1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

৩৫-এ ধারা খারিজের আশঙ্কায় জম্মু-কাশ্মীরে গণবিক্ষোভ

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
৭ আগস্ট ২০১৮

গত দু'দিন ধরে সংবিধানের ৩৫-এ ধারা খারিজের আশঙ্কাকে ঘিরে জম্মু-কাশ্মীরে লাগাতার হরতাল ও বিক্ষোভ চলছে৷ এই ধারায় জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল৷ তবে স্পর্শকাতর এই ইস্যুটিকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চলেছে শুনানি৷

Indien Proteste in der Kaschmir-Region
ফাইল ফটোছবি: picture-alliance/Zumapress/F. Khan

জম্মু-কাশ্মীরে গত দু'দিন ধরে চলছে হরতাল৷ জনজীবন স্তব্ধ, দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য সব বন্ধ, রাস্তাঘাটও খালি৷ শ্রীনগরের প্রাণকেন্দ্র লালচকে অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন ব্যবসায়ীরা৷ এই হরতাল ডেকেছে হুরিয়াত নেতাদের যৌথ মঞ্চ৷ তাকে সমর্থন জানিয়েছে দলমত নির্বিশেষে জম্মু-কাশ্মীরের সব রাজনৈতিক দল এবং বলা বাহুল্য, আম জনতা৷ কাশ্মীরি আমলাতন্ত্র মনে করছে, এই ধারা রদ করলে ভারতের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না৷ পুলিশ প্রশাসনও বেঁকে বসবে৷

প্রশ্ন হলো – কেন? এর আসল কারণ কী? হুরিয়াত ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মনে করছে, এর পেছনে হিন্দু সংঘ পরিবারের হাত আছে৷ তাদের অভিসন্ধী, মুসলিম প্রধান রাজ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে পরিবর্তন আনা৷ রাজ্যের বিতর্কিত ইস্যুগুলি হিমঘরে পাঠানো৷ যদি শীর্ষ আদালত ৩৫-এ ধারা খারিজ করে, তাহলে গণ আন্দোলন শুরু হবে কাশ্মীরে৷

এই ধরনের প্রতিক্রিয়ার কারণ একটাই৷ ভারতীয় সংবিধানের ৩৫-এ ধারায়জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে এবং তার জনগণকেযে বিশেষ মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তা খারিজ হবার আশঙ্কা৷ এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়ায় সংবিধানের মৌলিক কাঠামো লঙ্ঘিত হয়েছে কিনা, তা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের তিন সদস্যের বেঞ্চ পরীক্ষা করে দেখছেন৷

‘সংবিধানের শুরু থেকে যেটা আছে, সেটা তুলে নিতে গেলে বিধানসভার অনুমোদন জরুরি’

This browser does not support the audio element.

প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র মনে করেন, এই ধারা নিয়ে গত ৬০ বছরেরও বেশি এক ধোঁয়াশা রয়ে গেছে৷ এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার৷ তিন সদস্যের বেঞ্চের একজন বিচারক ছুটি নেওয়ায় এর শুনানি ২৭ আগস্ট পর্যন্ত মুলতুবি রাখার কথা বলেন তিনি৷ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীরা এই মামলা মুলতুবি রাখার যুক্তি দেখান যে রাজ্যে পঞ্চায়েত এবং পুর ভোট আসন্ন৷ তার মুখে এই রকম একটা স্পর্শকাতর ইস্যু জম্মু-কাশ্মীরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হবে৷ রাজ্যে নতুন করে আগুন জ্বলার আশঙ্কা আছে৷ পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে৷ দ্বিতীয়ত, রাজ্যের মধ্যস্থতাকারীরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে৷

কী বলা হয়েছে ৩৫-এ ধারায়? বলা হয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দারা ছাড়া বহিরাগত বা ভারতের অন্য রাজ্যে কেউ এখানে জমিজমা বা স্থাবর সম্পত্তি কিনতে পারবে না৷ সরকারি চাকরি পাবারও অধিকার নেই তাঁদের৷ এমনকি এই রাজ্যের কোনো মহিলা যদি অন্য রাজ্যের কোনো পুরুষকে বিয়ে করেন, তাহলে তিনিও এর আওতায় পড়বেন৷ অর্থাৎ তিনিও এই রাজ্যের বিশেষ সুবিধা হারাবেন৷ এই ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে একগুচ্ছ মামলা দায়ের করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে৷ ‘উই দ্য সিটিজেন' নামে দিল্লির এক এনজিও ২০১৪ সালে প্রথম এই ধারা খারিজ করার আর্জি জানায়৷ তাদের মতে, ১৯৫৪ সালের এই ধারা সংসদে পেশ করা হয়নি৷ এটা তত্কালীন রাষ্ট্রপতির নির্দেশমাত্র৷ সংবিধান সংশোধনও করা হয়নি৷ স্রেফ সংবিধানের পরিশিষ্ট হিসেবে রাখা রয়েছে৷

এই বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কনক সরকার ডয়চে ভেলের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘‘সবাই জানে, এক বিশেষ পরিস্থিতিতে জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতের অন্তর্ভুক্তকরা হয়৷ সেই সময় স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনা করা হচ্ছিল৷ তখন নেহেরুর সঙ্গে কাশ্মীরের মহারাজার যে মৌখিক চুক্তি হয়েছিল, পন্ডিত নেহেরু সেটা সংবিধান সভার সামনে রাখেন৷ তার ভিত্তিতে সংবিধান সভা দু'টো ধারা সংযোজন করে৷ একটি ৩৭০ নং ধারা, যাতে জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়৷ অন্যটি ৩৫-এ, যেখানে বলা হয় অন্য রাজ্যের বাসিন্দারা রাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে না৷ বিষয় সম্পত্তি কিনতে পারবে না৷''

এই দু'টো ধারা রাখা উচিত কিনা সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলির বিন্ন ভিন্ন মত থাকতে পারে৷ তবে এ বিষয়ে শেষ কথা বলবেন, সুপ্রিম কোর্টই৷ তবে এই দু'টি ধারা তুলে নিতে গেলে রাজ্যে গণভোটের প্রয়োজন হবে৷ গণভোটের দাবি চুক্তির অন্তর্গত, অস্বীকার করা যায় না৷ এটা লিখিত চুক্তি নয়, মৌখিক শর্ত৷ পন্ডিত নেহেরু সেটা সংবিধানে ঢুকিয়ে দেন৷ সেই অনুসারে গণভোট ছাড়া ধারা দু'টি খারিজ করা সম্ভব নয়৷ এই ধারা দু'টি যেমন আছে, তেমনি রাখা উচিত কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে অধ্যাপক সরকার ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘সংবিধানের শুরু থেকে যেটা আছে, সেটা তুলে নিতে গেলে রাজ্যের অর্থাত বিধানসভার অনুমোদন জরুরি৷ তাদের অনুমোদন সাপেক্ষে সংবিধান সংশোধন করে তুলে নেওয়া যেতে পারে৷''

জনসংখ্যা অনুপাতে একটা ভারসাম্য আনতে এটা করার পেছনে গেরুয়া শিবিরের মদত প্রসঙ্গে ওনার বক্তব্য, ‘‘গন্ডগোলের সময় বহু কাশ্মিরী পন্ডিত বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে আশ্রয় নেয় আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগে৷ কেউ দিল্লিতে, কেউ পাঞ্জাবে, কেউ অন্যত্র৷ তাঁরা এবং তাঁদের পরবর্তি প্রজন্ম ফিরে যেতেই পারে৷ রাজ্যের ভূমিপুত্র হিসেবে তাঁদের সে অধিকার তো আছেই৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ