৩১৫ কোটি টাকা দান করছেন অস্ট্রিয়ার এক নারী অ্যাক্টিভিস্ট
১৯ জুন ২০২৪
অস্ট্রিয়ার ৩২ বছর বয়সি অ্যাক্টিভিস্ট মার্লেন এঙ্গেলহর্ন উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া অর্থের একটি বড় অংশ দান করে দিচ্ছেন, যার পরিমাণ প্রায় ৩১৫ কোটি টাকা৷ মোট ৭৭টি সংগঠনের মধ্যে এই অর্থ ভাগ করে দেওয়া হবে৷
২০২২ সালে দাদি মারা যাওয়ার পর মার্লেন অনেক অর্থ পান৷ গত জানুয়ারি মাসে ঐ অর্থের একটি বড় অংশ দান করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ছবি: Hannes P. Albert/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
কেমিক্যাল কোম্পানি বিএএসএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্রিডরিশ এঙ্গেলহর্নের বংশের সদস্য মার্লেন৷ ২০২২ সালে দাদি মারা যাওয়ার পর তিনি অনেক অর্থ পান৷ গত জানুয়ারি মাসে ঐ অর্থের একটি বড় অংশ দান করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মার্লেন৷ এরপর সেই অর্থ কারা পাবে তা ঠিক করতে ৫০ সদস্যের একটি নাগরিক পরিষদ গঠন করা হয়েছিল৷ ঐ পরিষদ মোট ছয় সপ্তাহান্ত বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ বৈঠক করার জন্য পরিষদের সদস্যরা আর্থিক সুবিধাও পেয়েছেন৷ পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তির বয়স ১৭৷ তিনি একজন শিক্ষার্থী৷ আর সবচেয়ে বেশি বয়সি সদস্যের বয়স ৮৫৷
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে ৭৭টি সংগঠনের নাম জানিয়েছে নাগরিক পরিষদ৷ এর মধ্যে পরিবেশ, শিক্ষা, ইন্টিগ্রেশন, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য, সাশ্রয়ী আবাসন ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রয়েছে৷
মার্লেন এঙ্গেলহর্ন অস্ট্রিয়ার কয়েকজন মিলিওনেয়ারের একজন যারা চায় সরকার তাদের উপর বেশি করে কর নির্ধারণ করুক যেন ধনী ও গরিবের মধ্যে সম্পদের ব্যবধান কমে আসে৷
দাতব্য সংস্থা অক্সফাম গত জানুয়ারিতে জানিয়েছিল, বিশ্বের বিলিওনেয়ারদের সম্পদ ২০২০ সাল যা ছিল তার চেয়ে ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার বেড়েছে৷ আর এই সময়ে ৫০০ কোটির বেশি মানুষ আগের চেয়ে দরিদ্র হয়েছে৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি)
পাঁচ বিলিয়নেয়ারের সম্পদ দিগুণ, পাঁচশ কোটি মানুষের কমেছে
২০২০ সাল থেকে বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ কয়েকগুণ বেড়েছে। অন্যদিকে পাঁচশ কোটি মানুষের সম্পদ কমেছে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের আগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা অক্সফাম।
ছবি: Mandoga Media/picture alliance
পাঁচ শীর্ষ ধনীর সম্পদ দ্বিগুণ
এই পাঁচ শীর্ষ ধনী ব্যক্তি হচ্ছেন- ইলন মাস্ক, বার্নার্ড আর্নল্ট, জেফ বেজোস, ল্যারি অ্যালিসন এবং মার্ক জাকারবার্গ। এই পাঁচ ধনীর সম্মিলিত সম্পদ ৪৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (এক ডলার = প্রায় ১০০ টাকা) থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬৯ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ, তাদের সম্পদ বৃদ্ধির হার প্রায় ১১৪ শতাংশ।
ছবি: Getty Images/AFP
৫০০ কোটি মানুষের সম্পদ কমেছে
অক্সফামের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ, অর্থাৎ প্রায় ৫০০ কোটি মানুষের সম্পদের পরিমাণ কমেছে। নতুন সম্পদ অর্জনের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ এক শতাংশ বাকি ৯৯ শতাংশের সম্মিলিত সম্পদের প্রায় দ্বিগুণ অর্জন করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ২০২০ সালের পর থেকে ৯৯ শতাংশের আয় করা প্রতি ডলারের বিপরীতে একজন বিলিয়নেয়ার আয় করেছেন এক দশমিক সাত মিলিয়ন ডলার।
ছবি: Frederic J. Brown/AFP/Getty Images
শ্রমের মূল্য পাচ্ছে না কর্মীরা
করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে মূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্বজুড়েই শ্রমিকেরা ভুগছেন। অনেকের বেতন কমে গেছে, অনেকে হারিয়েছেন চাকরি। কিন্তু এর মধ্যেও ধনীদের সম্পদ অর্জন থেমে থাকেনি। অক্সফামের তথ্যমতে, বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ প্রতিদিন দুই দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার করে বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে বিশ্বের প্রায় ১৭০ কোটি শ্রমিকের মূল উপার্জন মূল্যস্ফীতির কারণে আগের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছে।
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
ক্ষুধার্তের খাবার নেই, কোম্পানির লাভ দ্বিগুণ
২০২২ সালে খাদ্য এবং জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লাভ ২০২০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ করতে পেরেছে। এই বিপুল লাভের লভ্যাংশ পেয়েছেন ধনী শেয়ারহোল্ডাররা। ২০২২ সালে ২৫৭ বিলিয়ন ডলার লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে, অক্সফামের তথ্যমতে ৮০ কোটি মানুষ রাতের খাবার নিশ্চিত করতে না পেরে ক্ষুধার্ত অবস্থাতেই ঘুমাতে গিয়েছেন।
ছবি: Jerome Delay/AP/picture alliance
কর বৈষম্য
অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বিলিয়নেয়ারই একেকটি নীতিগত ব্যর্থতার উদাহরণ। কর বৈষম্যের একটি উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন ইলন মাস্ক ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কর দিয়েছেন তিন শতাংশের একটু বেশি। অন্যদিকে আবের ক্রিস্টিন নামে উত্তর উগান্ডার এক দোকানদারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চাল, আটা এবং সোয়া বিক্রি করে তার মাসে লাভ করেন ৮০ মার্কিন ডলার। তাকে কর দিতে হয় ৪০ শতাংশ।
ছবি: Tingshu Wang/REUTERS
ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব
ধনী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর এড়ানোসহ নানাভাবে বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অক্সফামের প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে ধনীদের সম্পদের ওপর কর বাড়ানোর। মাল্টি-মিলিয়নেয়ার এবং বিলিয়নেয়ারদের সম্পদের ওপর কর পাঁচ শতাংশ আরোপ করলে বছরে এক দশমিক সাত ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া সম্ভব। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে ২০০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেয়া এবং ক্ষুধা দূরীকরণে বৈশ্বিক তহবিল গঠন করা সম্ভব।