৩৩ ভাগ জার্মান পুরুষের কাছে নারীকে পেটানো ‘গ্রহণযোগ্য'
১২ জুন ২০২৩
এক সমীক্ষার ফলাফল দেখে মানবাধিকার কর্মীরাও বিস্মিত এবং উদ্বিগ্ন৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি তিনজনে একজন, অর্থাৎ অন্তত ৩৩ ভাগ জার্মান পুরুষ মনে করেন, কখনো কখনো নারীর গায়ে হাত তোলা বড় কিছু নয়৷
বিজ্ঞাপন
সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল জার্মানি৷
শিশুদের আন্তর্জাতিক দাতব্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সি ১০০০ জন নারী এবং ১০০০ জন পুরুষের কাছে নারী-পুরুষের সমান অধিকার সংশ্লিষ্ট কিছু প্রশ্নের জবাব চাওয়া হয়৷ এক প্রশ্নের জবাবে ৩৩ ভাগ পুরুষ জানান, ঝগড়ার এক পর্যায়ে উত্তেজনাবশে নারীর গায়ে হাত তোলা ‘গ্রহণযোগ্য'৷ তাদের অনেকেরই সেই অভিজ্ঞতা আছে, কারণ, সমীক্ষায় দেখা গেছে, অন্তত ৩৪ ভাগ পুরুষ অতীতে এক বা একাধিকবার নারীর সঙ্গে সহিংস আচরণ করেছেন৷
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল জার্মানির সমীক্ষা আরো জানাচ্ছে, জার্মানির অনেক পুরুষ ঘরের বাইরে, অর্থাৎ অফিস, আদালতে কাজ করা নারীদের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল নন, কারণ, সমীক্ষায় অংশ নেয়া ৫২ ভাগ পুরুষ মনে করেন, সংসারের জন্য আয়-উপার্যন পুরুষদেরই করা উচিত৷ তারা আরো মনে করেন, নারীদের বিশেষত ঘরের কাজই করা উচিত৷
পছন্দমতো যৌনজীবন যাপনের বিষয়ে জার্মানদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশের মানসিকতাও মানবাধিকার কর্মীদের বিস্মিত করেছে৷ সমীক্ষায় অংশ নেয়া ৪২ ভাগ মানুষ জানিয়েছেন, সমকামিতা নিয়ে কোনো প্রচার তারা পছন্দ করেন না৷
পারিবারিক সহিংসতায় জর্জরিত ইউরোপের নারী
পরিসংখ্যান বলছে, ইউরোপের কয়েকটি দেশে নারীরা পরিবারের সদস্য বা কাছের মানুষদের মাঝেও নিরাপদ নয়৷ বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নারীর ওপর সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস
নারীর ওপর সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়৷ এ দিনে জার্মানিতে নারীদের অবস্থা সম্পর্কে কিছু চাঞ্চল্যকর পরিসংখ্যান জানান পরিবারমন্ত্রী ফ্রানসিজকা গিফে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
প্রতি ঘণ্টায় একজন নারী নির্যাতিত
মন্ত্রী ফ্রানসিজকা গিফে জানান, ২০১৮ সালে এক লাখ ১৪ হাজারেরও বেশি নারী তাদের বর্তমান বা প্রাক্তন সঙ্গীদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন৷ এই এক লাখ ১৪ হাজার নারীর মধ্যে ১২২ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ গিফে বলেন, ‘‘প্রতি ঘণ্টায় কাছের মানুষের হাতে বিপজ্জনকভাবে আহত হন একজন নারী৷ এই পরিসংখ্যান আসলেই ভয়াবহ৷’’
ছবি: picture alliance/dpa
বাড়ছে আইনের দ্বারস্থ হওয়ার প্রবণতা
জার্মানিতে গত কয়েক বছরে সহিংসতার ঘটনা প্রকাশের প্রবণতা বেড়েছে৷ আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি নারী চুপ না থেকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন৷ তবে নানা কারণে এখনো বহু নারী অভিযোগ করতে আগ্রহী হন না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Ochoa
নেই পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র
গিফে জানান, জার্মানিতে সহিংসতার শিকার প্রতিটি নারীর একটি নিরাপদ আশ্রয়ের অধিকার রয়েছে, কিন্তু সেই অনুপাতে নেই আশ্রয়কেন্দ্র৷ আরো আশ্রয়কেন্দ্র গড়তে আগামী চার বছরে বার্ষিক ৩০ মিলিয়ন ইউরো ( ২৮০০ কোটি বাংলাদেশি টাকা) ব্যয় করার ঘোষণা দেন তিনি৷ বর্তমানে জার্মানিতে মোট ৩৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
প্রতিবাদে নারীরা
জার্মানিতে প্রতি তিন দিন অন্তর একজন নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে মারা যান৷ ইটালি, বেলজিয়াম বা ফ্রান্সের মতো দেশের নারীদেরও একই অবস্থা৷ ২৪ নভেম্বর নারীর ওপর সহিংসতার প্রতিবাদে পথে নামেন নারীরা৷ বেলজিয়ামে নির্যাতিত নারীদের প্রতীক লাল জুতো রাস্তায় বিছিয়ে অভিনব প্রতিবাদ করেন তারা৷
ছবি: AFP/K. Tribouillard
ইউরোপের অন্যান্য দেশে যেমন চিত্র
ফ্রান্সের অবস্থা ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে খারাপ৷ নারীদের ওপর সঙ্গীর প্রাণঘাতী হামলার হার সবচেয়ে বেশি৷ এছাড়া ইটালিতে গত পাঁচ বছর সঙ্গীর শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার নারী, জানাচ্ছে ইটালির সরকারী পরিসংখ্যান সংস্থা ইনস্ট্যাট৷ ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সেখানে সহিংসতার ফলে নারী মৃত্যুর হারও বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-J. Hildenbrand
6 ছবি1 | 6
নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজের জন্য পরিচিত ফেডারেল ফোরাম মেন-এর কারস্টেন কাসনার সমীক্ষার ফলাফলে খুব বিস্মিত৷ জার্মানির ফুঙ্কে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘'৩৩ ভাগ পুরুষ নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাকে যে এভাবে দেখছে- এটা নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয়৷ জরুরি ভিত্তিতে এ অবস্থা পরিবর্তন করা দরকার৷''
জার্মানিতে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা অবশ্য নতুন কিছু নয়৷ কেন্দ্রীয় পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে পুরুষ সঙ্গীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এক লাখ ১৫ হাজারেরও বেশি জার্মান নারী৷ হিসেব করে দেখা গেছে, সে বছর প্রতি ঘণ্টায় নির্যাতিত হয়েছিলেন কমপক্ষে ১৩ জন নারী৷