা যাচাই করা৷ সেভাবেই সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি হচ্ছে৷ পরবর্তী ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীরা যোগ্য কিনা সেটাই দেখা হবে৷ আমার শিক্ষার্থীদের দুর্বলতাও জানতে পারব৷’’
যাদের অনলাইন সুবিধা আছে তারা অনলাইনে এসাইনমেন্ট নেয়া ও জমা দিতে পারবেন৷ যাদের নাই তাদের অভিভাবকেরা শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসাইনমেন্ট নেবেন ও জমা দেবেন৷ আর যারা করোনার কারণে অন্য এলাকায় চলে গেছেন তার তাদের কাছের স্কুল থেকে এই সুবিধা নিতে পারবেন৷ প্রয়োজন হলে সরাসরি মাউশি থেকেও এসাইনমেন্ট নেয়া ও জমা দেয়া যাবে৷
মাউশির মহাপরিচালক জানান, ‘‘সিলেবাস চূড়ান্ত হলে ওয়েব সাইটে আপ করে দেয়া হবে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পঠানো হবে৷ আর এসাইনমেন্টের প্রশ্নগুলো এমন হবে যে শুধু বই দেখে উত্তর দেয়া যাবে না৷ পড়াশুনা করে বুঝতে হবে৷’’
তবে এবার করোনায় শিক্ষা এবং এর নানা পদ্ধতি নিয়ে অসন্তোষ আছে অভিভাবকদের মধ্যে৷ মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের একজন অভিভাবক শহীদুল ইসলাম মনে করেন, করোনায় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অনেক সময় পার করা হয়েছে৷ অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের তেমন সম্পৃক্ত করা যায়নি৷ কারণ একদিকে শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব, অন্যদিকে ইন্টারনেট সুবিধা সবার না থাকা৷ এখন যে এসাইমেন্টের কথা বলা হচ্ছে সেটা অনলাইনের চেয়ে ভালো৷ তবে এটা আরো অনেক আগে শুরু করলে ভালো হতো৷
তার মতে, ‘‘এখন যেভাবেই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হোক না কেন তার উদ্দেশ্য বেতন এবং পরীক্ষা ফি আদায়৷ আমরা বেতন দিলাম কিন্তু পড়াশুনা হলো না৷’’
দেশের গ্রামাঞ্চলে যে করোনায় অনলাইন শিক্ষা সম্ভব হয়নি তা বোঝা যায় দক্ষিণের জেলা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত মিরুখালি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন খানের সঙ্গে কথা বলে৷ তিনি জানান, ‘‘এখানে অনলাইনে ক্লাস নেয়া সম্ভব নয় বলে গত চার মাস ধরে আমরা এসাইনমেন্ট পদ্ধতিতে ক্লাস নিচ্ছি৷ প্রতি সপ্তাহে অভিভাবকরা এসে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যান সপ্তাহ শেষ হলে উত্তর জমা দিয়ে নতুন এসাইনমেন্ট নিয়ে যান৷ এটা আমরা প্রচলিত সিলেবাস ধরে করছি৷’’
৩০ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস হলে সেটাও পারা যাবে বলে জানান তিনি৷ তার কথা, ‘‘এই করোনায় শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের আওতায় রাখাই ছিলো আমাদের মূল উদ্দেশ্য৷’’
করোনা যেমন সংকট তৈরি করেছে, তেমনি অনেক সম্ভাবনাও তৈরি করেছে৷ কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে সেটা কাজে লাগানো হয়নি বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ৷ তার মতে, এই সময়ে শিক্ষার্থীরা বাসায় আছে৷ তাদের যদি শুরু থেকেই এসাইনমেন্ট দিয়ে তা আদায় করা হতো তাহলে অনেক কাজে দিত৷ কিন্তু তা করা হয়নি৷ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তাদের অস্থিরতার মধ্যে রাখা হয়েছে৷ ফলে তারা পরের শ্রেণিতে যাবে কিন্তু ভিত কাঁচা থাকবে৷ তিনি বলেন, ‘‘সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অ্যাসাইনমেন্ট ভিত্তিক মূল্যায়ন মন্দের ভালো৷ কিন্তু শিক্ষার্থীদের যেসব বিষয়ে দুর্বলতা থাকবে তারা আগামী এক বছরে তা কিভাবে পুষিয়ে নেবে তার পরিকল্পনা এখনই করতে হবে৷ নয়তো তারা পাস করবে কিন্তু তাতের শিক্ষায় গলদ থেকে যাবে৷’’
এদিকে প্রাথমিকে কী ব্যবস্থা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷ সেখানেও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অ্যাসাইনমেন্ট ভিত্তিক মূল্যায়নের একটি প্রস্তাব আছে৷ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল-হোসেনকে বদলি করা হয়েছে৷ তিনি এই মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত আছেন৷ তিনি জানান, ‘‘এ বিষয়ে নতুন সচিব এসে সিদ্ধান্ত নেবেন৷ আমার কোনো পরামর্শ নেই৷’’